রবিবার, ২২ ডিসেম্বর ২০২৪, ০৭:৪৯ পূর্বাহ্ন
রাহাত হুসাইন: প্রযুক্তির উৎকর্ষ এবং তার ব্যবহারিক বাস্তবতায় অজ্ঞতা আর অন্ধকারের যুগ শেষ হয়েছে অনেক আগেই। শিল্পবিপ্লবের পরপরই সভ্য যুগে প্রবেশ করে বিশ্ব। শুরু থেকেই সভ্যতা দুই ভাগে বিভক্ত দৈহিক শ্রমনির্ভর সমাজ সভ্যতা। বৌদ্ধিক শ্রমনির্ভর সমাজ সভ্যতা। এখানে দৈহিক শ্রম বলতে শারীরিক পরিশ্রমকে বুঝানো হয়েছে। আর বৌদ্ধিক শ্রম বলতে জ্ঞান বা মেধাভিত্তিক পরিশ্রম।
একটা সময় শারীরিক শ্রমকে বেশি গুরুত্ব দেওয়া হলেও সময়ের পরির্বতনে সঙ্গে সঙ্গে পরিবর্তনে এসেছে সমাজ, পরিবেশ, অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড ও জীবনযাত্রায়।
বিশ্ব আজ তথ্যপ্রযুক্তির সভ্যতায় উদ্ভাসিত। দিন-দিন আধুনিকায়ন হচ্ছে বিশ্ব। মানুষের বেড়েছে জ্ঞানবিজ্ঞান ও জানার পরিধি। প্রযুক্তির স্পর্শে যান্ত্রিক সভ্যতার ব্যাপক উন্নতি ও অগ্রগতি হলেও সমান তালে ধস নেমেছে মানবিকতায়। অনাকাঙ্ক্ষিত ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে চলে যাচ্ছে মানবতা। যুগের সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলতে গিয়ে মানবিক মূল্যবোধ দুনিয়া থেকে উঠে যাচ্ছে দিন-দিন।
একটা সময় ছিলো যখন মানুষ, মানুষকে দড়ি দিয়ে বেঁধে বাজারে তুলে বিক্রি করেছে। দাস বানিয়ে জুলুম-নির্যাতন করেছে। মানুষ, মানুষের রক্ত চুষে অর্থবিত্তের মালিক হয়েছে। মানুষকে পণ্য বানিয়ে ব্যবসা করেছে মানুষরূপী কেউ।
বিশ্ব সেই অমানবিকতা কাটিয়ে ওঠলেও মানবিক বিশ্ব গড়ে ওঠেনি আজও। এখনো সমাজে একশ্রেণীর মানুষ আছে যারা ভোগের পেয়ালা ভরে নিতে চায় সম্পদের প্রার্চুয্য। বিশ্বকে ঠেলে দিতে চায় ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে।
বুদ্ধিভিত্তিক চিন্তা-চেতনা ও তথ্যপ্রযুক্তি এবং জ্ঞান-বিজ্ঞানের কল্যাণে বিশ্ব আজ হাতের মুঠোয়। ইন্টারনেটের সাহায্যে কয়েক মিনিটেই দুনিয়ার একপ্রান্ত থেকে অপর প্রান্তে ঘুরছে মানুষ। পৃথিবী ছেড়ে চাঁদ বা মঙ্গলের মত গ্রহে যাওয়ার খবর আছে গণমাধ্যমে ।
সমাজে রয়েছে এর বিপরীত চিত্রও। পিছনে ফেলে আসা সেই অমানবিকতার ভূত নতুন করে জেকে বসছে বিশ্বে। সমাজের একটি অংশ এখনও ভিক্ষাবৃত্তি করে জীবিকা নির্বাহ করছে। আবার কেউ বেঁচে থাকার জন্য গণিকালয়ে নিজের সম্ভ্রম বিকিয়ে দিচ্ছে। খোলা আকাশের নিচে রাত কাটাচ্ছে। ফুটপাতে ঘর-সংসার বাঁধতে দেখা গেছে অনেককে। এখনো বৈধ অভিভাবকহীন শিশু পড়ে থাকে রাস্তায়। যুদ্ধ বিধ্বস্ত দেশের মানুষ উন্নত জীবনের খোঁজে শরণার্থী হয়ে দাসত্বের শৃঙ্খলে বন্দী হওয়ার খবর আচ্ছে অহরহ।
আধুনিক সভ্য যুগেও মানুষ ও মনুষ্যত্বের কাঙ্ক্ষিত মুক্তি আসেনি। পরাধীনতার শৃঙ্খলে পুনরায় আবদ্ধ হচ্ছে মানবতা।
আমি, আপনিও মানুষ। আমার, আপনার পাশে রাস্তায় ঘুমানো ব্যক্তিটিও মানুষ। আমার-আপনার সমাজ পরিচয় থাকলেও তার কিন্তু সেটা নেই। কি অসাম্য ভেদ আমাদের সমাজে। মানুষকে রাস্তায় অভুক্ত রেখে অন্য গ্রহে জীবের সন্ধান করা কতটা অমানবিক ভেবে দেখেছেন কি? আধুনিক যুগেও বৈধ পরিচয়হীন শিশু জন্ম নিচ্ছে সেটা কি অবৈজ্ঞানিক নয়; ভেবে দেখবেন।
মানুষ যদি হয়ে থাকে সৃষ্টির সেরা জীব তাহলে কেনো মানুষের প্রতি মানুষের অবহেলা। সময় এসেছে অধিকারবঞ্চিত অবহেলিত মানুষের জন্য কাজ করার। মানুষ ও মনুষ্যত্বের মুক্তি ও তার মানবীয় মর্যাদা প্রতিষ্ঠা করার।
মানবিকবোধ সম্পন্ন প্রজন্ম গড়ে তোলার সময় এখন বাংলাদেশের। দেশের প্রতিটি শ্রেণিকক্ষে সমতাবোধের আদর্শে মানুষকে ভালোবাসার শিক্ষা দিতে হবে। দিতে হবে সম্প্রীতি ও ক্ষুধামুক্ত বাংলাদেশ গড়ার শিক্ষা।
মানবতার কল্যাণে বন্ধুত্ব সম্পর্ক কাজে লাগিয়ে সমাজের প্রতিটি মানুষের মানবিক মর্যাদা প্রতিষ্ঠার শপথ নিতে হবে আপনাকে আমাকে।
আপনি, আমি যে ধর্ম-বর্ণের লোক হই না কেনো মানুষ হিসেবে প্রত্যেক মানুষের কল্যাণে কাজ করাই হউক আমাদের অঙ্গীকার। মানুষ সমাজে তার মৌলিক অধিকার নিয়ে বেঁচে থাকুক। তথ্যপ্রযুক্তির এ যুগে আমাদের নৈতিক দায়িত্ব হচ্ছে বিশ্বকে মানুষের কল্যাণে উপযোগী হিসেবে গড়ে তোলা। মেধাবী ও কর্মঠ তরুণদের মানবতার কল্যাণে কাজে লাগানো হউক। বন্ধুত্বের জয় হউক। মানবতার জয় হউক।
লেখক: সভাপতি, ন্যাশনাল ফ্রেন্ডশিপ সোসাইটি