মঙ্গলবার, ১৯ নভেম্বর ২০২৪, ১২:৩৮ অপরাহ্ন
লোডশেডিংয়ে রাজধানীর ডেমরাসহ আশপাশের ৬টি থানা এলাকায় ভোগান্তির শেষ নেই। অথচ বিদ্যুতের মাধ্যমে এখানে চলছে ৮০ শতাংশ অবৈধ ব্যাটারিচালিত যান। এক্ষেত্রে বিদ্যুৎ সাশ্রয়ে উদাসীন প্রশাসন ও বিদ্যুৎ বিভাগ। প্রতিনিয়ত চুরি ও মিটার টেম্পারিংয়ের মাধ্যমে হাজারো মেগাওয়াট বিদ্যুৎ গিলে খাচ্ছে ব্যাটারিচালিত কয়েক হাজার ইজিবাইক, অটোরিকশা ও মিশুকসহ ভ্যানগাড়ি। সরকার হারাচ্ছে রাজস্ব। বর্তমানে বিদ্যুৎ সাশ্রয়ে সরকারের গলার কাঁটা ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা। আর এসব বন্ধে হাইকোর্টের নিষেধাজ্ঞা থাকলেও মানছে না কেউ। ডেমরায় ২৫ আগস্ট অটোরিকশা বন্ধে পুলিশের অভিযানের পর ২৭ আগস্ট ডেমরা-যাত্রাবাড়ী ও ডেমরা-রামপুরা সড়কের স্টাফ কোয়ার্টার এলাকায় সড়ক অবরোধ করে ওইসব নিষিদ্ধ যানবাহন চালকরা। এক ঘণ্টার বেশি যান চলাচল বন্ধ থাকে সড়কে। ওইদিনই কয়েক দফা চেষ্টার পর পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে পুলিশ। এ সময় পুলিশের ঊর্ধ্বতনদের নির্দেশে ডেমরা থানা পুলিশ চালকদের অভ্যন্তরীণ সড়কে অটোরিকশা চালানোর সাময়িক অনুমতি দিলে চালকরা সড়ক খালি করে দেয়।
তথ্যানুসন্ধানে জানা যায়, ঢাকায় দুই সিটির মধ্যে সবচেয়ে বেশি ব্যাটারিচালিত নিষিদ্ধ ইজিবাইক, অটোরিকশা, মিশুক ও ভ্যানগাড়ি চলে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশেনে (ডিএসসিসি)। এর মধ্যে ডিএসসিসির ডেমরা, যাত্রাবাড়ী, কদমতলী, শ্যামপুর, খিলগাঁও ও সবুজবাগ থানা এলাকায় সবচেয়ে বেশি নিষিদ্ধ যান চলাচল করছে মাসোহারা দিয়ে। এদিকে ঢাকার দুই সিটি করপোরেশনে ৭০ থেকে ৭৫ হাজার যানবাহন চলাচল করে প্রতিদিন। এর মধ্যে ডিএসসিসির ডেমরাসহ ৬টি থানা এলাকায় শতাধিক অভ্যন্তরীণ রুটে প্রায় ৪৬ হাজার নিষিদ্ধ ব্যাটারিচালিত যানবাহন চলাচল করছে প্রতিনিয়ত। নিষেধাজ্ঞা সত্ত্বেও ঢাকা-চট্টগ্রাম ও ঢাকা-সিলেট মহাসড়কসহ ডেমরা-যাত্রাবাড়ী ও ডেমরা-রামপুরা সড়কেও দাপিয়ে বেড়ায় এসব যানবাহন।
এ বিষয়ে ডেমরা থানার ওসি মো. শফিকুর রহমান বলেন, বিদ্যুৎ সাশ্রয়ের বিষয়ে আমরা থানা এলাকায় নিষিদ্ধ যানের বিষয়ে জরুরি পদক্ষেপ গ্রহণ করছি আমরা। আর চাঁদাবাজির বিষয়টিও দেখছি তদন্ত করে। আরও জানা যায়, প্রতিটি রুট থেকে টোকেনের মাধ্যমে থানা ও ট্রাফিক পুলিশকে মাসিক চাঁদা দিতে হয়। থানা ও ট্রাফিক পুলিশ এ সেক্টর থেকেই অন্তত ২০ লাখ টাকা মাসোহারা পায় বলে অভিযোগ রয়েছে। এক্ষেত্রে নিষিদ্ধ প্রতিটি যানবাহন থেকে টোকেন বাবদ মাসে ১২০০ টাকা করে আদায় করে লাইনম্যানরা। এখান থেকে পুলিশ পাচ্ছে অর্ধেক টাকা, বাকিটা সংশ্লিষ্ট অন্যরা ভাগ করে নেয়। এছাড়া রুটভেদে প্রতি যানবাহন থেকে ১০০ থেকে ১৫০ টাকা দিতে হয় স্থানীয় চাঁদাবাজ সিন্ডিকেটদের। এর মধ্যে ৬টি থানার প্রতিটি রুটের সঙ্গে প্রতিটি রুটের যোগসূত্র রয়েছে।
সাধারণত একটি ইজিবাইকের জন্য ৪ থেকে ৮টি ১২ থেকে ১৬ ভোল্টের ব্যাটারি প্রয়োজন। প্রতি সেট ব্যাটারি চার্জের জন্য গড়ে ৯০০ থেকে ১১০০ ওয়াট হিসেবে পাঁচ থেকে ছয় ইউনিট (দিনে বা রাতে কমপক্ষে ৫ থেকে ৬ ঘণ্টা) বিদ্যুৎ খরচ হয়। সে হিসাবে ডিএসসিসিতে হাজার হাজার ইজিবাইক বা ব্যাটারিচালিত রিকশা চার্জের জন্য জাতীয় গ্রিড থেকে প্রতিদিন অন্তত ৪০ থেকে ৪৫ মেগাওয়াট এবং মাসে অন্তত ১৩০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ খরচ হয়ে থাকে বলে অভিযোগ রয়েছে। এদিকে ডেমরা ও আশপাশের ৬টি থানা এলাকায় অন্তত ৭০ শতাংশ গ্যারেজ গোপনে চুরি করে বিদ্যুৎ ব্যবহার করছে। যার ফলে সরকার বড় অঙ্কের রাজস্ব আয় থেকে বঞ্চিত হচ্ছে । এ বিষয়ে প্রশাসনের ওয়ারী বিভাগের উপপুলিশ কমিশনার (ডিসি) জিয়াউল আহসান তালুকদার বলেন, যেহেতু হাইকোর্টের নির্দেশ রয়েছে অটোরিকশা বন্ধের সেহেতু আমরা ওই নির্দেশ বাস্তবায়নে সোচ্চার রয়েছি।