শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ০৫:২১ অপরাহ্ন
মোঃ মুন্না হুসাইন তাড়াশ (সিরাজগঞ্জ) প্রতিনিধি, কালের খবর : মহেশরৌহালীর তিন কিলোমিটার রাস্তা একেবারে কাঁচা। রাস্তা বললেও ভুল হবে। অনেকটা ধান রোপণ করার উপযোগী ক্ষেতের মতো। গাড়ি দূরে তো থাক, হেঁটে পার হওয়াই মুশকিল। তার পরও প্রয়োজনের তাগিদে ওই রাস্তা দিয়েই চলাচল করতে হচ্ছে স্কুল-কলেজের ছাত্রছাত্রীসহ গ্রামবাসীকে। এই রাস্তা পার হতে গিয়ে চরম ভোগান্তির শিকার হতে হচ্ছে তাড়াশ উপজেলার মহেশরৌহালী গ্রামের অধিবাসীদের।
ভোগান্তির পাশাপাশি বিপত্তির শিকারও হতে হচ্ছে তাদের। রাস্তার বেহাল দশার কারণে হ্যাচারীর ডিম গুলো ভেঙ্গে যায় মহেশরৌহালী গ্রামের খামার গুলোর। শুধু তা-ই নয়, এই রাস্তার কারণে অনেকে এই গ্রামে ছেলেমেয়ে বিয়ে দিতে চায় না। কোনো আত্মীয়স্বজনও এই গ্রামে আসতে চায় না। গভীর রাতে এই গ্রামের কারো প্রসববেদনা উঠলে কাঁধে করে হাসপাতালে নিয়ে যেতে হয় অন্তঃসত্ত্বাকে।
মাত্র তিন কিলোমিটার রাস্তা পাকা না হওয়ায় চরম ভোগান্তিতে রয়েছেন মহেরৌহালী গ্রামের অধিবাসীরা। কাঁচা রাস্তার কারণে বর্ষা মৌসুমে চরম দুর্ভোগে পড়তে হয় স্কুলগামী ছাত্রছাত্রীসহ এই অঞ্চলের জনসাধারণকে। ২৪ ফুট প্রশস্ত এই রাস্তাটি পাকাকরণ তো দূরের কথা, মাটি দিয়ে প্রয়োজনীয় সংস্কারও করা হয় না। ফলে রাস্তাটি চলাচলের একেবারেই অযোগ্য থাকে বছরের প্রায় অর্ধেক সময়। শুষ্ক মৌসুমেও রাস্তাটির কাদা শুকিয়ে থাকায় চলাচল সহজ হয় না। তাই রাস্তাটির কারণে মানবেতর জীবনযাপন করতে হচ্ছে এই জনপদের বাসিন্দাদের।
এলাকাবাসী জানান, দীর্ঘদিন কোনো সংস্কার না করায় এই কাঁচা রাস্তাটি বর্ষা মৌসুমে তা হাবড়ে (গভীর কাদা) পরিণত হওয়ায় একেবারেই চলাচলের অযোগ্য হয়ে যায়। রাস্তার মাটি এঁটেল হওয়ায় এবং ট্রাক্টর ও পাওয়ার টিলার চলাচল করায় হেঁটে চলাচল প্রায় অসম্ভব হয়ে উঠেছে এই রাস্তা দিয়ে। বর্তমানে এই রাস্তায় স্থানভেদে ৩ থেকে ৫ ফুট পর্যন্ত কাদার গভীরতা আছে। এই গ্রামে একটি প্রাথমিক বিদ্যালয়,একটি হাফিজিয়া মাদ্রাসা,একটি হাইস্কুল, আছে। প্রাথমিক বিদ্যালয়,ও হাইস্কুল কাঁচা রাস্তাটি সংলগ্ন। শুধু কাদার কারণে ইচ্ছা থাকলেও পার্শ্ববর্তী স্কুলে বা কলেজে যেতে পারছে না এই গ্রামের ছাত্রছাত্রীরা। এই প্রাথমিক বিদ্যালয়ে সামনেও হাঁটুসমান কাদা থাকায় কাদা মাড়িয়ে জুতা হাতে করে বিদ্যালয়ে আসতে হয় বিধায় বর্ষা মৌসুমে ছাত্রীরা একেবারেই ক্লাসে আসে না বলে জানান বিদ্যালয়ে সহ কারি শিক্ষক জেছমিন নাহার।
এই গ্রাম থেকে মাধ্যমিক উচ্চবিদ্যালয়ে দু-একজন ছাত্র ভর্তি হলেও তারা লুঙ্গি পরে আসে, ছাত্রীরা একেবারেই আসতে পারে না। ওই বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক জানান, রাস্তায় অতিরিক্ত কাদার কারণে ছাত্রছাত্রীরা আসতে পারে না। দু-একজন যা আসে, তারা লুঙ্গি পরে আসে। তবে ছাত্রীরা একেবারেই আসতে পারে না।
গ্রাসবাসী আব্দুল আলিম জানান, বর্ষা মৌসুমে মাত্রাতিরিক্ত কাদার কারণে কোনো যানবাহন এই রাস্তায় চলাচল করে না। তাই কোনো আত্মীয়স্বজনও এই গ্রামে আসতে চায় না। শুধু কাদার কারণে অনেকে এই গ্রামে ছেলেমেয়ে বিয়ে দিতে চায় না। গত মাসে মাগুরার আত্মীয়ের বাড়িতে বাচ্চু মণ্ডলের মেয়ে খাদিজাকে দেখে বিয়ের প্রস্তাব দেয় মাগুরার এক প্রবাসী ছেলে। সেখান থেকেই ঠিক হয় বিয়ের দিন-তারিখ। ২৬ সেপ্টেম্বর মাসে বাড়িতে চলে বিয়ের আয়োজন। মাগুরা থেকে বরসহ ৩০ জন বরযাত্রী আসে এই গ্রামে। বিয়ের গাড়ি এবং মোটরসাইকেল গ্রাম থেকে তিন কিলোমিটার দূরে রেখে কাদা মাড়িয়ে মহিলা বরযত্রীদের বিয়েবাড়িতে আসা সম্ভব হয় না বলে বিয়ে ভেঙে যায় খাদিজার। তাদের মতে, গভীর রাতে প্রসববেদনা উঠলে রাস্তায় কাদার কারণে যানবাহন না থাকায় কাঁধে করে কাদা পার করে নিয়ে যেতে হয় অন্তঃসত্ত্বাকে। এতে গর্ভের অনেক শিশুর মৃত্যু হয় ।
রাস্তাটি সংস্কার ও পাকাকরণের ব্যাপারে নওগাঁ ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মজনু বলেন, যেকোনো কারণেই হোক রাস্তাটি করা সম্ভব হয়নি। তবে তিনি আশা প্রকাশ করেন, চলতি অর্থবছরের মধ্যে সংসদ সদস্যের সহযোগিতায় রাস্তাটি পাকা করা সম্ভব হবে।