শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ০১:৫০ অপরাহ্ন

সংবাদ শিরোনাম :
বঙ্গবন্ধু সৈনিক লীগ কক্সবাজার জেলা কমিটির অনুমোদন । আরজেএফ’র উদ্যোগে স্বাধীনতা দিবসের আলোচনা সভা ও ইফতার মাহফিল সম্পন্ন। কালের খবর মসজিদ উন্নয়নের কাজে অনিয়মের অভিযোগ। কালের খবর সাতক্ষীরায় ভারত থেকে অবৈধ পথে ফেরার সময় চার বাংলাদেশী আটক। কালের শেখ হাসিনার গাড়িবহরে মামলার সাত বছরের সাজাপ্রাপ্ত আসামি গ্রেফতার। কালের খবর পূর্বগ্রাম ব্লাড ডোনার গ্রুপের উদ্যোগে ইফতার মাহফিল অনুষ্ঠিত। কালের খবর ব্রয়লারের চেয়ে চাহিদা বেশি বাউ মুরগির, খুশি খামারিরা নবীনগরে পুকুরের পানিতে ডুবে দুই সহোদর চাচাতো বোনের মর্মান্তিক মৃত্যু। কালের খবর প্রকাশিত সংবাদের প্রতিবাদ। অটো মালিক, শ্রমিক সমিতির চেক বিতরণ ও ইফতার মাহফিল অনুষ্ঠিত। কালের খবর
জলবায়ু পরিবর্তন ও বাংলাদেশে প্রভাব

জলবায়ু পরিবর্তন ও বাংলাদেশে প্রভাব

জলবায়ু পরিবর্তন ও বাংলাদেশে প্রভাব

পৃথিবীর আদি থেকেই জলবায়ু পরিবর্তনশীল, অন্তত ভূতাত্ত্বিক সময় পঞ্জিকা আমাদের তা-ই বলে। ফলে এক মিলিয়ন বছর থেকে আজ পর্যন্ত পৃথিবীতে কয়েকটি বরফ ও উষ্ণ যুগ এসেছে। জলবায়ুর পরিবর্তন সমীক্ষা করতে গিয়ে বিজ্ঞানীরা নিশ্চিত যে পৃথিবীর জলবায়ু পদ্ধতির পরিবর্তনে গ্রিনহাউস গ্যাসগুলোর অবদান রয়েছে। কার্বন ডাই-অক্সাইডের ভূমিকা বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ। অর্থাৎ পৃথিবীর তাপমাত্রার চড়াই-উতরাইয়ে অতীতে যেমন মুখ্য নিয়ামক ছিল কার্বন ডাই-অক্সাইড, ভবিষ্যতেও তেমন থাকবে।

তবে ১৮ কোটি মানুষের দেশ বাংলাদেশ জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে সবচেয়ে ঝুঁকিতে থাকা দেশগুলোর অন্যতম।

গত ৫০ বছরে জলবায়ু পরিবর্তনের বিরূপ প্রভাব বাংলাদেশে গভীরভাবে পরিলক্ষিত হচ্ছে। যদিও ২০১৫ সালের প্যারিস চুক্তি মোতাবেক ২ ডিগ্রি সেলসিয়াসের নিচে তাপমাত্রা রাখার ব্যাপারে চুক্তি হয়েছে। তবু গবেষণা বলছে, ভূপৃষ্ঠের তাপমাত্রা আরও নিচে রাখা না গেলে আবহাওয়ার বিভিন্ন উপাদানের (যেমন তাপমাত্রা, বৃষ্টিপাত ও বাতাসের গতি) অনিয়মিতকরণ ও অস্বাভাবিকতার কারণে বাংলাদেশকে নিত্যনতুন চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন হতে হবে।

তবে কথা হচ্ছে, বরফ ও উষ্ণ যুগ পৃথিবীর ইতিহাসে অতীতে ছিল, তাহলে বর্তমান জলবায়ু পরিবর্তন কেন এত বেশি আলোচিত? এর একমাত্র কারণ, বিশ্বব্যাপী মনুষ্য কর্মকাণ্ড, যেমন নগরায়ণের হার, কলকারখানার পরিমাণ, বনভূমির উজাড় অতীতের যেকোনো সময়ের তুলনায় সম্প্রতি এতটাই বেড়েছে, যার ফলে কার্বন ডাই-অক্সাইডসহ অন্যান্য গ্রিনহাউস গ্যাসের পরিমাণ বাড়ছে অস্বাভাবিক গতিতে। এতে বৈশ্বিক তাপমাত্রা বৃদ্ধির হার ত্বরান্বিত হচ্ছে।

বর্তমান জলবায়ুর এই পরিবর্তনকে আমরা ‘মানবসৃষ্ট’ বলি। কারণ, অতীতের জলবায়ুর পরিবর্তনগুলো ছিল প্রাকৃতিক। অবস্থা এমন দাঁড়িয়েছে যে তাপমাত্রা বৃদ্ধির হার নিয়ন্ত্রণ করা না গেলে আমাদের সুন্দর এই ধরিত্রী নিকট ভবিষ্যতে বসবাসের অনুপযোগী হয়ে উঠবে। কারণ, ভূপৃষ্ঠের তাপমাত্রার বৃদ্ধি বায়ুমণ্ডলের উচ্চ ও নিম্নস্তরে পানি ধারণক্ষমতা বৃদ্ধি করবে। আর তাই আর্দ্র অঞ্চল আর্দ্রতর ও শুষ্ক অঞ্চল শুষ্কতর হবে। ফলে মানুষের জীবনধারণ বা টিকে থাকাই হয়ে উঠবে দুরূহ।

যদিও জলবায়ুর পরিবর্তন একটা বৈশ্বিক সমস্যা, তবু উন্নয়নশীল বা অনুন্নত অর্থনীতির দেশগুলোর ওপর এর প্রভাব হবে ভয়ংকর ও অসামঞ্জস্যহীন। কেননা, এসব দেশে পরিবর্তিত পরিবেশ ও পরিস্থিতির সঙ্গে খাপ খাওয়ানোর উপাদান, জ্ঞানবিজ্ঞান ও কলাকৌশলের তীব্র ঘাটতি রয়েছে। মজার বিষয় হচ্ছে, উন্নত দেশগুলোর জনগণের উন্নত জীবনযাপনের বলি হচ্ছে বা হবে উন্নয়নশীল দেশগুলো। জ্বলন্ত একটা উদাহরণ হচ্ছে বাংলাদেশ। যেমন বিশ্বব্যাংকের হিসাবে, পৃথিবীর মোট গ্রিনহাউস গ্যাসের মাত্র শূন্য দশমিক ৪০ শতাংশ নিঃসরিত হয় বাংলাদেশে। কিন্তু দুর্ভাগ্যজনকভাবে আমরাই হব জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে ক্ষতিগ্রস্ত শীর্ষ ১০টি দেশের একটি। মূলত ভৌগোলিক অবস্থান, অতিরিক্ত জনসংখ্যা, দারিদ্র্য ও সামাজিক সুরক্ষার অপ্রতুলতা বাংলাদেশের ঝুঁকিকে দিন দিন প্রসারিত করছে। ফলে আবহাওয়ার বিভিন্ন চলক, যেমন বৃষ্টিপাত ও গড় তাপমাত্রার পরিবর্তনের কারণে পরিবেশের বিভিন্ন উপাদানের অভিঘাত বৃদ্ধিতে অর্থনীতির খাতওয়ারি প্রভাব ধীরে ধীরে তীব্রতর হচ্ছে, যা সামনের দিনে সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনার বাইরে চলে যেতে পারে।

এঅবস্থা হলে জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব পরবে মানুষের জীবন–জীবিকার ওপর।
জলবায়ুর পরিবর্তনের প্রভাবে বাংলাদেশের উপকূলীয় নিম্নভূমির এলাকাগুলোতে তাপমাত্রা ও বৃষ্টিপাতের অনিয়মিত আচরণ কৃষিক্ষেত্রে যেমন ফসলের উৎপাদন ব্যাহত করছে, তেমনি চিরায়ত কৃষিচিত্র পাল্টে গেলে কর্মসংস্থান হ্রাসের কারণে জীবিকার সংকট আরো তীব্রতর হবে।
জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে বাংলাদেশে প্রতি বছরই কোনো না কোনো দূর্যোগের সম্মুখীন হতে হচ্ছে। যেমন, বন্যা, জলোস্সাস, সিডর, সাইক্লুন, ঘুর্নিঝড় ইত্যাদি… গত ২০০৭ সালে সিডর, ২০০৯ সালে সাইক্লুন আয়লা,. সাইক্লুন নার্গিস এগুলো খুবই তীব্র আকারে আগাত করে বাংলাদেশের বিভিন্ন অঞ্চলের ব্যপক ক্ষয়-ক্ষতি করে।

জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে গত দুই দশকে বজ্রপাত নতুন একটা দুর্যোগ হিসেবে বাংলাদেশে আবির্ভূত হয়েছে। ফলে সরকার ২০১৬ সালে একে প্রাকৃতিক দুর্যোগ হিসেবে ঘোষণা করে। গবেষণায় দেখা যায়, ২০১৩-২০ সাল পর্যন্ত দেশে বজ্রপাতে মৃতের সংখ্যা ১ হাজার ৮৭৮ এবং তাঁদের বেশির ভাগই (৭২ শতাংশ) কৃষক। বৈশ্বিক উষ্ণায়নের সঙ্গে বজ্রপাত–সম্পর্কিত গবেষণা বলছে, বিশ্বের সর্বত্র বজ্রপাত সমহারে বাড়ছে না, তবে আঞ্চলিক ক্ষেত্রে বজ্রপাতের ওপর উষ্ণায়নের প্রভাব সুস্পষ্ট। অর্থাৎ, বিশ্বব্যাপী না বাড়লে ও দক্ষিণ এশিয়া বা ক্রান্তীয় অঞ্চলের অনেক দেশে বজ্রপাতের সংখ্যা ধীরে ধীরে বাড়ছে। পাল্লা দিয়ে বাড়ছে মানুষের হতাহতের সংখ্যা। তাই মৃত্যু কমাতে গণসচেতনতার পাশাপাশি অতিরিক্ত বজ্রপাতপ্রবণ এলাকাগুলোর মানচিত্রায়ণ অত্যাবশ্যক।

দৈনিক কালের খবর নিয়মিত পড়ুন এবং বিজ্ঞাপন দিন..

কালের খবর মিডিয়া গ্রুপ লিমিটেডের একটি প্রতিষ্ঠান
Desing & Developed BY ThemesBazar.Com