সোমবার, ১৮ নভেম্বর ২০২৪, ১০:৪১ অপরাহ্ন
সংশ্লিষ্টরা বলেছেন, যেহেতু কাজটি থার্ড টার্মিনালের অংশ, সেহেতু সংশ্লিষ্ট বিদেশি ঠিকাদার কাজ না করলেও তাদেরকে এজন্য মোটা অঙ্কের টাকার লাভ (ইনডাইরেক্ট কস্ট) দিতে হবে। অপরদিকে অন্য ঠিকাদারকে দিয়ে করানোর কারণে দুটি কাজে বেবিচকের ব্যয় হবে ৮ কোটি টাকা। সবমিলিয়ে বেবিচকের গচ্চা যাবে কমপক্ষে ১০ কোটি টাকা। এর মধ্যে বিমানবন্দরের নর্থ টেক্সিওয়ের বক্স কালভার্ট নির্মাণকাজের ব্যয় ধরা হয়েছে ৫ কোটি ৫২ লাখ আর ড্রেনেজ প্রকল্পের ৩ কোটি টাকা। অথচ থার্ড টার্মিনাল প্রকল্পের জন্য ইতোমধ্যে সরকার দক্ষিণ কোরিয়ার ঠিকাদার স্যামসাং ও জাপানের সিমুজির নেতৃত্বাধীন এভিয়েশন ঢাকা কনসোর্টিয়ামকে (এডিসি) ২২ হাজার কোটি টাকা প্রদান করেছে। এই ব্যয়ের মধ্যে এ দুটি ছাড়াও আরও একটি প্রকল্প অন্তর্ভুক্ত আছে।
সংশ্লিষ্টদের অভিযোগ-বেবিচকের সিভিল ডিভিশনের একজন নির্বাহী প্রকৌশলী পুরো এই অনিয়মের সঙ্গে জড়িত। তার এক ঘনিষ্ঠ ঠিকাদারকে কাজটি দেওয়ার জন্য তিনি এই প্রকল্পটি তৈরি করেছেন। এর সঙ্গে থার্ড টার্মিনাল প্রকল্পের বিদেশি ঠিকাদার (এডিসি) ও বেবিচকের কানসালটেন্ট ফার্মের বেশ কজন অসাধু কর্মকর্তা জড়িত। এই সিন্ডিকেট বিদেশি ঠিকাদারকে বুঝিয়েছে কাজটি হয়ে গেলে একদিকে তাদের খরচ বাঁচবে, অপরদিকে তারা বেনিফিট ক্লেইম (লাভ দাবি) করতে পারবে। কারণ থার্ড টার্মিনাল প্রকল্পের টেন্ডারে দর প্রস্তাব করার সময় তারা এসব কাজের লাভও হিসাবে অন্তর্ভুক্ত করেছিল।
জানা যায়, ওই নির্বাহী প্রকৌশলী বেবিচকের শীর্ষ পর্যায়ে ভুল তথ্য দিয়ে কাজটি হাসিল করে নেন। এতে তার বিরুদ্ধে বিপুল অঙ্কের টাকা ‘আন্ডারহ্যান্ডলিং’-এর অভিযোগ আছে। তার হাত দিয়েই সিভিল ডিভিশনের সব ধরনের উন্নয়ন, মেরামত ও রক্ষণাবেক্ষণের কাজের প্ল্যান তৈরি হয়। এরপর তিনি সেসব কাজ তার পছন্দের ঠিকাদারের কাছে বিক্রি করে দেন।
আরও জানা যায়, শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের অপারেশনাল এলাকার পানি নিষ্কাশনব্যবস্থার উন্নতির কথা বলে ওই নির্বাহী প্রকৌশলী প্রকল্পটি তৈরি করেন। কাজটি বাস্তবায়নকাল ধরা হয় ২০২০-২০২১ অর্থবছর। গত বছরের আগস্টে প্রকল্পটির অনুমোদন দেয় বেবিচক। কিন্তু বিপত্তি দেখা দেয় চলতি বছরের জানুয়ারিতে। কারণ, থার্ড টার্মিনালের ঠিকাদার এডিসি বক্সকালভার্ট প্রকল্পটি শুরু করার জন্য গত জানুয়ারিতে সাইটে গিয়ে দেখতে পান অন্য ঠিকাদার সেখানে কাজ করছে। এ নিয়ে তারা বেবিচকের শীর্ষ পর্যায়ে অভিযোগ জানান। এভাবে পুরো তথ্য ফাঁস হয়ে পড়ে। এ অবস্থায় গত ৩১ জানুয়ারি থার্ড টার্মিনালের প্রকল্প পরিচালক বিষয়টির বিস্তারিত বর্ণনা তুলে ধরে প্রধান প্রকৌশলীকে চিঠি লেখেন। চিঠিতে তিনি প্রকল্পটি জাইকার অর্থায়নে থার্ড টার্মিনালের ঠিকাদার এডিসির মাধ্যমে নাকি বেবিচকের নিজস্ব অর্থায়নে প্রকল্পবহির্ভূত মেসার্স এমসি-এমটিটি জেভি প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে করা হবে, এর সুস্পষ্ট নির্দেশনা চান।
ওই চিঠিতে তিনি বলেন, ৯ জানুয়ারি এই বক্স কালভার্টটি নির্মাণের জন্য মেসার্স এমসি-এমটিটি জেভিকে কার্যাদেশ দেওয়া হয়। কার্যাদেশ অনুযায়ী সিভিল ডিভিশন-১-এর মাধ্যমে কাজটি করার কথা। তবে নথিপত্র পর্যালোচনা করে দেখা যায়, হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর সম্প্রসারণ প্রকল্পের আওতায় পরামর্শক প্রতিষ্ঠান কাজটি করার জন্য দক্ষিণ কোরিয়ার ঠিকাদার এডিসিকে কার্যাদেশ ও শপ ড্রয়িং অনুমোদন করেছেন। কিন্তু বাস্তবে দেখা যাচ্ছে, কাজটি থার্ড টার্মিনাল প্রকল্পের আওতায় না করে চুক্তিবহির্ভূতভাবে অন্য ঠিকাদারকে দিয়ে করানো হচ্ছে। চিঠিতে আরও বলা হয়, এটা করা হলে প্রকল্পের মূল ঠিকাদারকে ইনডাইরেক্ট কস্ট বাবদ অর্থ প্রদান করতে হবে।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে থার্ড টার্মিনালের এক শীর্ষ কর্মকর্তা বলেন, শুধু এ দুটি প্রকল্পই নয়, এই সিন্ডিকেট এভাবে আরও অসংখ্য প্রকল্প গোপনে বিভিন্ন পছন্দের ঠিকাদারের কাছে বিক্রি করে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছে। তদন্ত করলে ‘কেঁচো খুঁড়তে সাপ’ বেরিয়ে আসবে-এমন মন্তব্য করেন ওই কর্মকর্তা।
এ বিষয়ে কথা বলার জন্য প্রকল্পের পিডি ও বেবিচকের প্রধান প্রকৌশলীর সঙ্গে মোবাইল ফোনে একাধিকবার যোগাযোগ করা হলেও তারা কেউ কল রিসিভ করেননি।
বেবিচকের কনসালটেন্ট ফার্মের প্রধান ও সাবেক প্রধান প্রকৌশলী মাহতাব উদ্দিন চৌধুরী জানান, বিষয়টি তিনি শুনেছেন। থার্ড টার্মিনালের কাজ কীভাবে অন্য ঠিকাদারকে দেওয়া হলো, এটা তার বোধগম্য হচ্ছে না। তিনি বলেন, যদি তাই হয়, তাহলে এডিসি (কোরিয়ান ঠিকাদার) এর জন্য ইনডাইরেক্ট কস্ট দাবি করতে পারবে। তখন এক কাজের জন্য দুই বিল দিতে হবে বেবিচককে।
এভিয়েশন ঢাকা কনসোর্টিয়ামের (এডিসি) ইলেকট্রিক্যাল ম্যানেজার টাইগার চুইকে ফোন দিলেও তিনিও কথা বলতে রাজি হননি। তবে নাম প্রকাশ না করার শর্তে তার অফিসের একজন কর্মকর্তা বলেন, বিষয়টি নিয়ে তারা এখনো কোনো সিদ্ধান্ত নেননি।