শনিবার, ০২ ডিসেম্বর ২০২৩, ১১:১৫ পূর্বাহ্ন

সংবাদ শিরোনাম :
সরকারের চাপে পড়ে যে কজন হেভিওয়েট নেতা বিএনপি থেকে বেরিয়ে ভোটে অংশ নিচ্ছেন। কালের খবর মানবতার সেবায় উদাহরণ হয়ে থাকবেন ঠাকুরগাঁও জেলার পুলিশ সুপার উত্তম প্রসাদ পাঠক। কালের খবর সিরাজগঞ্জ- ৬ শাহজাদপুর আসনে নৌকার মনোনয়ন পেলেন মোঃ চয়ন ইসলাম। কালের খবর আসন্ন সংসদ নির্বাচনে রূপগঞ্জে বস্ত্র ও পাটমন্ত্রী গোলাম দস্তগীর গাজী বীর প্রতীকের মনোনয়নপত্র জমা। কালের খবর প্রতিদিন পাচার হচ্ছে ৪০-৫০ লাখ টাকা, ধরাছোঁয়ার বাইরে চক্রের সদস্যরা। কালের খবর দলের মনোনয়ন-বঞ্চিত হয়ে চট্টগ্রাম -১১ আসনের স্বতন্ত্র প্রার্থীর পক্ষে একাত্মতায় আওয়ামী লীগ নেতৃবৃন্দ। কালের খবর মাশরাফির আসনে স্বতন্ত্র প্রার্থী-সাংবাদিক সংস্থার চেয়ারম্যান লায়ন নুর ইসলাম। কালের খবর মুরাদনগরে বাড়িতে ঢুকে অতর্কিত হামলা ভাঙচুর মামলা নেয়নি ওসি নিরাপত্তাহিনতায় ভুক্তভোগি পরিবার। কালের খবর যশোর ৪ আসনে (এনামুল হক বাবুল) নৌকার মনোনয়ন পাওয়ায় বাঘারপাড়াসহ বিভিন্ন এলাকায় আনন্দ মিছিল। কালের খবর দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ৩০০ আসনে আওয়ামী লীগের চূড়ান্ত প্রার্থীর তালিকা। কালের খবর
নৌপথ দাপিয়ে বেড়াচ্ছে অবৈধ স্পিডবোট

নৌপথ দাপিয়ে বেড়াচ্ছে অবৈধ স্পিডবোট

শামীম আহমেদ, বরিশাল।

নৌপথে বিআইডব্লিউটিএর নিষেধাজ্ঞা উপেক্ষা করে শতশত স্পিডবোট অবৈধভাবে যাত্রী ও পণ্য পরিবহন করছে বরিশাল-ভোলা-মেহেন্দিগঞ্জে। নদীতে মাত্রাতিরিক্ত অবৈধ নৌযান চলায় প্রায়ই দুর্ঘটনা ঘটছে, হতাহত হচ্ছেন যাত্রী ও জেলেরা। তারপরও এসব অবৈধ যান চলাচল বন্ধ হচ্ছে না।

অভিযোগ রয়েছে, স্পিডবোট মালিক সমিতির নেতারা প্রশাসনের সঙ্গে যোগসাজশের মাধ্যমে অবৈধ যানটি পরিচালনা করছে। জানা গেছে, কয়েকটি রুটে চলাচলরত তিন শতাধিক স্পিডবোট থেকে প্রতিদিন মোটা অঙ্কের চাঁদা তোলা হয়ে থাকে। স্পিডবোট মালিকরা এই টাকা আবার যাত্রীদের কাছ থেকেই হাতিয়ে নেয়।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বর্তমানে বরিশাল-ভোলা রুটে দেড় শতাধিক স্পিডবোট চলাচল করছে। বরিশাল নগরীর ডিসি ঘাট ও লাহারহাট থেকে এসব স্পিডবোট ভোলা খেয়াঘাট ও লাহারহাট পর্যন্ত চলাচল করে। এছাড়াও নগরসংলগ্ন তালতলী ব্রিজ এলাকা থেকে মেহেন্দিগঞ্জে অর্ধশত অবৈধ স্পিডবোট চলাচল করে। এসব স্পিডবোটের সিংহভাগই পুরোনো, ফাটা ও জোড়াতালি দেয়া। পথিমধ্যে পানি ওঠে এবং ইঞ্জিন বিকল হয়ে অনেক সময় আগুন ধরে যায়। অধিকাংশ বোটে নেই লাইফ জ্যাকেট। দুই-একটি বোটে লাইফ জ্যাকেট থাকলেও তা ব্যবহার অনুপযোগী। এসব নিয়ে যাত্রীরা কথা বললেই চালকদের দুর্ব্যবহারের শিকার হন। অনেক চালক পথিমধ্যে বোটের ইঞ্জিনে ত্রুটির কথা বলে কিংবা চরে তুলে দিয়ে যাত্রীদের ঘণ্টার পর ঘণ্টা আটকে রাখে। এ কারণে ভয়ে এসব অনিয়মের কেউ প্রতিবাদ করে না, এমন অভিযোগও পাওয়া গেছে।

বরিশাল বিআইডব্লিটিএর দাবি, এসব রুটে যেসব স্পিডবোট চলাচল করে সেগুলোর মধ্যে মাত্র আটটি ছাড়া বাকিগুলোর কোনো সার্ভে সনদ, রেজিস্ট্রেশন এবং রুট পারমিট নেই। অবৈধভাবে চলাচল করা এই নৌযান ঘিরে চাঁদাবাজ চক্র গড়ে উঠেছে। যে কারণে অবৈধভাবে চলাচলকারী স্পিডবোট বন্ধে স্থানীয় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও প্রশাসনকে চিঠি দিয়েছে বিআইডব্লিউটিএর নৌ নিরাপত্তা ও ট্রাফিক ব্যবস্থাপনা বিভাগ।

গত ২৩ আগস্ট চিঠিগুলো দেয়া হয় বরিশালের জেলা প্রশাসক, পুলিশ সুপার, নৌ-পুলিশ সুপার, মেট্রোপলিটনের বন্দর থানাসহ বিভিন্ন আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে। চিঠিতে উল্লেখ করা হয়েছে, অবৈধ স্পিডবোট ও ট্রলার চলাচলে যে কোনো সময় যাত্রীসাধারণের জানমালের ক্ষয়ক্ষতি সাধনসহ দুর্ঘটনা ঘটার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে।

বরিশাল বিআইডব্লিউটিএর নৌ নিরাপত্তা ও ট্রাফিক ব্যবস্থাপনা বিভাগের উপপরিচালক মোহাম্মদ মুস্তাফিজুর রহমান বলেন, বরিশাল নগরীর ডিসিঘাট-সংলগ্ন কীর্তনখোলা ও লাহারহাটে যেসব স্পিডবোট চলাচল করে সেগুলোকে আইনের আওতায় আনার জন্য আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও জেলা প্রশাসনকে চিঠি দেয়া হয়েছে। লাহারহাট লঞ্চঘাটে ‘স্পিডবোট মালিক সমিতি’ নামে একটি সমিতি বিপুল অঙ্কের অর্থ হাতিয়ে নিয়েছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। এ ধরনের সমিতির কর্তৃপক্ষের কোনো অনুমোদন নেই বা কোনো আইনগত ভিত্তিও নেই। তিনি বলেন, স্পিডবোট চলাচল করতে নৌপরিবহন অধিদফতর থেকে সার্ভে সনদ, রেজিস্ট্রেশন এবং রুট পারমিট নিতে হবে। তারা বিআইডব্লিউটিএ থেকে সময়সূচি নেয়নি, আবেদনও করেনি। আটটি স্পিডবোট যথাযথ প্রক্রিয়া অনুসরণ করায় তাদের অনুমোদন দেয়া হয়েছে।

বরিশাল নৌ-পুলিশের পুলিশ সুপার মো. কফিল উদ্দিন জানান, বিআইডব্লিউটিএর পক্ষ থেকে কোনো কাগজপত্র তিনি পাননি। এছাড়াও এ বিষয়ে কোনো সুনির্দিষ্ট নীতিমালা আসেনি। সুনির্দিষ্ট নীতিমালা পেলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থাগ্রহণ করা হবে। স্পিডবোট মালিক-শ্রমিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক অহিদুল ইসলাম জানান, সম্প্রতি ডিসি ঘাট এলাকায় প্রশাসনের অভিযানে ৫০ হাজার টাকা জরিমানা আদায়ের পর তাদের নদীতে চলাচলে অনুমতি নিতে বলা হলে তারা সে অনুযায়ী আবেদন করেছেন।

তিনি জানান, প্রায় ৪০টি স্পিডবোট ও চালকদের প্রয়োজনীয় কাগজপত্র তারা সার্ভে সনদের জন্য নৌপরিবহন অধিদফতরে জমা দিয়ে স্পিডবোট পরিচালনা করছেন। চালকদের ডোপটেস্টও ইতিমধ্যে করা হয়েছে। খুব শিগগির অনুমতি মিলবে বলে তিনি জানান। বর্তমানে বরিশাল ডিসি ঘাট থেকে ভোলায় যাতায়াতকারী একেকটি স্পিডবোটে আট জন করে যাত্রী নেয়া হচ্ছে, ভাড়া নিচ্ছে জনপ্রতি ৩০০ টাকা।

জানা গেছে, ভোলার ভেদুরিয়া থেকে লাহারহাট পর্যন্ত ২০-২৫ মিনিটের পথ পাড়ি দিতে ভাড়া আদায় করা হয় যাত্রী প্রতি ২০০ টাকা। এ রুটে একেকটি স্পিডবোটে ১২ থেকে ১৫ জন যাত্রী ঠাসাঠাসি করে নেয়া হয়। বরিশাল নগরী থেকে ভোলা পর্যন্ত যেতে ভাড়া আদায় করা হয় যাত্রী প্রতি ৩০০ টাকা। আর বোট রিজার্ভ করে গেলে ভাড়া আদায় করা হয় ৫ হাজার টাকা। স্পিডবোট রিজার্ভ করে বরিশাল-ভোলা যাতায়াত করেন মূলত চিকিৎসকরা। প্রতিদিনই ১০-১২টি স্পিডবোট ভোরে রিজার্ভ করে চিকিৎসকরা ভোলায় যান। আবার তারা সন্ধ্যার পরে ভোলা থেকে রিজার্ভ বোটে ফিরে আসেন। এছাড়াও কোনো প্রকার নিয়মনীতির তোয়াক্কা না করেই অধিক লাভের আশায় রাত ১০টা পর্যন্ত কয়েকটি স্পিডবোট চলাচল করে থাকে।

জেলেরা জানান, ভোলা-বরিশাল রুটে তিনটি নদী ও কয়েকটি খাল অতিক্রম করতে হয়। এসব নদী ও খালে কয়েক হাজার জেলে মাছ ধরেন। স্পিডবোটগুলোর বেপরোয়া চলাচলের কারণে জেলেদের মাছ ধরায় বিঘ্ন ঘটছে, জাল ছিঁড়ে যাচ্ছে, এমনকি অনেক সময় দুর্ঘটনায় জেলেদের মৃত্যু পর্যন্ত ঘটছে।

দৈনিক কালের খবর নিয়মিত পড়ুন এবং বিজ্ঞাপন দিন..

কালের খবর মিডিয়া গ্রুপ লিমিটেডের একটি প্রতিষ্ঠান
Desing & Developed BY ThemesBazar.Com