বৃহস্পতিবার, ১২ ডিসেম্বর ২০২৪, ০১:৩৫ পূর্বাহ্ন
কালের খবর ডেস্ক : ঢাকার কামরাঙ্গীরচরে চাঁদা না পেয়ে ব্যবসায়ীকে রাস্তায় ফেলে কোঁপানোর সময় থানা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক ও কিশোর গ্যাং হোতা এম এইচ মাসুদ মিন্টুকে ককটেলসহ গ্রেফতার করছে পুলিশ। মঙ্গলবার রাতে শামীম নামের এক গার্মেন্ট ব্যবসায়ীকে তুলে নিয়ে মারধর করে চাঁদা আদায়ের সময় কামরাঙ্গীরচর থানা পুলিশ তার এক সহযোগী ও ককটেলসহ তাকে গ্রেফতার করে। এ সময় ওই ব্যবসায়ীকে গুরুতর আহতাবস্থায় উদ্ধার করে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।
বুধবার ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের দ্বিতীয় তলায় ২০১ নন্বর ওয়ার্ডে গিয়ে দেখা যায়, ব্যবসায়ী শামীমের অবস্থা আশঙ্কাজনক। ভালোভাবে কথা বলতে পারছেন না। শামীমের পাশে থাকা তার শাশুড়ি রুমা বেগম বলেন, কামরাঙ্গীরচর চান মসজিদ এলাকায় শামীমের খুকি ফ্যাশন নামের একটি তৈরী পোশাকের ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান রয়েছে। সেখানে তিনি দীর্ঘ দিন ধরে গার্মেন্টের তৈরী পোশাক পাইকারি ও খুচরা বিক্রি করে আসছেন। গত ঈদের আগে কামরাঙ্গীরচর থানা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক ও কিশোর গ্যাং হোতা এম এইচ মাসুদ মিন্টু শামীমের কাছে পাঁচ লাখ টাকা চাঁদা দাবি করে। চাঁদা না দেয়ায় ইতঃপূর্বে মিন্টু তার দলবল নিয়ে কয়েকবার শামীমের দোকানে গিয়ে হুমকি দেয়। কয়েক দিন আগে মিন্টু ১৫ জুন দুপুরের মধ্যে তার চাঁদা দেয়া না হলে তাকে জীবনে মেরে ফেলার হুমকি দেয়। নির্ধারিত সময় গত সোমবার দুপুরের মধ্যে চাঁদার টাকা না দেয়ায় ওই দিন রাত ১০টায় মিন্টু তার দলবল নিয়ে শামীমকে তার দোকান থেকে তুলে এনে রাস্তায় ফেলে রামদা ও হকি স্টিক দিয়ে তার মাথাসহ শরীরের বিভিন্ন স্থানে হামলা চালায়। এতে তার মাথাসহ শরীরের বিভিন্ন স্থান গুরুতর জখম হয়। এসময় শামীম বাঁচাও বাঁচাও চিৎকার করলেও কেউ তাকে মিন্টুর হাত থেকে বাঁচাতে সাহস করেনি। পরে থানা পুলিশ এসে তাকে উদ্ধার করে হাসপাতালে পাঠায়। হাসপাতালে সে এখনো অচেতন অবস্থায় আছে। তার নাক, মুখ দিয়ে রক্ত বের হচ্ছে।
রুমা বেগম আরো বলেন, মাসুদ মিন্টু এলাকায় আওয়ামী লীগের ক্ষমতাবান নেতা। তার সাথে দল বেঁধে এলাকার উঠতি বয়সী ছেলেরা ঘুরে বেড়ায়। মেয়েদের উত্ত্যক্ত করা, দল বেঁধে মাদক সেবন, ছিনতাই, চাঁদাবাজি তাদের নিত্যদিনের ঘটনা। তার বিরুদ্ধে থানায় অনেক মামলা রয়েছে। তার দাবি করা চাঁদা দিতে অস্বীকার করা হলে ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান থেকে ব্যবসায়ীদের তুলে নিয়ে মারধর করা হয়। তিনি বলেন, দুই মাস আগেও চান মসজিদ এলাকার ব্যবসায়ী হামজা ও সাগরের কাছে মিন্টু পাঁচ লাখ টাকা চাঁদা দাবি করে। তারা চাঁদা দিতে অস্বীকার করায় মিন্টু দলবল নিয়ে তাদেরকে ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান থেকে তুলে নিয়ে মারধর করে গুরুতর জখম করে ভ্যান গাড়িতে করে তাদেরকে বাসায় পাঠিয়েছে। তারা এভাবে আতঙ্ক সৃষ্টি করে ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে দীর্ঘ দিন ধরে চাঁদা আদায় করে আসছে।
এলাকাবাসী জানায়, এম এইচ মাসুদ মিন্টু ২০১৫ সালের দিকে ছাত্রলীগের বিভিন্ন মিছিল-সভাবেশে অংশ নিয়ে নেতাদের নজর কাড়েন এবং কামরাঙ্গীরচর থানা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদকের পদ বাগিয়ে নেন। সম্প্রতি প্রায় ৪০ লাখ টাকা খরচ করে আলিশান ও বিলাসবহুল একটি কার্যালয় উদ্বোধন করেন তিনি। এখন তিনি কিশোর গ্যাংয়ের সদস্যদের দিয়ে চাঁদাবাজি চালিয়ে যাচ্ছেন। মিন্টুর চাঁদাবাজির সাম্রাজ্য পরিচালনা করে তার ছোট ভাই সবুজ সানি, বাবা সোহেল ও কানা শাজাহান। কামরাঙ্গীরচর থানা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি আব্দুল হামিদ বলেন, দুঃসময়ে আমরা কামরাঙ্গীরচরে দলের নেতৃত্ব দিয়েছি। কিন্তু কোনো দিন মিন্টুকে দেখিনি। এখন নেতা হয়ে সে জোর-জুলুম শুরু করে দিয়েছে। তার অত্যাচারে আমরা অতিষ্ঠ, এমনকি সম্মান নিয়ে বসবাস করাও কঠিন হয়ে পড়েছে।
টেকের হাটি নূর সুপার মার্কেটের ব্যবসায়ী মো: ইলিয়াস মৃধা বলেন, আমার থেকে প্রথমে সজল গং চাঁদা দাবি করে, পরে আমি অপারগ হলে সজল গং সবুজ-মিন্টুসহ দলবল নিয়ে আমার ওপর অতর্কিত হামলা চালিয়ে আমাকে আহত করে। এ সময় হামলাকারীরা আমার কাছে থাকা তিন লাখ ৫০ হাজার টাকা ছিনিয়ে নিয়ে যায় এবং আমাকে বিভিন্ন মাধ্যমে প্রাণনাশের ভয়ভীতি দেখায়। পরে আমি থানায় মামলা করি।
এ ব্যাপারে কামরাঙ্গীরচর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মোস্তাফিজুর রহমানের সাথে মোবাইলে যোগাযোগ করা হলে তিনি ঘটনার সত্যতা স্বীকার করে বলেন, কামরাঙ্গীরচর থানা পুলিশ সোমবার রাতে চাঁদা না পেয়ে শামীম নামের এক ব্যবসায়ীকে তুলে এনে রাস্তায় ফেলে মারধর করার অপরাধে থানা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক এম এইচ মাসুদ মিন্টুকে পুলিশ তার এক সহযোগীসহ গ্রেফতার করেছে।
বাকিরা পুলিশের উপস্থিত টের পেয়ে পালিয়ে গেছে। এ ব্যাপারে শামীমের বাবা নুরু মিয়া বাদি হয়ে মাসুদ মিন্টু, সবুজ, কানা সাজাহান, সোহেল, রাব্বি, জনি, রাজন ও হালিমসহ আরো ১৫-২০ জন অজ্ঞাত আসামির বিরুদ্ধে মামলা করেছে। গ্রেফতারকৃতদের কোর্টে পাঠানো হয়েছে, বাকিদের গ্রেফতারের চেষ্টা চলছে।