ভবনটিতে সুসজ্জিত ও সমৃদ্ধ লাইব্রেরি, আধুনিক পোস্টাল মিউজিয়াম, সুপরিসর অডিটোরিয়াম, ক্যাফেটেরিয়া, ডে-কেয়ার সেন্টার, মেডিকেল সুবিধা, অগ্নিনির্বাপক ব্যবস্থা ও সার্বক্ষণিক ওয়াইফাই সহ অন্যান্য তথ্যপ্রযুক্তিগত সুবিধা রয়েছে। এ উপলক্ষে একটি বিশেষ স্মারক ডাকটিকিট প্রকাশ করা হয়। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এই বিশেষ স্মারক ডাকটিকিট অবমুক্ত করেন। অনুষ্ঠানে ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রী মোস্তাফা জব্বার ও ডাক ও টেলিযোগাযোগ সচিব আফজাল হোসেন বক্তব্য দেন। অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক, ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত স্থায়ী কমিটির সভাপতি একেএম রহমতউল্লাহ সহ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাগণ। প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব ড. আহমদ কায়কাউস পিএমও থেকে অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন। পিএমও সচিব তোফাজ্জল হোসেন মিয়াসহ গণভবন এবং পিএমও’র ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাবৃন্দ এ সময় উপস্থিত ছিলেন। অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমরা ডাক বিভাগের পরিবহন ব্যবস্থা ত্বরান্বিত করতে ১১৮টি ডাক গাড়ি সংযোজন করেছি। এসব গাড়ি চালনার জন্য পুরুষের পাশাপাশি নারীকে গাড়িচালক হিসেবে নিয়োজিত করেছি। ডাক বাছাই ত্বরান্বিতকরণ ও পচনশীল দ্রব্য সংরক্ষণের জন্য চিলিং চেম্বারের সুবিধা সংবলিত ওয়্যারহাউস যুক্ত ১৪টি অত্যাধুনিক মেইল প্রসেসিং ও লজিস্টিক সার্ভিস সেন্টার নির্মাণের কাজ সমাপ্তির পথে। তিনি বলেন, প্রথমে আমরা বিভাগ এবং জেলা পর্যায়ে এগুলো করছি। কিন্তু আমাদের লক্ষ্য থাকবে এবং আমি এটা ডাক বিভাগকে বলবো একদম উপজেলা এবং ইউনিয়ন পর্যায় পর্যন্ত অর্থাৎ ডাকঘর যেখানে থাকবে সেখানেই এই ব্যবস্থাটা নিতে হবে। প্রধানমন্ত্রী বলেন, করোনাভাইরাসের কারণে এখন বেশির ভাগ অনলাইন সেবা চলছে, অনলাইনে ক্রয়-বিক্রয় চলছে। পচনশীল জিনিস অর্থাৎ খাদ্যদ্রব্য থেকে শুরু করে ফলমূল, তরিতরকারি এগুলো যেন ডাকের মাধ্যমে পাঠানো যায়। তিনি উদাহরণ দেন- কেউ নিজে রান্না করে আরেক জেলায় আত্মীয়ের কাছে খাবার পাঠাবেন, সেটাও যেন পাঠাতে পারেন। সেই জন্যই এই চিলিং সিস্টেমটা বা কুলিং সিস্টেমটা খুব দরকার। অর্থাৎ সেই ধরনের ফ্রিজিং টেম্পারেচার করে দেয়া যাতে জিনিসটা নষ্ট হবে না এবং সঠিক ব্যক্তির কাছে গিয়ে পৌঁছাবে। প্রধানমন্ত্রী বলেন, প্রতিটি উপজেলা এবং ইউনিয়ন পর্যায়ে এরকম সেন্টার থাকবে যেখান থেকে পোর্টেবল বক্সে করে এসব ডেলিভারি হবে সেভাবেই ডাকের সেবাটাকে একেবারে জনগণের দোরগোড়ায় পৌঁছে দিতে হবে এবং সে ব্যবস্থাটাও আপনাদের এখন নিতে হবে। ‘৩৮টি মডেল ডাকঘর নির্মাণের কাজ সরকার হাতে নিয়েছে,’ উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, তিনি চাইবেন সারা বাংলাদেশে এটা করে দিতে। যাতে ঘরে বসেও অনেকে টাকা-পয়সা উপার্জন করতে পারবেন। এতে মানুষের যেমন কর্মসংস্থান হবে তেমনি মানুষ সেবাটাও পাবে। সরকার ইউনিভার্সাল পোস্টাল ইউনিয়নের রূপরেখার আওতায় বিভিন্ন দেশের সঙ্গে ডাকপরিষেবা বাড়াতে দ্বিপক্ষীয় চুক্তি স্বাক্ষর করেছে বলেও প্রধানমন্ত্রী উল্লেখ করেন। প্রধানমন্ত্রী বলেন, পোস্ট ই- সেন্টার প্রকল্পের আওতায় বাংলাদেশের ৮,৫০০টি ডাকঘরকে ২০১৮ সালের জুনের মধ্যেই ডিজিটাল ডাকঘরে রূপান্তরিত করা হয়েছে। যার মাধ্যমে সামাজিক উদ্যোক্তা সৃষ্টির পাশাপাশি প্রতিবন্ধী মহিলা ও পুরুষদের কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি করেছে। এই ডাকঘর থেকে বিভিন্ন বয়সী প্রশিক্ষণার্থী কম্পিউটারের উপর মৌলিক প্রশিক্ষণ গ্রহণ করছেন এবং গ্রামীণ জনগণ আধুনিক তথ্য প্রযুক্তিনির্ভর সেবা, যেমন: ইন্টারনেট ব্রাউজিং, বিভিন্ন পাবলিক পরীক্ষার ভর্তি ফরম অনলাইনে পূরণ, ফলাফল ডাউনলোড, দেশে-বিদেশে ভিডিও কনফারেন্সিং, ছবি তোলা, ডকুমেন্ট প্রিন্ট আউট প্রভৃতি সেবা লাভ করছে। তিনি বলেন, সরকার ১৮৯৮ সালের ডাকঘর আইনকে হালনাগাদ ও সংশোধন করে ডাকঘর (সংশোধন) আইন-২০১০ প্রণয়ন করেছে। এই আইনের ৪(ক) অনুচ্ছেদটিতে-‘জনগণকে সেবা প্রদানের কথা বিবেচনা করে রূপান্তর, বিন্যাস বা নতুন প্রযুক্তি গ্রহণ ও ব্যবহার করতে পারবে। এ ছাড়াও অর্থ প্রেরণ সুবিধা, ব্যাংকিং সুবিধা এবং নিজে বা অন্য কারো সঙ্গে চুক্তিবদ্ধ হয়ে জীবন বীমা সেবা প্রদান করতে পারবে।’- যার সুফল আজ মানুষ পাচ্ছে। প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমরা ডাক বিভাগের কার্যপ্রক্রিয়া স্বয়ংক্রিয়করণ, পোস্টাল একাডেমি এবং ৪টি পোস্টার ট্রেনিং সেন্টার শক্তিশালীকরণ ও মানবসম্পদ উন্নয়নে প্রকল্প গ্রহণ ও বাস্তবায়ন করেছি। নবনির্মিত আধুনিক ভবনে যাতে গ্রাহকসেবা বৃদ্ধি পায় এবং আধুনিক প্রযুক্তির সন্নিবেশনও যাতে হয় সেদিকে লক্ষ্য রাখার জন্য প্রধানমন্ত্রী আহ্বান জানান। তিনি আশা প্রকাশ করেন, এই অত্যাধুনিক কার্যালয় কর্মকর্তা-কর্মচারীদের কাজকর্মে আরো গতিশীলতা আনবে। প্রধানমন্ত্রী বলেন, লেটারবক্স অনেকে ভুলে গেছে। সবাই এসএমএস ও মেইল দেয়। কিন্তু দৃষ্টিনন্দন এই লেটারবক্সসদৃশ ভবন দেখলে চিঠি পাঠানোর কথা মনে পড়বে। ভবনে চিঠিপত্র ঝুলছে, চিঠি যাচ্ছে, আসছে- এমন কিছু চিত্র যোগ করারও পরামর্শ দেন প্রধানমন্ত্রী।