রবিবার, ১৭ নভেম্বর ২০২৪, ০৯:৫৫ অপরাহ্ন
তিতাসের চতুর্থ শ্রেণীর কর্মচারি কুমিল্লা জেলার বুরিচং এর মোহাম্মদ জহিরুল ইসলাম। তিনি পদে ছোট হলে প্রভাব বেশী। তাই তিনি তিতাসের পাইপ অবৈধভাবে বিক্রি করে শত কোটি টাকার মালিক বনে গেছেন। এ পাইপ বিক্রিটা ভিন্নভাবে কর্তৃপক্ষকে বুঝিয়ে দেন কাগজে কলমে। তার বর্তমান অবস্থান প্রতিরোধহীন। তিনি তিতাসের এক স্বঘোষিত বীর। তার কোন দুর্নীতির বিরুদ্ধে অবস্থান করার কেউ ছিলনা এতোদিন। গ্রামের বাড়ি থেকে রাজধানী কোথায় নেই বিলাশবহুল বাড়ি গাড়ি। তিনি তিতাসের এক আতঙ্কিত ব্যক্তি। তার দুর্নীতির অনুসন্ধ্যানে বেরিয়ে আসেছ অনেক কিছু। তা নিয়েই কালের খবর এ প্রতিবেদন।
তিতাস ও বিভিন্ন মহল থেকে যা জানা যায়, তিতাসের চতুর্থ শ্যেণীর কর্মচারি মোহাম্মদ জহিরুল ইসলাম অবৈধ অর্জনের অর্থে রাজধানীতে ৬টি সহ গ্রামের বাড়ীতে ১০ কোটি টাকার বাড়ী। তার পারিবারিক যোগ্যতাও কমনেই। তার রয়েছে ৪ স্ত্রী ৬ সন্তান। তাদের নিয়ে রাজকীয় সংসার রাজধানীসহ গ্রাামে। বিলাশিতার জীবনে ঘুরে বেড়ান প্রাডো গাড়ীতে। সব সময়ই ক্ষমতাসিন দলের কর্মীতে পরিনত হন। বর্তমানে তিনি সেজেছেন আওয়ামী লীগের কর্মী।
বলাবাহুল্য বর্তমান সরকার যখন দুর্নীতির বিরুদ্ধে সোচ্ছার তখনো তিনি থেমে নেই অনিয়ম দুর্নীতির লড়াইয়ে। এ লড়াই তিনি প্রতিরোধহীন বলেই গড়েছেন অঢেল সম্পত্তি। তিতাস গ্যাস ট্রান্সমিশন অ্যান্ড ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানির প্রায় অর্ধকোটি টাকার সরকারি পাইপসহ অন্য মালামাল অবৈধভাবে বিক্রি করে দেয়ার অভিযোগ উঠছে তিতাসের অফিস সহকারী আলোচিত মোহাম্মদ জহিরুল ইসলামসহ কয়েক কর্মকর্তা কর্মচারীর বিরুদ্ধে। তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ ওঠছে তারা এসব পাইপ ও মালামাল অবৈধভাবে বিক্রি করে কর্তৃপক্ষকে স্টোরে জমা করেছে বলে বুঝিয়ে দিচ্ছেন কাগজে কলমে।
অথচ বাস্তবতায় তার ভিন্ন পরিস্থিতি পরিবেশ। তারা কাগজ কলমে দেখালেও সে পাইপসহ মালামাল তিতাসের স্টোরে জমা নেই। কাগজে স্টোরে কিন্তু তারা তা অবৈধভাবে বিক্রি করে অর্থ হাতিয়ে নিচ্ছেন বলে তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ পাওয়া গেছে। তাদের বিরুদ্ধে আরো অভিযোগ ওঠছে তারা তিতাসের অবৈধ সংঘবদ্ধ একটি চক্র। পরে বিষয়টি তিতাসের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের নজরে গেলে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করেন তিতাস কর্তৃপক্ষ।
তিতাস কর্তৃপক্ষের সিনিয়র রেকর্ডকিপার মোহাম্মদ ওয়ালী উল্লাহ পাটোয়ারী সংশ্লিষ্ট প্রতিবেদকে জানিয়েছেন, আনিত অভিযোগের বিরুদ্ধে তদন্ত চলছে। এ তদন্তে যারা দোষী হিসেবে চিহ্নিত হবে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে। নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁও অঞ্চলে বর্তমানে কর্মরত অফিস সহকারী মোহাম্মদ জহিরুল ইসলামই পাইপ বিক্রি চক্রের মূল হোতা বলে তিতাসে জনশ্রæতি। বিভিন্ন সময় অভিযান চালিয়ে তুলে আনা জমানো পাইপ গুলো অফিস সহকারি মোহাম্মদ জহিরুল ইসলাম একটি রি রোলিং মিলে বিক্রি করেছেন।
প্রায় অর্ধকোটি টাকার এ পাইপ আইনগতভাবে বৈধতা দেখানোর জন্য তিনি তিতাসের মূল ভারকেন্দ্র ডেমরার কয়েকজন কর্মকর্তা-কর্মচারীকে ম্যানেজ করে কাগজে-কলমে বিক্রি হওয়া পাইপগুলো অফিসের স্টোরে জমা করেন। কিন্তু প্রকৃত অর্থে মালা-মাল গুলো স্টোরে জমা হয়নি। বিষয়টি পরে তিতাসের কর্তৃপক্ষ জানায় তদন্ত শুরু হলে মালামাল জমা হওয়ার অফিসিয়াল ডকুমেন্ট এমটিভিতে স্বাক্ষর করা কর্মকর্তারা তড়িঘড়ি করে তা বাতিল করার অনুরোধ করেন। এদিকে গত ২৬ জানুয়ারি তিতাসের আঞ্চলিক অফিস সোনারগাঁও থেকে প্রায় পাঁচ হাজার মিটার স্ক্রাপ এমএস পাইপ, এক ডজন ভাল্বপিটসহ অন্য মালামাল তিতাসের ডেমরা সংরক্ষণাগারে পাঠানো হয়।
প্রকৃতপক্ষে এ মালামাল পাঠানো হয়নি। মালামাল গোডাউনে জমা না করেই ডেমরার দায়িত্বে থাকা সিনিয়র রেকর্ডকিপার মো. ওয়ালী উল্লাহ পাটোয়ারী মালগুলোর প্রয়োজনীয় রসিদ এমটিভি ফরমে স্বাক্ষর করেন ( যার ফরম নম্বর ১০৫ ও ১০৬) ওয়ালী উল্লাহ পাটোয়ারী নিজে এমটিভিতে স্বাক্ষর করে সহকারী কর্মকর্তা গাজী সুলতান উদ্দিন আহমেদ, সহকারী ব্যবস্থাপক মো. আনিছুজ্জামান, সহকারী ব্যবস্থাপক মোঃ রুহুল আমীনের স্বাক্ষর নিয়ে ব্যবস্থাপক মোঃ সহিদ আলী প্রামাণিক এবং উপ-মহাব্যবস্থাপক মাসুদ উর রহমানের স্বাক্ষর নেওয়া হয়। পরর্র্বতী সময়ে কর্তৃপক্ষ জানতে পারে, ম্যাটেরিয়াল ট্রান্সফার ভাউচার (এমটিভি) মালামাল ডেমরা স্টোরে প্রবেশ করেনি।
পরে দায়িত্ব থাকা কর্মকর্তারা নিরাপত্তা বিভাগের রেজিস্টার্ড এবং ভিডিও ফুটেজ পরীক্ষা করে দেখেন যে মালামাল প্রবেশ করেনি। পরে ১ ফেব্রæয়ারী কর্মকর্তা-কর্মচারীদের ডেকে নিয়ে মালামাল কোথায় গেল জানতে চাওয়া হলে মোঃ ওয়ালী উল্লাহ পাটোয়ারী মালামাল গ্রহণ না করেই এমটিভি প্রদানের রসিদের স্বাক্ষরের কথা স্বীকার করেন। পরে তিতাস কর্তৃপক্ষ এমটিভি দুটি বাতিল ঘোষণা করে।
এদিকে এ ঘটনায় তিতাসের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আলী ইকবাল মো.নুরুল্লাহর নির্দেষে তিতাসের মালামাল গোডাউনে না ঢুকিয়ে কেন এমটিভি তৈরি করা হলো এবং মালামাল কোথায় গেল- পুরো ঘটনা উদ্ঘাটন করে দায়ীদের চিহ্নিত করে শাস্তি নিশ্চিত করতে তিন সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করে দেওয়া হয়েছে। কমিটিতে রয়েছেন উপ-মহাব্যবস্থাপক মোহাম্মদ ইউসুফ, ব্যবস্থাপক মো. মাহমুদ উর রহমান ভূঞা ও ব্যবস্থাপক মোহাম্মদ আবু বকর।
এবিষয়ে অভিযুক্ত মো. জহিরুল ইসলামের কাছ থেকে জানতে চাইলে তিনি কোন প্রকার কথা বলতে চাননি। তার মুটোফোনে একাধিকবার কল দিলেও রেসপন্স করেনি। ডিজিএম মো. মাসুদ উর রহমান বলেন, মালামাল গোডাউনে না ঢুকিয়ে এমটিভি তৈরি করার সত্যতা আছে। ঘটনাটি তদন্ত করা হচ্ছে। তদন্ত শেষে দোষীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এদিকে অভিযুক্ত মো. জহিরুল ইসলামের রয়েছে রাজধানীতে ৬ টি বাড়িসহ তার গ্রামের বাড়ী কুমিল্লা জেলার বুড়িচং থানাধীন আনন্দপুর গ্রামে ৪ বিঘা জমির উপর ৪ তলা একটি ১০ কোটি টাকা ব্যয়ে আলিশান বাড়ী।
জহিরুল ৪র্থ শ্রেনীর র্কমচারী হলেও চলেন প্রাডো গাড়ীতে। ৪ স্ত্রী ও ৬ সন্তান নিয়েই তার এই রাজকীয় সংসার। গ্রাম সুত্রে তার বাবা একজন কৃষক ছিলেন আর তিনি ১০ কোটি টাকা খরচ করে কিভাবে বাড়ী করলেন এমন প্রশ্ন গ্রামের গণ্যমান্য ব্যাক্তিবগের্র। এ বিষয় গুলোকে নজরে নিয়ে তিতাস গ্যাস ট্রান্সমিশন অ্যান্ড ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানির প্রায় অর্ধকোটি টাকার সরকারি পাইপসহ অন্য মালামাল অবৈধভাবে বাইরে বিক্রি করে দেওয়ার অভিযোগে জহিরুলকে সাময়িক বরখাস্ত করেছে।