শনিবার, ০৯ নভেম্বর ২০২৪, ০৬:০২ পূর্বাহ্ন
সৈয়দ সিরাজুল ইসলাম হাসান, কালের খবর :
জাতির এই চলমান দুঃসময়ের মানব সেবায় অবিচল মাঠে রয়েছেন শ্রীমঙ্গল উপজেলা প্রশাসনিক (৭) কর্মকর্তা। নিজের জীবনের ঝুঁকি নিয়ে নিজের কথা চিন্তা না করেই জনগণের কল্যাণে দাঁড়িয়েছেন মানুষের পাশে শ্রীমঙ্গলের এই প্রশাসনিক কর্মকর্তারা। করোনার কঠিন পরিস্থিতির মধ্যে মৃত্যু ঝুঁকি উপেক্ষা করেই প্রশাসনের এই কর্মকর্তারা তাদের অধীনস্থ সহকর্মীদের নিয়ে ‘ আইন শৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ সহ, মহামারী করোনা মোকাবেলায় চষে বেড়াচ্ছেন গোটা শ্রীমঙ্গল উপজেলা।
সরকারি নির্দেশনা অনুযায়ী স্বাস্থ্যবিধি, লকডাউন কার্যকর, হোম কোয়ারেন্টিন, সামাজিক দূরত্ব নিশ্চিতকরণ, দরিদ্র ও কর্মহীন মানুষের বাড়ি বাড়ি ত্রাণ পৌঁছে দেয়া, গণসচেতনতা সৃষ্টি, মোবাইল কোর্ট পরিচালনা, নিত্যপন্য মূল্যে নিয়ন্ত্রণ, খাদ্য সহায়তার জন্য তালিকা তৈরিসহ বিভিন্ন কাজে এবং মানবিক সহায়তার তালিকা প্রস্তুতকরণের মূল নেতৃত্ব দিচ্ছেন শ্রীমঙ্গল উপজেলা প্রশাসনের এসব (৭)কর্মকর্তা। তাঁরা হলেন শ্রীমঙ্গল উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. নজরুল ইসলাম, সহকারি কমিশনার (ভূমি), মোহাম্মদ মাহমুদুর রহমান মামুন, সিনিয়র সহকারী পুলিশ সুপার (শ্রীমঙ্গল-কমলগঞ্জ সার্কেল) মো. আশরাফুজ্জামান, শ্রীমঙ্গল উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডাঃ মো. সাজ্জাদ হোসেন চৌধুরী, শ্রীমঙ্গল উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের আবাসিক মেডিকেল অফিসার ডাঃ মোহাম্মদ আবু নাহিদ, ও শ্রীমঙ্গল থানার অফিসার ইনচার্জ মো. আব্দুছ ছালেক ও সোহেল রানা।
বৈশ্বিক মহামারি করোনা মোকাবেলায় প্রশাসনের এই কর্মকর্তারা উপজেলার একটি পৌরসভা ও (৯) ইউনিয়নের প্রায় (৩) লাখ মানুষের কথা মাথায় রেখে অব্যাহত মানবিক সহায়তা দেয়ায় সাধারণ মানুষের মন জয় করতে সক্ষম হয়েছেন। নিজেদের পরিবারের নিরাপত্তার কথা চিন্তা না করে দিন রাত ছুটে চলার যেন অন্ত নেই। এ মানুষগুলোর যেন বিশ্রাম নেই, ঘুম নেই, নেই পরিবারকে দেয়ার মতো সময়, বিশেষ করে একজন মানুষের কথা না বললেই নয় তিনি হলেন শ্রীমঙ্গল উপজেলা নির্বাহী অফিসার ও ম্যাজিস্ট্রেট নজরুল ইসলাম সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত শ্রীমঙ্গল উপজেলা বাসীকে সচেতন ও সুস্থ রাখার জন্য দিনরাত পরিশ্রম করে যাচ্ছেন। কোথাও কোন করোনায় আক্রান্ত হলে বা মৃত্যুর সংবাদ পাওয়ার সাথে সাথে যেন শুরু হয় দৌঁড়ঝাপ। মৃত ব্যক্তি ও আক্রান্তদের বাসা লক ডাউন, খাবার বা উপহার সামগ্রী নিয়ে আক্রান্তের বাসায় হাজির হওয়া থেকে শুরু করে করোনায় মারা যাওয়া ব্যক্তিদের সৎকারে ব্যবস্থা-সব ধরনের কাজে যুক্ত থাকতে হচ্ছে তাঁদের। করোনা ছোঁয়াছে রোগ হলেও পেছনে ফিরে না তাকিয়ে আর্ত মানবতার সেবায় তারা যুক্ত হচ্ছেন প্রতিদিন। জটিল সময়টিতে অনেকে নিরব থাকলেও সরকারী দায়িত্ব ছাপিয়ে বিবেকের টানে অসহায় মানুষের পাশে দঁড়িয়েছেন প্রশাসনের এসব কর্মকর্তারা। জন কল্যাণকর এই মানবিক কাজের জন্য শ্রীমঙ্গলের মানুষরা অনেকদিন মনে রাখবেন এসব প্রশাসনিক কর্মকর্তাদের। জানতে চাইলে শ্রীমঙ্গল উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো নজরুল ইসলাম বলেন, ‘সরকারী সার্ভিসে আছি, মানুষ সেবার ব্রত নিয়েই, সরকারী চাকুরীতে যোগ দিয়েছি।
করোনা পরিস্থিতি মোকাবেলা আমাদের জন্য এক নতুন অভিজ্ঞতা। এনিয়ে অনেকগুলো পরিস্থিতি মোকাবেলা করতে হচ্ছে।
বিশেষ করে মানুষজনকে সচেতন করতে গিয়ে অনেক বেগ পেতে হচ্ছে’। তিনি বলেন, ‘করোনায় লকডাউন ঘোষনার পর থেকে এ চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করতে গিয়ে আমাদের অনেক কাজ করতে হয়েছে। সরকারী খাদ্য সহায়তা বিতরণ, কর্মহীন ও দরিদ্রদের ঘরে ঘরে খাবার পৌঁছানো, খাদ্য সহায়তার জন্য নির্ভূল তালিকা তৈরী, নিত্যপন্য মূল্য নিয়ন্ত্রনে রাখা, সরকারী সাহায্য বিতরণে দূর্নীতি রোধে কর্মপন্থা নিরূপন, আক্রান্তদের ঘরে রাখা এবং মৃতের সৎকার করা এসব বিষয় খুবই চ্যালেঞ্জিং। সশস্ত্র বাহিনী, পুলিশ, চিকিৎসক ও জনপ্রতিনিধিদের সহযোগীতায় আমরা করোনা পরিস্থিতি মোকাবেলা করে যাচ্ছি। এছাড়া বিভিন্ন বেসরকারী সামাজিক সংগঠন, বিত্তশালীরা করোনা মোকাবেলায় প্রশাসনের সাথে কাজ করছেন। এজন্য আমি সকলের প্রতি আন্তরিক কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি’ বলেন তিনি। শ্রীমঙ্গল স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডাঃ মো. সাজ্জাদ হোসেন চৌধুরী বলেন, ‘করোনা মোকাবেলায় শ্রীমঙ্গলের চিকিৎসকরা জীবন বাজি রেখে সেবা দিয়ে যাচ্ছেন। করোনার মোকবেলায় আমরা উপসর্গের নমুনা সংগ্রহ থেকে শুরু করে আক্রান্তদের বাড়ি-এলাকা লকডাউন কার্যকরে কাজ করে যাচ্ছি। করোনা সংক্রমনরোধে সামাজিক দূরত্ব কার্যকর করার পাশাপাশি করোনা রোগীদের স্বাস্থ্য সেবা নিশ্চিত করতে কাজ করে যাচ্ছি। করোনা নিয়ে মাঠে কাজ করার ঝুঁকি রয়েছে জেনেও আমরা এই মানবিক কাজ থেকে কখনও পিছপা হইনি। এরি মধ্যে জেলা সিভিল সার্জন অফিস থেকে শ্রীমঙ্গল স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স লক ডাউনের পরামর্শ দেয়া হয়েছিল। কিন্তু আমরা মানুষের কথা বিবেচনা করে এটা বন্ধ না করে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চিকিৎসা সেবা অব্যাহত রেখেছি’ বলে জানান এই করোনা সম্মুখ যোদ্ধা। করোনা মোকবেলায় আরেক যোদ্ধা শ্রীমঙ্গল থানার অফিসার ইনচার্জ মো. আব্দুছ ছালেক ও ওসি তদন্ত সোহেল রানা বলেন, ‘১২ এপ্রিল সরকারীভাবে শ্রীমঙ্গলে লক ডাউন ঘোষনার পরপরই আমরা সংক্রমনের ঝুঁকি উপেক্ষা করে জেলা পুলিশ সুপারের নির্দেশনায় মাঠে নেমে পরি। থানার সকল সীমানায় চেকপোষ্ট স্থাপন করে কঠোর নজরদারী করি। যাতে বহিরাগতরা এ থানায় প্রবেশ বা এ থানার কেউ বাহিরে যেতে না পারে তা নিশ্চিত করি’। তিনি বলেন, ‘জেলা পুলিশ সুপারের নির্দেশে ও সিনিয়র সহকারী পুলিশ সুপার আশরাফুজ্জামানের সার্বিক তত্বাবোধানে ‘মানবতার আধার’ এর ব্যানারে আমরা সামাজিক নিরাপত্তা, অসহায় দরিদ্রদের খাদ্য সহায়তা কর্মসূচী গ্রহন করি। এর মাধ্যমে আমরা দিনে ও রাতে যখন যেখানে প্রয়োজন এমন হত দরিদ্রদের বাড়ি বাড়ি খাদ্য সহায়তা পৌঁছে দেই। অসুস্থ রোগীদের হাসপাতালে নেয়ার জন্য ফ্রি যানবাহন সুবিধা দিয়ে যাচ্ছি। এছাড়া পুলিশের দৈনন্দিন কাজের পাশাপাশি লক ডাউন কার্যকর, স্বাস্থ্যবিধি প্রতিপালন, জীবাণুনাষক ওষুধ ছিটানো ও বাজার নিয়ন্ত্রনে ভূমিকা রাখছেন।