শুক্রবার, ০৮ নভেম্বর ২০২৪, ০২:০২ অপরাহ্ন
দৌলতপুর (কুষ্টিয়া) প্রতিনিধি, কালের খবর :
কুষ্টিয়ার দৌলতপুরে ২৬টি অবৈধ স্থায়ী বা অস্থায়ী চিমনির ইটভাটায় অবাধে পোড়ানো হচ্ছে কাঠ। সরকারি ভাটা স্থাপন নিয়ন্ত্রন আইন না মেনে যত্রতত্র গড়ে ওঠা এসব ইটভাটায় জ্বালানী হিসেবে দেদারসে পোড়ানো হচ্ছে কাঠ বা কাঠের গুড়ি। এতে উজাড় হচ্ছে সবুজ বৃক্ষ। উপজেলার বিভিন্ন ব্যক্তি মালিকাধীন বনাঞ্চল থেকে গাছ কিনে এসব অসাধু ভাটা মালিকরা জ্বালানী হিসেবে কাঠের ব্যবহার করছেন। কয়লার পরিবর্তে জ্বালানী হিসেবে কাঠ বা কাঠের গুড়ি পোড়ানোর ফলে ভাটাগুলো থেকে নির্গত কালো ধোঁয়ায় দূষিত হচ্ছে চারপাশের পরিবেশ।
দৌলতপুর উপজেলার হাসপাতাল রোডের সরকারি শেখ ফজিলাতুনেছা মুজিব মহিলা কলেজ সংলগ্ন স্থানে গড়ে ওঠেছে ৪টি ইটভাটা, উপজেলা পরিষদ সংলগ্ন মানিকদিয়াড় গ্রামের বিভিন্ন বাড়ির আঙিনা ও ফসলের জমিতে গড়ে তোলা হয়েছে ৮টি ইটভাটা। এছাড়া উপজেলার কল্যানপুর, ডাংমড়কা, রিফায়েতপুর, চকদৌলতপুর, ঝাউদিয়া, সংগ্রামপুর, বড়গাংদিয়া, বোয়ালিয়া, স্বরুপপুর ও প্রাগপুর এলাকাসহ বিভিন্ন এলাকায় গড়ে ওঠেছে মোট ২৬টি ইটভাটা। এসব ভাটায় হাজার হাজার মন গাছের গুড়ির ¯ুÍপ পড়ে থাকতে দেখা যায়। এসব ইটভাটার চুল্লিগুলিতে ১২০ ফুট উচু স্থায়ী চিমনির পরিবর্তে কোন কোন ভাটায় মাত্র ২৫ থেকে ৩০ ফুট উচু ড্রাম চিমনী ব্যবহার করে পোড়ানো হচ্ছে বনাঞ্চলের সবুজ বৃক্ষ।
দৌলতপুর উপজেলার সদরে স্বরুপপুর, মানিকদিয়াড় ও সাদীপুর এলাকার ইটভাটাসহ সব ইটভাটাতে অবাঁধে কাঠ পোড়ানো হলেও প্রশাসন রয়েছে নীরব। উপজেলা পরিষদ সংলগ্ন লতিবমোড়ে প্রতিদিন প্রকাশ্যেই শত শত ট্রাকভর্তি জ্বালানীকাঠ ওজন দেয়া হচ্ছে। আর এসব নিষিদ্ধ ইটভাটায় ফসলী জমি থেকে উর্বর মাটি কেটে সেইসব মাটি দিয়ে প্রস্তুত করা হচ্ছে ইট। প্রতিটি ইটভাটায় এক রাউন্ড ইট পোড়াতে সময় লাগে ১২-১৫ দিন। সে হিসেবে একটি মৌসুমে প্রায় ১০ থেকে ১২ রাউন্ড ইট পোড়ানো সম্ভব। এক রাউন্ড ইট পোড়াতে ১০ থেকে ১২ হাজার মন জ্বালানী কাঠের প্রয়োজন হয়। সে অনুযায়ী প্রতিটি ইটভাটায় এক মৌসুমে (০১) এক লক্ষ মণ জ্বালানী হিসেবে সবুজ বৃক্ষ বা কাঠ পোড়ানো হলে ২৬টি ভাটায় ২৬ লাখ মনেরও বেশী কাঠ পুড়ানো হয়। এছাড়াও ইটভাটাগুলো সরকারি নিয়মনীতি না মেনে যত্রতত্র ব্যাঙের ছাতার মত উর্বর ৩ ফসলী জমি, স্কুলের আঙিনা, স্বাস্থ্যকেন্দ্রের আশপাশ ও জনবসতি এলাকায় গড়ে উঠায় ইটভাটার বিষাক্ত কালো ধোঁয়ায় শিশুদের শ্বাসকষ্ট ও স্বাস্থ্যহানী ঘটছে, পরিবেশ হচ্ছে বিপর্যস্থ। সেই সাথে আবাদী জমি ক্রমাগত হ্রাস পাওয়ার পাশাপাশি জমির উর্বর শক্তি হারাচ্ছে।
জেলার বিভিন্ন উপজেলায় অবৈধ এসব ইটভাটায় প্রশাসনের অভিযান চললেও দৌলতপুরে এর উল্টো চিত্র। দৌলতপুরের ইটভাটা মালিকদের দম্ভোক্তি রয়েছে তারা প্রশাসনকে ম্যানেজ করে প্রতিটি ইটভাটায় কয়লার পরিবর্তে জ্বালানী হিসেবে কাঠ জ্বালায় এমন কথা বিভিন্ন মহলে প্রচার রয়েছে।
তবে দৌলতপুর উপজেলা নির্বাহী অফিসার শারমিন আক্তার বলেছেন, গত নভেম্বর মাসে অবৈধ এসব ইটভাটায় অভিযান চালানো হয়েছে। আগামী দু’এক দিনের মধ্যে আরো অভিযান চালানো হবে।
এদিকে বিগত বছরগুলোতে জ্বালানী কাঠ পোড়ানোর দায়ে অবৈধ ইটভাটা মালিকদের অর্থদন্ডের পাশাপশি সতর্ক করা হলেও ভাটা মালিকরা তা না মেনে অবাঁধ সবুজ বৃক্ষ উজাড় করে কাঠ পুড়িয়ে যাচ্ছেন। তাই বিষয়টি জরুরি ভিত্তিতে প্রশাসনের নজরে নেয়া প্রয়োজন বলে ভূক্তভোগীদের দাবি। একই সাথে পরিবেশ ও আবাদী জমি রক্ষায় এসব অবৈধ স্থায়ী বা অস্থায়ী চিমনির ভাটা বন্ধে প্রয়োজনীয় আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি সচেতন মহলের।
0 0