বৃহস্পতিবার, ২৬ ডিসেম্বর ২০২৪, ০৮:৪৬ অপরাহ্ন
ভাঙ্গুড়া (পাবনা) প্রতিনিধি, কালের খবর :
মাত্র ছয় মাসে ধসে পড়েছে পাবনার ফরিদপুর উপজেলায় ১২ কোটি টাকায় নির্মিত একটি সড়ক। ২০১৬ সালে নির্মাণকাজ শুরু করে এই বছরের জুন মাসে সড়কটি চলাচলের জন্য উন্মুক্ত করে দেয়া হয়। চলাচলের জন্য উন্মুক্ত হওয়ার ছয় মাস যেতে না যেতেই সড়কের প্রায় আড়াই কি.মি. অংশ কার্পেটিংসহ ধসে গেছে। এছাড়া আরো বড় অংশ ধসের আশঙ্কায় রয়েছে। ফলে ঝুঁকি নিয়ে অটোরিকশাসহ দুই চাকার যানবাহন চলাচল করলেও মাঝারি ওজনের যানবাহন চলাচল বন্ধ হয়ে গেছে। দ্রুত এই সড়ক সংস্কার করা না হলে সড়কের বাকি অংশও ধসে যাবে। উপজেলা প্রকৌশল অফিস জানিয়েছে, দ্রুত সড়কটি সংস্কারের জন্য সংশ্লিষ্ট ঠিকাদারকে চিঠি দেয়া হয়েছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, উপজেলা প্রকৌশল অফিস ২০১৬-১৭ অর্থবছরে ১০ কোটি ৬২ লাখ টাকা প্রাথমিক ব্যয়ে উপজেলার পার ফরিদপুর থেকে বিএলবাড়ী গ্রাম পর্যন্ত ৬ হাজার ৩৯০ মিটার সড়ক নির্মাণের জন্য দরপত্র আহ্বান করে। রাজশাহীর ঠিকাদার আব্দুল আওয়াল কাজটির দায়িত্ব পায়।
পরে পাবনার ঠিকাদার শাহনেওয়াজ আলী তার কাছ থেকে কাজটি কিনে নেন। ২০১৬ সালের শেষের দিকে কাজটি শুরু হয় এরপর ২০১৮ সালের শুরুর দিকে ঠিকাদার শাহনেওয়াজ ৫০ শতাংশ বিল তুলে নিয়ে কাজ বন্ধ করে দেন। কাজ বন্ধ হওয়ার কারণে ঠিকাদার আব্দুল আওয়ালকে কাজ শেষ করার জন্য চাপ দেয় ফরিদপুর উপজেলা প্রকৌশল অফিস। পরে ঠিকাদারের আবেদনের পরিপ্র্রেক্ষিতে উপজেলা প্রকৌশল অফিস কাজটির জন্য বরাদ্দকৃত ১০ কোটি ৬২ লাখ টাকা থেকে বাড়িয়ে ১২ কোটি ৩৬ হাজার ১৬৫ টাকা নির্ধারণ করেন। চলতি বছর জুন মাসে সড়কের কাজ শেষ হয়। এলাকাবাসী জানায়, নির্মাণকাজের সময়ই সড়কে বিভিন্ন জায়গা দেবে যায় ঠিকাদার ওই জায়গাগুলো কোনোমতে ঠিক করে কাজ চালিয়ে যায়।
শনিবার সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, দেওভোগ গ্রামের গভীর খালের এক পাশ দিয়ে পায় ৩ কি.মি অংশে সড়ক নির্মাণ করা হয়েছে। শুরু থেকে এখানে নিচের অংশে সম্পূর্ণ বালু এবং উপরের অংশে মাটি মিশ্রিত বালু ব্যবহার করা হয়েছে। ভাঙন ঠেকাতে খালের কিনারা থেকে সড়কের কর্পেটিং পর্যন্ত দায়সারাভাবে আরসিসি ব্লক ব্যবহার করা হয়েছে। বৃষ্টির সময় ব্লকের জোড়া দিয়ে পানি প্রবেশ করায় সড়কে ভেতরের বালু ধুয়ে বেরিয়ে যেতে থাকে। আবার সড়কের নিচে খালের কিনারায় গাইডওয়াল নির্মাণের কথা থাকলেও অনেক জায়গায়ই তা নির্মাণ করা হয়নি।
যেগুলো নির্মাণ করা হয়েছে সেগুলোও শুরু থেকেই হেলে ছিল। এলাকাবাসীর অভিযোগ সড়ক নির্মাণের সময় গাইডওয়াল ও ব্লক ঠিকমতো না করায় এ অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে।
দেওভোগ গ্রামের বাসিন্দা আব্দুল খলিল মানবজমিনকে বলেন, ‘সড়ক বানানোর শুরু থেকেই খুব অনিয়ম হয়েছে। কাজ দেখার জন্য অফিসারেরা আসলে গ্রামের লোকজন তাদের বললেও কাজ ওই ভাবেই করেছে। তাদের বলেও কোনো লাভ হয়নি। তারা যদি তখন এগুলো দেখত তাহলে এত তাড়াতাড়ি সড়ক ভাঙত না।’
বৃলাহিড়ীবাড়ি ইউপি চেয়ারম্যান জাহাঙ্গীর আলম বলেন, ‘১২ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মাণ করা সড়ক ছয় মাস পার না হতেই ধসে পড়ায় আমরা খুবই হতাশ। বিষয়টি উপজেলা প্রশাসনকে জানানো হয়েছে। দেখি উনারা কী করেন।’
সড়ক নির্মাণকাজের তদারকির দায়িত্বে থাকা ফরিদপুর উপজেলা প্রকৌশল অফিসের কর্মকর্তা উপসহকারী প্রকৌশলী ইসলাম আলী (সম্প্রতি বদলী হয়েছেন) বলেন, ‘সড়কের কাজের মান খুব ভালো ছিল। শেষ মুহূর্তে কিছু কাজ তড়িঘড়ি করা হয় বন্যার পানি চলে আসার কারণে। এর কারণেই সড়ক ধসের ঘটনা ঘটেছে। তবে সমস্যা হবে না। ঠিকাদারের পর্যাপ্ত টাকা সিকিউরিটি হিসেবে জমা আছে। তার নিজ দায়িত্বেই পুনরায় সড়ক মেরামত করে দিতে হবে।’