শুক্রবার, ২৭ ডিসেম্বর ২০২৪, ১২:২৮ অপরাহ্ন

সংবাদ শিরোনাম :
অন্তর্বর্তী সরকারের উদারতা কপালপোড়া জাতিকে অনন্তকাল ভোগাবে : হাসনাত। কালের খবর মাটিরাঙ্গা বাজার ব্যবসায়ী পরিচালনা কমিটির নেতৃত্বে জামাল-মুকুট। কালের খবর তিল ধারণের ঠাঁই নেই কক্সবাজার সমুদ্র সৈকত। কালের খবর আমতলীতে ভূমি দস্যুর অত্যাচারের প্রতিবাদে মানববন্ধন। কালের খবর নবীগঞ্জ প্রেস ক্লাব নির্বাচন সম্পন্ন : সালাম সভাপতি, ছনি সম্পাদক নির্বাচিত। কালের খবর সীতাকুণ্ডে জামায়াত নেতার ওপর হামলা, প্রতিবাদে মিছিল সমাবেশ। কালের খবর আমাকে ও আমার মেয়েদের কুপ্রস্তাব দেয় রাজ্জাক। কালের খবর কল্যাণমুখী রাষ্ট্র গড়তে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী কাজ করে যাচ্ছে। কালের খবর ঈশ্বরগঞ্জে কালভার নির্মাণে অনিয়মের অভিযোগ। কালের খবর চ্যালেঞ্জের মুখে দেশের অর্থনীতি। কালের খবর
সম্রাটের শেল্টারে ৬ যুবলীগ নেতার ক্যাসিনোবাণিজ্যে। কালের খবর

সম্রাটের শেল্টারে ৬ যুবলীগ নেতার ক্যাসিনোবাণিজ্যে। কালের খবর

কালের খবর রিপোর্ট :

বেশ কয়েক দিন ধরে দেশজুড়ে বিভিন্ন ক্লাবে পুলিশি অভিযান চলছে। বন্ধ করা হচ্ছে জুয়ার আসরগুলো।

গত বুধবার গ্রেফতার হয়েছেন ফকিরাপুলের ইয়াংমেনস ক্লাবের মালিক ঢাকা মহানগর দক্ষিণ যুবলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক খালেদ মাহমুদ ভূঁইয়া। সেই ক্লাবে ২৪ ঘণ্টাই চলত রমরমা ক্যাসিনোবাণিজ্য।

তারই ধারাবাহিকতায় গতকাল রোববার রাজধানীর মতিঝিলে ক্লাবপাড়ায় মোহামেডান ক্লাব, আরামবাগ ক্রীড়া সংঘ, দিলকুশা স্পোটিং ক্লাব ও ভিক্টোরিয়া ক্লাবে অভিযান চালায় পুলিশ।

এসব অভিযানে বেরিয়ে আসছে একের পর এক ক্যাসিনো ব্যবসায়ীদের নাম ও পরিচয়।

গোয়েন্দা সূত্রে জানা গেছে, ফকিরাপুলের ইয়াংমেনস ক্লাবটি ছাড়াও মতিঝিলের ক্লাবপাড়ায় মোহামেডান, আরামবাগ, দিলকুশা, ওয়ান্ডারার্স, ভিক্টোরিয়ায় ক্যাসিনো ছিল। এর মধ্যে ইয়াংমেনস ক্লাবে ক্যাসিনো চালাতেন ঢাকা মহানগর দক্ষিণ যুবলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক খালেদ মাহমুদ ভূঁইয়া। বাকি পাঁচটি ক্লাবে ক্যাসিনো চালাতেন ঢাকা দক্ষিণ যুবলীগের সভাপতি ইসমাইল হোসেন চৌধুরী ওরফে সম্রাট।

তবে সম্রাট নিজে সরাসরি ক্যাসিনো দেখাশোনা করতেন না। এসব ক্যাসিনো পরিচালনায় সাত যুবলীগ নেতার নাম এসেছে।

এই সাতজনের দুজন এসেছেন ফ্রিডম পার্টি থেকে, দুজন বিএনপি থেকে, একজন জাতীয় পার্টির এবং একজন ছিলেন হোটেল বয়।

তবে সাতজনের মধ্যে একজনই শুরু থেকে যুবলীগের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত। বাকি ছয়জনই যুবলীগে অনুপ্রবেশকারী।

তারা হলেন- যুবলীগ ঢাকা দক্ষিণের সভাপতি ইসমাইল হোসেন চৌধুরী সম্রাট, সহসভাপতি এনামুল হক আরমান, সহসভাপতি সোহরাব হোসেন স্বপন, সহসভাপতি সরোয়ার হোসেন মনা, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মোমিনুল হক সাঈদ, সাংগঠনিক সম্পাদক খালেদ মাহমুদ ভুঁইয়া ও নির্বাহী সদস্য জাকির হোসেন।

তাদের হাত ধরেই মতিঝিলের ক্লাবপাড়াসহ রাজধানীর বিভিন্ন স্থানে ক্যাসিনোবাণিজ্য ছড়িয়ে পড়ে।

ঢাকা দক্ষিণ যুবলীগের সভাপতি সম্রাটকে এখন ক্যাসিনো সম্রাট বলা হচ্ছে। ১৯৯১ সালে যুবলীগে নাম লেখান সম্রাট। নুরুন্নবী চৌধুরী শাওন যুবলীগ মহানগর কমিটির সাবেক সভাপতি থাকাকালীন সম্রাট যুবলীগ মহানগর কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক হন। পরে ঢাকা মহানগর যুবলীগ দক্ষিণের সভাপতি হন তিনি।

রাজউকে বাবার চাকরিসূত্রে কাকরাইলের সার্কিট হাউস সড়কের সরকারি কোয়ার্টারে থাকতেন সম্রাট। সে সময় তার চাচাতো ভাই শরীফ সন্ত্রাসীদের হাতে খুন হলে রাজনীতির মাঠে সম্রাটের পরিচিতি বেড়ে যায়। সেখান থেকেই সম্রাটের উত্থান।

সম্রাটের পরেই ক্যাসিনোবাণিজ্যে যে নামটি উচ্চারিত হচ্ছে তিনি হলেন, ঢাকা দক্ষিণ যুবলীগের সহসভাপতি এনামুল হক আরমান।

ক্যাসিনোবাণিজ্যে আরমানকে গুরু বলে মানেন সম্রাট।

আরমানের উত্থানটা ঘটে রাজধানীর বায়তুল মোকাররম এলাকা থেকে। নোয়াখালী থেকে ঢাকায় এসে বায়তুল মোকাররমে লাগেজ বিক্রি করতেন তিনি। এর মাঝেই খালেদা জিয়ার নিকটাত্মীয় ‘বাউন্ডারি ইকবাল’হিসেবে পরিচিত ইকবাল হোসেনের সঙ্গে তার ঘনিষ্ঠতা বাড়ে। ইকবালের মাধ্যমে হাওয়া ভবনে যাতায়াত শুরু করেন আরমান। সেই সময় ক্ষমতায় থাকা বিএনপির ছত্রছায়ায় মতিঝিল ক্লাবপাড়ায় প্রভাবশালী হয়ে ওঠেন তিনি।

সেই প্রভাব খাটিয়ে বিএনপি আমলেই ফকিরাপুলের কয়েকটি ক্লাবের ক্যাসিনোর নিয়ন্ত্রণ নেন আরমান।

এর পর আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এলে যুবলীগে ভিড় জমান আরমান। সম্রাটের সঙ্গে যোগাযোগ রক্ষা শুরু করেন। সম্রাটের বিভিন্ন অপকর্মে শামিল হন। সম্রাটকে মতিঝিল ক্লাবপাড়ার ক্যাসিনোবাণিজ্যে প্রবেশ করান তিনি। সম্রাটকে সামনে রেখে ক্যাসিনোবাণিজ্যের ক্যাশিয়ার হিসেবে কাজ করতে থাকেন।

সম্রাট ঢাকা দক্ষিণ যুবলীগের সভাপতি হলে সহসভাপতির পদটি বাগিয়ে নেন আরমান।

সম্রাট ঘনিষ্ঠ যুবলীগের একাধিক নেতা জানিয়েছেন, আরমান নিজের টাকা দিয়ে প্রথমে ক্যাসিনোর সরঞ্জাম কিনে আনেন ঢাকায়।

সম্রাটের হয়ে ঢাকার ক্যাসিনোগুলোর আরেক নিয়ন্ত্রকের নাম সোহরাব হোসেন স্বপন। বর্তমানে তিনি যুবলীগ দক্ষিনের সহসভাপতি।

আরামবাগ-ফকিরাপুল ক্লাবপাড়ায় ডন হিসেবে পরিচিত তিনি।

তার রাজনৈতিক ইতিহাস ঘেঁটে জানা গেছে, ফ্রিডম পার্টির ক্যাডার ছিলেন স্বপন। মতিঝিলের ফ্রিডম পার্টির নেতা সরুর মাধমে তার রাজনীতিতে আগমন ঘটে।

বিএনপি আমলে যুবদলে মিশে যান তিনি। তবে সে সময় কোনো পদ পাননি। ২০০৮ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এলে যুবলীগে যোগ দেন স্বপন। এক সময় সম্রাটের সঙ্গে তার ঘনিষ্ঠতা বাড়ে। সম্রাটের হাত ধরে যুবলীগ দক্ষিণের সহ-সভাপতি হন তিনি।

সম্রাটের হয়ে বর্তমানে আরামবাগ-ফকিরাপুল এলাকার ক্যাসিনো দেখাশোনা করছেন সরোয়ার হোসেন মনা।

তার বাড়ি বরিশালে। একসময় জাতীয় পার্টি করলেও সেখানে নিজের অবস্থান দৃঢ় করতে পারেননি মনা। বিফল হয়ে বেশ কিছু দিন রাজনীতি থেকে দূরে সরে যান। বিএনপিতে প্রবেশের চেষ্টা করেও ব্যর্থ হন।

তবে একসময়ে সম্রাটের ঘনিষ্ঠ হয়ে যুবলীগের নেতা হয়ে ওঠেন। তিনিও এখন ঢাকা দক্ষিণ যুবলীগের সহসভাপতি ও সম্রাটের ঘনিষ্ঠ সহচরী।

১৯৯১ সালে বিএনপি ক্ষমতায় এলে মোহামেডান স্পোর্টিং ক্লাবের সভাপতি হন বিএনপি নেতা লোকমান হোসেন। লোকমান হোসেনের হাত ধরে বিএনপির রাজনীতিতে আগমন ঘটে মোমিনুল হক সাঈদের।

কিন্তু বর্তমানে ঢাকা দক্ষিণ যুবলীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও মতিঝিল এলাকার ওয়ার্ড কাউন্সিলর তিনি।

সূত্র জানায়, ঢাকার ক্যাসিনো জগতের অন্যতম হোতা এই সাঈদ। মতিঝিল ওয়ান্ডারার্স ক্লাবের ক্যাসিনোটি তার নিয়ন্ত্রণাধীন।

মতিঝিল এলাকার ফুটপাতের ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদের ত্রাস এই যুবলীগ নেতা। সাঈদ প্রতি মাসে মতিঝিল এলাকার প্রায় ৩০ হাজার ব্যবসায়ীর কাছ থেকে মাসে এক হাজার করে টাকা আদায় করতেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।

একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার একটি আসন থেকে আওয়ামী লীগের মনোনয়নপ্রত্যাশী ছিলেন এই সাইদ।

চলমান অভিযানের সময় সাঈদ সিঙ্গাপুরে অবস্থান করছেন বলে জানা গেছে।

ঢাকা দক্ষিণ যুবলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক খালেদ মাহমুদ ভুঁইয়া ফ্রিডম পার্টির ক্যাডার হিসেবে পরিচিত ছিলেন। গ্রেফতার হয়ে তিনি দল থেকে সদ্য বহিষ্কৃত।

জানা যায়, ১৯৮৭ সালে খিলগাঁওয়ের কুখ্যাত সন্ত্রাসী মানিক ও মুরাদের মাধ্যমে ফ্রিডম পার্টিতে নাম লেখান তিনি। সেই সময় মির্জা আব্বাসের ভাই মির্জা খোকনের ঘনিষ্ঠ হয়ে ওঠেন।

খিলগাঁও এলাকার শীর্ষ সন্ত্রাসী জাফর আহমেদ মানিকের মাধ্যমে খিলগাঁও-শাহজাহানপুরে দুর্ধর্ষ হয়ে ওঠেন খালেদ। পরে সম্রাটের মাধ্যমে যুবলীগে যোগ দেন খালেদ। ঢাকা মহানগর দক্ষিণের সাংগঠনিক সম্পাদক হন।

এর পর দিন দিন ভয়ঙ্কর হয়ে ওঠেন খালেদ। অভিযোগ রয়েছে, মোহাম্মদপুরে যুবলীগ নেতা গিয়াসসহ যুবলীগ ও ছাত্রলীগের একাধিক নেতার খুনের পেছনে খালেদের হাত রয়েছে।

খালেদ এক যুবলীগ নেতার মাকেও গুলি করেছেন বলে অভিযোগ রয়েছে।

মগবাজার এলাকার একসময়ের শীর্ষ সন্ত্রাসী নাজির আরমান নাদিম ও শীর্ষ সন্ত্রাসী জিসানের হয়ে তিনি ঢাকার আন্ডারওয়ার্ল্ডের নিয়ন্ত্রণ করতেন। তাদের তিনি ঢাকা থেকে অর্থ পাঠাতেন।

ফকিরাপুলের ইয়াংমেনস ক্লাবের অবৈধ ক্যাসিনোটি চালাতেন খালেদ।

বুধবার রাতে অবৈধ ক্যাসিনো ব্যবসা ও চাঁদাবাজির অভিযোগে গুলশানের বাসা থেকে খালেদ মাহমুদকে অস্ত্র ও মাদকসহ গ্রেফতার করে র্যা ব।

হোটেলের গ্লাস বয় থেকে যুবলীগের অন্যতম দাপুটে নেতা হয়েছেন জাকির। কাকরাইলের পায়েল হোটেলের বয় ছিলেন তিনি।

সেই চাকরি ছেড়ে একটি ফিল্ম কোম্পানির পিয়নের চাকরি নেন। সেখান থেকেই সম্রাটের সঙ্গে ঘনিষ্ঠতা বাড়ে তার। বর্তমানে তিনি ঢাকা দক্ষিণ যুবলীগের নির্বাহী কমিটির সদস্য।

যুবলীগের একটি সূত্র জানায়, জাকির সম্রাটের খুবই বিশ্বস্ত। সম্রাটের বিপুল অঙ্কের অর্থ গচ্ছিত আছে জাকিরের কাছে। সম্রাটের ক্যাসিনোবাণিজ্যের অঢেল টাকার একটি বড় অংশ রয়েছে জাকিরের দায়িত্বে।

দৈনিক কালের খবর নিয়মিত পড়ুন এবং বিজ্ঞাপন দিন..

কালের খবর মিডিয়া গ্রুপ লিমিটেডের একটি প্রতিষ্ঠান
Desing & Developed BY ThemesBazar.Com