শনিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ০৯:০৮ পূর্বাহ্ন

সংবাদ শিরোনাম :
সিরাজগঞ্জে খিরা চাষে লাভবান কৃষক, খিরা যাচ্ছে সারাদেশে। কালের খবর তীব্র গরমে পথচারীদের সুপেয় পানি সরবরাহ করছে ফায়ার সার্ভিস। কালের খবর সাতক্ষীরার কালিগঞ্জে এন্টিবায়োটিক ব্যবহার করে পশুদের স্বাস্থ্য ঝুঁকিতে ফেলছে। কালের খবর সমাজে “শান্তি স্থাপন ও সহিংসতা নিরসনে — সাতক্ষীরায় তাপদাহে রিকশাচালকদের মাঝে পানি ও স্যালাইন বিতারণ। কালের খবর প্রচণ্ড তাপদাহে পুড়ছে বাগান, ঝরছে আম, শঙ্কায় চাষীরা। কালের খবর ট্রাফিক-ওয়ারী বিভাগ যানচলাচল স্বাভাবিক রাখতে কাজ করছে। কালের খবর মারামারি দিয়ে শুরু হলো ‘খলনায়ক’দের কমিটির যাত্রা। কালের খবর কুতুবদিয়ার সাবেক ফ্রীডম পার্টির নেতা আওরঙ্গজেবকে আওয়ামী লীগ থেকে বহিষ্কারের দাবিতে মানববন্ধন। কালের খবর সাতক্ষীরায় লোনা পানিতে ‘সোনা’ নষ্ট হচ্ছে মাটির ভৌত গঠন। কালের খবর
নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট অসুস্থ স্ত্রীকে নিয়ে হাসপাতালে নাজেহাল। কালের খবর

নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট অসুস্থ স্ত্রীকে নিয়ে হাসপাতালে নাজেহাল। কালের খবর

নিজস্ব প্রতিবেদক, কুমিল্লা, কালের খবর :

মধ্যরাতে অসুস্থ স্ত্রীকে নিয়ে কুমিল্লা মেডিক্যাল কলেজ (কুমেক) হাসপাতালে বিড়ম্বনা ও দুর্ভোগের শিকার হয়েছেন কুমিল্লা জেলা প্রশাসনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ইমদাদুল হক তালুকদার (প্লাবন ইমদাদ)। এ নিয়ে শুক্রবার সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে দুটি স্ট্যাটাসের মাধ্যমে কুমেকের দুর্ভোগ-বিড়ম্বনা আর অব্যবস্থাপনার চিত্র তুলে ধরেন তিনি।

এরপর থেকে শুরু হয় তোলপাড়। চলছে আলোচনা-সমালোচনা। কেউ কেউ প্রশ্ন তুলছেন, ৫০০ শয্যার কুমিল্লা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে গিয়ে যদি একজন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটই কাঙ্ক্ষিত সেবা না পান সেখানে সাধারণ মানুষের কী অবস্থা হবে?

জানা যায়, কুমিল্লা জেলা প্রশাসনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ইমদাদুল হক তালুকদার পরিচয় না দিয়ে বৃহস্পতিবার মধ্যরাতে কুমিল্লা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে (কুমেক) স্ত্রীর চিকিৎসার জন্য যান। কিন্তু সেখানে গিয়ে কাঙ্ক্ষিত সেবার পরিবর্তে বিড়ম্বনার শিকার হয়েছেন তিনি। এ নিয়ে তিনি দুটি স্ট্যাটাস আপডেট করেন। যেখানে বিড়ম্বনা-অব্যবস্থাপনার নানা তথ্য তুলে ধরেন। এরপর থেকে এ নিয়ে রীতিমতো তোলপাড় চলছে।

ম্যাজিস্ট্রেট ইমদাদুল হক তালুকদার শুক্রবার সকাল ৬টা ৫৮ মিনিটে ‘প্লাবন ইমদাদ’ নামে তার ফেসবুক ওয়ালে লেখেন, ‘রাত ৩:৩০। আমার স্ত্রীর হঠাৎ তীব্র পেট ব্যথা।

ও চিৎকার করছিল। খুব ঘাবড়ে গেলাম। ইমার্জেন্সি অ্যাম্বুলেন্সের অনেকগুলো নম্বর নিয়ে কল করতে থাকলাম। কেউ কল ধরল না। বড় বড় হাসপাতালের নম্বরে কল দিলাম। কেউ ধরল না। একজন দয়া করে অ্যাম্বুলেন্সের কল ধরে জানালেন তার অ্যাম্বুলেন্স ঢাকায়। পাওয়া গেল না। আমার মোটামুটি সব ড্রাইভারকে কল দিলাম। ধরল না। অসহায় অবস্থায় বাচ্চাকে ঘুম থেকে তুলে আমার স্ত্রীকে নিয়ে হাঁটা দিলাম ফাঁকা রাস্তায়। কিছুদূর গিয়ে একটা সিএনজি পেলাম। উনি যেতে রাজি হলেন। গেলাম কুমিল্লা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে। ইমার্জেন্সি তখন ঘুমচ্ছে।
অনেক কষ্ট করে ডিউটি ডাক্তার সাহেবের ঘুম ভাঙানো হলো। উনি কাগজে লিখে দিয়ে ৪ তলায় ৪১৭ নম্বর ওয়ার্ডে যেতে বললেন। গেলাম। ওখানে ১৫ মিনিট কাউকে পেলাম না। অবশেষে এক সিস্টার বা আয়া এমন কেউ এলেন। জানলাম ডাক্তার সাহেব ঘুমচ্ছেন। পাক্কা আধা ঘণ্টা ধরে দরজা নক করার পর উনি এলেন। দেখলেন। তারপর ব্যবস্থাপত্র লিখতে গিয়ে দুটো কলমই কালিশূন্য পেলেন। আবার গেলেন তার কক্ষে। গিয়ে ফিরলেন আরো ১০-১২ মিনিট পর।

এদিকে বেশ কয়েকজন রোগী জমে গেছে। অবশেষে আমার স্ত্রীর ব্যবস্থাপত্রে ওষুধ লিখলেন- এলজিন ইঞ্জেকশন, নরমাল স্যালাইন আর খাবার স্যালাইন। মজার বিষয় হলো ডাক্তার সাহেব সঙ্গে অতিরিক্ত দুটো স্লিপ ধরিয়ে দিলেন।

স্লিপ-১ : ৭টি টেস্টের নাম
স্লিপ-২ : বাদুরতলার শেফা ও আজাদ ক্লিনিকের নাম।

মুখে বলে দিলেন এই টেস্টগুলো যেন ওখান থেকেই করাই। অনেকটা আদেশের মতো। আমি ভেজা বিড়ালের মতো বললাম, জি আচ্ছা। এর মাঝে কথা হলো দেবিদ্বার থেকে আসা এক ডেঙ্গু রোগীর স্বজনের সঙ্গে। তার মহিলা রোগীর প্লাটিলেট কমেই চলেছে। এ নিয়ে উদ্বিগ্ন। কিন্তু মজার বিষয় হলো রোগীর ওয়ার্ডে কোনো ডাক্তার নেই। ডাক্তার আসবেন সকালে অথবা আরো পরে। পরে আমার স্ত্রীকে নিয়ে চলে এলাম। ইঞ্জেকশনটা একটা বেসরকারি ক্লিনিকে গিয়ে পুশ করালাম…। তারপর ৫টি উপলব্ধির কথা উল্লেখ করেন তিনি।

এদিকে একইদিন বিকেলে আরো একটি স্ট্যাটাস দেন প্লাবন ইমদাদ। লিখেন ‘বিনা পরীক্ষা-নিরীক্ষায় একজন এফসিপিএস ডাক্তারের মাধ্যমে স্ত্রীর চিকিৎসার ব্যবস্থাপত্র করে নিয়েছেন…।

রাতের ভয়াবহ অভিজ্ঞতার কথা লেখেন সেখানে। মসন্ধ্যার মধ্যে দুটি স্ট্যাটাস সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হয়ে পড়ে। এ নিয়ে শুরু হয় তোলপাড়। তবে শুক্রবার রাতে দুটি স্ট্যাটাস ফেসবুক থেকে প্রত্যাহার করে নেন ওই নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ইমদাদুল হক তালুকদার জানান, এটা কারও বিরুদ্ধে কোনো অভিযোগ নয়, আমি আমার স্ত্রীর অসুস্থতার কারণে কুমিল্লা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে গিয়ে যে ভোগান্তির শিকার হয়েছি আমার উপলব্দি থেকে কেবলমাত্র তা তুলে ধরেছি।

এ প্রসঙ্গে কুমিল্লার সিভিল সার্জন ডা. মুজিবুর রহমান বলেন, নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট প্লাবন ইমদাদের ফেসবুক পোস্টটি আমার নজরে এসেছে। সাথে সাথেই তা আমি কুমেক হাসপাতালের পরিচালক ডা. স্বপন কুমার অধিকারীকে ফরোয়ার্ড করেছি। বিষয়টি খতিয়ে দেখে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে আমাকে জানিয়েছেন।

শনিবার দুপুরে এ বিষয়ে জানতে চাইলে কুমিল্লা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক ডা. স্বপন কুমার অধিকারী বলেন, বিষয়টি নিয়ে তদন্ত চলছে। কারো বিরুদ্ধে সুনির্দিষ্ট কোনো অভিযোগ পেলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে। তবে ‘ডেঙ্গু রোগীরা ডাক্তারের দেখা পাচ্ছে না’- এমন অভিযোগ সঠিক নয়। তারপরও এ বিষয়ে খোঁজ-খবর নিয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

দৈনিক কালের খবর নিয়মিত পড়ুন এবং বিজ্ঞাপন দিন..

কালের খবর মিডিয়া গ্রুপ লিমিটেডের একটি প্রতিষ্ঠান
Desing & Developed BY ThemesBazar.Com