রবিবার, ২২ ডিসেম্বর ২০২৪, ০৮:০৫ পূর্বাহ্ন
ওয়াসিম সোহাগ, কালের খবর :
সন্ধ্যার পরে হাসপাতালের সামনে অনেকটা নীরব হয়ে যায়। আমি হাটতে হাটতে আক্কাছ ডাক্তার স্যারের চেম্বারের সামনে দাড়ালাম। নামায শেষ করে স্যার এসে আমার কাছে এসে বল্ল, কে সোহাগ?
জ্বী স্যার।
উনাকে আমি স্যার বলেই ডাকি। তিনি তাড়াইল উপজেলায় আক্কাছ ডাক্তার নামে পরিচিত।সাধারন মানুষের কাছে উনি বেশ জনপ্রিয়। উনার ডাক্তারি পেশার গুনগান করা আমার উদ্দেশ্য নয়। তার আরেকটি পরিচয় আছে। তিনি একাধারে কবি, উপন্যাসিক,,গবেষক, ও কলাম লেখক অত্যন্ত সাদামাটা সাধারন জীবন যাপনে অভ্যস্ত।
তারপর স্যার আমাকে বলে তোমার এখন কোন ব্যাস্ততা আছে?
তখন আমি মনে মনে ভাবলাম স্যারের বোধহয় কোন প্রয়োজন আছে। তাই আমার ব্যাস্তাতা থাকা সত্ত্বেও না করলাম। ব্যাস্ততা নাই।
তাহলে চল একটু সামনে থেকে হেটে আসি।
হাটার জন্য এগোতে শুরু করতেই রাস্তার ডান পাশটা দেখিয়ে বল্ল চলো যাই এরা কি রান্না করে দেখে যাই-
হাসপাতালের বাউন্ডারি দেয়ালের সাথে ত্রিপল দিয়ে ছানি দেওয়া একটি গ্রাম্য মুরগীর খোয়ার মত নোংরা একটি বসতি। যেখানে কামাইল্যা পাগলার সংসার। চারপাশে নোংরা স্যাঁত স্যাঁতে অবস্থা।
স্যার জিজ্ঞাসা করে কিরে তোরা কি রান্না করছিস?
কামাইল্লা পাগলার স্ত্রী পাতিলগুলি আমাদেরকে দেখায়,,,,, ,
একটি পাত্রে ভাত, আর একটি পাত্রে অল্প পুইঁশাক সেদ্দ করছে এতে নাকি চ্যাপা শুটকি দেওয়া আছে।অল্প পুইঁশাক যা একজন মানুষের জন্য যথেষ্ট নয়।অথচ তারা চার পাঁচজনে খাবে।
পরে জানতে পারলাম ঘরের ছানির ত্রিপলটা কিছুদিন আগে স্যার কিনে দিয়েছে। কারন কলাপাতা ও পলিথিনের টুকরোর ছানি দিয়ে বৃষ্টি পড়ে। যখন বৃষ্টি আসে তখন ওদের সংসারের একেকজন একেকটি দোকানের সামনে গিয়ে দাড়িয়ে থেকে সময় পার করে। এর আগেও ৬০০ টাকা দিয়ে একটি ত্রিপল দিয়েছিল কিন্তু তাদের অভাবের কারনে বিক্রি করে দিয়েছিল। জানাগেছে এই ত্রিপলটাও বিক্রির জন্য গোপনে কাষ্টমার খুজতেছে। স্যার তাদেরকে প্রায় সময় টাকা দিয়েও সহযোগীতা করে। তারা কোথাও একটি ঘরভাড়া নিয়ে থাকলে ভাড়ার টাকা প্রতিমাসে স্যার, দিবে বলেও তাদেরকে আরও অনেক আগে জানিয়ে দিয়েছে। কিন্তুু এই পাগলা পাগলীকে কেউ ঘরভাড়া দেয়না।
স্যার বল্ল সোহাগ চলো,,,,,,,,,
আমরা গল্প করতে করতে এগোতে থাকলাম রাস্তায় অনেক মানুষ স্যারকে সালাম দিয়ে শ্রদ্ধা জানাল। আরো কিছুক্ষন যাওয়ার পর স্যার কারো একজনের বাসার কথা জিজ্ঞেস করল।এবং একটি ছিপা দিয়ে তার বাসায় ঢুকলাম। ঢুকতেই চেয়ার আনার জন্য ছুটাছুটি শুরু করে, আমি বললাম চেয়ার লাগবেনা আমি চৌকিতেই বসে পড়লাম স্যার একটি চেয়ারে বসল।
কিগো মিয়া তোমার চোখের কি অবস্হা?
জ্বী স্যার এহন ভাল। অপারেশন করার পরে ভালই দেখতাছি।
ঐ লোকে চোখের ছানি অপারেশন করেছে। কুশল বিনিময়ের পর আমরা ওঠতে যাব। এরিই মধ্য এই ভাইয়ের স্ত্রী তার মেয়েকে দিয়ে দোকান থেকে বিস্কুট এনেছে আমাদেরকে আপ্যায়ন করার জন্য।কিন্তু
চেম্বার থেকে রুগিদের ফোন আসতেছে। তাই আমরা বিস্কুটের প্যাকটি তার ছোট মেয়েকে দিয়ে দিলাম। স্যার লোকটির হাতে একটি ৫০০ টাকার নোট গুজে দিয়ে বলে কিছু এনে খেয়ে নিও এই বলে বেড়িয়ে পড়লাম। স্যার, এভাবে গোপনে অনেক মানুষকে সাহায্য করে যা লোকমুখে শুনি।
স্যারের প্রকাশ নাম হল আলহাজ্ব ডাঃ মোঃ আক্কাছ উদ্দিন। তার আরেকটি নাম আছে সাহিত্য জগতে তিনি আল মেহেদি হিসাবে পরিচিত। তিনি কবি, সাহিত্যক,ছড়াকার,এবং বিজ্ঞান ও ধর্মীয় গবেষনাধর্মী লেখক। তার অনেকগুলি বই প্রকাশিত হয়েছে তার মধ্য অন্যতম হচ্ছে- বন্দী জীবন, আগামী দিনের নিউটন, সৃষ্টি ও স্রষ্টার রহস্য, কোরআন থেকে বিজ্ঞান, মহানবী(সঃ) জীবনের অলৌকিক ঘটনা, আদমের আদি উৎস, জিনের আদি উৎস, ছেলেকার, স্মৃতির পাতায় হজ্ব, নুরীর ভূত,
প্রবন্ধঃ পৃথিবীর বিকর্ষন বল ও বস্তুর নিম্নমূখীপতনের কারন, বিজ্ঞানের জয়যাত্রা, নিউটনের অভিকর্ষের কারন আবিস্কার, পুরোগামী বিজ্ঞান।
এবং ছোটদের বর্ণ শিক্ষার জন্য, বাল্যপড়া, নামক একটি বই প্রকাশ করেন। স্যার, বিভিন্ন প্রকাশনী ও প্রতিষ্টান থেকে সন্ম্নাননা ও পুরস্কারে ভূষিত হয়েছেন।
আমার সাথে স্যারের পরিচয় হল, আমরা ছড়াকার ছাদেকুর রহমানের নেতৃত্বে তাড়াইল সাহিত্য সংসদের ব্যানারে কালজয়ী উপন্যাসিক হুমায়ুন আহমেদ স্যারের স্মরনে ঁহিমু সাহিত্য আড্ডা” নামক একটি অনুষ্টান করে থাকি সেখানে স্যার বিশেষ অতিথি হিসাবে এসেছিলেন। সেই থেকে আমিও যেহেতু সাহিত্য মনা মানুষ তাই মাঝে মাঝে দেখা সাক্ষাত করেন।