রবিবার, ২২ ডিসেম্বর ২০২৪, ০৮:৪৭ পূর্বাহ্ন
আহমেদ জালাল, কালের খবর :
বাংলাদেশ নিয়ে ‘তথ্য সন্ত্রাসের মাধ্যমে মিথ্যাচার চালাচ্ছে ভারতের মিডিয়া। হিন্দু নির্যাতনসহ নানা ধরণের মিথ্যা অভিযোগে তথ্য সন্ত্রাস চালানোর প্রতিবাদে দেশের বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গ, রাজনীতিক সহ সকল শ্রেনী পেশার মানুষ প্রতিবাদী বিক্ষোভ-সমাবেশ করেছেন। ভারতের মিডিয়া এবং ধর্মান্ধ রাজনৈতিক গোষ্ঠীকে বাংলাদেশের বিরুদ্ধে মিথ্যা প্রোপাগান্ডা প্রচার থেকে বিরত রাখার দাবি জানিয়েছে তারা। একই দাবি তুলেন-বাংলাদেশ হিন্দু-বৌদ্ধ-খ্রিষ্টান কল্যাণ ফ্রন্ট। রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন- স্বৈরাচার শেখ হাসিনার দ্রুত পুনর্বাসনে, অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকেই ভারত বাংলাদেশ বিরোধী প্রচারণায় নেমে পড়েছে। এমনকি বাংলাদেশকে সার্বক্ষণিক অস্থিতিশীল রাখতে তাদের হাতে যত ধরণের টুলস্ আছে, তা একে একে ব্যবহার করা শুরু করে দিয়েছে। উগ্রবাদীদের মিথ্যা প্রোপাগান্ডা, উগ্র বক্তব্য, সাম্প্রদায়িক উসকানি, ভারতীয় গণমাধ্যমের বিকৃত লম্ফঝম্ফ চলছে।
ড. ইউনূসের নামের আগে ‘মোল্লা’ টাইটেল…..
বলাবাহুল্য : স্বেরাচার শেখ হাসিনাকে গত ১৫ বছর ক্ষমতায় টিকিয়ে রেখে বাংলাদেশ থেকে একতরফা যে সুবিধা আদায় করে নিয়েছে, সেসব বেহাত হয়ে যাওয়ার আশঙ্কায় ভারত বেশ অস্থির হয়ে পড়েছে। ক্ষমতায় থাকাকালে মুজিব কন্যা হাসিনা যা দিয়েছেন, ভারত তা প্রত্যাশাও করেনি। শেখ হাসিনা প্রকাশ্যে বেশ কয়েকবার এ কথাও বলেছেন। ২০২৪-এর জাতীয় নির্বাচনে হাসিনাকে ক্ষমতায় রাখার বিনিময়ে, ভারতের পূর্বাঞ্চলে সামরিক ও বেসামরিক পণ্য পরিবহণের জন্য বাংলাদেশের ওপর দিয়ে ১৩টি পয়েন্টে রেল যোগাযোগের যে সুযোগ সৃষ্টি হয়েছিল, হাসিনার গদিচ্যুতির জন্য তা বোধহয় হাতছাড়া হয়ে যাচ্ছে। নির্বাচনের আগে, গত বছর সেপ্টেম্বরে শেখ হাসিনা ভারতে গিয়ে এ সংক্রান্ত একটি সমঝোতা স্বাক্ষরও করে এসেছিলেন। এসব কারণে ভারতের মেইনস্ট্রিম মিডিয়ায় মিথ্যাচার প্রতিবেদন পরিবেশন করে অন্তর্বর্তী সরকার ও সরকার প্রধানকে অপমান করতেও ছাড়ছে না। বিশেষ করে প্রধান উপদেষ্টা ড. ইউনূসের নামের আগে অনাকাঙ্ক্ষিত টাইটেল বসিয়ে হেয়প্রতিপন্ন করে লেখা প্রতিবেদন প্রকাশ করে। এতে তারা বিকৃত রুচির পরিচয় দিয়েছেন। কলকাতা থেকে প্রকাশিত দৈনিক পত্রিকা ‘এই সময়’-এ ‘অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টা হতে পারবেন না মুক্তিযুদ্ধে বিশ্বাসীরা-অধ্যাদেশ আনছে ইউনূস সরকার’ শিরোনামে একটি প্রতিবেদনে ড. ইউনূসের নামে আগে ‘মোল্লা’ টাইটেল বসিয়ে বলা হয়েছে, ‘শেখ হাসিনা জমানার অবসানের পরে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান হয়েই মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস মুছে ফেলার কাজ শুরু করেছেন মোল্লা মুহাম্মদ ইউনূস।’ উপদেষ্টা পরিষদের সদস্যদের পাকিস্তানের গোয়েন্দা সংস্থা আইএসআইয়ের চর ও দালাল আখ্যায়িত করে প্রতিবেদনটিতে ড. ইউনূসের উদ্দেশে বলা হয়েছে, ‘অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টা পদে বেছে বেছে বসিয়েছেন জঙ্গি সংগঠনের সদস্য, পাকিস্তানের গুপ্তচর সংস্থা আইএসআইয়ের চর, মুক্তিযোদ্ধাবিরোধী এবং পাকিস্তান ও মার্কিন দালালদের। এবার অধ্যাদেশ এনে অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টা হিসাবে মুক্তিযুদ্ধে বিশ্বাসীদের নিয়োগ নিষিদ্ধ করা হচ্ছে।’ ড. ইউনূসকে ‘রাজাকার’ বলতেও দ্বিধাবোধ করেনি পত্রিকাটি। লিখেছে, ‘‘ভবিষ্যতেও যাতে মুক্তিযুদ্ধে বিশ্বাসী কেউ না থাকেন, তার রাস্তা প্রশস্ত করতে ‘অন্তর্বর্তীকালীন সরকার অধ্যাদেশ ২০২৪’ আনার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন ‘রাজাকার’ হিসাবে পরিচিত মোল্লা মুহাম্মদ ইউনূস। মহম্মদ আলি জিন্নাহকে জাতির পিতা হিসাবে মানতে যারা অস্বীকার করছেন, তাদের কেউ অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টা পদে আসীন হতে পারবেন না।’’ ভারত বাংলাদেশকে বন্ধুরাষ্ট্র হিসাবে গণ্য করে বলে প্রচার করে; অথচ ভারতেরই গণমাধ্যম, বাংলাদেশ ও বাংলাদেশ সরকারকে নিয়ে এমন নোংরা ভাষার প্রতিবেদন প্রকাশ করে, যা ন্যাক্কারজনক।
বিবিসির রিউমার স্ক্যানারের মাধ্যমে পাওয়া তথ্যের ওপর ভিত্তি করে লেখা এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ‘এসবই ছিল ভারতের বিভিন্ন গণমাধ্যমের ছড়ানো অতিরঞ্জিত গুজব।’
১৬ জুলাই থেকে ৫ আগস্ট মাত্র ২১ দিনে দেড় হাজারেরও বেশি ছাত্র-জনতা হত্যার দায়ে তিন শতাধিক মামলায় অভিযুক্ত শেখ হাসিনাকে আশ্রয় দিয়ে ভারত, বাংলাদেশের মানুষের প্রতি সুবিচার করছে বলা যাবে না। ভারতের ক্ষমতাসীন ও বিরোধী দলের নেতারা, আশ্রয় দেওয়ার পক্ষে যুক্তি দিয়ে শেখ হাসিনাকে ভারতের প্রকৃত বন্ধু বলে আখ্যায়িত করেছেন। অথচ বাংলাদেশে যে এতগুলো মানুষ খুন হলো, সে ব্যাপারে তাদের মুখের কোনো বক্তব্যই আমরা শুনতে পেলাম না। তবে, এ বিষয়ে কথা না বললেও হাসিনার পতনের পর আওয়ামী লীগের রাজনৈতিক কর্মী হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের ওপর আক্রমণের যে ঘটনা ঘটেছে, তা গোটা হিন্দু সম্প্রদায়ের ওপর আক্রমণ বলে প্রচার করছে। ভারতের বেশকিছু গণমাধ্যম বাংলাদেশে এথনিক ক্লিনজিং হচ্ছে বলে দাবিও করেছে। পরবর্তীকালে বিবিসির রিউমার স্ক্যানারের মাধ্যমে পাওয়া তথ্যের ওপর ভিত্তি করে লেখা এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ‘এসবই ছিল ভারতের বিভিন্ন গণমাধ্যমের ছড়ানো অতিরঞ্জিত গুজব।’
বাংলাদেশের সনাতন ধর্মাবলম্বীদের নিয়ে ভারতীয় গণমাধ্যম তথ্য সন্ত্রাসে অপপ্রচার…………..
চিকিৎসা নিতে যাওয়া আরো বাংলাদেশী নারীকে আটকে রেখে ভয়ভীতি দেখিয়ে সংখ্যালঘু নির্যাতনের অসত্য তথ্য দিতে বাধ্য করলো ভারতীয় মিডিয়া। ভিডিও বার্তার বিষয়টি তুলে ধরে নড়াইলের লোহাগড়ার নলদী ইউনিয়নের সাবেক ইউপি সদস্য উষা রানী রায় অভিযোগ করে বলেন- তাকে কয়েক ঘণ্টা আটকে রেখে জিম্মি অবস্থায় এ ধরণের বক্তব্য দিতে বাধ্য করা হয়। ভিডিও বার্তায় তিনি বলেছেন-চারিদিক থেকে ঘিরে রেখে সবকিছু বলাইছিল। আমাকে চার ঘণ্টা আটকে রেখেছিল। আমি ভয়ে পড়ে সবকিছু বলছিলাম। স্থানীয়দের দাবি, এলাকায় দুই সম্প্রদায়ের মানুষের মাঝে কোনো বিভেদ নেই। লোহাগড়ার নলদী ইউনিয়নের বাসিন্দাদের একটি বড় অংশ সনাতন ধর্মাবলম্বী। আটক রেখে ভীতিকর পরিস্থিতি সৃষ্টি করে উষা রানীকে চাপপ্রয়োগ তাদের শেখানো কথা ভারতীয় গণমাধ্যমে বলতে বাধ্য করা হয়। আতঙ্কিত ওই নারী সেখানে তিনি বলেছেন- মাগুরার দিকে দোকান খুলতে পারতেছেন না। লুটপাট করে নিয়ে গেছে। এখানে হিন্দু-মুসলিম সম্প্রীতি দীর্ঘদিনের সম্প্রতি ভারতীয় গণমাধ্যমে সেদেশে যাওয়া স্থানীয় সাবেক ইউপি সদস্য উষা রানী রায়ের একটি বক্তব্য প্রচার হয়। যা নিয়ে শুরু হয় নানান আলোচনা-সমালোচনা। তবে পরিবার জানায়, চিকিৎসার জন্য গত ৭ ডিসেম্বর ভারতে যান উষা রানী। সেখানে তাকে ৪ ঘণ্টা আটকে রেখে ভয়ভীতি দেখিয়ে বাংলাদেশে হিন্দু নির্যাতন নিয়ে গণমাধ্যমে অসত্য তথ্য দিতে বাধ্য করা হয়। উষা রানী রায়ের স্বামী সুবাস রায় বলেন, এক সাক্ষাৎকারে সম্পূর্ণ ভূল তথ্য দিয়েছে। আমরা খুব সম্মানের সাথে সব সম্প্রদায়ের মানুষ এখানে বসবাস করি। এ ছাড়াও আমরা হিন্দু-মুসলমান সবাই একসঙ্গে থাকি। সনাতন ধর্মের এক নারী বলেন, আমরা খুব শান্তিতে আছি। আমরা সুন্দর পরিবেশে পূর্জা অর্চনা করছি। নড়াইল জেলার লোহাগড়া উপজেলার নলদী ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আবুল কালাম আজাদ বলেন, আমি এখানকার ৩০ বছরের চেয়ারম্যান। কারও বাড়ি অত্যাচার হয়েছে বলে এমন কোনো প্রমাণ নেই এবং কোনো প্রমাণও নেই।
ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের শুরু থেকেই ভারতের মূলধারার সংবাদমাধ্যমে একের পর এক বাংলাদেশবিরোধী গুজব ছড়ানো হচ্ছে। গণ-ভ্যুত্থানেরমুখে ৫ আগস্ট স্বৈরাচার শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর তা ক্রমাগত বেড়েছে। মূলত : ভারতীয় সংবাদমাধ্যম ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানকে ইসলামী উগ্রপন্থার উত্থান হিসেবে দেখানোর চেষ্টা করেছে।
বাংলাদেশী যুবকের পাসপোর্ট কেড়ে নিয়ে হিন্দু নির্যাতনের মনগড়া কাহিনী…
গত রোববার (১১ ডিসেম্বর) ফরিদপুর শহরের নিলটুলী স্বর্ণকারপট্টির গিনিভবনের বাসিন্দা ও স্বর্ণব্যবসায়ী সুনীল চন্দ্র কর্মকারের শুভ্র কর্মকার চিকিৎসার জন্য ভারতে যায়। এ সময় পেট্রাপোল সীমান্তে বাংলাদেশী যুবকের জোড়পূর্বক পাসপোর্ট কেড়ে নিয়ে হিন্দু নির্যাতনের মনগড়া কাহিনী বলতে বাধ্য করেছিলো ভারতীয় গণমাধ্যম। এরকম ঘটনায় বিস্মিত ফরিদপুরবাসী। হিন্দু সম্প্রদায়ের লােক জানিয়েছেন-ফরিদপুরে হিন্দু-মুসলিম ভাই ভাই মিলেমিশে শান্তিপূর্ণ বসবাস করছেন। এখানে হিন্দু নির্যাতনের কোন ঘটনা ঘটেনি। এহেন মিথ্যাচার বক্তব্য দেওয়ায় হিন্দু সম্প্রদায়ের নারী-পুরুষ ওই যুবকের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানিয়েছেন। বাংলাদেশে হিন্দুরা অবর্ণনীয় নির্যাতনের শিকার হচ্ছে বলে উল্লেখ করেন ওই যুবক। তবে তার পরিবারের দাবি, সীমান্ত দিয়ে ঢুকার সাথে সাথেই পাসপোর্ট আটকিয়ে সাক্ষাতকার নেয় ভারতীয় ওই গণমাধ্যম। সাক্ষাতকারে শুভ্র বলেন, ‘আগে থেকে অনেক খারাপ অবস্থা। হিন্দুদের ওপর অনেক অত্যাচার, অবিচার, হিন্দুদের বাড়িঘর দখল, দোকানপাট ভাংচুর, মন্দির ও শ্মশান পুড়িয়ে দেয়া হচ্ছে। যা ইতিহাসে হয়নি। ছোট ছোট বাচ্চাকের জন্য অনেক কষ্ট লাগে, তাঁদেরকে মারধর করা হয়, তাঁদেরকে অত্যাচার করা হয়। মা-মেয়েকে নির্যাতন করা হচ্ছে। রাতের বেলা ঘুমাচ্ছি যে সকালবেলা দোকানে যেতে পারব কি-না বা বাড়ি থেকে আরেকজনের সাথে কথা বলতে পারব কি-না এই আতঙ্কে আছি।’ ওই যুবক বর্তমান অন্তবর্তীকালীন সরকার প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহম্মাদ ইউনুসের উদ্দেশ্যে করে বলেন, ‘সে আসার পরে চাল, ডাল সবকিছুর দাম বেড়েছে। গরীবদের পেটে লাথি মারা হয়েছে এবং দরিদ্ররা খেতে পারছে না।’ এমন সাক্ষাতকার ছড়িয়ে পড়লে জেলাজুড়ে সমালোচনার ঝড় বইছে। স্থানীয় হিন্দুরাও তার এমন বক্তব্যের নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাচ্ছে। ফরিদপুর সদর থানার মুজিব সড়কের স্বর্ণকারপট্টির মেঘনা জুয়েলার্সের স্বত্ত্বাধিকারী স্বপন কুমার কর্মকার বলেন, ফরিদপুরের হিন্দুরা শান্তিপূর্ণভাবে ব্যবসা করছে। তার বক্তব্য, ভিত্তিহীন ও সম্পন্ন মিথ্যা। সে একটা মানসিক রোগী। আমাদের এখানে এ ধরনের কোনো ঘটনাই ঘটেনি, সে সম্পূর্ণ মিথ্যা কথা বলেছে। আমরা ওর বক্তব্যের প্রতিবাদ জানাই এবং ওর বিচার দাবি করি। জেলা জুয়েলার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি নন্দ কুমার গড়াল বলেন, শুভ্র বর্ডারে বক্তব্য দিয়েছে এতে আমরা ফরিদপুরবাসী স্তম্ভিত। ও আমাদেরই একধরনের বিপদে ফেলে দিয়েছে। বরং গত ৫ আগস্টের পর থেকে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতারা স্বেচ্ছায় আমাদের পাশে এসে দাড়িয়েছে। বিগত ৪ মাসে ব্যবসা বাণিজ্যে আমাদের কোন সমস্যা হয়নি। এখন শুভ যে প্রোপাগন্ডা ছড়িয়েছে তা সম্পূর্ণ মিথ্যা ও ভিত্তিহীন। ওর কথা যদি সত্য হতো তাহলেতো আমরা দোকান খুলে স্বর্ণের ব্যবসা করতে পারতাম না। মঙ্গলবার (১০ নভেম্বর) বিকালে বিষয়টি নিয়ে কথা হয় শুভ্র কর্মকারের বাবা সুনীল চন্দ্র কর্মকারের সাথে। তিনি ছেলের বরাত দিয়ে দাবি করেন, পাসপোর্ট কেড়ে নিয়ে সাক্ষাতকার নিয়েছে ভারতের মিডিয়ার লোকজন। সুনীল চন্দ্র গনমাধ্যমকে বলেন, এমন ঘটনা জানার পর ওর সাথে যোগাযোগ করি। ও আমাকে বলেছে, সীমান্ত দিয়ে প্রবেশের পরপরই ভারতের সাংবাদিকরা এসে পাসপোর্ট কেড়ে নিয়ে জোড় করে বলিয়েছে। ওরে ওইসব কথা বলতে বাধ্য করে। তিনি বলেন, ও যে সাক্ষাতকার দিয়েছে এ ধরনের ঘটনা আমাদের এখানে ঘটেনি। আজ পর্যন্ত আমাদের কেউ হুমকি-ধমকিও দেয়নি। আমারে এই এলাকার সকলেই সম্মান করে। আমার সামনে একজন লোক সিগারেট পর্যন্ত খায় না। ফরিদপুর কোতয়ালী থানার ওসি মো :আসাদউজ্জামান সাংবাদিকদের বলেছেন- ফরিদপুরে এমন কোনো ঘটনাই ঘটেনি। ফরিদপুরে কোনো হিন্দুদের ওপর হামলার ঘটনাও ঘটেনি। উনি যে বক্তব্য দিয়ে তা মনগড়া। বিষয়টি নিয়ে ওনার বাবার সাথে কথা বলব এবং পরবর্তীতে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে।
হেলমেট-হাতুড়ি বাহিনীর অন্যতম ক্যাডার অমীয় সরকার?
দ্য ওয়াল নামে আরেকটি চ্যানেলে এক নারী সংবাদিককে দেওয়া সাক্ষাৎকারে নিজেকে বাংলাদেশ থেকে নির্যাতনের শিকার হয়ে দুই মাস ধরে কলকাতায় আশ্রয় নিয়েছেন বলে দাবি করেছেন ফরিদপুর জেলা ছাত্রলীগের সহসভাপতি অমীয় সরকার। খন্দকার মোশাররফের হেলমেট-হাতুড়ি বাহিনীর অন্যতম ক্যাডার হিসেবে। এই অমীয় ফরিদপুর জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি সুবল চন্দ্র সাহার বাড়িতে হামলা মামলার অন্যতম আসামি। ২০২১ সালের নভেম্বরে গঠিত জেলা ছাত্রলীগের কমিটির ৮ নম্বর সহসভাপতি ছিলেন অমীয় সরকার।
ভারতীয় দূতাবাসে দেওয়া স্মারকলিপিতে যা বলেছে বিএনপি’র ৩ অঙ্গ সংগঠন
প্রসঙ্গত : রোববার (৮ নভেম্বর) দুপুর সোয়া ১টার দিকে ভারতের ত্রিপুরা রাজ্যের আগরতলায় বাংলাদেশ সহকারী হাইকমিশনে হামলা, জাতীয় পতাকার অবমাননা এবং সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা সৃষ্টির অপচেষ্টার প্রতিবাদে ভারতীয় দূতাবাসে স্মারকলিপি দিয়েছে বিএনপি’র ৩ অঙ্গ সংগঠন (ছাত্রদল, যুবদল ও স্বেচ্ছাসেবক দল)। ভারতীয় দূতাবাসে তিন দলের ৬ জন প্রতিনিধি স্মারকলিপি জমা দেন। প্রতিনিধিরা হলেন- যুবদলের সভাপতি আবদুল মোনায়েম মুন্না ও সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ নুরুল ইসলাম নয়ন; স্বেচ্ছাসেবক দলের সভাপতি এস এম জিলানী ও সাধারণ সম্পাদক রাজিব আহসান; ছাত্রদলের সভাপতি রাকিবুল ইসলাম রাকিব ও সাধারণ সম্পাদক নাসির উদ্দীন নাসির। স্মারকলিপিটি বাংলাদেশে নিযুক্ত ভারতের হাইকমিশনার প্রণয় ভার্মা বরাবর দেওয়া হয়েছে। স্মারকলিপিকে সাম্প্রতিক অবন্ধুসুলভ ঘটনাবলি নিয়ে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করা হয়েছে। স্মারকলিপিতে বলা হয়েছে, ‘আমরা, বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের (বিএনপি) অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠন জাতীয়তাবাদী যুবদল, জাতীয়তাবাদী স্বেচ্ছাসেবক দল ও জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলের পক্ষ থেকে এই মর্মে গভীর উদ্বেগ ও বিস্ময় প্রকাশ করছি— দুনিয়া কাঁপানো ছাত্র-জনতার অভাবনীয় তুমুল আন্দোলনে স্বৈরাচারী শেখ হাসিনা আপনার দেশে পালিয়ে যাওয়ার পর আপনারা তাকে আশ্রয় দিয়েছেন। আপনার দেশের অতি উগ্রবাদী নেতারা এবং বিশেষ করে কতিপয় সংবাদ মাধ্যম ও মিডিয়া বাংলাদেশের এই গণশত্রু হাসিনাকে পুনরায় পুনর্বাসন করার চেষ্টা করে চলেছে। স্মারকলিপিতে বলা হয়- এতে স্পষ্ট হয়, আমাদের বন্ধু রাষ্ট্র ভারতের বন্ধুত্ব ছিল হাসিনার সঙ্গে, বাংলাদেশের জনগণের সঙ্গে নয়।’ ‘হাসিনা এখন বাংলাদেশের নিরাপত্তা ও স্থিতিশীলতার বিরুদ্ধে হুমকি হয়ে উঠেছে। একদিকে তিনি বাংলাদেশের ভিন্ন দলমতের মানুষদের ঘরবাড়ি সম্পত্তি জ্বালিয়ে দেওয়ার হুকুম দিচ্ছেন। অপরদিকে যারা তার বিরুদ্ধে মামলা করেছে তাদেরকে হত্যা করার হুমকি দিচ্ছেন। বাংলাদেশ সহকারী হাইকমিশনে ন্যাক্কারজনক হামলা চালানো হলেও নীরব দর্শকের ভূমিকা পালন করেছে আপনার দেশের আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী।’ স্মারকলিপিতে আরও বলা হয়েছে, ‘প্রাপ্ত বিবরণগুলো চূড়ান্তভাবে প্রমাণ করে— পূর্বপরিকল্পিতভাবে বাংলাদেশ সহকারী হাইকমিশনের প্রধান ফটক ভেঙে বিক্ষোভকারীদের আক্রমণ করার সম্মতি দেওয়া হয়েছিল। এই প্রক্রিয়ায়, স্থানীয় আইন প্রয়োগকারী সংস্থার সদস্যদের উপস্থিতিতে, তারা জাতীয় পতাকার খুঁটি ভাঙচুর করে, বাংলাদেশের জাতীয় পতাকা অবমাননা করে এবং সহকারী হাইকমিশনের অভ্যন্তরে সম্পত্তিরও ক্ষতি করে। এমন ন্যাক্কারজনক বিস্ময়কর ঘটনার ধারাবাহিকতা অব্যাহত থাকলেও আপনার সরকারের নীরবতায় বাংলাদেশের জনগণ হতাশ। আমরা পরস্পরের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্বের প্রতি গভীরভাবে শ্রদ্ধাশীল। আমাদের দুই দেশের সম্পর্কের ভিত্তি হবে সমতা, পরস্পরের প্রতি আস্থা, বিশ্বাস এবং সম্মান প্রদর্শনের ওপর।’ “সার্বভৌম কোনও রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে অপপ্রচার চালানো রাষ্ট্রের সার্বভৌমত্ব লঙ্ঘনের শামিল। ভারতের সাম্প্রতিক ঘটনা প্রবাহ বাংলাদেশের জনগণের প্রতি অবজ্ঞাস্বরূপ বলে আমরা চাই অপপ্রচার, অপতথ্য বন্ধ করতে ভারতীয় সরকার কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করবে। জাতিসংঘের সনদের নীতির ওপর ভিত্তি করে ‘সকল সদস্যের সার্বভৌম সমতার’ ভিত্তিতে আমাদের দুই দেশের মধ্যে শক্তিশালী ও বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক গড়ে তুলতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। এই স্মারকলিপির মাধ্যমে আপনাকে অবগত করছি এবং অনুরোধ জানাচ্ছি, জাতীয়তাবাদী যুবদল, স্বেচ্ছাসেবক দল ও জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলের অবস্থান ও মতামত ভারতীয় সরকারের কাছে পৌঁছে দেওয়ার যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন।”
বাংলাদেশের বিরুদ্ধে গ্লোবাল ক্যাম্পেইন চলছে…
সোমবার (২ ডিসেম্বর) সংখ্যালঘু, বিশেষ করে হিন্দু সমাজের পরিস্থিতি নিয়ে বিদেশি কূটনীতিকদের ব্রিফ করার পর সাংবাদিকদের পররাষ্ট্র উপদেষ্টা মো. তৌহিদ হোসেন বলেন, বাংলাদেশের বিরুদ্ধে গ্লোবাল ক্যাম্পেইন চলছে। তিনি বলেছেন- ‘এটি ভুলে গেলে চলবে না যে একটি গ্লোবাল ক্যাম্পেইন চলছে। পৃথিবীর সবাই যে তাতে অংশগ্রহণ করছে, তেমনও নয়। তবে গ্লোবাল ক্যাম্পেইন চলছে একটি বিশেষ গোষ্ঠীর মাধ্যমে। তারা সবখানে আঘাত করার চেষ্টা করছে। গ্লোবাল ক্যাম্পেইন যে চলছে– এটি আমরা বিদেশি কূটনীতিকদের আজকে বলেছি।’ গ্লোবাল ক্যাম্পেইন কারা করছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘কোন দেশ করছে এটি আমি বলবো না। তবে কিছু প্রতিষ্ঠান করছে এবং সে প্রতিষ্ঠানগুলোর ধরনটি কী—তা আপনারা ভালো জানেন।’ ‘এটি আমাদের মেনে নিতে হবে যে যারা এটি করছে—তাদের বিভিন্ন জায়গায় পৌঁছানোর ক্ষমতা আমাদের থেকে বেশি’ বলে তিনি জানান। মিডিয়া রিপোর্টের ওপর ভিত্তি করে অনেকে বিদেশে যেমন জেনেভায় মানবাধিকার কাউন্সিল বা যুক্তরাজ্যে বক্তব্য দিচ্ছে। এ বিষয়ে জানতে চাইলে উপদেষ্টা বলেন, ‘এ বিষয়টি আমরা তুলিনি। এটি আমরা সংশ্লিষ্ট দেশের সঙ্গে তুলবো। সে কারণে এখানে আলোচনা করে লাভ নেই। ব্রিটেনের সঙ্গে এ বিষয়টি তুলবো। অত্যন্ত একপেশে রিপোর্ট তারা দিয়েছে। চারটি নির্বাচনকে তারা মোটামুটি এক পর্যায়ে ফেলেছে। লিখেছে তিনবার পুনর্নির্বাচিত হয়েছে। কিন্তু নির্বাচনগুলো কী মানের সে বিষয়ে একটি শব্দও সেখানে নেই। ১৫০০ ছেলেমেয়েকে হত্যা করা হয়েছে। কিন্তু এ নিয়ে একটি শব্দও সেখানে উল্লেখ নেই।’ কোন দেশের মিডিয়া পরিস্থিতি ঘোলাটে করার চেষ্টা করছে জানতে চাইলে তৌহিদ হোসেন বলেন, ‘আমি এ বিষয়ে খুব স্পষ্ট। এটি প্রধানত ভারতীয় মিডিয়া। কিন্তু এর বাইরেও অনেক মিডিয়ায় ভারতের মিডিয়ার বক্তব্যকে রেফারেন্স করে সংবাদ দেওয়া হয়েছে।’
ধর্মীয় সংখ্যালঘু নির্যাতনের বিষয়ে অপপ্রচার নিয়ে ঢাকায় বিভিন্ন মিশনে দায়িত্বরত বিদেশি কূটনীতিকদের সরকারের অবস্থান ব্যাখ্যা করেন পররাষ্ট্র উপদেষ্টা মো. তৌহিদ হোসেন। এ প্রসঙ্গে পররাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, ‘আমরা ব্রিফ করেছি, যাতে ভুল ধারণা সৃষ্টি না হয়। কারণ ভুল ধারণা সৃষ্টি করার মতো পরিবেশ আছে। বিশেষ করে মিডিয়ার একাংশ, কোন দেশের সেটা বলছি না– তারা যতটুকু পারা যায় খারাপ পরিস্থিতি তৈরির চেষ্টা করেছে।’ তিনি বলেন, ‘আমি বলেছি সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি আমাদের সমাজের অংশ এবং সরকার এটি বজায় রাখতে দৃঢ়প্রতিজ্ঞ। কোনও মানুষ ধর্মীয় বা সাম্প্রদায়িক পরিচয়ের কারণে নিগৃহীত হবে না এবং এটি আমরা নিশ্চিত করবো।’ সরকারের চার মাস সময়কালে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বজায় রাখার ক্ষেত্রে সরকার উল্লেখযোগ্যভাবে সফল হয়েছে। এই সময়ের মধ্যে পরিস্থিতি খারাপ করার জন্য কয়েকবার অপচেষ্টা করা হয়েছে। কিন্তু সরকার, রাজনীতিবিদ, শিক্ষার্থীরা সেটি প্রতিহত করেছে বলে তিনি জানান। দুই-একটা ঘটনা যে ঘটেনি—বিষয়টি সেরকম নয়। তবে এ ধরনের ঘটনা এর আগের সরকারের সময়েও ঘটেছে জানিয়ে উপদেষ্টা বলেন, ‘বাংলাদেশ একটি খারাপ পরিস্থিতির মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। এরকম একটি পরিস্থিতি সৃষ্টির চেষ্টা দেশের ভেতরে ও বাইরেও আছে। এটি যেন সফল না হয় আমরা তা চেষ্টা করছি।’ মমতা ব্যানার্জি বাংলাদেশ নিয়ে মন্তব্য করেছেন। এ বিষয়ে জানতে চাইলে পররাষ্ট্র উপদেষ্টা তৌহিদ হোসেন বলেন, ‘মমতা ব্যানার্জির বক্তব্য আমরা মমতা ব্যানার্জির মতো দেখতে চাই। উনি এ বক্তব্য কেন দিলেন এটি আমি বুঝতে পারছি না। তার যে নির্বাচনি এলাকা (পশ্চিমবঙ্গ), সেখানে আমি দুবছর ছিলাম। আমি তার সঙ্গে ব্যক্তিগতভাবে পরিচিত। তার বাসায়ও আমার যাতায়াত ছিল। কাজেই আমি ব্যক্তিগতভাবে মনে করি, এটি তার জন্য সঠিক পদক্ষেপ নয়। রাজনীতিবিদরা রাজনৈতিক দৃষ্টিকোণ থেকে বক্তব্য দিয়ে থাকেন। আমার মনে হয়, পশ্চিমবঙ্গের রাজনীতিতে এটি তার জন্য সহায়ক হবে না।’ ৫ আগস্টের আগে এবং পরে বাংলাদেশ ও ভারতের সম্পর্ক এক না। পারস্পরিক স্বার্থ ঠিক রেখে আমরা ভারতের সঙ্গে স্বাভাবিক, ভালো, সুসম্পর্ক চাই বলে তিনি জানান। ‘বাংলাদেশের সঙ্গে বিরূপ আচরণ করে ভারতের কী স্বার্থ উদ্ধার হচ্ছে’, জানতে চাইলে উপদেষ্টা বলেন, ‘এটি পরিমাপ কীভাবে করবেন। এখন ভিসা বন্ধ আছে এবং এ কারণে অনেকের অসুবিধা হচ্ছে। আবার এ কারণে অনেকের সুবিধাও হচ্ছে। আমি রোববার আমার চেকআপের জন্য একটি হাসপাতালে গিয়েছিলাম। তাদের সব সিট ভর্তি। এটি ভারতের স্বার্থে যায় কিনা দেখতে হবে।’ ভারতের রাজনীতিবিদদের কোনও বার্তা দিতে চান কিনা প্রশ্নে তিনি বলেন, ‘আমরা যে বার্তা দিতে চাই সেটি হলো—এই সরকার কোনও ধরনের সাম্প্রদায়িক কার্যকলাপ বরদাস্ত করবে না এবং হিন্দু বা মুসলিম বলে কথা নয়, আমরা সবাইকে সমান চোখে দেখবো। আমরা এই বার্তা সবাইকে দিতে চাই, শুধু কোনও নির্দিষ্ট গোষ্ঠীকে নয়।’ ব্রিফিংয়ে যুক্তরাষ্ট্র, চীন, ভারত, জাপান, রাশিয়া, ইতালি, কানাডা, মরোক্কো, দ. কোরিয়া, ইউরোপীয় ইউনিয়ন, মিয়ানমার, আলজেরিয়া, ইরান, মালদ্বীপ, লিবিয়া, পাকিস্তান, সৌদি আরব, তুরস্ক, চীন, থাইল্যান্ড, অস্ট্রেলিয়া প্রভৃতি দেশের কূটনীতিকরা উপস্থিত ছিলেন।
……..
লেখক : সম্পাদক, ইউনিভার্সেল নিউজ। universalnews24.com