শনিবার, ১১ জানুয়ারী ২০২৫, ০৩:২৩ পূর্বাহ্ন

সংবাদ শিরোনাম :
মাদকমুক্ত সমাজ গঠনে ভুমিকা রাখবে বাঁশরী ওয়াদুদ ফুটবল টুর্নামেন্ট : ওয়াদুদ ভূইয়া। কালের খবর গুইমারায় অস্ত্রসহ দুই সন্ত্রাসীকে আটক করেছে যৌথবাহিনী। কালের খবর মাকে ৭ বছর পর পেয়ে জড়িয়ে ধরলেন তারেক রহমান। কালের খবর জমি দখলে বেপরোয়া রুহুল আমিন হাওলাদার। কালের খবর মাটিরাঙায় সেনা অভিযানে ১৪ লাখ টাকার অবৈধ সিগারেট জব্দ। কালের খবর দুর্গম শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে সেনাবাহিনীর শিক্ষা উপকরণ বিতরণ। কালের খবর ঈশ্বরগঞ্জে ছাত্রদলের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী পালিত। কালের খবর মাটিরাঙ্গায় তারুণ্যের উৎসবে বর্ণাঢ্য র‍্যালি। কালের খবর খাগড়াছড়িতে ছাত্রদলের ৪৬তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী পালিত। কালের খবর মুন্সিগঞ্জে জাতীয় পার্টির ৩৯ তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী অনুষ্ঠিত। ।
এমপি-পুলিশের টাকার রক্ষক এখন ভক্ষক, কে এই জাকির চেয়ারম্যান! কালের খবর

এমপি-পুলিশের টাকার রক্ষক এখন ভক্ষক, কে এই জাকির চেয়ারম্যান! কালের খবর

কুমিল্লা প্রতিনিধি, কালের খবর :

বছর দশেক আগেও ঢাকায় লেগুনা চালাতেন তিনি। কিন্তু দশ বছরের মাথায় তিনি মালিক হয়েছেন কোটি কোটি টাকার। ১০০ গাড়ি নিয়ে শুরু করেছেন রেন্ট-এ-কারের ব্যবসা। ক্ষমতাসীন দলের একটি ইউনিয়নে যুবলীগের পদ বাগিয়ে নিয়েছেন শুরুতে। পরে নৌকা প্রতীক নিয়ে হয়েছেন ইউপি চেয়ারম্যানও।
আলোচিত এই ব্যক্তির নাম জাকির হোসেন। তিনি কুমিল্লার মেঘনা থানাধীন ২ নম্বর মাইনকারচর ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান।
কোনো আলাদিনের চেরাগ নয়, তার কোটিপতি হওয়ার নেপথ্যে ক্ষমতাসীন দলের কয়েকজন সদস্য আর আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর শতাধিক কর্মকর্তা। অনেকেই অবৈধভাবে উপার্জিত অর্থ বিনিয়োগ করেছিলেন তার মাধ্যমে। এখন জাকির বেঁকে বসেছেন। লাভের টাকা দেয়া তো দূরের কথা, আসল টাকাই ফেরত দিচ্ছেন না। বিনিয়োগকারীদের অনেকেই আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর উপপরিদর্শক পর্যায়ের কর্মকর্তা। এই টাকার উৎস নিয়ে প্রশ্ন উঠতে পারে সেই আশঙ্কায় তারা বিষয়টি কাউকে বলতেও পারছেন না।
সংশ্লিষ্টরা জানান, গত ৭ সেপ্টেম্বর এ কে এম গোলাম রসুল নামে একজন অবসরপ্রাপ্ত পরিদর্শক জাকিরের নামে রাজধানীর মুগদা থানায় একটি মামলা করেন। মামলায় তিনি অভিযোগ করেন, পেনশন ও ইউএন মিশন থেকে পাওয়া টাকা দিয়ে তিনি ছয়টি মাইক্রোবাস কিনে জাকিরের কাছে মাসিক ৭০ হাজার টাকা চুক্তিতে ভাড়া দেন। শুরুতে প্রতি মাসে টাকা দিলেও গত ফেব্রুয়ারি থেকে টাকা দেয়া বন্ধ করে দেন। গোলাম রসুল গাড়ি ফেরত আনতে গিয়ে জানতে পারেন, জাল-কাগজপত্র তৈরি করে জাকির সেসব গাড়ি বিক্রি করে দিয়েছেন।
ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার (গোয়েন্দা) হারুন অর রশিদ বলেন, ‘জাকির অনেক বড় একজন প্রতারক। তাকে আমরা অনেক দিন ধরেই গ্রেপ্তারের জন্য অভিযান চালিয়ে আসছিলাম। কিন্তু সে আত্মগোপনে রয়েছে। অবশেষে তাকে গোয়েন্দা জালের মধ্যে আনা হয়েছে। যে কোনো সময় তাকে গ্রেপ্তার করা হবে।’
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, জাকির হোসেনের গ্রামের বাড়ি কুমিল্লার মেঘনা থানাধীন ২ নম্বর মাইনকারচরের উজানচর নোয়াগাঁও এলাকায়। বাবা জজ মিয়া একজন কৃষক। এসএসসি পাস জাকির ২০০৮ সালে ঢাকায় এসে গাড়ি চালানো শেখেন। তারপর দুই বছর ঢাকায় লেগুনার চালক হিসেবে কাজ করেন। পরে নিজেই একটি প্রাইভেটকার কিনে ভাড়ায় চালানো শুরু করেন।
বছর দশেক আগে তার সঙ্গে কুমিল্লার মেঘনা থানায় কর্মরত এক পুলিশ কর্মকর্তার পরিচয় হয়। ওই পুলিশ কর্মকর্তা তাকে প্রথমে একটি গাড়ি কিনে দেন। প্রতি মাসে একটি নির্দিষ্ট পরিমাণ টাকা দিতেন সেই পুলিশ কর্মকর্তাকে। সেই থেকে শুরু, এরপর থেকে যেন আলাদিনের চেরাগ নিজে এসে হাতে ধরা দেয় জাকিরের কাছে।
জাকিরের ঘনিষ্ঠ এক সূত্র জানায়, একজন-দুজন করে জাকিরের সঙ্গে রাজনৈতিক নেতা ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর বিভিন্ন পর্যায়ের কর্মকর্তার সঙ্গে পরিচয় বাড়তে থাকে। পুলিশের বিভিন্ন পর্যায়ের কর্মকর্তা তাকে গাড়ি কিনে দেয়া শুরু করেন। জাকির সেসব গাড়ি নিয়ে রাজধানীর গোপীবাগে আর কে মটরস নামে একটি রেন্ট-এ-কারের ব্যবসা চালু করেন। সর্বশেষ তার এই রেন্ট-এ-কারের ব্যবসায় ১০০ মাইক্রোবাস ছিল।
সূত্র জানায়, জাকিরের সঙ্গে সম্পর্কের সূত্র ধরে কুমিল্লা এলাকার একজন সংসদ সদস্য আড়াই কোটি টাকা বিনিয়োগ করেন। একই এলাকার একজন সাবেক সংসদ সদস্যও বিনিয়োগ করেন দেড় কোটি টাকা। লক্ষ্মীপুর এলাকার সংরক্ষিত নারী আসনের একজন সংসদ সদস্য বিনিয়োগ করেন দুই কোটি টাকা। এ ছাড়া পুলিশের ডিআইজি পদপর্যাদার এক কর্মকর্তা দুই কোটি টাকা জাকিরের মাধ্যমে বিনিয়োগ করেন। এর বাইরে পুলিশ সুপার পদমর্যাদার অন্তত পাঁচজন কয়েক কোটি টাকা বিনিয়োগ করেন। বিনিয়োগকারীর এই তালিকায় পুলিশের সাব-ইন্সপেক্টর, ট্রাফিক সার্জেন্ট, টিআই, বিভিন্ন থানার ওসি বা পরিদর্শক এবং এএসপি পদমর্যাদার কর্মকর্তাও আছেন।
সূত্র জানায়, জাকির প্রথমদিকে প্রত্যেকের গাড়ি ভাড়া নেয়ার বিনিময়ে মাসে ৭০ হাজার টাকা করে পরিশোধ করতেন। যারা নগদ টাকা দিয়েছেন তাদের সঙ্গে গড়ে ১৫ লাখ টাকা করে একটি গাড়ির দাম ধরে ৭০ হাজার টাকা ভাড়া হিসাবে পরিশোধ করতেন। নগদ টাকা নিয়ে চট্টগ্রাম বন্দর দিয়ে গাড়ি এনে ব্যবসা শুরু করেছিলেন। এ ছাড়া ঢাকায় ফ্ল্যাটসহ ঢাকার আশপাশের বিভিন্ন জায়গায় জমি কিনেছেন। নিজের এলাকায় তিনতলা আলিশান একটি বাড়িও বানিয়েছেন।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন ভুক্তভোগী জানান, চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে জাকির হঠাৎ করেই লভ্যাংশ দেয়া বন্ধ করে দেন। জাকির তাদের জানান, একটি মামলায় কারাগারে যাওয়ায় তার ব্যবসার ক্ষতি হয়েছে। এ ছাড়া আরেকটি রেন্ট-এ-কার প্রতিষ্ঠানকে কিছু গাড়ি ভাড়া দেয়ার পর তারা তার সঙ্গে প্রতারণা করেছেন। এ জন্য তিনি লাভের টাকা ফেরত দিতে পারছেন না।
তবে ভুক্তভোগীরা খোঁজ নিয়ে জানতে পারেন, তার মাধ্যমে যেসব বিনিয়োগকারী গাড়িতে বিনিয়োগ করেছেন তাদের অনেকেই বিনিয়োগের টাকার উৎস সম্পর্কে যথাযথ হিসাব দিতে পারবেন না, তাই তাদের অর্থ আত্মসাতের পরিকল্পনা করেছেন জাকির।
এ বিষয়ে জাকির হোসেনের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তাকে পাওয়া সম্ভব হয়নি।
দুর্নীতিবিরোধী আন্তর্জাতিক সংগঠন ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ- টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, ‘স্থানীয় পর্যায়ে জনপ্রতিনিধিদের সঙ্গে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কতিপয় দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তার একটি যৌথ সিন্ডিকেট তৈরি হয়েছে। তারা অবৈধভাবে উপার্জিত অর্থ একে অন্যের মাধ্যমে বিনিয়োগ করে তা বৈধ করার চেষ্টা করেন। এ ধরনের ঘটনায় পূর্ণাঙ্গ তদন্ত প্রয়োজন। তা না হলে এটি এক পাক্ষিক হয়ে যাবে, একইসঙ্গে তিনি আরেকটি আশঙ্কাও প্রকাশ করেন। যেহেতু ঘটনার সঙ্গে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর অনেক কর্মকর্তা জড়িত, তাই তাকে আইনের আওতায় আনার পাশাপাশি তার সুরক্ষা দেয়া জরুরি।

দৈনিক কালের খবর নিয়মিত পড়ুন এবং বিজ্ঞাপন দিন..

কালের খবর মিডিয়া গ্রুপ লিমিটেডের একটি প্রতিষ্ঠান
Desing & Developed BY ThemesBazar.Com