বৃহস্পতিবার, ০৯ জানুয়ারী ২০২৫, ০৩:২৮ পূর্বাহ্ন
নারায়ণগঞ্জ প্রতিনিধি, কালের খবর :
ভোগান্তি কিছুতেই কমছে না ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ লিঙ্ক রোডে চলাচলকারী যানবাহনের চালক, যাত্রী ও পথচারীদের। প্রায় ২০ কোটি টাকায় সংস্কারের এক বছরের মাথায় এবড়োখেবড়ো হয়ে দিন দিন ব্যবহারের অনুপযোগী হয়ে পড়ছে সড়কটি। কোথাও উঁচু-নিচু, পিচ উঠে গেছে জায়গায় জায়গায়। আবার কোথাও সড়কের মাঝ বরাবর পিচের উঁচু ঢিবি তৈরি হয়েছে।
কোনো কোনো জায়গায় পানি জমে পিচসহ খোয়া উঠে গেছে। এসব গর্ত দিনের ব্যবধানে বড় হচ্ছে। একটু বৃষ্টিতেই সড়কটিতে জমে থাকছে এক হাঁটু পানি।
এ পরিস্থিতিতে ছোট ছোট কিছু গর্তে ইট ফেলে দায়সারা সংস্কার করা হচ্ছে। কিন্তু বড় গর্তগুলোর সংস্কারে কোনো উদ্যোগ নিচ্ছে না সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তর (সওজ)। আর এতে মানুষের ভোগান্তি দিন দিন বাড়ছেই।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ লিঙ্ক রোডে প্রতিদিন কয়েক লাখ মানুষ যাতায়াত করে। ছোট-বড় সব ধরনের যানবাহনই দিন-রাত ২৪ ঘণ্টা চলাচল করে এই সড়ক দিয়ে। নারায়ণগঞ্জ জেলার বাসিন্দা ছাড়াও আশপাশের জেলার মানুষও রাজধানী ঢাকায় যেতে সড়কটি ব্যবহার করে থাকেন।
ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ লিঙ্ক রোড সংস্কারে গত পাঁচ বছরে বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে ৩০ কোটি টাকার বেশি। সর্বশেষ গত বছরের জুলাই মাসে এ সড়কে ১৮ কোটি ১৪ লাখ টাকা ব্যয়ে সংস্কারকাজ শেষ হয়। সড়কে যাতে পানি না জমে সে জন্য তিন কিলোমিটার দীর্ঘ ড্রেনও নির্মাণ করে সড়ক ও জনপথ কর্র্তৃপক্ষ। তবে সেই ড্রেন সড়কের পানি নিষ্কাশনে কোনো কাজেই আসেনি।
এদিকে সংস্কারের অল্প সময়ের মধ্যে ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার পেছনে কাজের গুণগত মান দায়ী বলে মনে করছে নারায়ণগঞ্জবাসী। অথচ সংস্কারকাজের মান রক্ষার ব্যাপারে সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের এবং নারায়ণগঞ্জ-৪ আসনের সাংসদ শামীম ওসমান কাজ পরিদর্শনে এসে সতর্ক করে দিয়েছিলেন। তবে তাদের সেই সতর্কবার্তায় কাজের কাজ যে কিছুই হয়নি তা এখন প্রত্যক্ষ করছে সাধারণ মানুষ।
গত বছর ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ লিঙ্ক রোডের সংস্কারকাজ পরিদর্শনে এসে ওবায়দুল কাদের বলেছিলেন, ‘কোথাও কাজের মান খারাপ হলে সেখানের ইঞ্জিনিয়ার ও ঠিকাদারসহ সংশ্লিষ্ট সবাইকেই জবাবদিহি করতে হবে এবং কাউকে ছাড় দেওয়া হবে না। ’
এর পরপরই সংস্কারকাজ পরিদর্শনে আসেন নারায়ণগঞ্জ-৪ আসনের সাংসদ শামীম ওসমান। পরিদর্শন শেষে তিনি বলেন, ‘এ রোডের নির্মাণকাজে গাফিলতি হলে কোনো ধরনের ছাড় দেওয়া হবে না। ’
সংস্কারকাজের নি¤œমানের বিষয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করে নগরীর কলেজ রোডের বাসিন্দা শাহাদাত হোসেন দেশ বলেন, ‘দেশের অনেক উন্নয়ন এমন ক্ষতিকারক কাজের দ্বারা ম্লান হয়ে যায়। সরকার ঠিকই ব্যয় করেছে উন্নয়নে। কিন্তু কাজ খারাপ করে মুনাফা অর্জন করেছে ঠিকাদার প্রতিষ্ঠানটি, অপরদিকে চরম ক্ষতিসাধন করেছে যাতায়াতকারীদের। ’
ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ পথে চলাচলকারী বন্ধন পরিবহনের চালক মুসা মিয়া বলেন, ‘মানুষের ক্ষতি মাপা না গেলেও গাড়ির ক্ষতি মাপা যায়। এসব খারাপ সড়কে গাড়ির ক্ষতিসাধন হয় ব্যাপক। কদিন পর পরই মেরামত করতে হয়। নতুন নতুন যন্ত্র প্রতিস্থাপন করতে হয়, যা অনেক ব্যয়বহুল। ’
সর্বশেষ সংস্কারকাজের নি¤œমানের অভিযোগ সম্পর্কে জানতে চাইলে সংশ্লিষ্ট ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান মাসুদ হাই-টেক ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের স্বত্বাধিকারী জুলফিকার আলী মাসুদ রানা দেশ বলেন, ‘অতিরিক্ত লোড ও সড়কের নকশার ত্রুটির কারণে বিভিন্ন অংশের পিচ ফুলে উঠছে এবং দেবে যাচ্ছে। এ ছাড়া সেখানে পানি নিষ্কাশনের ব্যবস্থা নেই। তাহলে রাস্তা টিকবে কীভাবে? তবু আমরা মেরামত করে দেব। ’
অন্যদিকে সওজ, নারায়ণগঞ্জ কার্যালয়ের উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী মো. আবদুস সাত্তার শেখ বলেন, ‘অতিরিক্ত যানবাহনের চাপের কারণে সড়কটির এ অবস্থা। সড়কের উঁচু জায়গাগুলো মিলিং মেশিন দিয়ে কেটে সমান করে ওভার লে করা হবে। ঠিকাদারের কোনো গাফিলতি থাকলে সেটিও খতিয়ে দেখা হবে। ’