রবিবার, ১২ জানুয়ারী ২০২৫, ০৮:৩৬ পূর্বাহ্ন
কালের খবর ডেস্ক :
উত্তরের জেলা চাঁপাই নবাবগঞ্জের শিবগঞ্জে চলছে হুন্ডিবাজের গডফাদার হাজী আবু তালেব এর নিয়ন্ত্রণে। আবু তালেবের ওস্তাদ সীমান্তের ওপারে জেলখানায় বসে নিয়ন্ত্রণ করে চোরাচালান।
দেশের উত্তরাঞ্চলের বিভিন্ন সীমান্তে বিশেষ করে চাঁপাই নবাবগঞ্জ সীমান্ত এলাকায় চোরাচালানী হুন্ডিবাজরা মগেরমুল্লুক কায়েম করে চলেছে প্রশাসনের নাকের ডগায়।
স্থানীয় বাসিন্দাদের অভিযোগ আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর অসাধু কর্মকর্তা-কর্মচারীদের ম্যানেজ করেই চক্রটি অপকর্ম চালাচ্ছে সীমান্ত এলাকায়। চাঁপাই নবাবগঞ্জের চারটি সীমান্ত দিয়ে অবাধে আসছে ভারতীয় গরু। লেনদেন হচ্ছে হুন্ডি ও স্বর্ণবারে।
বাংলাদেশে গরু আমদানী বন্ধ থাকার পরও আন্তজার্তিক হুন্ডিপাচার ও ভারতীয় গরু পাচার চক্রের মূল হোতা এনামুল হকের বাংলাদেশী শিষ্যরা ফের সক্রিয় হয়ে এসবের নিয়ন্ত্রণ করছে।
সীমান্তে গবাদিপশুর বিটে গরু প্রতি ২০ টাকা সরকারি সার্ভিস চার্জ আদায়ের নির্দেশনা থাকলেও এনামুল চক্রের রুবেল সিন্ডিকেট কোন রশিদ ছাড়া বড় গরু প্রতিটি ২৯ হাজার টাকা এবং ছোট গরু প্রতিটি সাড়ে ৯ হাজার টাকা করে ব্যাপারীদের কাছ থেকে হাতিয়ে নিচ্ছে সম্পূর্ণ অবৈধভাবে।
অবৈধ বিট দিয়ে পাচার করা হচ্ছে শত শত গবাদিপশু। ফলে সরকার একদিকে রাজস্ব হারাচ্ছে অন্যদিকে বাড়ছে চোরাচালান ও হুন্ডি ব্যবসা।
ব্যাপারীরা জানান, গরু প্রতি ২৯ হাজার টাকার চাঁদার ভাগের মধ্যে বিট মালিক নেয় ১২ হাজার, এনামুল নেয় ১৪ হাজার এবং চোরাচালান সিন্ডিকেট নেয় ৩ হাজার টাকা। ব্যাপারীদের অভিযোগ গরু চোরাচালানীর টাকা ভাগ বাটোয়ারার প্রায় ১০ কোটি টাকা এনামুল সিন্ডিকেটের কাছে যাচ্ছে হুন্ডির মাধ্যমে।
শিবগঞ্জ উপজেলা চোরাচালান নিরোধ টাস্কফোর্স কমিটির সভাপতি চৌধুরী রওশন ইসলামের কাছে এসব বিষয় জানতে চাইলে চাইলে তিনি বলেন, আন্তঃমন্ত্রণালয়ের এক সভার সিদ্ধান্ত মোতাবেক সীমান্তপথে বৈধ-অবৈধ সব ধরনের গবাদিপশু আমদানি নিষিদ্ধ। সরকারের এ সিদ্ধান্ত অমান্য করে শিবগঞ্জ সীমান্তপথে ভারতীয় গরু আমদানি করার সুযোগ নেই। যদি কেউ নিষেধাজ্ঞা উপেক্ষা করে গরু আমদানি করে তাহলে অবশ্যই আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে।
জানা গেছে, ২০১৮ সালের ৬ মার্চ ভারতের কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থা সিবিআইয়ের হাতে গ্রেফতারকৃত আন্তজার্তিক হুন্ডিপাচার ও গরু পাচার চক্রের মূল হোতা এনামুল হকের বাংলাদেশী সহযোগীরা এখন বহাল উত্তরের বিভিন্ন সীমান্তে নেমেছে।এর মধ্যে চাঁপাই নবাবগঞ্জ সীমান্ত এলাকায় হুন্ডি কাদেরের বিচরন সবচেয়ে বেশী। ভারতীয় হুন্ডি এনামুল সিন্ডিকেটের অন্যমত আড়ত চাঁপাই নবাবগঞ্জ জেলার শিবগঞ্জ উপজেলার মাসুদপুর। চাঁদাবাজির অবৈধ টাকা প্রসঙ্গে মাসুদপুর সীমান্ত বিটের মালিক রুবেল আহমেদ দাবি করলেন, ২৯ হাজার টাকা নয় তিনি গরু প্রতি নিচ্ছেন ২ হাজার টাকা। সরকারি সার্ভিস চার্জ মাত্র ২০ টাকার ক্ষেত্রে আপনি এত বেশী টাকা নিচ্ছেন কেন প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, সকলকে ম্যানেজ করেই বিট চালাতে হচ্ছে তাকে।
সরজেমিনে দেখা গেছে, চাঁপাইনবাবগঞ্জের শিবগঞ্জ উপজেলার মাসুদপুর সীমন্তপথ দিয়ে অবাধে আসছে ভারতীয় গরু।
স্থানীয়রা জানান, মাসুদপুর বিটে গত কয়েক দিনে প্রায় তিন হাজারেরও বেশি গরু প্রবেশ করেছে বাংলাদেশে।
আর এ সুযোগে মাসুদপুর বিটের মালিক মো. রুবেল আহমেদ চোরাইপথে আসা গরুর বিট-চালিয়ে বড় গরু প্রতিটি ২৯ হাজার টাকা এবং ছোট গরু প্রতিটি সাড়ে ৯ হাজার টাকা করে আদায় করে গত কয়েকদিনে প্রকাশ্য কয়েক কোটি টাকা চাঁদা আদায় করেছেন ব্যবসায়ীদের জিম্মী করে।
ভুক্তভোগী ব্যাপারীরা অভিযোগ করেছেন, রুবেলকে গোয়েন্দা হেফাজতে ব্যাপক জিজ্ঞাসাবাদ করলে গরু চোরাচালান ও হুন্ডি ব্যবসা’র সকল নারী নক্ষত্র জানা যাবে।
রাজশাহী শিবগঞ্জ থানা ওসি মশিউর রহমান জানান, সীমান্ত বিটগুলিতে কোনো ঘটনা তদন্ত করতে গেলে কমপক্ষে সাড়ে তিন ঘন্টা লেগে যায়। সরকারীভাবে গরু আমদানীর নিষেধাজ্ঞা থাকলেও কিভাবে ভারতীয় গরু আসছে ওসি বলেন, উচ্চ আদালতের রিটের আদেশে অনেকে গরু আমদনি অব্যাহত রেখেছেন। প্রতি সপ্তাহেই ৫/৬টি রিটের আদেশ আমাদের কাছে আসে। আমরা আদেশ অনুযায়ী ব্যবস্থা নেই। এছাড়া অবৈধ বিট, ভারতীয় এনামুল সিন্ডিকেটের হুন্ডি ব্যবসা, সোনা চোরাচালান সম্পর্কে তিনি কোন তথ্য জানাতে পারেননি।
চলতি বছর রহস্যজনক কারণে চোরাচালান বিরোধী অভিযান তেমনভাবে পরিচালিত না হওয়ায় সব অপরাধীচক্র অপতৎপরতা চালাচ্ছে। এসব নিয়ন্ত্রণ করছে হুন্ডি ব্যবসায়ী আবু তালেব, রফিকুল ইসলাম, মিন্টু, আনোরুল, গোলাম জাকারিয়া ভদ্র, সাইফুল ইসলাম, সাজু, আশরাফুল ইসলাম, একরামুল হক, ফিরোজ, টিপু সুলতান, রুহুল আমিন, হারুন অর রশীদ, ইসমাইল, ওবায়দুল হক, সেলিম রেজা, জাহাঙ্গীর আলম, মমিনুল হক, বাবুল হাসনাত, জিএম বাবুল চৌধুরী, মতিউর রহমান ও ভারতীয় নাগরিক আব্দুর রউফ।
সরেজমিনে জানা গেছে, অবৈধ বিট স্থাপন করে প্রতিদিন লক্ষ লক্ষ টাকা চাঁদা আদায় করছে চোরাচালানী সিন্ডিকেট। চাঁপাইনবাবগঞ্জ সীমান্তের ৪টি পয়েন্ট দিয়ে প্রতিদিন এক হাজারের বেশি গরু আসছে। এই জেলার সীমান্ত পথে গত দুই মাসে প্রায় ৪০ হাজার গরু এসেছে ভারত থেকে। অনুমোদিত বিটে গরু অন্তর্ভুক্তি কম দেখিয়ে অবৈধ ও কথিত জহুরপুর, জহুরপুর টেক ও ফতেপুর বিটে গরু পাচার করে আনা হচ্ছে হাজার হাজার। ওয়াহিদপুরসহ আরও কয়েকটি সীমান্ত এলাকায় গিয়ে দেখা গেছে, সন্ধ্যার পরই সীমান্ত অতিক্রম করে নির্বিঘ্নে গরু নিয়ে বাংলাদেশে প্রবেশ করছে রাখালরা। এরা ওয়াহিদপুর, ফতেপুর, জোহরপুর ও জোহরপুর টেক পয়েন্ট দিয়ে দৈনিক গড়ে এক হাজার গরু আনছেন ভারত থেকে।
গরু ব্যবসায়ীরা অভিযোগ করে বলেন এ বিটের মালিকরা সরকারি নিয়ম উপেক্ষা করে পেশী শক্তি ব্যবহার করে বিভিন্ন খরচের অজুহাতে গরু-মহিষের জোড়া প্রতি গরু ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে জোরপূর্বক এগার হাজার টাকা করে আদায় করছেন। অতিরিক্ত টাকা না দিলে তাদের বিভিন্ন ভাবে ভয়ভীতি ও হয়রানি করা হয়।
বিজিবি ৯ ব্যাটালিয়নের কমান্ডিং অফিসারের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি ফোন রিসিভ করেননি।