বৃহস্পতিবার, ০৯ জানুয়ারী ২০২৫, ০৩:৩০ পূর্বাহ্ন
কিশোরগঞ্জ থেকে ফিরে এম আই ফারুক আহমেদ, কালের খবর :
কিশোরগঞ্জের পাকুন্দিয়া উপজেলার চরফরাদী ইউনিয়নের মির্জাপুর এলাকায় ইজারার নামে ব্রহ্মপুত্র নদ থেকে অবৈধভাবে অবাধে বালু উত্তোলন করা হচ্ছে। এতে রাষ্ট্র বড় অংকের রাজস্ব হারাচ্ছে।
পাশাপাশি নদের তীর ও তীর সংলগ্ন ফসলি জমিতে ভাঙন দেখা দিয়েছে।
প্রশাসনকে তোয়াক্কা না করে ক্ষমতাসীন দলের নাম ভাঙিয়ে কিছু অসাধু ব্যবসায়ী এ কাজ করছেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। তাদের এ কর্মকাণ্ডের বিরুদ্ধে পাকুন্দিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কাছে একাধিক লিখিত অভিযোগ দিয়েছে এলাকাবাসী।
জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা যায়, পাকুন্দিয়া উপজেলার মধ্য দিয়ে বয়ে যাওয়া ব্রহ্মপুত্র নদ এলাকার চরকাওনা-চরলক্ষীয়া, চরতেরটেকী ও চরমির্জাপুর বালু মহালের আওতাধীন চরকাওনা ও চরলক্ষীয়া মৌজার ৭৬ দশমিক ১১ একর জায়গা থেকে বালু উত্তোলনের জন্য জেলা প্রশাসন গত ১২ মার্চ চরকাওনা গ্রামের বিল্লাল হোসেনকে এক বছরের জন্য ইজারা দেয়। বিল্লাল হোসেন এর জন্য সরকারকে রাজস্ব দিয়েছে ৪৯ লাখ চার হাজার ৬৩৩ টাকা। কিন্তু বিল্লাল হোসেনের যোগসাজশে কিছু অসাধু বালু ব্যবসায়ী দীর্ঘদিন ধরে ইজারা বহির্ভূত মির্জাপুর এলাকা থেকে বালু উত্তোলন করছেন।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, চরফরাদি ইউনিয়নের ইজারা বহির্ভূত মির্জাপুর এলাকায় ব্রহ্মপুত্র নদের চরে বসানো হয়েছে সারি সারি মোটা পাইপ। পাইপের মাথায় নদের কিনারে বসানো হয়েছে স্থানীয়ভাবে সেলু মেশিন দিয়ে তৈরি একটি ড্রেজার। আরো দুইটি ড্রেজার নির্মাণ করছে শ্রমিকরা।
নদে বসানো ড্রেজারের পাইপের মুখ বেয়ে পানি ও বালু এসে পড়ছে নদের চরে। পরে সেখান থেকে ট্রাক দিয়ে বালু সরিয়ে নেওয়া হচ্ছে এবং বালু মিশ্রিত পানি পাশের বিভিন্ন ফসলি জমিতে গিয়ে পড়ছে। এতে কৃষকের শাকসবজি ও মরিচসহ বিভিন্ন ফসলের ব্যাপক ক্ষতি হচ্ছে।
এলাকাবাসী জানান, গত তিন মাস ধরে ব্রহ্মপুত্র নদ থেকে ড্রেজার দিয়ে অবৈধভাবে বালু উত্তোলন করা হচ্ছে। ওই বালু প্রতিদিন শতাধিক ট্রাক দিয়ে পাকুন্দিয়াসহ আশপাশের বিভিন্ন স্থানে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। এতে সরকার লাখ লাখ টাকার রাজস্ব হারাচ্ছে। দ্রুত বালু উত্তোলন বন্ধ না করলে নদের তীর ও তীর সংলগ্ন স্কুল, মসজিদ, ঈদগাহ, কবরস্থানসহ বিপুল পরিমাণ ফসলি জমি নদে বিলীন হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।
এলাকাবাসীর অভিযোগ, ক্ষমতাসীন দলের নাম ভাঙিয়ে বিল্লাল হোসেনের যোগসাজশে মির্জাপুর গ্রামের আলমগীর হোসেন প্রশাসনের নিষেধাজ্ঞা উপেক্ষা করে বালু উত্তোলন করছেন। অবৈধভাবে বালু উত্তোলনের কারণে ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকরা প্রতিবাদ করলে আলমগীর তাদের প্রাণনাশের হুমকি দিচ্ছে। সম্প্রতি এলাকার সাধারণ মানুষ একত্রিত হয়ে প্রতিবাদ করলে কিছুদিন বালু উত্তোলন বন্ধ রাখা হয়। কিছুদিন যেতে না যেতেই বলগেট ড্রেজার বাদ দিয়ে স্থানীয় প্রযুক্তিতে তৈরি ড্রেজার বসিয়ে ফের বালু উত্তোলন শুরু করছেন আলমগীর।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক দুইজন বালু ব্যবসায়ী বলেন, সরকার দলের নাম ভাঙিয়ে আলমগীর তিন মাস ধরে মির্জাপুর এলাকার নদ থেকে অবৈধভাবে বালু উত্তোলন করছেন। এ ব্রহ্মপুত্র নদে বালু নিয়ে যেন হরিলুট চলছে। যেনতেন ভাবে বালু উত্তোলন করায় ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে ফসলি জমি, নষ্ট হচ্ছে পরিবেশ। তারা বলেন, যেভাবে বালু উত্তোলন চলছে তাতে রাষ্ট্র প্রায় কোটি টাকার মতো রাজস্ব হারাচ্ছে।
মির্জাপুর গ্রামের কৃষক রফিকুল ইসলাম বকুল জানান, বালু মিশ্রিত পানি তার জমিতে গিয়ে পড়ায় তার তিন বিঘা মরিচ ক্ষেত সম্পূর্ণ মরে গেছে। এতে তার প্রায় দুই লাখ টাকার ক্ষতি হয়েছে। এ কারণে প্রতিবাদ করায় আলমগীর তাকে হত্যার হুমকি দিয়েছে।
চরফরাদী ইউনিয়ন ভূমি অফিসের তহশিলদার মো. কামরুল ইসলাম বলেন, ব্রহ্মপুত্র নদের মির্জাপুর এলাকা ইজারা বহির্ভূত। জেলা প্রশাসন এ এলাকা ইজারা দেয়নি। দীর্ঘদিন ধরে একটি অসাধু মহল অবৈধবাবে বালু উত্তোলন করছে। বিষয়টি আমি উপজেলা ভূমি অফিসকে অবগত করেছি।
অবৈধভাবে বালু উত্তোলনের বিষয়টি অস্বীকার করে আলমগীর হোসেন বলেন, সরকার থেকে ইজারা নিয়েই বৈধভাবে বালু উত্তোলন করা হচ্ছে।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. নাহিদ হাসান বলেন, অভিযোগের প্রেক্ষিতে সহকারী কমিশনার (ভূমি) এ কে এম লুৎফর রহমানকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। অবৈধভাবে বালু উত্তোলনের প্রমাণ পেলে প্রয়োজনীয় আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) এ কে এম লুৎফর রহমান বলেন, এ বিষয়ে আমি গতকাল বুধবার অভিযোগ পেয়েছি। অতি দ্রুত এ বিষয়ে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।