বুধবার, ১১ ডিসেম্বর ২০২৪, ০৫:২৪ পূর্বাহ্ন
গোয়ালন্দ (রাজবাড়ী) প্রতিনিধি, কালের খবর :
রাজবাড়ীর গোয়ালন্দের দৌলতদিয়া যৌনপল্লীতে আটকে রাখা চার কিশোরীকে উদ্ধার এবং পল্লীর প্রভাবশালী এক বাড়িওয়ালিকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। জাতীয় হেল্প ডেস্ক ৯৯৯ নম্বরে সহায়তা চাওয়ার পর গতকাল শুক্রবার ভোররাতে অভিযান চালিয়ে তাদের উদ্ধার করে গোয়ালন্দ ঘাট থানা পুলিশ।
বিউটি পার্লারে চাকরি দেওয়ার কথা বলে শুভ নামের এক দালাল চার মাস আগে ওই চার কিশোরীকে পল্লীর বাড়িওয়ালি রূপা বেগমের কাছে বিক্রি করে দেয়। এরপর থেকে কিশোরীদের দিয়ে জোর করে দেহব্যবসার কাজ চালিয়ে আসছিল বাড়িওয়ালি।
আইন অনুযায়ী, শিশু-কিশোরী থেকে শুরু করে যেকোনো বয়সী নারীদের যৌন পেশায় লিপ্ত করানো সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ এবং শাস্তিযোগ্য অপরাধ হলেও দৌলতদিয়া পতিতাপল্লী প্রভাবশালী বিভিন্ন বাড়িওয়ালির ছত্রছায়ায় সেখানে বিশাল দালালচক্র গড়ে উঠেছে। তারা দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে শিশু ও কিশোরী মেয়েদের অন্যত্র চাকরি দেওয়ার কথা বলে ফুসলিয়ে দৌলতদিয়া যৌনপল্লীতে নিয়ে আসে। তারা অসহায় মেয়েগুলোকে পল্লীর বিভিন্ন বাড়িওয়ালির কাছে নগদ টাকায় বিক্রি করে। তাদেরই একজন শুভ নামে ৩০ বছরের এক যুবক। অজ্ঞাত ঠিকানার ওই শুভ দৌলতদিয়া যৌনপল্লীর দালালচক্রের একজন সক্রিয় সদস্য।
পুলিশ ও উদ্ধার হওয়া কিশোরীরা জানায়, গত ঈদুল আজহার কিছুদিন আগে আগস্ট মাসে আলাদা দিনে বিউটি পার্লারে ভালো বেতনে কাজ দেওয়ার কথা বলে বিভিন্ন এলাকার হতদরিদ্র অসহায় পরিবারের চার কিশোরী মেয়েকে ফুসলিয়ে দৌলতদিয়া যৌনপল্লীতে এনে রূপা বেগমের কাছে বিক্রি করে দেয়। তখন থেকে রূপা তার ভাড়াটিয়া যৌনকর্মী সুমী আক্তারের তত্ত্বাবধানে রেখে জোর করে ওই চার কিশোরীকে দেহব্যবসার কাজ করায়।
এ অবস্থায় যৌনপল্লী থেকে গোপনে পালিয়ে যাওয়ার পথ খুঁজতে থাকে চার কিশোরী। শেষে গত বৃহস্পতিবার রাত দেড়টার দিকে চার কিশোরীর একজন তাদের ঘরে আসা এক খদ্দেরকে তাদের অসহায়ত্বের কথা জানালে ওই ব্যক্তি সহায়তা করতে রাজি হন। পরে তাঁর মোবাইল ফোন থেকে কিশোরীরা জাতীয় হেল্প ডেস্কে ৯৯৯ নম্বরে কল করে বিষয়টি জানায়। সঙ্গে সঙ্গে জাতীয় হেল্প ডেস্ক থেকে কিশোরীদের গোয়ালন্দ ঘাট থানায় যোগাযোগ করিয়ে দেওয়া হয়। এরপর গতকাল ভোররাত সাড়ে ৩টার দিকে ওই পল্লীতে অভিযান চালায় থানা পুলিশ। এ সময় পল্লীর প্রভাবশালী বাড়িওয়ালি রূপা বেগমের ঘর থেকে ওই চার কিশোরীকে উদ্ধার ও বাড়িওয়ালিকে হাতেনাতে গ্রেপ্তার করা হয়। উদ্ধার ওই চার কিশোরীর বাড়ি দিনাজপুর সদর, ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর, রংপুরের পীরগঞ্জ ও মানিকগঞ্জ সদর উপজেলার। উদ্ধারের পর গতকাল দুপুরে গোয়ালন্দ ঘাট থানায় বসে ওই চার কিশোরী কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘৯৯৯ নম্বরে ফোনকল করায় নিষিদ্ধ পল্লী থেকে আমরা মুক্তি পেয়েছি। তবে যারা আমাদের সর্বনাশ ঘটিয়েছে তাদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি চাই। ’
গোয়ালন্দ ঘাট থানার পরিদর্শক (তদন্ত) মো. আমিনুল ইসলাম বলেন, উদ্ধারকৃত চার কিশোরীর একজন বাদী হয়ে সংশ্লিষ্ট বাড়িওয়ালি রূপা, তার ভাড়াটিয়া যৌনকর্মী সুমী আক্তার ও দালাল শুভর বিরুদ্ধে গোয়ালন্দ ঘাট থানায় একটি মামলা করেছে। মামলার অন্য দুই আসামি যৌনকর্মী সুমী আক্তার ও দালাল শুভ পলাতক রয়েছে। তাদের দ্রুত গ্রেপ্তার করে আইনের আওতায় আনা হবে।