শুক্রবার, ০৮ নভেম্বর ২০২৪, ০২:৪১ অপরাহ্ন
নিজস্ব প্রতিবেদক, কালের খবর :
২০০৪ সালের ২১ আগস্ট থেকেই দেশের রাজনীতি ভিন্ন খাতে মোড় নিতে থাকে। বাড়তে থাকে প্রধান দুই রাজনৈতিক দল আওয়ামী লীগ ও বিএনপির মধ্যকার দূরত্ব। ওইদিন বঙ্গবন্ধু এভিনিউয়ে সমাবেশে ভয়াবহ গ্রেনেড হামলা হয়। ভাগ্যক্রমে শেখ হাসিনা বেঁচে গেলেও প্রয়াত রাষ্ট্রপতি জিল্লুর রহমানের স্ত্রী আইভী রহমাসনহ ২৪ জন নিহত হন। দলীয়প্রধানসহ আহত হন হাজারো নেতাকর্মী। এরপর ঘটনাস্থলে হামলার সব আলামত নষ্ট করা হয়। সাজানো হয় জজ মিয়া নাটক। সংসদে এ নিয়ে কোনো আলোচনারও সুযোগ দেয়া হয়নি। উল্টো বিএনপি তখন বলেছিল শেখ হাসিনা ভ্যানিটি ব্যাগে গ্রেনেড নিয়ে গিয়ে সমাবেশে হামলার নাটক সাজিয়েছেন। এমনকি তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া জাতীয় সংসদসহ বিভিন্ন সমাবেশে বলেছিলেন আওয়ামী লীগ আগামী ৫০ বছরও ক্ষমতায় আসতে পারবে না। এমনকি, শেখ হাসিনা বিরোধীদলীয় নেতাও হতে পারবেন না।
আওয়ামী লীগ মনে করে, দলীয়প্রধান শেখ হাসিনাকে হত্যার মাধ্যমে আওয়ামী লীগের রাজনীতি নিশ্চিহ্ন করতেই খালেদা জিয়ার বড় ছেলে তারেক রহমানের পরিকল্পনায় এ হামলা চালানো হয়। তৎকালীন গোয়েন্দা সংস্থা থেকে শুরু করে প্রশাসনের সর্বোচ্চ মহল এসব বিষয়ে অবগত ছিল। আর বিএনপি-জামায়াত তাদের ক্ষমতাকে চিরস্থায়ী করতে এ হত্যাকাণ্ড ঘটিয়েছিল। কিন্তু ভাগ্যক্রমে শেখ হাসিনা সেদিন বেঁচে গিয়েছিলেন।
এরপর থেকেই আওয়ামী লীগ ও বিএনপি নেতাদের মধ্যে মনস্তাত্বিক দূরত্ব বাড়তে থাকে। তারা একে অপরকে বিভিন্ন সভা-সেমিনার বা টেলিভিশন টকশোতে আক্রমণাত্মক ভাষায় কথা বলতে থাকেন। দলগতভাবে আওয়ামী লীগ বিএনপিকে আস্থায় নিতে পারে না। দলটি মনে করে, শেখ হাসিনার ওপর এ পর্যন্ত যত হামলা হয়েছে সবকটিতে বিএনপি ও জামায়াত জড়িত। পরবর্তীতে তারা রাষ্ট্রক্ষমতায় আসলে আওয়ামী লীগের ওপর সীমাহীন জুলুম-নির্যাতন করবে। রাজনৈতিক
২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা। এ হামলার পর থেকেই আওয়ামী লীগ বিএনপিকে আস্থায় নিতে পারে না। এ বিষয়ে রাজনৈতিক বিশ্লেষক ও ঢাকা বিশ^বিদ্যালয়ের শিক্ষক অধ্যাপক ড. শান্তনু মজুমদার কালের খবরকে বলেন, ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলার আগে আওয়ামী লীগ ও বিএনপির মধ্যে একটা সহনশীল সম্পর্ক ছিল। হামলার পর থেকেই দুই দলের মধ্যে তিক্ততা বাড়তেই থাকে। কারণ তৎকালীন রাষ্ট্রক্ষমতায় ছিল বিএনপি। হামলার পর ক্ষমতাসীনদের উচিত ছিল, যে বা যারাই গ্রেনেড হামলার সঙ্গে সম্পৃক্ত, তাদের খুঁজে বের করতে সব মহলের কাছে গ্রহণযোগ্য একটা তদন্ত কমিশনের মাধ্যমে একটা সুরাহা করা। কিন্তু তা না করে উল্টো ভুক্তভোগীদেরই (বিরোধী দল) দোষারোপ করা হয়েছিল।
এসব ঘটনায় দুই দলের মধ্যে পারস্পারিক অবিশ্বাসের সৃষ্টি হয়েছে। একে অপরের মধ্যে আস্থাহীনতার সৃষ্টি হয়েছে। দূরত্ব বেড়েছে। বিএনপি ক্ষমতায় যেতে উদগ্রীব। আবার আওয়ামী লীগ মনে করে, ক্ষমতা হারালে তাদের ওপর ফের প্রতিপক্ষের নারকীয় হামলা হতে পারে। ২১ আগস্টের চেয়ে ভয়ঙ্কর কোনো ঘটনা ঘটতে পারে।
অবশ্য আওয়ামী লীগের সভাপতিমন্ডলীর সদস্য কর্নেল (অব.) ফারুক খান মনে করেন, গ্রেনেড হামলার মতো নারকীয় ঘটনার পরেও আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে সৌজন্যতাবোধের কোনো ঘাটতি ছিল না। একটা রাজনৈতিক দল হিসেবে দেশের স্বার্থে বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়াকে টেলিফোন করে গণভবনে আসার আমন্ত্রণ, ছেলে আরাফাত রহমান কোকোর মৃত্যুর পর সন্তানহারা একজন মাকে সান্ত¦না দিতে গিয়েছিলেন প্রধানমন্ত্রী। তখন বিএনপিই অসৌজন্যমূলক আচরণ করেছে। ২০০৭ সালে দুই নেত্রী যখন সাবজেলে ছিলেন, তখনও আমাদের নেত্রী খালেদা জিয়ার জন্য রান্না করা খাবার পাঠিয়েছিলেন। তত্ত্বাবধায়ক সরকারের মাইনাস টু ফর্মুলায় শেখ হাসিনা বিরোধিতা করেছিলেন। তিনি যথেষ্ট সৌজন্যবোধ দেখিয়েছিলেন।