বুধবার, ১৩ নভেম্বর ২০২৪, ০১:২২ অপরাহ্ন
নিজস্ব প্রতিবেদক কালের খবর : এখনো শরীরের আঘাতের ক্ষত পুরোপুরি শুকায়নি। সবেমাত্র (মঙ্গলবার) ঢাকা মেডেকেল কলেজ হাসপাতাল থেকে রিলিজ পেয়েছে রাজধানীর ইস্কাটন গার্ডেনের বাসায় নির্যাতনের শিকার গৃহকর্মী শিশু জাহিদুল ইসলাম শাওন (১২)। কিন্তু তার হাসপাতাল থেকে রিলিজ পাওয়ার ক’দিন আগেই (২৪ জুন) আদালত থেকে জামিন পেয়েছেন নির্যাতনকারী তিন আসামি।
জামিন আদেশে আদালত বলেছেন, ভিকটিমের জবানবন্দি নেওয়া হয়নি। এমনকি ইনজুরি সার্টিফেকেটও দেওয়া হয়নি। তাই পুলিশ প্রতিবেদন না আসা পর্যন্ত তিন আসামির জামিন মঞ্জুর করা হলো। অপরদিকে মামলা করার পাঁচদিন অতিবাহিত হওয়ার পরও গ্রেফতার হয়নি বাড়িওয়ালা মোজাফ্ফর হোসেন ও তার স্ত্রী তাহমিনা খানম মিলি।
ডিএমপি’র রমনা বিভাগের উপ-কমিশনার মারুফ হোসেন সরদার জাগো নিউজকে বলেন, ‘ভুক্তভোগী শাওন হাসপাতালে ভর্তি ছিল। সে কারণে তার জবানবন্দি নেয়া যায়নি। আর হাসপাতাল থেকে রিলিজ না পাওয়া পর্যন্ত ইনজুরি সার্টিফিকেট নেয়া যায় না। ভুক্তভোগী হাসপাতালে ভর্তি সে বিষয়টি তদন্তকারী কর্মকর্তা আদালতকে অবহিত করেছেন।’
মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা রমনা থানার ইন্সপেক্টর (নিরস্ত্র) সফিকুল ইসলাম বলেন, ‘বাড়িওয়ালা মোজাফ্ফর হোসেন ও তার স্ত্রী তাহমিনা খানম মিলিকে গ্রেফতারে অভিযান চলছে। আশা করি খুব অল্প সময়ে তাদের গ্রেফতার করতে পারবো।’
তিনি আরো বলেন, মামলার ভিকটিম হাসপাতালে ভর্তি থাকায় ২২ ধারায় জবানবন্দি নেওয়া যায়নি এবং ইনজুরি সার্টিফেকেট দেওয়া হয়নি। আগামীকাল বুধবার ২২ ধারায় শাওনের জবানবন্দি রেকর্ড করার জন্য আদালতে পাঠানো হবে।
আদালতের রমনা থানার নিবন্ধন কর্মকর্তা শরিফুল ইসলাম জাগো নিউজকে বলেন, গৃহকর্মী জাহিদুল ইসলাম শাওনকে নির্যাতনের অভিযোগে রাজধানীর ইস্কাটন গার্ডেনের বাসা থেকে গ্রেফতার তিনজনকে আগামী ২৪ জুন পাঁচ হাজার টাকা মুচলেখায় জামিন মঞ্জুর করছেন আদালত। ঢাকা মহানগর হাকিম গোলাম নবী এ জামিন মঞ্জুর করেন। আদালত জামিন আদেশে উল্লেখ করেন, মামলার ভিকটিমের জবানবন্দি (২২ ধারা) নেওয়া হয়নি এবং ইনজুরি সার্টিফেকেটও দাখিল করা হয়নি। তাই পুলিশ প্রতিবেদন না আসা পর্যন্ত তাদের জামিন মঞ্জুর করা হলো।
গৃহকর্মী শাওনের বাবা জাহাঙ্গীর হোসেন কালু বলেন, ‘আজ (২৬ জুন) সকাল ১১টার দিকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল থেকে শাওনকে রিলিজ দিয়েছে। আমার ছেলের তো এখনো শরীরের আঘাতের চিহ্ন শুকায়নি। কীভাবে আসামিরা জামিন পেয়েছে তা আল্লাহ ভালো জানেন।’
উল্লেখ্য, গত ২০ জুন ১২ বছরের এক শিশু গৃহকর্মীকে নির্যাতনের অভিযোগে রাজধানীর ইস্কাটন গার্ডেন এলাকার একটি বাসা থেকে তিনজনকে গ্রেফতার করে রমনা থানার পুলিশ। এলাকার একজন বাসিন্দা ৯৯৯-এ ফোন করে নির্যাতনের কথা জানালে শাওনকে উদ্ধার করা হয়। শাওনের হাত-পা, পিঠ, পায়ের তলায় ভোতা অস্ত্র দিয়ে আঘাতের চিহ্ন রয়েছে। তার বয়স ১২ বছর। সে ওই বাসায় ৭ মাস ধরে কাজ করছিল। পরের দিন রমনা থানার উপ-পরিদর্শক মোশারফ হোসেন বাড়িওয়ালাসহ পাঁচজনের নামে একটি মামলা করেন।
পাঁচ আসামি হলেন- ইকবাল হোসেন (গৃহকর্তার শ্যালক), তার স্ত্রী তামান্না খান, তানজিলুর রহমান (ইকবালের ভাগ্নে ও গৃহকর্তার ছেলে), বাড়িওয়ালা মোজাফ্ফর হোসেন ও তার স্ত্রী তাহমিনা খানম মিলি।
ঘটনাস্থল থেকে ইকবাল (গৃহকর্তার শ্যালক), তার স্ত্রী তামান্না খান ও তানজিলুর রহমান (ইকবালের ভাগ্নে ও গৃহকর্তার ছেলে) গ্রেফতার করে পুলিশ।
২১ জুন তিনজনের বিরুদ্ধে মামলা সুষ্ঠু তদন্তের জন্য সাতদিনের রিমান্ড আবেদন করেন মামলা তদন্তকারী কর্মকর্তা। ঢাকা মহানগর হাকিম মাহমুদা বেগম রিমান্ড নামঞ্জুর করে তাদের কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন। ২৪ জুন ঢাকা মহানগর হাকিম গোলাম নবী পাঁচ হাজার টাকা মুচলেকায় গ্রেফতার তিনজনের জামিন মঞ্জুর করেন।
দৈনিক কালের খবর নিয়মিত পড়ুন ।
শিশু-নির্যাতন