মঙ্গলবার, ২৪ ডিসেম্বর ২০২৪, ০১:২৭ পূর্বাহ্ন
চট্টগ্রাম প্রতিনিধি, কালের খবর : চট্টগ্রামে সাঁড়াশি অভিযানেও থেমে নেই মাদক পাচার ও বিক্রি। গত ১৪ই মে থেকে অভিযান শুরুর পর থেকে চট্টগ্রামে র্যাবের সাথে গোলাগুলিতে ৫ মাদক কারবারি নিহত হয়েছেন। অথচ এরমধ্যেও মাদক পাচার ও বিক্রির সময় গ্রেপ্তার হয়েছে নারীসহ ২৬ জন মাদক কারবারি। উদ্ধার করা হয়েছে অর্ধলাখেরও বেশি ইয়াবা ও ফেন্সিডিল।
চট্টগ্রাম মহানগর পুলিশের অতিরিক্ত উপ কমিশনার সৈয়দ আবদুর রউফ জানান, চট্টগ্রাম মহানগরীর সবচেয়ে বড় মাদকের আখড়া সদরঘাট থানার বরিশাল কলোনীতে অভিযান চালিয়ে ৬৫৩ বোতল ফেনসিডিলসহ দুই নারী মাদক কারবারিকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।
গত বৃহস্পতিবার দিবাগত রাত দুইটা থেকে গতকাল শুক্রবার ভোর পর্যন্ত এই কলোনীতে অভিযান চালানো হয়। অভিযানে সদরঘাট থানার ওসিসহ প্রায় ২০০ পুলিশ সদস্য অংশ নেয়।
সদরঘাট থানার ওসি নিজাম উদ্দিন বলেন, গত ১৪ই মে বরিশাল কলোনীর মাদক স¤্রাট হাবিবুর রহমান প্রকাশ মোটা হাবিব (৪২) ও তার সহযোগী মোশাররফ (২২) র্যাবের অভিযানে গোলাগুলিতে নিহত হয়। এরপর গত ২৩শে মে বরিশাল কলোনীর গিরা খ্যাত মাদক বিক্রীর শতাধিক স্পট গুড়িয়ে দেওয়া হয়। এরপরও থেমে নেই মাদক বিক্রি ও পাচার। গত বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় হঠাৎ মাদক বিক্রীর খবর পেয়ে এই কলোনীতে অভিযান চালানো হয়। রাতভর তল্লাশি চালিয়ে মাদকসহ মাদক স¤্রাজ্ঞী পারুল ও জহুরাকে গ্রেপ্তার করা হয়। এই দুই নারীর বিরুদ্ধে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে বলে জানান তিনি।
এদিকে গত ১৭ই মে সোমবার গভীর রাতে র্যাবের সাথে বন্দুকযুদ্ধে নিহত হয় শুক্কুর আলী (৪৫) নামে চট্টগ্রামের এক শীর্ষ মাদক ব্যবসায়ী। নগরীর বায়োজিদ থানাধীন ডেবারপাড় এলাকায় বন্দুকযুদ্ধের এ ঘটনা ঘটে। এ অভিযানে ঘটনাস্থল থেকে ১০ হাজার ইয়াবা, একটি ওয়ান শুটার গান,৩ রাউন্ড গুলি ও বিপুল পরিমাণ গাঁজা উদ্ধার করে র্যাব।
শুক্কুর ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা সদরের আউলিয়া বাজার মুকুন্দপুর গ্রামের মো. হেলাল উদ্দিনের ছেলে। নগরীর বায়েজিদ থানা ডেবার পাড় ব্যাংক কলোনীতে গাঁজা শুক্কুর হিসেবে সুপরিচিত ছিল সে। তার বিরুদ্ধে মহানগরীর বিভিন্ন থানায় অন্তত ১০টি মাদক মামলা আছে।
কিন্তু এর একদিন পরই ১৯শে মে বায়েজীদ থানা ডেবার পাড় থেকে ১০ হাজার ইয়াবাসহ চার মাদক কারবারীকে গ্রেপ্তার করে র্যাব। এসব মাদকারবারীরা ইয়াবা পাচারে জড়িত ছিল। এদের বিরুদ্ধেও আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন বায়েজীদ থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) জসিম উদ্দিন।
এছাড়া ১৭ই মে নগরীর বাকলিয়া থেকে পুলিশ ইয়াবাসহসহ ৬ মাদকারবারীকে গ্রেপ্তার করে। তাদের কাছ থেকে এ সময় ৬ হাজার ইয়াবা উদ্ধার করে। এই চার মাদক কারবারী ফেনীর দাউদপুর এলাকায় র্যাবের সাথে গোলাগুলিতে নিহত মাদক স¤্রাট ফারুকের সহযোগী।
এাদক স¤্রাট ফারুক গত মঙ্গলবার দিনগত রাতে ইয়াবা নিয়ে প্রাইভেটকার যোগে ঢাকা যাওয়ার পথে র্যাবের নজরে পড়ে। র্যাবের একটি দল প্রাইভেটকারটিকে থামানোর সংকেত দিলেও ফারুক র্যাবকে লক্ষ্য করে গুলি ছুড়ে। র্যাবও পাল্টা গুলি চালালে নিহত হন ফারুক।
এ সময় তার প্রাইভেটকারটি তল্লাশি করে ২২ হাজার ইয়াবা ট্যাবলেট, একটি ওয়ান শুটার গান, ৫ রাউন্ড গুলি, ৫ রাউন্ড গুলির খোসা উদ্ধার করা হয়। জব্দ করা হয় প্রাইভেটকারটিও। ফারুকের বিরুদ্ধে চট্টগ্রামের বিভিন্ন থানায় মাদকসহ অসংখ্য মামলা রয়েছে বলে র্যাব-৭ এর সহকারী পরিচালক মিমতানুর রহমান।
তিনি আরো জানান, অভিযানে ফেনীর লেমুয়া বাজার এলাকায় র্যাবের একটি টিমের সাথে বন্ধুকযুদ্ধে নিহত হয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের তালিকাভুক্ত চট্টগ্রামের মাদক ব্যবসায়ি মঞ্জুরুল আলম মঞ্জু (৪৬)। চট্টগ্রাম থেকে ইয়াবা নিয়ে ঢাকায় যাচ্ছিলেন তিনি।
বন্দুকযুদ্ধের পর ঘটনাস্থল থেকে একটি বিদেশি পিস্তল, সাত রাউন্ড গুলি, পাঁচটি খালি খোসা ও দশ হাজার পিস ইয়াবা উদ্ধার করে র্যাব। মঞ্জু চট্টগ্রামের সাতকানিয়া উপজেলার মৃত হাজী আব্দুল করিমের ছেলে। তার বিরুদ্ধে চট্টগ্রামসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে একাধিক মাদক মামলা রয়েছে বলে জানান তিনি। অথচ গত শুক্রবার কক্সবাজার থেকে ইয়াবা পাচারের সময় ২০ হাজার ইয়াবাসহ তার তিন সহযোগীকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ।
এ কর্মকর্তা জানান, অভিযানের মধ্যেও আজ শনিবার সকালে চট্টগ্রামের লোহাগাড়ায় ইয়াবা পাচারের সময় একটি বাসের চালক মাসুদ রানা (৪০), চালকের সহকারী জয়নাল আবেদিন (২০) ও সুপারভাইজার আবুল কালাম (৩৮ কে গ্রেপ্তার করে র্যাব। তাদের কাছ থেকে উদ্ধার করা হয় ১৪ হাজার ইয়াবা।
গতকাল রাতেও সালাহউদ্দিন দুলাল নামে এক ইয়াবা ব্যবসায়ীকে নগরীর চাঁদগাঁও এলাকা থেকে গ্রেপ্তার করা হয়। দুপুরে গ্রেপ্তার করা হয় সাধুবাবাসহ দুজন মাদক কারবারিকে।
মাদক সারাদেশের কিশোর ও তরুণ সমাজকে ধ্বংস করে দিচ্ছে উল্লেখ করে মিমতানুর রহমান বলেন, মাদকের প্রভাবে যুবকরা অসামাজিক কার্যকলাপ থেকে শুরু করে হত্যার মত জঘন্য খেলায়ও মেতে উঠছে। বিগত সময়ে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ঝুঁকি নিয়ে অপরাধীদের গ্রেপ্তার করলেও কুচক্রি মহলের ইশারায় কিছুদিন পর জামিনে বেরিয়ে আবারও তারা ফিরে এসেছে অপরাধ জগতে। তাই স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের তালিকা হাতে নিয়েই এবার মাদকের বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থান নিয়েছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। দেশজুড়ে চলছে সাঁড়াশি অভিযান। কিন্তু এর মাঝেও থেমে নেই মাদক পাচার ও বিক্রি।
দৈনিক কালের খবর নিয়মিত পড়ুন