রবিবার, ২২ ডিসেম্বর ২০২৪, ০৮:১১ অপরাহ্ন
কালের খবর প্রতিবেদক :: রমজান আসছে বাড়ছে নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যমূল্য। নিয়ন্ত্রণে রাখতে বরাবরের মতোই জেলায় জেলায় মিটিং সিটিং হচ্ছে, গঠন মনিটরিং সেল। তোড়জোড় ব্যাপক হলেও মুনাফালোভীদের লাগাম টেনে ধরার ব্যবস্থাটা-“বজ্র আটুঁনী ফস্কা গোরের’ মতো। এ অভিযোগ ভোক্তা সাধারণের। মাগুরার শালিখা উপজেলার সীমাখালী বাজারে বসে বেসরকারী চাকুরীজীবি লিয়াকত আলী বললেন, শুনে থাকি বাজার নিয়ন্ত্রণ হয়। কোথায় হয়, কিভাবে হয়- জানি না। মাঝেমধ্যে মনিটরিং সেলের কর্মকর্তা অভিযান চালান। বাজার কর্মকর্তাদের রুটিনওয়ার্ক প্রতিদিনের বাজার দরের রিপোর্ট কেন্দ্রে পাঠানো। অবশ্য এর পাল্টা বাজার কর্মকর্তারা বলে থাকেন মুক্ত বাজার অর্থনীতিতে বাজার নিয়ন্ত্রণের সুযোগ নেই।
সূত্রমতে, প্রতিনিয়ত নানাভাবে ঠকছেন ভোক্তা সাধারণ। এর উপর রমজানকে সামনে রেখে দ্রব্যমূল্যের উর্ধ্বমুখীতে বাজারবিপদের আশঙ্কা করা হচ্ছে।
অর্থনীতি বিশারদদের বক্তব্য বাজার নিয়ন্ত্রণের ব্যাপারে আইন আছে কিন্তু যথাযথ প্রয়োগ না থাকায় ভোক্তা সাধারণ নানাভাবে ঠকছেন এবং পড়ছেন জিম্মি হয়ে। কৃষিজাত পণ্য উৎপাদনকারীরাও একইভাবে ঠকছেন। বিশেষ করে মাঠপর্যায়ে আইনটির প্রয়োগ কাগজ কলমেই সীমাবদ্ধ বলে বিস্তর অভিযোগ রয়েছে। যশোর, খুলনা, মেহেরপুর, ফরিদপুর, মানিকগঞ্জ ও কুষ্টিয়াসহ দেশের বিভিন্নœ জেলা ও উপজেলা এলাকায় খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বাজার মনিটরিং ব্যবস্থা জোরদার না থাকায় মুনাফালোভীরা কোন নিয়ম নীতি মানে না। তারা যেটি মূল্য নির্ধারণ করবে সেটিই যেন আইন।
সংশ্লিষ্ট দায়িত্বশীল সূত্র জানায়, ১৯৬৪ সালের এগ্রিকালচারাল প্রডিউস মার্কেটস রেগুলেশন এ্যাক্ট ও ১৯৮৫ সালের সংশোধিত বাজার নিয়ন্ত্রণ আইনের ১৬(১) ও ১৬(২) ধারামতে কৃষিজাত ও ভোগ্যপণ্যের ক্রয়মূল্য, বিক্রয়মূল্য ও মজুদ পরিস্থিতির তদারকির ক্ষমতা রয়েছে কৃষি বিপনন অধিদপ্তরের বাজার কর্মকর্তাদের। কিন্তু বাস্তবে কোথাও আইনটির প্রয়োগ হতে দেখা যায় না।
তাছাড়া ১৯৫৩ সালের মজুদবিরোধী আইন ও অত্যাবশ্যকীয় পণ্য নিয়ন্ত্রণ আইনেরও প্রয়োগ নেই। মুক্ত বাজার অর্থনীতির কোপানলে ওইসব আইন কার্যত অকার্যকর হয়ে পড়েছে। যদিও সর্বশেষ মজুদবিরোধী আইনে সর্বোচ্চ ১লাখ টাকা জরিমানা করার একটা সিদ্ধান্ত মন্ত্রী পরিষদে নেওয়া হয়েছে। কিন্তু এখনো প্রজ্ঞাপন জারি হয়নি। ওটি কার্যকর হলে মজুদদারদের লাগাম টেনে ধরা যাবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন বাজার কর্মকর্তারা। সংশ্লিষ্ট দায়িত্বশীল সূত্র জানায়, বাজার নিয়ন্ত্রণ আইনে মাত্র ৫শ’টাকা জরিমানার বিধান রয়েছে। যা বিভিন্ন এলাকা থেকে ন্যূনতম ২হাজার টাকা অনাদায়ে ৩মাসের কারাদÐ করার প্রস্তাবনা মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয় বেশ আগে। কিন্তু এ ব্যাপারে সিদ্ধান্ত হয়নি বলে মাঠপর্যায়ের বাজার কর্মর্কর্তা মনোয়ার হোসেন দৈনিক ইনকিলাবকে জানান। তাছাড়া জেলা মনিটরিং কমিটি নিয়ন্ত্রণ করার যতটুকু চেষ্টা করছে তা মূলত শহরকেন্দ্রিক। গ্রামাঞ্চলের হাট-বাজারে দ্রব্যমূল্যের ব্যাপারে খোঁজ নেয়ারও কেউ নেই। শহরাঞ্চলের চেয়ে গ্রামাঞ্চলের হাট-বাজার ও মুদি দোকানে নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিসের মূল্য আরো বেশী।
রমজানকে সামনে রেখে চিনি, পিয়াজ, রসুন, আলু, সবজি, জিরা, এলাচসহ বিভিন্ন জিনিসের মূল্য বাড়ছে। যশোর অঞ্চল সবজি উৎপাদনের রেকর্ড। ঢাকাসহ দেশের দেশের বিভিন্নস্থানে চালান হয় সবজি। সবজির বাজার কোনভাবেই রনিয়ন্ত্রণ করা গেল না। এতে উৎপাদন চাষি ও ভোক্তা উভয়েই প্রতিনিয়ত ঠকেছেন। মাঠের মূল্য প্রতিকেজি বেগুন ২০টাকা আর বাজারে বিক্রি হচ্ছে ৫০টাকা। মাঝখানে ৩০টাকা কাদের পকেটে যাচ্ছে কোন তদন্ত নেই। সারাদেশের মোট চাহিদার ৬৫ভাগ সবজি উৎপাদন হয়। বরাবরই বিষয়টির উপর গুরুত্ব দেয়া হয় না বলে অভিযোগ। সবজিসহ ভোগ্যপণ্যের সিÐিকেটরা অতিমাত্রায় তৎপর একথা অকপটে স্বীকার করেছেন বেশ কযেকজন খাদ্য ও বাজার কর্মকর্তা। তাদের কথা, দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণে সরকারের নির্দেশনা মাঠপর্য়ায়ে মোটেও কার্যকর হচ্ছে না। জেলায় জেলায় বাজার নিয়ন্ত্রণে আছে নামকাওয়াস্তে মনিটরিং সেল।
সূত্র জানায়, জেলা বাজার কর্মকর্তারা শুধু কোন জিনিসের কি মূল্য তার তালিকা করে সংশ্লিষ্ট উর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের কাছে পাঠানোর রুটিনওয়ার্ক করে থাকেন। কিভাবে এবং কেন মূল্য বৃদ্ধি হলো, তার কারণ পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে তদন্ত করে চিহ্নিত করার চেষ্টা করেন না বলে অভিযোগ। খাদ্য অধিদপ্তর, বাজার কর্মকর্তা ও মনিটরিং সেল সূত্র জানায়, দ্রব্যমূল্য স্থিতিশীল রাখার জন্য সরকার বÐমুখী পদক্ষেপ নিয়েছে। কিন্তু বাস্তবে মাঠপর্যায়ে বাজার নিয়ন্ত্রণে ঢিলেঢালা অবস্থা। একেক বাজারে একেক মূল্য হাকছে খুচরা ব্যবসায়ীরা। মূল্যবৃদ্ধির জন্য তারা দোষারোপ করছেন পাইকারী ও সিÐিকেট ব্যবসায়ীদের। বাজারবিপদ নিয়ে ভোক্তাদের দুশ্চিন্তা সবসময়। মাঠপর্যায়ে বাজার নিয়ন্ত্রণে দুর্বল অবস্থা দেখে কোনভাবেই আশ্বস্ত হতে পারছেন না ভোক্তসাাধারণ।
..…….দৈনিক কালের খবর