রবিবার, ২২ ডিসেম্বর ২০২৪, ১২:২২ অপরাহ্ন
নারায়ণগঞ্জ ১০০ শয্যা জেনারেল হাসপাতাল
শিশুর ব্যবস্থাপত্রে উচ্চ ক্ষমতার ক্যাপসুল!
নারায়ণগঞ্জ প্রতিনিধি, কালের খবর : নারায়ণগঞ্জ ১০০ শয্যা জেনারেল (ভিক্টোরিয়া) হাসপাতালের জরুরি বিভাগের চিকিৎসকের কাণ্ড দেখে হতবাক রোগীর অভিভাবক, স্বজন ও ওষুধ ব্যবসায়ীসহ বিভিন্ন মহল। আড়াই বছরের এক শিশুর ব্যবস্থাপত্রে (প্রেসক্রিপশন) লেখা হয়েছে উচ্চ ক্ষমতার (হাই পাওয়ারের) ক্যাপসুল।
এর মধ্যে প্রেসক্রিপশনে শিশুটির জন্য এক দিনে ৫০০ মিলিগ্রাম পাওয়ারের চারটি অ্যান্টিবায়োটিক লেখা হয়েছে। এ ছাড়া আরো দুটি ক্যাপসুল লেখা রয়েছে তিন বেলার জন্য। অথচ একজন পূর্ণবয়স্ক রোগীর জন্যও দিনে ৫০০ মিলিগ্রাম পাওয়ারের চারটি অ্যান্টিবায়োটিক স্বাস্থ্যের জন্য মারাত্মক ঝুঁকি। এরই মধ্যে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে বিষয়টি নিয়ে চলছে আলোচনা-সমালোচনা। জরুরি বিভাগের ওই চিকিৎসকের বিরুদ্ধে ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়াও ব্যক্ত করেছেন অনেকে। তবে ওই চিকিৎসকের বিরুদ্ধে বিধি মোতাবেক ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে জানিয়েছেন হাসপাতালের চিকিৎসা তত্ত্বাবধায়ক (সুপার) ও জেলা সিভিল সার্জন ডা. এহসানুল হক।
জানা গেছে, গত শনিবার নারায়ণগঞ্জ শহরের বাবুরাইল এলাকার মো. রিপন ও বীথি আক্তার দম্পতির রাহি নামের আড়াই বছর বয়সী এক মেয়েশিশুর খেলতে গিয়ে মাথা ফেটে যায়। তাকে নারায়ণগঞ্জ ১০০ শয্যা জেনারেল হাসপাতালের জরুরি বিভাগে নেওয়া হলে ওই শিশুটির মাথায় তিনটি সেলাই করা হয়। পরে জরুরি বিভাগের চিকিৎসক গোলাম মোস্তফা ইমন ওই আড়াই বছরের শিশুর প্রেসক্রিপশনে হাই পাওয়ারের ক্যাপসুল লিখে দেন।
এর মধ্যে ফ্লুক্সিক্যাপ নামের ৫০০ মিলিগ্রাম পাওয়ারের ক্যাপসুল লিখেছেন দিনে চারটি করে, যা এক সপ্তাহে খেতে হবে ২৮টি। এ ছাড়া টডেল ১০ মিলিগ্রাম পাওয়ারের ক্যাপসুল লিখেছেন প্রতিদিন তিনটি করে এবং ইসাপ ২০ মিলিগ্রাম পাওয়ারের ক্যাপসুল প্রতিদিন দুটি করে পাঁচ দিন খাওয়ানোর জন্য বলেছেন। এদিকে শনিবার বিকেলে এ বিষয়ে ফেসবুকে নারায়ণগঞ্জ জেনারেল হাসপাতালে চিকিৎসকের কাণ্ড লিখে প্রেসক্রিপশন ও শিশুটির ছবি আপলোড করেছেন শিশির নামের এক ব্যক্তি। আর ওই পোস্টের নিচে এরই মধ্যে বেশ কিছু কমেন্টসও পড়েছে। যাতে অনেকেই ওই চিকিৎসকের বিরুদ্ধে ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছেন। কোনো সুস্থ মস্তিষ্কের চিকিৎসক শিশুদের ক্যাপসুল ও ট্যাবলেট দিতে পারেন না বলে মন্তব্য করেছেন অনেকে। বিশেষ করে হাই পাওয়ারের ওষুধ শিশুদের জন্য ক্ষতিকর বলেই বিবেচিত। শিশুদের সাধারণত সিরাপ জাতীয় ওষুধ দেওয়া হয়ে থাকে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, চিকিৎসক গোলাম মোস্তফা ইমনের বিরুদ্ধে এর আগেও চিকিৎসা নিয়ে অনিয়ম, রোগী ও তার স্বজনদের সঙ্গে দুর্ব্যবহার করা, প্রয়োজনের অতিরিক্ত ওষুধ লেখা, বিভিন্ন ওষুধ কম্পানির রিপ্রেজেন্টেটিভদের কাছ থেকে অনৈতিক সুবিধা নিয়ে দামি ওষুধ লেখাসহ নানাবিধ অভিযোগ রয়েছে। এ ব্যাপারে জানতে ডা. গোলাম মোস্তফা ইমনের মোবাইলে কয়েকবার ফোন দিলে তাঁর মোবাইল ফোনটি বন্ধ পাওয়া যায়।
হাসপাতালের চিকিৎসা তত্ত্বাবধায়ক (সুপার) ও জেলা সিভিল সার্জন ডা. এহসানুল হক বলেন, ‘বিষয়টি আমার জানা ছিল না। শিশুটির পরিবারও আমাকে কোনো অভিযোগ করেনি। তবে গণমাধ্যমকর্মীদের মাধ্যমে বিষয়টি জানতে পেরেছি। এ বিষয়ে আমি বিধি মোতাবেক ব্যবস্থা নেব। ’ বিএমএ নারায়ণগঞ্জ জেলার সাধারণ সম্পাদক ও শিশু বিশেষজ্ঞ ডা. দেবাশীষ বলেন, ‘আমি কখনোই কোনো চিকিৎসক শিশুদের জন্য অ্যান্টিবায়োটিক ক্যাপসুল লিখেছেন এমনটি শুনিনি। এটাই প্রথম শুনলাম। ওই চিকিৎসক নিশ্চয়ই কোনো ভুল করেছেন। এ ছাড়া আড়াই বছরের শিশু ক্যাপসুল কিভাবে খাবে। সাধারণত আট বছর বয়সী শিশুদের অ্যান্টিবায়েটিক দেওয়া হলেও সেটা ওজনের ওপর নির্ভর করে দেওয়া হয়। আমরা সাধারণত শিশুদের ইনজেকশন ও সিরাপ দিয়ে থাকি। ’
দৈনিক কালের খবর :