বুধবার, ১১ ডিসেম্বর ২০২৪, ০৭:০৮ পূর্বাহ্ন
এম আই ফারুক আহমেদ, কালের খবর :>জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের একটি বাস উল্টো পথে চলছিল। বাসটিকে পুলিশ থামানোর পর উল্টো তর্কে জড়ায় মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তা-কর্মচারী, বাসচালক ও হেলপার
একপর্যায়ে চালক বেপরোয়া হয়ে বাসটি চালাতে থাকে। আর ওই সময় বাসের চাকায় পিষ্ট হয় ট্রাফিক ইন্সপেক্টর দেলোয়ারের পা।
এ ঘটনায় আহত লালবাগ জোনের ট্রাফিক ইন্সপেক্টর মো. দেলোয়ার হোসেন এখন মৃত্যুর সঙ্গে লড়ছেন হাসপাতালে। তাঁর এই ভয়াবহ অবস্থা দেখে কান্না থামছে না পরিবারের সদস্যদের। তারা কী করবে, কোথায় নিয়ে যাবে বুঝে উঠতে পারছে না। তবে দেলোয়ারের সহকর্মীদের দাবি, তাঁকে উন্নত চিকিৎসার জন্য দ্রুত বিদেশে পাঠানো হোক।
গতকাল শনিবার পর্যন্তও সেই নির্দয় বেপরোয়া বাসচালককে আটক করতে পারেনি পুলিশ। ঘটনার পর পাঁচ দিন পেরিয়ে গেলেও গতকাল সন্ধ্যা পর্যন্ত জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের তরফ থেকে কেউ সামান্য সান্ত্বনা পর্যন্ত দেয়নি দেলোয়ারের পরিবারকে। এ নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন দেলোয়ারের পরিবারের সদস্য ও সহকর্মীরা।
দেলোয়ারের পরিবারের একজন সদস্য গতকাল>কালের খবরকে জানান, দেলোয়ারের শারীরিক অবস্থা বর্তমানে খুবই ক্রিটিক্যাল পর্যায়ে। তাঁকে দ্রুত বিদেশে পাঠিয়ে চিকিৎসা দেওয়া প্রয়োজন। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে দাবি জানাচ্ছি, তাঁকে বিদেশে নিয়ে চিকিৎসা দেওয়া হোক।
ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার আছাদুজ্জামান মিয়া গতকাল বিকেলে কালের খবরকে বলেন, ‘ওই বাসচালক গুরুতর অপরাধ করেছে। অবশ্যই তাকে আইনের আওতায় আনা হবে। আর দেলোয়ারকে চিকিৎসায় যা যা খরচ প্রয়োজন হবে পুলিশের পক্ষ থেকে সব দেওয়া হবে। প্রয়োজনে তাঁকে বিদেশেও পাঠানো হবে। তাঁর পরিবারের সঙ্গে আমাদের যোগাযোগ রয়েছে। ’
ইন্সপেক্টর দেলোয়ার হোসেন গত সোমবার সকাল ৭টা থেকে রাজধানীর পলাশী এলাকায় দায়িত্ব পালন শুরু করছিলেন। সকাল সাড়ে ৮টার দিকে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বহন করা বাস (ঢাকা মেট্রো-চ-০৮-০০৫৩) নীলক্ষেতের দিক থেকে উল্টো দিকের রাস্তায় পলাশী হয়ে সচিবালয়ের দিকে যাচ্ছিল। ওই সময় পলাশীর মোড়ে দায়িত্ব পালন করছিলেন এক এএসআইসহ তিনজন পুলিশ সদস্য। তাঁরা উল্টো দিকে যাওয়ায় বাসটিকে আটকে দেন। এ সময় বাসের চালক, হেলপারসহ মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা বাস থেকে নেমে পুলিশের সঙ্গে ঝগড়া শুরু করেন। কিছুটা দূর থেকে ট্রাফিক ইন্সপেক্টর দেলোয়ার হোসেনের চোখে এই দৃশ্য পড়তেই তিনি সেখানে ছুটে যান। এ সময় তাঁরা তাঁর সঙ্গেও তর্কে জড়িয়ে পড়েন। এরই একপর্যায়ে চালক বেপরোয়াভাবে বাসটি চালিয়ে দেয়। এতে ইন্সপেক্টর দেলোয়ারের বাঁ পা বাসের চাকার নিচে পিষ্ট হয়। রক্তাক্ত অবস্থায় তাঁকে উদ্ধার করে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখান থেকে তাঁকে নিয়ে যাওয়া হয় অ্যাপোলো হাসপাতালে। সেখানকার চিকিৎসক তাঁর পা কেটে ফেলার পরামর্শ দিলে তাঁর পরিবারের সদস্যরা পা রক্ষার জন্য আপ্রাণ চেষ্টা চালাচ্ছেন। গত মঙ্গলবার দেলোয়ারকে পান্থপথের স্পাইনাল অর্থোপেডিক হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখান থেকে গত বুধবার তাঁকে নিয়ে যাওয়া হয় স্কয়ার হাসপতালে। সেখানে নেওয়ার পর তাঁর অবস্থার আরো অবনতি হয়। বর্তমানে তাঁকে আইসিইউয়ে রাখা হয়েছে। তাঁর অবস্থা আশঙ্কাজনক।
এ ঘটনায় গত ১৭ এপ্রিল শাহবাগ থানায় একটি মামলা দায়ের করা হয়। মামলা নম্বর ৩৪। গতকাল সন্ধ্যা পর্যন্ত বাসচালক নজরুল ইসলামকে গ্রেপ্তার করতে পারেনি পুলিশ।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে শাহবাগ থানার ওসি আবুল হাসান কালের খবরকে বলেন, চালককে এখনো গ্রেপ্তার করা যায়নি। তাকে গ্রেপ্তারের জন্য খোঁজা হচ্ছে।
দৈনিক কালের খবর /২২/৪/১৮