মঙ্গলবার, ১৫ অক্টোবর ২০২৪, ০৯:০৬ পূর্বাহ্ন
নিজস্ব প্রতিবেদক, কালের খবর :
জাতীয় নাগরিক কমিটি নামে নতুন প্রজন্মের এক নাগরিক সংগঠন আত্মপ্রকাশ করেছে। কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে গতকাল বিকালে এক অনুষ্ঠানের মাধ্যমে মুহাম্মদ নাসিরুদ্দীন পাটওয়ারীকে আহ্বায়ক ও ডাকসুর সাবেক সমাজসেবা সম্পাদক আখতার হোসেনকে সদস্য সচিব করে ৫৫ সদস্যবিশিষ্ট জাতীয় নাগরিক কমিটির আহ্বায়ক কমিটি ঘোষণা করা হয়। সংগঠনের আহ্বায়ক এই কমিটি ঘোষণা করেন। অনুষ্ঠানে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন কমিটির মুখপাত্র সামান্তা শারমিন।
এতে গণপরিষদ গঠন করে গণভোটের মাধ্যমে নতুন গণতান্ত্রিক সংবিধান তৈরির জন্য গণআলোচনার আয়োজন করাসহ ৮ দফা কর্মসূচি তুলে ধরেন।
লিখিত বক্তব্যে বলা হয়, বাংলাদেশের জনগণ ১৯৪৭ সালের পাকিস্তান আন্দোলন, ১৯৭১ সালের মহান মুক্তিযুদ্ধ এবং এবারকার ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের ভিতর দিয়ে নিজেদের আকাক্সক্ষা বারবার ব্যক্ত করেছে। ১৯৯০ এর গণআন্দোলনও জনগণকে দীর্ঘমেয়াদে কোনো ফলপ্রসূ সমাধান বা বন্দোবস্ত জাতির সামনে হাজির করতে পারেনি। কিন্তু পূর্বেকার লড়াইগুলোর অভিজ্ঞতা আমাদের বলে, যখনই মুক্তিকামী জনতা কোনো একজন ব্যক্তি বা সমষ্টিকে রাষ্ট্র পরিচালনার দায়িত্ব অর্পণ করে, তখন জনগণের প্রতি দায়িত্বশীলতা ও জবাবদিহিতার ঘাটতি দেখা যায়।
ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের সরকার গঠিত হলেও পূর্বেকার ফ্যাসিবাদী ব্যবস্থা এখনো জনগণের সাফল্যের প্রতিদ্বন্দ্বীরূপে সক্রিয়। এতে আরও বলা হয়, নিপীড়ক রাষ্ট্রযন্ত্রের ধ্বংসাবশেষ প্রতি পদে রাষ্ট্রের পুনর্গঠনকে বাধাগ্রস্ত করছে। ফলে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে রাজপথে নেমে আসা জনতাকে সংগঠিত করা, ৮ আগস্টে গঠিত সরকারকে যুগপৎ সহযোগিতা করা এবং জবাবদিহিতার আওতায় আনা, তদুপরি জনস্বার্থের পক্ষে নীতি নির্ধারণে ভূমিকা রাখার লক্ষ্যে আমরা নাগরিক দায়িত্ব পালনের অঙ্গীকার করছি। জাতীয় নাগরিক কমিটির ঘোষিত কর্মসূচির মধ্যে রয়েছে, ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে প্রতিফলিত হওয়া সামষ্টিক অভিপ্রায় ও গণতান্ত্রিক আকাঙ্খাকে সমুন্নত রাখা।
ছাত্র-জনতার ওপর সংঘটিত নির্মম হত্যাযজ্ঞে জড়িতদের বিচারের আওতায় এনে শাস্তি নিশ্চিত করার লক্ষ্যে প্রয়োজনীয় কর্মসূচি গ্রহণ। রাষ্ট্রের জরুরি সংস্কার ও পুনর্গঠন করার লক্ষ্যে অন্তর্বর্তী সরকারের সঙ্গে সহযোগিতা ও জবাবদিহিতার পরিসর তৈরি করা। বিভিন্ন সামাজিক, সাংস্কৃতিক ও রাজনৈতিক উদ্যোগের সঙ্গে আলোচনা, মতবিনিময় ও গণমুখী কর্মসূচির মাধ্যমে সর্বস্তরের জনতাকে সংহত করা। দেশের সর্বস্তরের সামাজিক, সাংস্কৃতিক ও ধর্মীয় নেতৃত্বকে সংহত করে গণঅভ্যুত্থানের আকাক্সক্ষা সমুন্নত রাখার লক্ষ্যে ফ্যাসিবাদী কাঠামো ও শক্তির বিরুদ্ধে প্রতিরোধ অব্যাহত রাখা। জনস্বার্থের পক্ষে নীতিনির্ধারণের লক্ষ্যে বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ এবং প্রবাসী বাংলাদেশিদের সঙ্গে বিষয়ভিত্তিক সংলাপের আয়োজন করা।
রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানগুলো পুনর্গঠনের লক্ষ্যে প্রয়োজনীয় নীতিনির্ধারণী প্রস্তাবনা তৈরি ও সেটা বাস্তবায়নে প্রয়োজনীয় রাজনৈতিক পদক্ষপে গ্রহণ এবং গণপরিষদ গঠন করে গণভোটের মাধ্যমে নতুন গণতান্ত্রিক সংবিধান তৈরির জন্য গণআলোচনার আয়োজন করা।
‘জাতীয় নাগরিক কমিটি’ রাজনৈতিক দল গঠন করছে কি না বা বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সঙ্গে এর যোগসূত্র আছে কি না সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের জবাবে আহ্বায়ক নাসিরুদ্দীন পাটওয়ারী বলেন, আমরা স্পষ্টভাবে বলছি, আমরা কোনো ব্যক্তি বা দলীয় এজেন্ডাকে সামনে রাখছি না বরং দেশকে সামনে রাখছি। বাংলাদেশের পক্ষে ছাত্ররা দাঁড়িয়েছিল, যে ছাত্র ভাইটার পেছনে একজন তরুণ পানি দিয়েছিল, বুদ্ধি দিয়েছিল, পরামর্শ দিয়েছিল- আমরা ছাত্রদের সঙ্গে সেই কাজটাই করব। আমরা তরুণদের একসঙ্গে করছি। তরুণদের জন্য একটা প্ল্যাটফর্ম গঠন করা হচ্ছে। ছাত্ররা ছাত্রদের জায়গা থেকে বাংলাদেশের জন্য কাজ করবে আর তরুণরা তরুণদের জায়গা থেকে বাংলাদেশের জন্য কাজ করবে।
সদস্য সচিব আখতার হোসেন বলেন, আমরা বিভিন্ন এলাকায় গিয়ে সেখানকার সর্বস্তরের জনগণের সঙ্গে আলাপ আলোচনার ভিত্তিতে জাতীয় নাগরিক কমিটি গঠন করব। বাংলাদেশের সব তরুণ, যুবক ছাত্র-জনতা মিলে নতুন বাংলাদেশে ফ্যাসিবাদী ব্যবস্থার বিলোপ ও নতুন রাজনৈতিক বন্দোবস্তের বিষয় দুটিকে শতভাগ সফলতার সঙ্গে বাস্তবায়ন করব।
অনুষ্ঠানের শুরুতে ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানে শহীদ রায়হান হোসেন সাদ্দামের বোন স্বর্ণা আক্তার এবং শহীদ আহনাফ আবির আশরাফ উল্লাহর বোন সৈয়দা আক্তার বক্তব্য রাখেন। তারা বলেন, ছাত্র-জনতার আত্মত্যাগের বিনিময়ে অর্জিত স্বাধীনতা রক্ষা করতে হবে। ফ্যাসিবাদী কাঠামোর বিলোপ, গণহত্যাকারীদের বিচার নিশ্চিত এবং বাংলাদেশ রাষ্ট্রের পুনর্গঠনের কার্যক্রম চলমান রাখতে হবে। জানা যায়, বর্তমানে অধ্যয়নরত কোনো শিক্ষার্থীকে জাতীয় নাগরিক কমিটিতে যোগদানের আবেদন ফর্ম দেওয়া হচ্ছে না। তবে দুই ঘণ্টায় দুই সহস্রাধিক পেশাজীবী কমিটির সদস্য হওয়ার জন্য আবেদন করেছেন বলে জানায় কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে স্থাপিত জাতীয় নাগরিক কমিটিতে যোগদানে আগ্রহী সর্বস্তরের জনতার তথ্য সংগ্রহ কেন্দ্র। জাতীয় নাগরিক কমিটির আহ্বায়ক কমিটির অন্যান্য সদস্যরা হলেন- আরিফুল ইসলাম আদীব, সাইফ মোস্তাফিজ, মনিরা শারমিন, নাহিদা সারোয়ার চৌধুরী, সারোয়ার তুষার, মুতাসিম বিল্লাহ, আশরাফ উদ্দিন মাহদি, আলাউদ্দিন মোহাম্মদ, অনিক রায়, জাবেদ রাসিন, মো. নিজাম উদ্দিন, সাবহানাজ রশীদ দিয়া, প্রাঞ্জল কস্তা, মঈনুল ইসলাম তুহিন, আবদুল্লাহ আল আমিন, হুযাইফা ইবনে ওমর, শ্রবণা শফিক দীপ্তি, সায়ক চাকমা, সানজিদা রহমান তুলি, আবু রায়হান খান, মাহমুদা আলম মিতু, অলিক মৃ, সাগুফতা বুশরা মিশমা, সৈয়দ হাসান ইমতিয়াজ, তাসনিম জারা, মোহাম্মদ মিরাজ মিয়া, মো. আজহার উদ্দিন অনিক, মো. মেসবাহ কামাল, আতাউল্লাহ, এস. এম. শাহরিয়ার, মানজুর-আল-মতিন, প্রীতম দাশ, তাজনূভা জাবীন, অর্পিতা শ্যামা দেব, মাজহারুল ইসলাম ফকির, সালেহ উদ্দিন সিফাত, মুশফিক উস সালেহীন, তাহসীন রিয়াজ, হাসান আলী খান, মো. আবদুল আহাদ, ফয়সাল মাহমুদ শান্ত, মশিউর রহমান, আতিক মুজাহিদ, তানজিল মাহমুদ, আবদুল্লাহ আল মামুন ফয়সাল, মো. ফারহাদ আলম ভূঁইয়া, এস. এম. সুজা, মো. আরিফুর রাহমান, কানেতা ইয়া লাম লাম, সৈয়দা আক্তার, স্বর্ণা আক্তার, সালমান মুহাম্মাদ মুক্তাদির ও আকরাম হুসেইন।