বুধবার, ৩০ অক্টোবর ২০২৪, ০৮:০১ অপরাহ্ন
কালের খবর প্রতিবেদক : নারায়ণগঞ্জের অত্যান্ত গুরুত্বপূর্ন থানা এলাকা ফতুল্লা। রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে আওয়ামীলীগ, বিএনপি, জাতীয় পার্টি, জামাত ইসলামীর রাজনীতি চলমান। বর্তমানে আওয়ামীলীগের রাজনীতিতে পরিক্ষিত নেতাকর্মীরা আছেন আন্তর্জালায় আর বিএনপির রাজনীতিতে যারা করেন তারা আছেন অন্তর্দন্ধে। এমনটাই মনে করেন এখানকার রাজনৈতিক বোদ্ধারা। উভয় দলের নেতৃত্বের পরিবর্তণ আসলে দল দুটি চাঙ্গা হবে বলে মনে করেন দলের নেতৃবৃন্দ।
ফতুল্লা থানা আওয়ামীলীগের হাল ধরার জন্য একাধিক ব্যাক্তি এখনও প্রস্তুত। তবে দলের কাউন্সিল না হওয়া পর্যন্ত ফতুল্লায় নতুন নেতৃত্ব আসবে না । থানা বিএনপিতে যে নেতৃবৃন্দ রয়েছে তাদের মধ্যে রয়েছে দ্বন্ধ। আর এ দ্বন্ধ খোদ হেভিওয়েট নেতাদের থেকে শুরু হয়ে তৃনমূল নেতাকর্মী পর্যন্ত বিস্তাত। একাদশ সংসদ নির্বাচন ফতুল্লায় আ’লীগের সংসদ নির্বাচনে শামীম ওসমান ব্যাতীত অন্য কেউ প্রার্থী হলে ঠিকভাবে ফসল উঠবে না ঘরে।
স্বৈরাচার সরকার পতনের আন্দোলনে নারায়ণগঞ্জের ফতুল্লার ভূমিকা সেই সময়ে অনস্বীকার্য। সেই সরকার হটানোর সময় সর্বপ্রথম মওলা টেক্সটাইল ও ঢাকা ভেজিটেবলের শ্রমিকরা পুলিশের হাতে গুলিবিদ্ধ হয়। স্বৈরাচার সরকার হটানোর পর ১৯৯১ সালে বিএনপি সরকার গঠন করে।
সেই সময় নারায়ণগঞ্জ-৪ আসনের(ফতুল্লা-সিদ্ধিরগঞ্জ) সাংসদ নির্বাচিত হয়েছিলেন আলহাজ¦ সিরাজ উদ্দিন। ১৯৯১ সালের পর থেকে নারায়ণগঞ্জের রাজনীতিতে ফতুল্লা গুরুত্ব পূর্ণ ভূমিকা পালন করে আসছে।
জেলা আওয়ামীলীগ ও জেলা বিএনপির সভা সেমিনার ফতুল্লার নেতৃবৃন্দের সতুস্ফুর্ত অংশ গ্রহণ সব সময়ে আলোচনায় থাকেন। ১/১১ এর পর দেশে সরকার গঠন করে আওয়ামীলীগ।
নারায়ণগঞ্জ-৪ আসনের সাংসদ আলহাজ¦ একেএম শামীম ওসমান ছিলেন দেশের বাইরে। তাই সেই সময়ে জনগনের ভোটে সাংসদ নির্বাচিত হয়েছিলেন চিত্র নাায়িকা কবরী।
কবরীরর শাসনামলে নারায়ণগঞ্জ-৪ আসনে বিশেষ করে ফতুল্লায় দুইটি ধারায় বিভক্ত হয়। একটি ধারায় ছিল সাংসদ কবরী বলয় অন্যদিকে ছিলেন নারায়ণগঞ্জ-৪ আসনের বর্তমান সাংসদ একেএম শামীম ওসমানের বলয়। দলে উড়ে এসে জুড়ে বসা বেশ কিছু মানুষ নেতা হয়ে যায়। সাংসদ কবরী সাংসদ হওয়ার পর দলে হায়ার করে শ্যামপুর থেকে টেনে এনছিলেন শ্যামপুরের দৌড় সেন্টুকে। আর দৌড় সেন্টু ফতুল্লায় দৌড়ে এসে আওয়ামীলীগকে দুটি ধারায় বিভক্ত করেছিলেন। এমনটাই দাবী করেন দলের নেতাকর্মীরা।
থানা আওয়ামীলীগের সভাপতি এম সাইফুল্লাহ বাদল,সাধারণ সম্পাদক এম শওকত আলী ছিলেন কবরীর সময় উপেক্ষিত। ত্যাগী ও পরীক্ষিত অনেক নেতাকে দেখা গিয়েছিল ডার্ক সাইটে।
বর্তমান সময়ে নারায়ণগঞ্জ-৪ আসনের সাংসদ নির্বাচিত হন একেএম শামীম ওসমান । তিনি সাংসদ হওয়ার পর কবরীর সময়ের নব্য আওয়ামীলীগারদের অনেকেই হয়ে পড়েছেন ছন্নছাড়া। তবে দলের প্রভাবশালী নেতাদের সাথে মিশে অনেকেই আখের গুছাতে হয়ে পড়েছেন আওয়ামীলীগের কর্মী। কিন্তু অনেকের ইউনিয়নতো দূরের কথা ওয়ার্ড পর্যায়েও তাদের নাম নেই। প্রভাবশালী নেতাদের আস্থাভাজন অনেকেই ফতুল্লা থানা এলাকায় করে যাচ্ছেন নানাবিধ বিতর্কিত কর্মকান্ড। জমি জবর দখল,মাদক বিক্রেতাদের শেল্টারদাতা হিসেবে নামসর্বস্ব নেতাদের বৃহস্পতি এখন তুঙ্গে। আর প্রকৃত অনেক নেতাকর্মীই এখন মনের ব্যাথায় দল থেকে দূরে সরে আছেন।
ফতুল্লায় প্রকৃত আওয়ামীলীগাররা এখন অনেকটা কোনঠাসা হয়ে আছে । এমন মন্তব্য সুবিধা বঞ্চিতদের।
আগামী একাদশ সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে আ’লীগে ফতুল্লায় নতুন নেতৃত্ব ছাড়া দলটি তেমন কোন কারিশমা দেখাতে পারবে না বলে মন্তব্য করেছেন দলের সিনিয়র নেতা কর্মীরা।
দীর্ঘদিন এই থানা এলকায় পদ আগলে আছেন বর্তমান সভাপতি এম সাইফুল্লাহ বাদল ও সাধারণ সম্পাদক এম শওকত আলী। উল্লেখিত দু’জন সাংসদ শামীম ওসমানের আস্থাভাজন। নারায়ণগঞ্জ-৪ আসনের অত্যান্ত গুরুত্বপূর্ন থানা ফতুল্লা শিল্পাঞ্চল। পূর্নাঙ্গ জেলা কমিটি কিছুদিন আগে গঠন করা হয়েছে। ফতুল্লা থানা আ’লীগের পাশাপাশি যুবলীগ ও ছাত্রলীগকের কমিটি গঠন করা এখন সময়ের দাবী হয়ে দেখা দিয়েছে। ফতুল্লা থানা আওয়ামীলীগ ও যুবলীগের কার্যক্রম দেখা গেলেও শুধু পদ আগলে ধরে আছে ছাত্রলীগের সভাপতি আবু মোহাম্মদ শরীফুল হক,সাধারণ সম্পাদক এম, ও মান্নান । অপরদিকে নাম সর্বস্ব হয়ে রয়েছে থানা স্বেচ্ছা সেবক লীগও।
ফতুল্লা থানা বিএনপির মধ্যে কয়েক ভাগ রয়েছে। থানা বিএনপির সভাপতি শিল্পপতি শাহ আলমের বাইরে থেকে সাবেক এমপি গিয়াস উদ্দিনের বলয়ে থেকে কাজ করছে অধ্যাপক মামুন মাহমুদসহ বেশ কয়েকজন প্রভাবশালী নেতা। কুতুবপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ও ফতুল্লা থানা বিএনপির সিনিয়র সহ-সভাপতি মনিরুল আলম সেন্টুও আলাদা বলয়ে কাচ করছে। বিএনপির অঙ্গদল থানা যুবদলের সভাপতি শহিদুল ইসলাম টিটুর অবস্থানও পরিস্কার নয় অনেকের কাছে। জেলা বিএনপির মধ্যেও একাধিক ভাব রয়েছে। সেই ভাগকে পুঁজি করে ফতুল্লায়ও বিএনপি ও অঙ্গদল কয়েকটি ধারায় বিভক্ত। আগামী একাদশ সংসদ নির্বাচনে ফতুল্লায় আ’লীগ ও বিএনপি যোগ্য নেতৃত্ব তুলে দিতে যে যতোটা বিলম্ব করবে, তার মাশুল তাদের বেশি দিতে হবে বলে দাবী করছেন উভয় দলের নেতৃবৃন্দ।
ফতুল্লা থানা আ’লীগের কমিটিতে থাকা একজন নেতা নাম প্রকাশ না করার শর্তে এই প্রতিবেদককে বলেন,ফতুল্লা থানা আওয়ামীলীগের কমিটি অনেক বছর হয়ে গেছে। বর্তমান সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক প্রায় সময় অসুস্থ থাকে। দলের বিভিন্ন সভা সেমিনারে তাদের ইচ্ছা থাকা সত্বেও তারা যেতে পারে না। এরই মধ্যে অনেকে বার্ধক্যজনিত রোগে ভুগছেন। যেহেতু জেলা কমিটি হয়ে গেছে, এখন কাউন্সিল করে ফতুল্লা থানা আ’লীগের কমিটি করা এখন সময়ের দাবী।
জেলা বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক রুহুল আমিন শিকদার বলেন,আগামী একাদশ সংসদ নির্বাচনের লড়াইয়ে ফতুল্লায় যে থানা কমিটি আছে তাতে সমস্যা হওয়ার কথা নয়। তবে শ্রীঘ্রই থানা কমিটিগুলোকে কার্যকর ভূমিকা রাখতে বিশেষ দিক নির্দেশনা দেবেন জেলা কমিটি।