রবিবার, ২২ ডিসেম্বর ২০২৪, ০৮:৩০ অপরাহ্ন
স্টাফ রিপোর্টার, কালের খবর :
ঢাকা মহানগর উত্তর-দক্ষিণের (দুই মহানগর) প্রস্তাবিত কমিটি জমা দিয়েছেন দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতারা। ঢাকা মহানগর দক্ষিণের অন্তর্গত ৭৫ টি ওয়ার্ড ২৪ টি থানা কমিটি জমা দিয়েছে আওয়ামী লীগ। গত ১৬ জুন রাতে দলীয়প্রধান ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার রাজনৈতিক কার্যালয়ে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের এমপি কাছে ঢাকা মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগের সভাপতি বীরমুক্তিযোদ্ধা আবু আহমেদ মন্নাফী ও সাধারণ সম্পাদক হুমায়ুন আহমেদ এ কমিটি জমা দেন। এই কমিটি জমা দেয়ার পর থানা-ওয়ার্ড পর্যায়ের নেতাকর্মীদের মধ্যে ব্যাপক আলোচনা-সমালোচনা শুরু হয়েছে। তবে প্রস্তাবিত কমিটিতে সব বিতর্কের ঊর্ধ্বে ওঠে ত্যাগী ও স্বচ্ছ ভাবমূর্তির নেতাদের নিয়ে কমিটি গঠনের নির্দেশ দিয়েছেন আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
সূত্রে জানা যায়, ২০১৯ সালের ৩০ নভেম্বর ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণ আওয়ামী লীগের সম্মেলন হয়। সে দিন ঢাকা মহানগর উত্তর আওয়ামী লীগের সভাপতি শেখ বজলুর রহমান ও সাধারণ সম্পাদক এস এম মান্নান কচি এবং দক্ষিণের সভাপতি আবু আহমেদ মন্নাফী ও সাধারণ সম্পাদক মো. হুমায়ুন কবিরের নাম ঘোষণা করা হয়। সেই কমিটি ২০২০ সালের ১৯ নভেম্বর পূর্ণাঙ্গ কমিটি দেয়। অর্থ্যাৎ এই নেতৃত্বের পূর্ণাঙ্গ কমিটি করতে সময় লাগে প্রায় এক বছর। অথচ গঠনতন্ত্র অনুযায়ী এই কমিটির মেয়াদ শেষ হওয়ার কথা ২০২২ সালে। অবশেষে চার বছর পর উত্তরের ২৬টি থানা ও ৬৪ টি ওয়ার্ড এবং দক্ষিণের ২৪টি থানা ও ৭৫ টি ওয়ার্ডের কোনো কমিটিই চূড়ান্ত করে কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের কার্যালয়ে জমা দেয়া হয়। যদিও দলের গঠনতন্ত্র অনুযায়ী, থানা ও ওয়ার্ড সম্মেলনের ৪৫ দিনের মধ্যে ঘোষণা করতে হয় নতুন কমিটি।
আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য লে. কর্নেল (অব.) মোহাম্মদ ফারুক খান বলেন, প্রস্তাবিত কমিটি জমা দেওয়া হয়েছে। আমরা সতর্ক দৃষ্টি রাখছি,পর্যালোচনা করছি। তিনি বলেন, মহানগর ছাড়া থানা অথবা ওয়ার্ড পর্যায়ে জনপ্রতিনিধিরা যোগ্যতা অনুসারে মূল্যায়িত হবেন।
আওয়ামী লীগ নেতারা জানান, দলের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ সাংগঠনিক এলাকা ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণ। রাজপথে আন্দোলনের নামে বিরোধীদলগুলোর বিশৃঙ্খলা মোকাবিলা ও দলের বৃহত্তর কর্মসূচি বাস্তবায়নে তারা সম্মুখ সারির যোদ্ধার মতো ভূমিকা পালন করে থাকে। তাই ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণের থানা ও ওয়ার্ড শক্তিশালী করতে কমিটি গঠনের তাগিদ দিয়েছে দলের হাইকমান্ড। তবে ঢাকা মহানগর উত্তর আওয়ামী লীগের থানা ও ওয়ার্ডের প্রস্তাবিত কমিটিতে মামলার আসামি, বিএনপিপন্থি, আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনার সমাবেশমঞ্চ ভাঙচুরকারী, দখলদারদের ঠাঁই দেওয়া হয়েছে। দক্ষিণখান থানায় পদ পেতে যাচ্ছেন এ কে এম মাসুদুজ্জামান মিঠু। তার বিরুদ্ধে চাদাঁবাজি, অস্ত্র দিয়ে নেতাকর্মীদের ভয়ভীতি দেখানোর লিখিত অভিযোগ জমা পড়েছে আওয়ামী লীগের হাইকমান্ডের কাছে।
সূত্রে জানা গেছে, চলতি মাসের মধ্যেই এসব কমিটি ঘোষণা করা হবে বলে জানিয়েছেন দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতারা। তবে কমিটির খসড়ায় শেখ হাসিনার সমাবেশে হামলাকারীর নামও রয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে। কেন্দ্রের নির্দেশনা অনুযায়ী কমিটি গঠনের কার্যক্রম চালাচ্ছেন দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতারা। তারা ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণের প্রস্তাবিত কমিটি ১৬ জুন কেন্দ্রে জমা দিয়েছেন। যেকোনো সময় আওয়ামী লীগের থানা-ওয়ার্ড কমিটি জমা দেওয়া হবে। অভিযোগ উঠেছে, এসব কমিটিতে ত্যাগী নেতাদের বদলে বিতর্কিতরা প্রাধান্য পাচ্ছেন। কোথাও মাইম্যান (নিজস্ব বলয়) তৈরির চেষ্টা করা হচ্ছে। আবার কোথাও হচ্ছে কমিটি বাণিজ্য। অভিযোগ উঠেছে, শাহবাগ থানার ২০নং ওয়ার্ডের প্রস্তাবিত কমিটিতে সভাপতি পদে মকবুল হোসেনের নাম প্রস্তাব করা হয়েছে। তিনি আওয়ামী লীগের কর্মসূচিতে সক্রিয় না থাকলেও এক কাউন্সিলরের কাছের লোক বলে কমিটিতে রাখা হয়েছে। একই ওয়ার্ডে সাধারণ সম্পাদক হিসেবে প্রস্তাব করা হয়েছে শাওনের নাম, যার বিরুদ্ধে দলের নাম ভাঙিয়ে নানা অপরাধ করার অভিযোগ রয়েছে। শাহবাগ থানা কমিটিতে প্রস্তাবিত সভাপতি মো: শহিদ ও সাধারণ সম্পাদক জি এম আতিক। ৪৯ নং ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের প্রস্তাবিত কমিটিতে সভাপতি মো: জমির আলী এবং সাধারণ সম্পাদক আশরাফুল ইসলাম আশরাফ। জমির আলী ফেন্সি ব্যবসায়ী ও এলাকায় সন্ত্র¿াসী হিসেবে পরিচিত। তিনি নাজিম মুন্না গ্রুপের এক সময়ের কিলার হিসেবে কাজ করেছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। আশরাফ যুবলীগে সাধারণ সম্পাদক থাকা সময়ে গোলাপবাগ মাঠের পাশে টর্চার সেলে নিয়ে সাধারণ মানুষকে মারধর করে অর্থ আদায় করতো। তার কর্মকান্ড এলাকার মানুষ এখনো আতঙ্কে থাকে। তিনি মোরছালিন হত্যা মামলাসহ একাধিক মামলার আসামি চিলেন তিনি। বর্তমানে বিএনপির নেতা ও ৪৯নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর বাদল সরকারের ঘনিষ্ঠজন হিসেবে সকলের কাছে পরিচিত। মতিঝিল থানা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক হিসাবে প্রস্তাব করা হয়েছে শেখ এনায়েত করিম বাবলু। তিনি একসময় সাংস্কৃতিক জোট করতেন। ঢাকা মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী সভাপতি মান্নাফী কোটায় তার নাম প্রস্তাব করা হয়েছে। মতিঝিল থানা অন্তর্গত ওয়ার্ড় হচ্ছে ৩ টি। এই ওয়ার্ডগুলো হচ্ছে ৮-৯ ও ১০। ৮ নং ওয়ার্ডে সাধারণ সম্পাদক হিসাবে নাম প্রস্তাব করা হয়েছে মাসুম। তিনি একজন মাদকাসক্ত হিসেবে এলাকায় পরিচিত। ৯ নং ওয়ার্ডের আওয়ামী লীগের কমিটিতে স্থান পাচ্ছেন ওয়াহিদুর রহমান চৌধুরী ওয়াহিদ। তার বিরুদ্ধে রয়েছে একাধিক জায়গা দখল ও মাদক ব্যবসার অভিযোগ। ইতিমধ্যে মতিঝিলের দিলকুশায় একটি জায়গা দখল করে রেখেছেন তিনি। কোনদিন ছাত্রলীগ বা যুবলীগের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত না থাকলেও ৯নং ওয়ার্ড কমিটিতে গুরুত্বপূর্ণ পদে তার নাম প্রস্তাব করা হয়েছে। এটি করেছেন ঢাকা মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগের সভাপতি আবু আহমেদ মান্নাফীর ছোট ছেলে দক্ষিণ সিটির ৩৮ নাম্বার ওয়ার্ডের কাউন্সিলার ইমতিয়াজ আহমেদ গৌরবের কোঠায়। ১০ নং ওয়ার্ড় সাধারণ সম্পাদক হিসাবে নাম প্রস্তাব করা হয়েছে হিরককে। তিনি আন্ডার ওয়াল্ড জিসান গ্রুপে অন্যতম সদস্য। তার বিরুদ্ধে এলাকায় হত্যা মামলা চাঁদাবাজি মামলা ফুটপাতে দোকান এবং মাদক ব্যবসা।