রবিবার, ২২ ডিসেম্বর ২০২৪, ০২:৩৬ অপরাহ্ন

সংবাদ শিরোনাম :
জুলাই-আগষ্টে শহীদদের ছাড়া আর কারো প্রতি দায়বদ্ধতা নেই। কালের খবর পার্বত্য চট্টগ্রামের সম্ভাবনাময় অর্থকরী ফসল কাসাভা। কালের খবর চবি এক্স স্টুডেন্টস ক্লাব ঢাকা এর সভাপতি ব্যারিস্টার ফারুকী এবং সাধারণ সম্পাদক জিএম ফারুক স্বপন নির্বাচিত। কালের খবর মাটিরাঙ্গায় প্রাথমিক বিদ্যালয় গোল্ডকাপ ফুটবল টুর্নামেন্টের ফাইনাল সম্পন্ন। কালের খবর সীতাকুণ্ড হবে বাংলাদেশের অন্যতম মডেল উপজেলা : আনোয়ার সিদ্দিক চৌধুরী। কালের খবর মাটিরাঙ্গার গুমতিতে মহান বিজয় দিবসে বিএনপির শোভাযাত্রা ও পুষ্পস্তবক অর্পণ। কালের খবর মাটিরাঙ্গায় মহান বিজয় দিবসে বিএনপির শোভাযাত্রা ও পুষ্পস্তবক অর্পণ। কালের খবর মুরাদনগরে সামাজিক সংগঠনের শীতের কম্বল বিতরণ। কালের খবর বিজয় দিবসের প্রথম প্রহরে ‘স্বাধীনতা সোপানে’ শ্রদ্ধা নিবেদন। কালের খবর জাতীয় সাংবাদিক সংস্থার প্রধান কার্যালয়ের শুভ উদ্বোধন। কালের খবর
নোবেল পুরস্কারের আকাঙ্ক্ষা নেই, ড. ইউনূসকে ঈর্ষা করার কী আছে? : সংবাদ সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রী। কালের খবর

নোবেল পুরস্কারের আকাঙ্ক্ষা নেই, ড. ইউনূসকে ঈর্ষা করার কী আছে? : সংবাদ সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রী। কালের খবর

 

স্টাফ রিপোর্টার, কালের খবর :

প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা বলেছেন, নোবেল পুরস্কারের জন্য তার কোনো আকাঙ্ক্ষা নেই। এ নিয়ে কারও সঙ্গে কোনো দ্বন্দ্বও নেই। বাংলাদেশি নোবেলজয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে নিয়ে কোনো জেলাসি নেই উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আজকে তিনি যেখানে উঠেছেন সেখানে সবচেয়ে বেশি সহযোগিতা করেছিলাম আমিই। গতকাল গণভবনে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন।

সাম্প্রতিক ভারত সফরের বিষয় দেশবাসীকে অবহিত করতে ডাকা সংবাদ সম্মেলনের প্রশ্নোত্তরপর্বে প্রধানমন্ত্রী চলমান পরিস্থিতি নিয়ে নানা প্রশ্নের জবাব দেন। ড. ইউনূসকে নিয়ে টাইম ম্যাগাজিনে প্রকাশিত এক নিবন্ধের বিষয়ে জানতে চাইলে শেখ হাসিনা বলেন, মামলা চলছে এজন্য কমেন্ট করতে চাই না। মামলা চলছে কথা বললে সাবজুডিস হবে কি না। কিন্তু যখন প্রশ্ন এসেছে দু’চারটা কথা না বললে মানুষ বোধহয় ভুল বুঝতে থাকবে। তবে একটা প্রশ্ন তাদের করতে পারেন, যে আমেরিকা হোক বা ইউরোপ হোক যেকোনো দেশে কেউ যদি বছরের পর বছর ট্যাক্স ফাঁকি দেয় তার বিরুদ্ধে কী ব্যবস্থা সেই সরকার নেয়? তার উত্তরটা কিন্তু এরা দেয়নি। দ্বিতীয়ত, শ্রমিকদের নিয়ে এতো কথা হয় সেই শ্রমিকদের কল্যাণ ফান্ডের টাকা! সেই শ্রমিকদের টাকা যদি কেউ না দেয়, মেরে খায় তার বিরুদ্ধে এরা কী ব্যবস্থা নেবে? কী ব্যবস্থা নিয়ে থাকে?

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ইউনূসের বিরুদ্ধে আমরা বা আমাদের গভর্নমেন্ট লাগেনি। বরং আপনাদের মনে আছে, গ্রামীণ ব্যাংকটা তৈরি হয়েছিল জেনারেল এরশাদ সাহেবের আমলে।

বিজ্ঞাপন
একজন এমডি খোঁজা হচ্ছিল, তখন ড. ইউনূসকে এনে সেই ব্যাংকের এমডি করা হয়। এই ব্যাংক কিন্তু তার নিজের করা নয়। তিনি সেখানে এমডি হিসেবে চাকরি করতেন এবং বেতন তুলতেন। চাকরিরত অবস্থায় তিনি এমনভাবে প্রচার করেছেন যেন এটা উনার নিজেরই করা। গ্রামীণ ব্যাংক সরকারের সংবিধিবদ্ধ সংস্থা উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, গ্রামীণ ব্যাংক সরকারের সংবিধিবদ্ধ সংস্থা। ওই টাকা, বেতন সব কিন্তু সরকারের পক্ষ থেকে দেয়া হতো। তাদের কেউ বাইরে গেলে জিও নিয়ে যেতে হতো। ওই ব্যাংকের আইনেই ছিল ৬০ বছর বয়স পর্যন্ত একজন এমডি চাকরিতে থাকতে পারবেন। ৬০ বছরের পরেও আরও ১০ বছর তিনি আইন ভঙ্গ করে ছিলেন। বাংলাদেশ ব্যাংক এই বিষয়টি নজরে আনে। আমাদের অর্থমন্ত্রী মুহিত সাহেব ও পররাষ্ট্র উপদেষ্টা গওহর রিজভী তাকে অনুরোধ করেছিলেন আপনার তো বয়স হয়ে গেছে। অবৈধভাবে ইতিমধ্যে ১০ বছরের বেশি আছেন। আপনি এখানে উপদেষ্টা হিসেবে থাকেন। কিন্তু তিনি এমডি পদ ছাড়বেন না। এমডি পদ তাকে রাখতেই হবে। ড. ইউনূস কিন্তু আমাদের সরকারের বিরুদ্ধে, অর্থমন্ত্রীর বিরুদ্ধে এবং বাংলাদেশ ব্যাংকের বিরুদ্ধে দু’টি মামলা করেন। তার বিরুদ্ধে মামলা কিন্তু কখনও সরকার করেনি। সেই দু’টি মামলাতেই উনি হেরে যান। এই কথাটা ওই পত্রিকাওয়ালারা লেখেনি। লেবার কোর্টে শ্রমিকরা কল্যাণ ফান্ডের টাকা না পেয়ে ড. ইউনূসের বিরুদ্ধে মামলা করেছে উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, এখনো যে তার বিরুদ্ধে যে মামলা সেটাও সরকার করেনি। শ্রমিকদের কল্যাণ ফান্ডের টাকাটা, ২০০৬ সাল থেকে একটি পয়সা দেয়নি। তখন শ্রমিকরা মামলা করেছে। মামলা কিন্তু সরকার করেনি। শ্রমিকরা লেবার কোর্টে মামলা করেছে সেই মামলায় তিনি শাস্তি পেয়েছেন। এখানে আমার কী দোষ? প্রধানমন্ত্রী বলেন, গ্রামীণফোন সেটা আমিই তাকে (ইউনূসকে) দিয়েছিলাম, এটাও মনে রাখা উচিত। গ্রামীণ ব্যাংক তার আমলে প্রায় কলাপস করে যাচ্ছিল। তখন আমার সরকার ও আমি নিজে প্রথমে ১০০ কোটি টাকা, পরে ২০০ কোটি টাকা ও পরে আরও ১০০ কোটি টাকা, এই ৪০০ কোটি টাকা সরকারের পক্ষ থেকে তাকে দিয়ে ব্যাংকটাকে চালু রাখতে সহায়তা করি। তখন তিনি প্রস্তাব দিলেন একটি ফোন পেলে গ্রামের মেয়েদেরকে ফোন দেবেন। এর থেকে যে লাভটা হবে তা গ্রামীণ ব্যাংকে জমা হবে। সেটা দিয়ে ব্যাংক চলবে। তাকে জিজ্ঞাসা করা উচিত, আজ পর্যন্ত ওই গ্রামীণফোনের একটি টাকাও গ্রামীণ ব্যাংককে দেয়া হয়েছে কি না? দেয়া কিন্তু হয়নি। গ্রামীণ ব্যাংকের আর্থিক স্বচ্ছতা নিয়ে প্রশ্ন তুলে শেখ হাসিনা বলেন, গ্রামীণ ব্যাংকের জন্য অনেক সময় বিদেশ থেকে অনুদান এসেছে, তার কয়টা টাকা গ্রামীণ ব্যাংকে গেছে? প্রতিটি সময় সেটা নিয়ে নতুন একটি ব্যবসা খুলে ব্যবসা করেছেন। কিন্তু কোনো ট্যাক্সই দেননি। তিনি যে ট্যাক্স ফাঁকি দিয়েছেন এটা তো তিনি নিজেই প্রমাণ করেছেন। কারণ তার বিরুদ্ধে যখন মামলা হয়েছে তিনি কিছু টাকা শোধ দিয়ে বসে আছেন। যখন কিছু টাকা দিলো এতে তো প্রমাণ হলো যে তিনি ট্যাক্স ফাঁকি দেন। এমন কি টেলিনর-গ্রামীণ ফোন সেখান থেকেও কয়েক দফায় এভাবে ট্যাক্স আদায় করা হয়েছে। ড. ইউনূসের উত্থানের পেছনে সরকারের অবদান রয়েছে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, এটা ঠিক তাকে আমরা সবাই মিলে তুলেছি। আমরা তাই খুবই প্রমোট করেছি। এটা ঠিক। এখন সব দোষ আমার! আমি তাকে সব থেকে বেশি দিলাম। এইটুকু কৃতজ্ঞতা তো থাকা দরকার। আজ তিনি যে উঠেছেন, সেখানে সব থেকে বেশি সহযোগিতা আমিই করেছিলাম। তিনি বলেন, তার (ড. ইউনুস) মাইক্রো ক্রেডিট সামিট- মাইক্রো ক্রেডিট আন্তর্জাতিকভাবে খুব বেশ গ্রহণযোগ্য ছিল না। আমি কো-চেয়ার হিসেবে অংশগ্রহণ করি। জাতিসংঘে প্রস্তাব আনি এবং আমি সবাইকে বোঝাই। কারণ আমিও ভাবতাম যে, খুব ভালো, মানুষকে দারিদ্রমুক্ত করে। কিন্তু ধীরে ধীরে পরবর্তীতে আমরা দেখলাম এটা দারিদ্র্যমুক্ত নয়, এটা দারিদ্র্য লালন-পালন করে। ওই মানুষগুলো দিনরাত কাজ করার পর যে উচ্চহারে সুদ দিতে হয়, বিভিন্নভাবে প্রায় ৪০/৪৫ ভাগ সুদ দিতে হতো। যশোরের যে এলাকায় হিলারি ক্লিনটনকে নিয়ে যেসমস্ত মানুষকে ক্ষুদ্রঋণ দিয়েছিল সেই পরিবারগুলো এখন কোথায়? খোঁজ করেন।
দারিদ্র্যবিমোচনে গ্রামীণ ব্যাংক তেমন কোনো ভূমিকা রাখেনি- এমনটি জানিয়ে সরকার প্রধান বলেন, গ্রামীন ব্যাংক থেকে যারা ঋণ নিয়েছে জমিজমা সব বেচে দিয়ে তারা ওখান থেকে পালিয়ে যেতে বাধ্য হয়। অনেকে আত্মহত্যা করেছে এই সুদের চাপে। আমি তাকে টাকা দিয়ে বলেছিলাম এত সুদ না নিয়ে মানুষের জন্য যেন একটু সহনশীল করে দেন। মানুষ সত্যিকার অর্থে যেন দারিদ্র্য থেকে উঠে আসতে পারে। আমার প্রশ্ন- এতই যদি করে থাকেন তাহলে দারিদ্র্যবিমোচন হলো না কেন বাংলাদেশে? দারিদ্র্যবিমোচন তো করলাম আমি। আজ ৪১ দশমিক ৬ ভাগ থেকে ১৮ দশমিক ৭ ভাগে নামিয়ে এনেছি মাত্র এই ১৫ বছরে। সে ক্রেডিটও নেন। সেটাও কোনো কোনো আন্তর্জাতিক সংস্থা লিখে ফেলে, ওই গ্রামীণ ব্যাংক, ব্র্যাক ওই অমুক-সমুক এটা করে ফেলেছে। আমার প্রশ্ন, শেখ হাসিনা ক্ষমতায় আসার আগে ওই দারিদ্র্যের হার কত শতাংশ ছিল? শেখ হাসিনা আসার পরে কতটা কমেছে। সেটা একটু হিসাব করে বলুন না।

শেখ হাসিনা কারও সঙ্গে জেলাসি করে না
নোবেল পুরস্কার নিয়ে জেলাস নিবন্ধে এমন কথাও উঠে এসেছে জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, অনেকে নাকি লিখেছেন- নোবেল প্রাইজের জন্য আমার সঙ্গে নাকি দ্বন্দ্ব! আমার সঙ্গে কারও দ্বন্দ্ব নেই। জীবনেও নোবেল প্রাইজের জন্য আমার কোনো আকাঙ্ক্ষাও নেই। কারণ আমার লবিস্ট রাখার মতো টাকাও নাই, পয়সাও নাই। আর আমি কখনও ওটা চাইনি। পার্বত্য শান্তি চুক্তি হওয়ার পরে শুধু আমার দেশ নয়, দেশে-বিদেশে অনেক নোবেল লোরিয়েট আমার জন্য লিখেছেন। কই আমি তো কখনও তদ্বির করতে যাইনি। কারও কাছে বলতেও যাইনি। কী পেলাম না পেলাম ওইগুলো আমার মাথার মধ্যেও নেই। যিনি অর্থনীতি নিয়ে কাজ করলেন, ব্যাংকের একজন এমডি। তিনি যখন নোবেল প্রাইজ পান তার সঙ্গে আমি কনটেস্ট করতে যাবো কেন?

তিনি বলেন, পার্বত্য চট্টগ্রাম শান্তিচুক্তি আমি করেছি। পৃথিবীতে যত শান্তিচুক্তি হয়েছে বের করেন! শান্তিচুক্তি হয়েছে কয়টা অস্ত্রধারী আত্মসমর্পণ করেছে? আমি পার্বত্য চট্টগ্রামে শুধু শান্তিচুক্তিই করিনি, এক হাজার ৮০০ জন অস্ত্রধারী ক্যাডার আমার কাছে অস্ত্র স্যারেন্ডার করেছে। আমি তাদের সকলকে সামাজিক ও আর্থিকভাবে পুনর্বাসন করেছি। ৬৪ হাজার শরণার্থী ছিল ভারতে, তাদের ফিরিয়ে এনে প্রতিষ্ঠিত করেছি। শান্তিচুক্তির ফলে শান্তি প্রতিষ্ঠায় আজ পার্বত্য এলাকায় ব্যাপক উন্নতি হয়েছে। এর আগ কী অবস্থা ছিল? শেখ হাসিনা ক্ষমতায় আসার আগে পার্বত্য চট্টগ্রামে কতোজন যেতে পারতেন? প্রধানমন্ত্রী বলেন, যদি কেউ বিদেশে আমার নামে প্রস্তাব দেয়, কই আমরা তো ছুটে যাইনি তাদের কাছে। আমার কাছে অনেকে আসছে। আমি বলেছি না আমার এ সমস্ত পুরস্কারের দরকার নেই। আর আমি দেখছি এই পুরস্কার যারা পায় তাদের আন্তর্জাতিকভাবে কতোটুকু অবদান, সেটা নয়। এখানে আলাদা একটি রাজনৈতিক উদ্দেশ্য থাকে। কাজেই ওর মধ্যে আমার কোনো আকাঙ্ক্ষা নেই। আর বলে দিলো এটা নিয়ে নাকি আমি উনার ওপরে জেলাসি!

প্রধানমন্ত্রী বলেন, শেখ হাসিনা কারও সঙ্গে জেলাসি করে না। শেখ হাসিনা জাতির পিতার মেয়ে। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবের মেয়ে। অন্তত এই জায়গাটায় কেউ আসতে পারবে না। সেটাই আমার গর্ব। প্রধানমন্ত্রী এটা তো সাময়িক ব্যাপার। আমি শেখ মুজিবের মেয়ে। আমি দেশও বেঁচি না। দেশের স্বার্থও বেচি না। দেশের স্বার্থ রক্ষা করেই চলি। তার জন্য একবার আগে ক্ষমতায় আসতেও পারিনি। কিন্তু আমার কিচ্ছু আসে যায় না। আমি এর-ওর কাছে ধর্ণা দিয়ে বেড়াই না। সব থেকে বেশি যে করেছে তার বিরুদ্ধে অভিযোগ দিয়ে বেড়াচ্ছেন। ওনার (ইউনূস) সঙ্গে আমার জেলাসির কী আছে! সে আসুক না। মাঠে আসুক। চলুক আমার সঙ্গে। আমেরিকায় ডিবেট হয় না? আসুক কথা বলবো। নিবন্ধ প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, সে এখন মামলায় সাজাপ্রাপ্ত আসামি। একজন সাজাপ্রাপ্ত আসামির জন্য এতকথা লেখে কীভাবে একজন সাংবাদিক। ওই্‌ সাংবাদিককে জিজ্ঞাসা করুন।

রাজনৈতিক দল করতে পারলো না কেন?
ওয়ান ইলেভেনের পর ড. ইউনূসের রাজনৈতিক দল চালুর প্রসঙ্গ তুলে আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেন, পলিটিক্যাল পার্টি করতে চেয়েছিল সেটাও লিখেছে। ২০০৭ সালে রাজনৈতিক দল করতে গেল। তাহলে ব্যর্থ হলো কেন? রাজনৈতিক দল করতে পারলো না কেন? সে যদি গ্রামের মানুষগুলোকে এতই দিয়ে থাকে তাহলে সেই মানুষগুলো তো তার জন্য ঝাঁপিয়ে পড়বে। তারা আসেনি কেন? কারণ সুদের চাপে তা মৃতপ্রায় ছিল। সেজন্য তার ডাকে কেউ সাড়া দেয়নি। সেখানে সে ব্যর্থ হয়েছে। সে দায়িত্বও কি আমার? আমি তো তখন জেলে।

সংবাদ সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে মূল মঞ্চে দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের, সংসদ উপনেতা বেগম মতিয়া চৌধুরী, সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য কাজী জাফর উল্লাহ, প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগ বিষয়ক উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান, পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ উপস্থিত ছিলেন। প্রধানমন্ত্রীর প্রেস সচিব নাঈমুল ইসলাম খান সংবাদ সম্মেলন সঞ্চালনা করেন।

ঝুঁকাঝুঁকির ব্যাপার আমার নেই:
তিস্তা মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়নে ভারত ও চীন সহায়তার প্রস্তাব নিয়ে দেশে এক ধরনের আলোচনা আছে যে, আপনি ভারত নাকি চীনের দিকে ঝুঁকে আছেন? চীনের দিকে ঝুঁকলে প্যাঁচে পড়বেন, আর ভারতের দিকে ঝুঁকলে চীন আগাতে দেবে না- এরকম আলোচনা আছে। এটা কীভাবে মোকাবিলা করবে সরকার এমন এক প্রশ্নের উত্তরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, যে প্রস্তাব দেশের মানুষের কল্যাণে আসবে এবং প্রকল্প বাস্তবায়নের ঋণ নিলে তার রিটার্ন আসবে তাদের প্রস্তাব বিবেচনা করা হবে। তিনি বলেন, ভারতের সঙ্গে আমাদের অনেক দিনের তিস্তার পানি বণ্টন নিয়ে আলোচনা চলছে। তাই তারা যদি আমাদের প্রজেক্ট করে দেয় আমাদের সব সমস্যার সমাধানই হয়ে গেল। চীন ও ভারতের সঙ্গে সম্পর্কের বিষয়ে সরকার প্রধান বলেন, এ পর্যন্ত জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের দেয়া ‘সকলের সঙ্গে বন্ধুত্ব, কারও সঙ্গে বৈরিতা নয়’ এই পররাষ্ট্র নীতি নিয়ে রাষ্ট্র পরিচালনা করছি।

তিনি বলেন, আমার কাছে এটা সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ দেশের মানুষের কল্যাণে, দেশের উন্নয়নে কার সঙ্গে কতোটুকু বন্ধুত্ব দরকার সেটা করে যাচ্ছি। ভারত আমাদের চরম দুঃসময়ের বন্ধু। আবার চীন যেভাবে নিজেদের উন্নত করেছে, সেখান থেকে অনেক কিছু শেখার আছে। সেগুলো সামনে রেখে সম্পর্ক বজায় রেখে যাচ্ছি। কেউ মনে করলো এদিকে ঝুঁকলাম নাকি ওইদিকে ঝুঁকলাম। এই ঝুঁকাঝুঁকির ব্যাপার আমার নেই।

শেখ হাসিনা বলেন, তিস্তা নিয়ে অনেক প্রস্তাব আসে। যেখান থেকে যে প্রস্তাবই আসুক না কেন, সেটা কতোটুকু দেশের জন্য প্রযোজ্য, যে টাকাটা ঋণ নেবো তা শোধ দেয়ার সক্ষমতা আছে কিনা, যে প্রকল্প নেবো তা সম্পন্ন হওয়ার পর রিটার্ন কী আসবে, সেখান থেকে দেশের মানুষের কল্যাণে কতোটুকু কাজে লাগবে এসব বিবেচনা করে প্রতিটি কাজ করি। ৫৪টি নদীর পানি বণ্টন নিয়ে ভারতের সঙ্গে দীর্ঘদিনের সমস্যা রয়ে গেছে। আবার চীনেরও পানি তুলে নেয়ার ঘটনা আছে। হিমালয় রেঞ্জের নদীগুলো নিয়ে নানা ধরনের দ্বন্দ্ব আছে, সমস্যা আছে। আবার সমাধানও আছে। তিনি বলেন, তিস্তা প্রকল্পটি সবকিছু বিবেচনা করে করতে হবে। সেক্ষেত্রে ভারত যখন বলছে তারা করতে চায় এবং টেকনিক্যাল গ্রুপ পাঠাবে, অবশ্যই তারা আসবে। আমরা যৌথভাবে সেটা দেখবো। চীনও একটা সম্ভাব্যতা যাচাই করেছে। ভারতও একটা করবে। যেটা আমাদের কাছে গ্রহণযোগ্য, লাভজনক সেটাই করবো। আবার ভারত যদি আমাদের প্রজেক্ট করে দেয় আমাদের সব সমস্যার সমাধানই হয়ে গেল। সেটা আমাদের জন্য সহজ হয়ে গেল না। ভারতের সঙ্গে যদি তিস্তা প্রজেক্টটা করি তাহলে পানি নিয়ে প্রতিদিন প্যাঁ প্যাঁ করতে হবে না। আমরা সেই সুবিধাটা পাবো। এখানে কোনো সমস্যা দেখি না। প্রধানমন্ত্রী বলেন, ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি যখন শপথ অনুষ্ঠানে দাওয়াত দিলেন, গেলাম। এরপর রাষ্ট্রীয় সফরের আমন্ত্রণ জানালেন, আমি রাষ্ট্রীয় সফরও করে আসলাম। চীন আমাকে দাওয়াত দিয়েছে, আমি চীনে যাবো। আমি যাবো না কেন? বাংলাদেশ সার্বভৌম দেশ। সবার সঙ্গে বন্ধুত্ব নিয়েই চলবো। কার কী ঝগড়া সেটা তাদের সঙ্গে থাক। আমার না। দেশের মানুষের কতোটুকু উন্নতি করতে পারি, সেটাই আমার।

ভারতের দলমত নির্বিশেষে সকলের সঙ্গে আমার একটা সুসম্পর্ক আছে: তিস্তার পানি বণ্টন চুক্তি ও গঙ্গা চুক্তি নবায়ন প্রশ্নে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিকে চিঠি লিখেছেন দেশটির পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। এ বিষয়ে এক প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, মমতা ব্যানার্জি চিঠি লিখেছেন উনার দেশের প্রধানমন্ত্রীকে। এটা তাদের অভ্যন্তরীণ ব্যাপার। এখানে আমার তো কিছু বলার নেই। এ ব্যাপারে আমার কোনো নাক গলানোর দরকারও নেই। আমার সঙ্গে সবার সম্পর্ক ভালো। একটা কথা বলতে পারি, ভারতের দলমত নির্বিশেষে সকলের সঙ্গে আমার একটা সুসম্পর্ক আছে।

মমতা ব্যানার্জির চিঠির বিষয়ে শেখ হাসিনা বলেন, তিস্তার বিষয়ে আমরা প্রজেক্ট নিচ্ছি। নদীটাতে ড্রেজিং করা। পাড় বাঁধানো, পানি সংরক্ষণ এটা নিয়ে আলোচনা হয়েছে। গঙ্গা চুক্তির মেয়াদ ২০২৬ সালে শেষ হবে। ওই সময়ের মধ্যে ওই চুক্তি যদি নবায়ন নাও হয় তাহলেও চুক্তি কিন্তু অব্যাহত থাকবে। আমরা বলেছি একটি টেনকিন্যাল গ্রুপ করা হবে। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিও এটা বলেছেন।

অর্থ বানিয়ে লাভটা কী হলো: দেশের ব্যাংকিং খাত নিয়ে এক প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, কিছু মানুষ তো লোভী হয়ে যায়। টাকা পয়সার লোভ এত বেড়ে যায় যে দেশ রেখে বিদেশে রাখতে গিয়ে শেষে দেশ ছেড়েই ভাগতে হয়। তা সেই অর্থ বানিয়ে লাভটা কী হলো? এতই অর্থ বানিয়ে ফেললো যে শেষে আর দেশেই থাকা যায় না। তাহলে অর্থ বানিয়ে লাভটা কী হলো? এটা তো মানুষ চিন্তা করে না। বোধ হয় নেশার মতো পেয়ে যায়। সেখানে যেটুকু সমস্যা হচ্ছে তা সমাধানের চেষ্টা করছি।

তিনি বলেন, ব্যাংকিং সেক্টর কেউ ভালো চালাচ্ছে। কেউ খারাপ চালাচ্ছে। অনেকে ঠিকমতো চালাতে পারেন না। এটা চিরাচরিত নিয়ম যদি কোনো ব্যাংক দুর্বল হয়ে যায় তাহলে তাকে সহযোগিতা করা। একটা ব্যাংকের সঙ্গে আরেকটা ব্যাংককে মার্চ করে দেয়া এটা যাতে চালু হয় ভালোভাবে। সেখানকার আমানতকারীদের স্বার্থ সংরক্ষণ কিন্তু সরকারের দায়িত্ব। সেটাই পালন করার চেষ্টা করা হচ্ছে।

এক প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, শেখ হাসিনা এ দেশকে বিক্রি করে না। কারণ আমরা এ দেশ স্বাধীন করেছি। যারা বিক্রির কথা বলে তারা একাত্তর সালে পাকিস্তানের দালালি করেছিল। শেখ হাসিনা বলেন, একটা দেশের মধ্যে ট্রানজিট দিলে ক্ষতিটা কী? রেল যেগুলো বন্ধ ছিল তা আমরা আস্তে আস্তে খুলে দিয়েছি। যাতে আমাদের ব্যবসা-বাণিজ্য সহজ হচ্ছে। ওই অঞ্চলের মানুষ উপকৃত হচ্ছে, তাদের উৎপাদিত পণ্য বিক্রি হচ্ছে। যে সমস্ত জিনিস আমাদের দেশে নেই তা আনার সুযোগ হচ্ছে। অর্থনীতিতে এটা সুবিধা হচ্ছে। আমরা কি চারদিকে দরজা বন্ধ করে বসে থাকবো? সেটা হয় না। তিনি বলেন, বলেন, ইউরোপের দিকে তাকান সেখানে কোনো বর্ডারই নেই, কিছুই নেই। তাহলে একটা দেশ আরেকটা দেশের কাছে বিক্রি করে দিয়েছে? একসময় সেখানে নোম্যানস ল্যান্ড ছিল। এখন কিন্তু সেসব কিচ্ছু নেই। এখন সেসব উঠে গেছে। কাউকে বাদ দিয়ে নয়, সব দেশ স্বাধীন দেশ। কোনো দেশ কারও কাছে বিক্রি করেনি। দক্ষিণ এশিয়ায় কেন বাধা দিয়ে রাখবো? দেশের মানুষের কথা চিন্তা করতে হবে, তাদের ভাগ্য পরিবর্তন সব থেকে বেশি প্রয়োজন।

দৈনিক কালের খবর নিয়মিত পড়ুন এবং বিজ্ঞাপন দিন..

কালের খবর মিডিয়া গ্রুপ লিমিটেডের একটি প্রতিষ্ঠান
Desing & Developed BY ThemesBazar.Com