রবিবার, ২২ ডিসেম্বর ২০২৪, ০১:৫৬ অপরাহ্ন
এম আই ফারুক আহমেদ :
ব্যাংকিং খাতে ও শিক্ষায় পদে পদে ঘুষ বাণিজ্য বলে মন্তব্য করেছেন জাতীয় পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য ফখরুল ইমাম। তিনি বলেছেন, আগে একটি দু’টি প্রশ্ন মোবাইলে, ফেসবুকে পাওয়া যেত। এবার বাসভর্তি প্রশ্ন পাওয়া গেল। প্রশ্ন ফাঁসের পুরো বিষয়টি সরকারে নাগালের বাইরে চলে গেছে।
বুধবার সংসদ অধিবেশনে রাষ্ট্রপতির ভাষণ সম্পর্কিত আনিত ধন্যবাদ প্রস্তাবের উপর আলোচনায় অংশ নিয়ে তিনি এই মন্তব্য করেন। সংসদে স্থিরচিত্র দেখিয়ে ফখরুল ইমাম বলেন, শ্যামলী বাসে যেসব যাত্রী ছিল সবার কাছেই প্রশ্ন ছিল। এপর্যন্ত ৭টি বিষয়ের সব প্রশ্ন ফাঁস হয়েছে। তিনি বলেন, শিক্ষার পদে পদে ঘুষ বাণিজ্য। নানা নামে নানা কৌশলে টাকা আদায় বিভিন্ন অংকের টাকা লেনদেন হচ্ছে। শিক্ষামন্ত্রীর নাম উল্লেখ না করে বলেন, দায়িত্বশীল ব্যক্তির সব সময় সব কথা বলতে হয় না।
ব্যাংকিং খাতের অনিয়ম তুলে ধরে বলেন, ব্যাংকিং খাত সবচেয়ে বড় খাত। আর এই ব্যাংকিং খাতে চলছে নৈতিকতার সংকট। ব্যাংকিং খাতে না জেনে শুনেই ব্যাংক ঋণ দিয়ে যাচ্ছে। রাজনৈতিক কারণে ও অবাধে ব্যাংক ঋণ দিয়ে যাচ্ছে। ব্যাংক ঋণ যারা পাচ্ছে তারা পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে খেলাপি হয়ে যাচ্ছে। ব্যাংক খাতে হরিলুট অর্থপাচারের ভয়াবহ তথ্য আছে। ব্যাংক এখন পরিবারতন্ত্রে পরিণত হয়েছে।
তিনি বলেন, এলসি’র মাধ্যমে কোন পণ্য না এনেই পুরো টাকাই বিদেশে রাখা হচ্ছে। ভুয়া শিপমেন্টের মাধ্যমে টাকা তুলে নেয়া হচ্ছে। এতে সব পক্ষই জড়িত। ফারর্মাস ব্যাংকের সাবেক চেয়ারম্যানের নাম উল্লেখ না করে বলেন, বিশেষ এক ব্যাংকের মালিক বিশেষ অঞ্চলের ৩ হাজার লোক নিয়োগ দিয়েছে। যে নিয়োগের ৯০ শতাংশই তার নিজ এলাকার। নিয়োগের ক্ষেত্রেই যদি স্বজনপ্রীতি থাকে, তাহলে সেই ব্যাংক কি করে ঋণ কেলেঙ্কারি ঠেকাবে?
বিদ্যুৎ খাতে সরকার উন্নয়নের কথা বললেও বিরোধী দলের এই সদস্য মানতে নারাজ। তিনি বলেন, প্রতিমন্ত্রী অনেক আশার কথা শুনিয়েছেন কিন্তু এখনো নিরবিচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ আমরা পাই না। এখনো লোড শেডিং হয় যদিও প্রতিমন্ত্রী স্বীকার করেন না। তিনি বলেন, বিদ্যুতের কেন্দ্রগুলো কলঙ্কের প্রতীক হয়ে থাকবে। রামপাল থেকে শুরু করে বিদ্যুতের যে বড় বড় প্রজেক্ট হচ্ছে সেগুলো ৫-১০ বছর পরে আর চলবে না। নতুন ডাক টেলিযোগাযোগ মন্ত্রী মোস্তাফা জব্বারের উক্তি তুলে ধরে তিনি বলেন, নতুন দায়িত্ব পেয়ে মন্ত্রী বলেছেন ডোবা নৌকা ভাসানোর চেষ্টা করছেন। তাকে বলতে চাই ডোবা নৌকা কয়বার ভাসাবেন?
খালেদা জিয়ার কারাবাস সম্পর্কে বলেন, নদীতে জোয়ার ভাটা হয়। তবে জোয়ার-ভাটা এক সঙ্গে হয় না। রাজনীতির জোয়ার-ভাটার খেলায় কেউ এগিয়ে যাবে কেউ পিছিয়ে পড়বে এটাই নিয়ম। এসময় তিনি তার দলের চেয়ারম্যান এইচএম এরশাদের বিরুদ্ধে করা মমলার কথা তুলে ধরে বলেন, আমাদের পার্টির চেয়ারম্যান যখন জেলে ছিলেন তার বিরুদ্ধে ৩৮টি মামলায় হয়েছিল। প্রতিটি মামলায় সুপ্রিম কোর্টে গিয়ে খালাস পেয়েছি তার নিচে কোন মামলায় খালাস পাইনি। সেই সময় বর্তমান বিরোধী দলীয় নেতা রওশন এরশাদকেও জেল খানায় নিয়ে যাওয়া হয়েছিল। তখন তাকে ১৫ দিন কয়েদীদের সঙ্গে মাটিতে রাখা হয়েছিল। এগুলো শুধু মনে পড়ে যায়। শুধু এগুলো মনে হয় এইজন্য ইতিহাস আবার ফিরে আসে। যদি রাগের বশবর্তি হয়ে রাজনীতির বাইরে গিয়ে কোন কিছু করা হয় সেটা আবার তার উপর ফিরে যায় কি না? রাজনীতিতে ক্ষমতা চিরস্থায়ী নয়। তাই ক্ষমতাসীনদেরও স্মরণ করিয়ে দিতে চাই।
কালের খবর/১৫/২/১৮