সাম্প্রতিক সময়ে রাজধানীতে মাত্র চারদিনের ব্যবধানে দুই জায়গায় পুলিশের ওপর হামলার ঘটনা ঘটেছে। থানার ওসিসহ অন্তত পাঁচ পুলিশ সদস্য এতে আহত হয়েছেন, ট্রাফিক বক্স ভাঙচুর করা হয়েছে। জানা গেছে, পুলিশের ওপর হামলা করার মতো কোনো যৌক্তিক কারণ বা পরিস্থিতি ছিল না এসব ঘটনায়। একটি স্থিতিশীল পরিস্থিতির মধ্যে পুলিশের ওপর ন্যাক্কারজনক হামলা করা হয়েছে। অন্যদিকে বৈদেশিকে একটি ইস্যুকে কেন্দ্র করে বাংলাদেশের সাম্প্রদায়িক বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করার চেষ্টা লক্ষ্য করা গেছে। বিশ্বনবী হযরত মুহাম্মদ (সা.)-কে নিয়ে কটূক্তির প্রতিবাদে ইমাম-ওলামা পরিষদসহ কয়েকটি সংগঠনের মিছিল থেকে গাইবান্ধা পৌর আওয়ামী লীগের সম্মেলন মঞ্চে হামলা, ভাঙচুর ও ব্যানার ছেড়ার ঘটনা ঘটেছে। রাসুল (সা.)- এর অবমাননা যেখানেই হোক, বিশ্বের যে প্রান্তেই হোক, আমরা তার তীব্র নিন্দা জানাই। যারা এই অবমাননার সঙ্গে জড়িত সংশ্লিষ্ট দেশের আইনি কাঠামোর ভিত্তিতে তাদেরকে আইনি শাস্তির ব্যবস্থা করা হোক। কিন্তু সে ইস্যুকে কেন্দ্র করে বাংলাদেশে বিশৃঙ্খলা করার চেষ্টা কোনোভাবেকাম্য নয়।
এদিকে প্রস্তাবিত বাজেট নিয়েও সরব বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলো। বাজেটের ক্রটি ধরে সরকারের পদত্যাগ দাবি করা হচ্ছে। কিন্তু সেই ক্রটিগুলোর বিকল্প কী হতে পারে বা কী করা যেতে পারে সেটা নিয়ে কেউ কথা বলেছেন না। কারণ তাদের উদ্দেশ্য যে বাজেট নয়, যেকোনো অজুহাতে সরকারের পতন। সামনে নির্বাচনকে কেন্দ্র এসব হামলার পেছনে ‘স্বার্থান্বেষী মহলের ইন্ধন’ রয়েছে বলে মনে করছে রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকরা। তারা বলছেন, যে কোনো বাহিনীর তুলনায় পুলিশ জনগণের কাছাকাছি থাকে। মাঠ পর্যায়ে সরাসরি পুলিশই দায়িত্ব পালন করে। যে কারণে স্বার্থান্বেষী মহল সহজেই পুলিশকে টার্গেট করে। তারা পুলিশের মনোবল ভেঙে দিতে পুলিশের ওপর হামলা করে পরিস্থিতি অস্বাভাবিক করে ফায়দা লুটতে চায়। বিশ্লেষকরা বলছেন, জুরাইনে আর মোহাম্মদপুরে পুলিশের ওপর হামলার ঘটনা এবং গাইবান্ধা পৌর আওয়ামী লীগের সম্মেলন মঞ্চে হামলা, ভাঙচুর ও ব্যানার ছেড়ার ঘটনা একই সূত্রে গাথা। যার মূল টার্গেট সরকার পতন। এরইমধ্যে গতকাল রোববার জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে ঢাকা মহানগর উত্তর-দক্ষিণ বিএনপি আয়োজিত বিক্ষোভ সমাবেশে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, এখনও সময় আছে, এখনও বাঁচতে পারবেন, সময় আছে কিছুটা রক্ষা পেতে পারেন। এরপর আর পালাবার সময় পাবেন না। তিনি বলেন, পরিষ্কার করে বলতে চাই সমস্ত রাজনৈতিক দল, রাজনৈতিক সংগঠনগুলো ঐক্যবদ্ধ হচ্ছে। দেশের সব মানুষ ঐক্যবদ্ধ হচ্ছে, যে দুর্বার গণআন্দোলন শুরু হবে তার মাধ্যমে এ সরকারের পতন ঘটিয়ে খালেদা জিয়াকে মুক্ত করা হবে।
বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার কিছু হলে তার দায়-দায়িত্ব সরকারকে নিতে হবে বলে হুঁশিয়ারি দিয়েছেন মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। সীতাকুণ্ডের বিএম কনটেইনার ডিপো, সিলেটে ট্রেনে ও পদ্মায় ফেরিতে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা তদন্ত চলছে বলে জানিয়েছেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের। গতকাল রোববার একটি অনুষ্ঠানে তিনি দাবি করেন, নাশকতার কিছু কিছু তথ্য গোয়েন্দাদের কাছে রয়েছে। বিরোধীদের উদ্দেশে ওবায়দুল কাদের বলেন, আমরা পরিষ্কার বলতে চাই, আগুন নিয়ে খেলবেন না। আগুন নিয়ে খেললে আগুনেই পুড়ে মরবেন। আপনাদের মিথ্যাচার, গণবিরোধী ও আগুন সন্ত্রাসীর রাজনীতি পুড়ে মরবে সেই আগুনে, যে আগুন আপনারা আমাদের বিরুদ্ধে জ্বালাতে চান। তিনি বলেন, বলেন, আমাদের অবস্থান জনগণের বিরুদ্ধে নয়। আমাদের অবস্থান সাম্প্রদায়িকতার বিরুদ্ধে, আপনাদের (বিএনপি) মিথ্যাচার ও দুর্নীতির বিরুদ্ধে। সেই অবস্থা নিয়ে এগিয়ে চলছি। আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহ্বান জানিয়ে ওবায়দুল কাদের বলেন, অন্তঃকলহ থাকলে দূর করুন। বিবাদ মিটিয়ে ফেলুন। দলকে আরো ঐক্যবদ্ধ, সুশৃঙ্খল, স্মার্ট ও আধুনিক প্রতিষ্ঠান হিসেবে আগামী নির্বাচনে শেখ হাসিনার নেতৃত্বে নৌকা আবারও পৌঁছাবে বিজয়ের বন্দরে।
এ বিষয়ে আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া বলেন, বিদেশিদের সঙ্গে নিয়ে বিএনপি সরকার পতনের ষড়যন্ত্র করছে। তিনি বলেন, আন্দোলনের নামে আগুনসন্ত্রাস করলে বিএনপির নেতাকর্মীকে ঘর থেকে বের হতে দেয়া হবে না। মানুষের জীবন নিয়ে আর ছিনিমিনি খেলতে দেয়া হবে না। তিনি বলেন, বিদেশিদের সঙ্গে সন্ধি করে সরকার পতনের ষড়যন্ত্র করছে। কিন্তু বিভ্রান্তি ছড়িয়ে কোনো লাভ হবে না। বিএনপির সব ষড়যন্ত্র দেশের জনগণ রুখে দেবে। তবে নির্বাচন নিয়ে রাজনীতিবিদ ও সুশীল সমাজের পর এবার সাবেক সিইসিরা পক্ষে-বিপক্ষে মতামত তুলে ধরেছেন। নির্বাচনে সব রাজনৈতিক দলের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করা না গেলে, তা গ্রহণযোগ্য হবে না বলে সাফ জানিয়ে দিয়েছেন সাবেক প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) ও নির্বাচন কমিশনের সাবেক সচিবরা। গতকাল রোববার দুপুরে রাজধানীর আগারগাঁওয়ে নির্বাচন ভবনে নির্বাচন কমিশনের (ইসি) সঙ্গে সাবেক সিইসি, ইসি ও ইসি সচিবরা এসব জানান। মতবিনিময় সভায় সাবেক ২৮ জন সিইসি, ইসি ও ইসি সচিব-অতিরিক্ত সচিবকে আমন্ত্রণ জানানো হয়। তাদের মধ্যে মাত্র ১০ জন অংশ নেন।