সংশ্লিষ্ট চিকিৎসকরা দিনকালকে বলেন, ঋতু পরিবর্তনজনিত কারণে এ সময় শিশু ও বয়স্কদের নিউমোনিয়া, ব্রংকিওলাইটিস, সাইনোসাইটিস, টনসিলাইটিস, অ্যাজমা, অ্যালার্জিজনিত সমস্যা দেখা দিচ্ছে। অনেকে সাধারণ সর্দি-কাঁশি, ঠান্ডা-জ্বর, শ্বাসকষ্টসহ বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হচ্ছেন। গত দুই দিন ডেমরার মাতুয়াইলে মাও শিশু হাসপাতাল, আইসিডিডিআর,বি শহীদ সোহরাওয়ার্দী হাসপাতাল ঘুরে সেখানে ঠান্ডার কারণে শিশু রোগীর সংখ্যা বৃদ্ধির বিষয়টি নিশ্চিত হওয়া গেছে।ঙ
মা ও শিশু হাসপাতাল-সংশ্লিষ্টরা দিনকালকে বলেন,। শীতের শুরু থেকে ঠান্ডার কারণে রোগী বাড়ছে। গত মাস থেকে প্রতিদিনই শিশু ওয়ার্ডে রোগীর চাপ বেড়েই চলছে। বিশেষ করে নিউমোনিয়া, ব্রংকিউলাইটিস, শ্বাসকষ্ট, অ্যাজমা, হাঁপানি, সর্দি-জ্বর ও ডায়রিয়ায় আক্রান্ত শিশুদের নিয়ে অভিভাবকরা হাসপাতালে আসছেন।
রোববার ডেমরা মাতুয়াইল শিশু হাসপাতালের তিনতলার ২নং ওয়ার্ডে ঢুকতেই দেখা যায় দুই চিকিৎসক ও এক নার্স ছয় মাস বয়সি অনন্যাকে নিয়ে ব্যস্ত। তাকে অক্সিজেন দিতে হচ্ছে। চাঁদপুর থেকে আসা শিশুটির মা ববিতা রানী বলেন, শীতের শুরুতেই গ্রামে দিনে গরম, রাতে ঠান্ডা পড়ছে। এর মধ্যে হঠাৎ কোলের বাচ্চা অসুস্থ হয়ে পড়ে। অবস্থা বেগতিক দেখে চাঁদপুর মা ও শিশু হাসপাতালে চার দিন ভর্তি ছিলেন। সেখানে চিকিৎসকরা জানান বাচ্চার নিউমোনিয়া হয়েছে। এছাড়া কাশতে কাশতে বুকে কফ জমে ইনফেকশন দেখা দিয়েছে। ফলে শনিবার রাত ১২টা এখানে পাঠিয়েছেন। চিকিৎসা চলছে। দিনে তিনবার করে অক্সিজেন দিতে হচ্ছে। বিভিন্ন পরীক্ষা ও প্রয়োজনীয় ওষুধ-পথ্য কিনতে হচ্ছে।
পাশেই ইমার্জেন্সি অবজারভেশন অ্যান্ড রেফারেল ওয়ার্ডে (৭নং) ২১টি বিছানার সবকটি শিশু রোগীতে পরিপূর্ণ। ওয়ার্ডে দায়িত্বরত চিকিৎসক-নার্সরা জানান, ভর্তি বেশির ভাগ শিশুই ঠান্ডাজনিত রোগ নিয়ে এসেছে। এই ওয়ার্ডে ১৭ ও ১৮নং বেডে ৪৬ দিন বয়সি যমজ দুই বোন শারিকা ও মাইমুনা চার দিন নিউমোনিয়া সমস্যা নিয়ে ভর্তি রয়েছে।
জানতে চাইলে ডেমরা মাতুয়াইল ঢাকা শিশু হাসপাতালের অ্যাজমা সেন্টারের প্রধান ও রেসপাটরি মেডিসিন বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ডা. কামরুজ্জামান কামরুল দিনকালকে বলেন, পরিবর্তনশীল আবহাওয়ার কারণে এখন সকাল-বিকালে হালকা শীতল বাতাসে শিশু রোগাক্রান্ত হচ্ছে। বিশেষ করে শিশুর রেসপেরিট্র্যাক ইনফেকশন, ব্রংকিউলাইটিস, ইনফ্লুয়েঞ্জা ভাইরাস, প্যারা ইনফ্লুয়েঞ্জা ভাইরাস, শীতকালীন ডায়রিয়া ও রাইনোভাইরাসজনিত রোগে আক্রান্তের সংখ্যা বাড়ছে। এ কারণে হাসপাতালে ঠান্ডাজনিত রোগী বাড়ছে। আজ অ্যাজমা সেন্টারেই ৬০ জনের মতো রোগী এসেছে। এক সপ্তাহে অ্যাজমা সেন্টারে ২৫০ জনের বেশি শিশু হাসপাতালে ঠান্ডাজনিত রোগ নিয়ে এসেছে।
হাসপাতালের এপিডেমিওলোজিস্ট ডা. এবিএম মাফফুজ হাসান আল মামুন দিনকালকে বলেন, ২৩ জানুয়ারী রোববার হাসপাতালের বিহর্বিভাগে মোট ৮৬১ জন শিশু চিকিৎসা নিতে আসে। এর মধ্যে ৫ জন নিউমোনিয়াসহ মেডিসিন ওয়ার্ডে ভর্তি হয়েছে ৯৮ জন। যাদের অনেকেই ঠান্ডা-কাশি, সর্দি-জ্বরের মতো শীতকালীন রোগে আক্রান্ত।
এবিষয়ে জানতে চাইলে স্যার সলিমুল্লাহ (মিডফোর্ড) মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল ডা. কাজী রশীদ-উন-নবী দিনকালকে বলেন, দেশে পরিপূর্ণ শীত জেঁকে না বসলেও শীতল আবহাওয়া বিরাজ করছে। এ সময়ে বয়স্ক ও শিশু উভয়ের ক্ষেত্রে শ্বাসযন্ত্রজনিত রোগের তীব্রতা সবচেয়ে বেশি হয়। কারণ এ দুই বয়সের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কম থাকে। শিশুদের শীতজনিত রোগ থেকে বাঁচাতে পর্যাপ্ত গরম কাপড়সহ হাত-পায়ে মোজা পরিয়ে রাখতে হবে। কোনোভাবেই ঠান্ডা লাগানো যাবে না। গোসলসহ সব ক্ষেত্রে কুসুমগরম পানি ব্যবহার করতে হবে।