বুধবার, ১১ ডিসেম্বর ২০২৪, ০৯:৪৬ পূর্বাহ্ন
অপসারণের কথা থাকলেও সড়কে এখনো দাঁড়িয়ে আছে দুই শতাধিক বৈদ্যুতিক খুঁটি। বিদ্যুৎ বিভাগকে খুঁটি অপসারণের জন্য বরাদ্দের ১৪ কোটি ৬৫ লাখ টাকা পরিশোধ করেছে সড়ক বিভাগ। এর পরও বিদ্যুৎ বিভাগ এ বিষয়ে উল্লেখযোগ্য পদক্ষেপ নিচ্ছে না বলে অভিযোগ রয়েছে। এ কারণে ব্যাহত হচ্ছে ডেমরা-যাত্রাবাড়ী সড়কের ছয় লেন উন্নয়ন কাজ। এতে আগামী বছরে নির্দিষ্ট সময়ে সড়ক উন্নয়ন কাজ শেষ করা সম্ভব হবে না বলে জানিয়েছেন ঢাকা সড়ক বিভাগ।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, বিদ্যুৎ বিভাগ ডেমরা-যাত্রাবাড়ী সড়কে থাকা আড়াই শতাধিক বিদ্যুতের খুঁটি অপসারণের জন্য গত ১০ মার্চ থেকে আগামী ১০ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ছয় মাস মেয়াদে চুক্তিভিত্তিক একটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে দায়িত্ব দেয়। সে অনুযায়ী সাড়ে পাঁচ মাস সময়ের মধ্যে মাত্র ৩০টি খুঁটি অপসারণ হয়েছে। বাকি খুঁটিগুলো আগের মতোই সড়কে দাঁড়িয়ে আছে। এ ক্ষেত্রে আগামী ১৫ দিনের মধ্যে কোনোভাবেই সড়কের দুই শতাধিক খুঁটি অপসারণ সম্ভব নয়। সড়কে খুঁটি অপসারণ না হওয়ায় ডেমরা-যাত্রাবাড়ী সড়কের নির্মাণ করা ১১টি আন্ডারপাস চালু করা যাচ্ছে না। উন্নয়ন কাজ ব্যাহত হচ্ছে। আন্ডারপাসগুলোর দুই পাশে স্লোপ করা (অ্যাপ্রোচ) যাচ্ছে না বলে বড় বড় গর্তের সৃষ্টি হচ্ছে।
এ বিষয়ে খুঁটি অপসারণের ঠিকাদার রাসেদ আহম্মেদ বাবু মোবাইল ফোনে বলেন, বিগত লকডাউনের সময় পুলিশি ধরপাকড়ের জন্য বাইরে বের হতে না পারায় যথাসময়ে কাজ করা সম্ভব হয়নি। তা ছাড়া অপসারণের ক্ষেত্রে ফিটিংসের মালামাল স্বল্পতা ও এলাকাভিত্তিক শাটডাউনসহ টেকনিকাল নানা জটিলতায় দ্রুত কাজ করা সম্ভব হয়নি। তা ছাড়া অফিসিয়াল যন্ত্রাংশের কারণেও কিছু সমস্যা হয়েছে। তবে আগামী শাটডাউনে বড় এলাকায় বিদ্যুতের লাইন অপসারণ হয়ে যাবে।
এদিকে ডেমরা-যাত্রাবাড়ী সড়কের উন্নয়ন কাজ ইতোমধ্যে পর্যবেক্ষণ করছেন সড়ক বিভাগের (সওজ) নির্বাহী প্রকৌশলী মো. আবদুস সবুর ও সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. নজরুল ইসলাম। পর্যবেক্ষণে এসে বিদ্যুতের খুঁটি অপসারণ না হওয়া দেখে
তারা ক্ষুব্ধ হন। ওই সময় ঘটনাস্থলে উপস্থিত থাকা ঠিকাদার রাসেল আহম্মেদ বাবুকে সচিব মো. নজরুল ইসলাম এ বিষয়ে প্রশ্ন করেন। তখন গত ঈদুল আজহার আগেই তিনি জরুরি ভিত্তিতে সড়কের তিনটি গুরুত্বপূর্ণ স্পটে ৩৩ হাজার বিদ্যুৎ সঞ্চালন লাইনের পোল অপসারণ করে দেবেন বলে জানান। অথচ এখনো মৃধাবাড়ী আন্ডারপাসে ১টি ও স্টাফ কোয়ার্টারে দুটি পোল অপসারণের কাজ শুরুই করা হয়নি।
এ বিষয়ে ডেমরা-যাত্রাবাড়ী সড়কের উন্নয়ন প্রজেক্টে নিয়োজিত ঢাকা পাওয়ার ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লিমিটেড (ডিপিডিসি) নির্বাহী প্রকৌশলী মো. দেলোয়ার হোসেনের সঙ্গে মোবাইলে যোগাযোগ করা হয়। তিনি ফোন কেটে দিয়ে মিটিংয়ে আছেন বলে খুদে বার্তা পাঠাতে বলেন। পরে সাংবাদিক পরিচয়ে বিদ্যুতের খুঁটি অপসারণের বিষয়ে কয়েকবার খুদে বার্তা পাঠানোর পরও তিনি কোনো জবাব দেননি। পরে কয়েকবার কল দিলে তিনি ফোন রিসিভ করেননি।
ঢাকা সড়ক বিভাগের (সওজ) নির্বাহী প্রকৌশলী শামীম আল মামুন মোবাইল ফোনে বলেন, ডেমরা-যাত্রাবাড়ী সড়কটির উন্নয়ন কাজ যথাসময়ে শেষ করা সম্ভব হবে না বলে মনে হচ্ছে। এ ক্ষেত্রে সড়কে থাকা শত শত বিদ্যুতের খুঁটিগুলো অনেক আগেই পরিকল্পিতভাবে অপসারণ করার কথা থাকলেও তা করা হয়নি। বিদ্যুৎ বিভাগকে এ বিষয়ে চিঠি পাঠানো হয়েছে। এ ছাড়া বারবার মৌখিকভাবে যোগাযোগ করা হলেও তারা এ বিষয়ে জরুরি পদক্ষেপ নিচ্ছে না।
সরেজমিন দেখা গেছে, ডেমরা-যাত্রাবাড়ী সড়কের বেশিরভাগ স্থানেই বিদ্যুতের খুঁটি অপসারণ না হওয়ায় সড়কে নানা অব্যবস্থাপনা দেখা দিয়েছে। সড়কের মধ্যেই ফেলে রাখা হয়েছে পাথর, সিলেট সেন্ট বালু ও ভিটি বালুসহ নানা নির্মাণ সামগ্রী। সড়কের দুই পাশে ও মাঝে ৩৩ হাজার, ১১ হাজার ও ৪৪০ ভোল্টের বিদ্যুৎ সঞ্চালন লাইনসহ বিদ্যুতের দুই শতাধিক খুঁটি রয়েছে যা দ্রুত অপসারণ জরুরি। এদিকে প্রতিনিয়ত ঝুঁকি নিয়ে চলাচল করছেন যাত্রী ও ডেমরা এলাকাবাসী। এসব খুঁটির কারণে যে কোনো সময় বড় ধরনের দুর্ঘটনার আশঙ্কায় রয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।
ঢাকা সড়ক বিভাগসহ সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, ডেমরা-যাত্রাবাড়ী সড়কের উন্নয়ন কাজটি ১৮ মাস মেয়াদে সম্পন্ন করতে ৩৩২ কোটি টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। গত ১ বছর আগে শুরু হয় ৫.৫ কিলোমিটারের এ সড়কের প্রধান চার লেনসহ দুটি সার্ভিস লেন উন্নয়ন কাজ। বর্তমানে সড়কটির কাজ শেষ হয়েছে মাত্র ৪৭ শতাংশ।