শুক্রবার, ১১ অক্টোবর ২০২৪, ০৮:৫৭ অপরাহ্ন
এম আই ফারুক, ডেমরা, ঢাকা :
ঢাকা-৫ আসনের আ’লীগের সংসদ সদস্য কাজী মনিরুল ইসলাম মনুর বিরুদ্ধে ডেমরার এক দলিল লেখককে মারধর এবং হুমকি-ধামকি দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে।
জানা যায়, বৃহস্পতিবার বিকেলে রাজধানীর ডেমরায় সাব-রেজিস্ট্রারের কার্যালয়ে বিপুল সংখ্যক নেতাকর্মী নিয়ে এসে দলিল লেখক ও স্ট্যাম্প ভেন্ডার কল্যাণ সমিতির সাধারণ সম্পাদক মো. আনোয়ার হোসেন খানকে আকস্মিকভাবে ‘কোনো কারণ ছাড়াই’ মারধর করেন সংসদ সদস্য।
ঘটনার বিষয়ে ভুক্তভোগী আনোয়ার হোসেন বলেন, ‘দুপুরে খাওয়া-দাওয়া করে কেবল বসেছি। ওই সময় এমপি সাহেব ৫০/৬০টি মোটরসাইকেল নিয়ে এসে গালাগালি শুরু করেন। গালামন্দের কারণ জানার আগেই তিনি আমাকে চেয়ার দিয়ে আঘাত করেন। গ্লাস ছুড়ে মারেন। নেতাকর্মীরা চোখ তুলে ফেলবে বলে হুমকি দেন।’
কী কারণে এমন আচরণ হতে পারে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আমার সঙ্গে তো উনার কোনো বিরোধ নেই। এতোদিন দলিলপ্রতি এক হাজার টাকা গ্রাহকদের কাছ থেকে নেওয়া হতো। আমরা সেটি বন্ধ করে দিয়েছি। এটা দেওয়ার কোনো নিয়ম নেই। হতে পারে সে কারণে।’
তিনি আরো বলেন, ‘অনেকদিন ধরেই সাব-রেজিস্ট্রার অফিসে কাজী মনিরুল ইসলাম তার অনুগত দুজন ব্যক্তি সাইফুল ইসলাম লিটন ও বোরহানের মাধ্যমে ওই এক হাজার টাকা নিতেন। তাদের হয়ে সাব-রেজিস্ট্রার অফিসের কপিস্ট শাহিনা বেগম এই টাকা অতিরিক্ত তুলতেন। এটা আমরা বন্ধ করছি। এটার জন্য হতে পারে বলে আমরা মনে করছি।’
সংসদ সদস্যের এমন আচরণের পর চরম নিরাপত্তাহীনতায় আছেন জানিয়ে আনোয়ার বলেন, ‘বিষয়টি আমি ডেমরা থানায় জানিয়েছি।’
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানায়, বৃহস্পতিবার বিকালে কাজী মনিরুল ইসলাম মনু তার শ্যালক রবিনসহ ৫০/৬০টি মোটরসাইকেল নিয়ে ডেমরার বাঁশেরপুল এলাকায় ডেমরা সাব-রেজিস্ট্রার অফিসে আসেন। এসময় দ্রুত দলবল নিয়ে মল্লিকা ফেরদৌস টাওয়ারের দ্বোতলায় ডেমরা সাব-রেজিস্ট্রি দলিল লেখক ও স্ট্যাম্প ভেন্ডার কল্যাণ সমিতির অফিসে গিয়ে আনোয়ার হোসেনকে অকথ্য ভাষায় গালমন্দ শুরু করেন। পরে নিচে আনোয়ার হোসেনের অফিসে এসে তাকে মারধর করেন।
দলিল লেখকদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ঢাকা-৫ আসনের প্রয়াত এমপি হাবিবুর রহমান মোল্লা জীবিত থাকা অবস্থায় কখনো এমন ঘটনা ঘটেনি। ওই অতিরিক্ত এক হাজার টাকাও নেওয়া হতো না। কাজী মনিরুল ইসলাম মনু এমপি হওয়ার পর ওই ধারা চালু করেন। অফিসে তিনি নিজের নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করতে নিজের মতো করে নিয়মতান্ত্রিকভাবে গঠিত কমিটি বাদ দিয়ে দলিল লেখক সমিতির কমিটিও করে দিয়েছেন।
ডেমরা সাব-রেজিস্ট্রি অফিস দলিল লেখক ও স্ট্যাম্প ভেন্ডার কল্যাণ সমিতির সভাপতি ফাইজুল হক খাঁন বলেন, ‘কাজী মনিরুল ইসলাম মনু এমপি কেন হঠাৎ এমন কাজ করলেন আমরা তা বুঝতে পারছি না। বিষয়টি খুবই দুঃখজনক। আমরা আতঙ্কে আছি।’
তিনি বলেন, ‘কোনো সমস্যা হলে আমাদের সঙ্গে উনি বসে কথা বলতে পারতেন। এতে যে কোনো বিষয়ে শান্তিপূর্ণ সমাধানে আসতে পারতাম। এখন আমরা একটা আতঙ্কময় পরিস্থিতিতে রয়েছি। আমরা এখন কী করব তা বুঝতে পারছি না।’
ডেমরা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা খন্দকার নাসিরউদ্দিন বলেন, ‘ঘটনার বিষয়ে ভুক্তভোগী আনোয়ার হোসেন থানায় এসে মৌখিকভাবে অভিযোগ জানিয়েছেন। তিনি হুমকি-ধামকির বিষয়ে অবহিত করেছেন।’