রবিবার, ২২ ডিসেম্বর ২০২৪, ০২:৫৫ অপরাহ্ন
কালের খবর : ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে উপাচার্যের কার্যালয় ঘেরাওয়ের সময় ‘নিপীড়নবিরোধী শিক্ষার্থী’ ব্যানারের মধ্যে ইসলামী ছাত্রশিবিরের নেতা-কর্মীরাও ঢুকে পড়েছিল বলে দাবি করেছেন ছাত্রলীগ সভাপতি সাইফুর রহমান সোহাগ।
বাম ছাত্র সংগঠনগুলোর নেতৃত্বে ওই আন্দোলনকারীদের পেটানোর পর সমালোচনায় থাকা সরকার সমর্থক সংগঠনটির সভাপতি ঘটনার চার দিন বাদে শনিবার(২৭ জানুয়ারি) এক সংবাদ সম্মেলনে এই দাবি করেন।
জামায়াতে ইসলামীর ছাত্র সংগঠন শিবিরকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে তৎপরতা চালাতে না দেয়ার বিষয়ে অপরাপর সংগঠনগুলোর মতৈক্য রয়েছে। ‘ছাত্র সংগ্রাম পরিষদের’ ব্যানারে মধুর ক্যান্টিনে সংবাদ সম্মেলনে এসে ছাত্রলীগ নেতারা শিক্ষার্থীদের উপর হামলার অভিযোগ অস্বীকার করার পাশাপাশি দাবি করেন, ‘আন্দোলনের নামে তাণ্ডবকারীরাই’ সেদিন হামলা চালিয়েছিল।
‘নিপীড়নবিরোধী শিক্ষার্থীদের’ ব্যানারে গত ২৩ জানুয়ারি উপাচার্যকে অবরুদ্ধকারী শিক্ষার্থীদের উপর ছাত্রলীগের হামলার পর পাল্টাপাল্টি কর্মসূচিতে উত্তেজনা চলছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে।
এই ঘটনার সূত্রপাত হয় ঢাকার সরকারি সাত কলেজের অধিভুক্তি বাতিলের দাবিতে ‘সাধারণ শিক্ষার্থী’ ব্যানারে আন্দোলনকারীদের উপর ছাত্রলীগের হামলা করার পর থেকে।
প্রসঙ্গত, গত ১৫ জানুয়ারি উপাচার্যের কার্যালয়ে ছাত্রলীগ নেতা-কর্মীরা ‘সাধারণ শিক্ষার্থী’দের উপর চড়াও হলে হামলাকারীদের শাস্তির দাবিতে ‘নিপীড়নবিরোধী শিক্ষার্থীবৃন্দ’ ব্যানারে আন্দোলন শুরু হয়, যার নেতৃত্বে ছিল বাম ছাত্র সংগঠনগুলো। এই আন্দোলনে সমন্বয়কের কাজ করছেন গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের ছাত্র মাসুদ আল মাহদী।
এই আন্দোলকারীরা প্রক্টরের কার্যালয়ের ফটক ভাংচুরের পর তাদের বিরুদ্ধে মামলা করে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। এরপর গত ২৩ ফেব্রুয়ারি তারা উপাচার্য অধ্যাপক আখতারুজ্জামানকে অবরুদ্ধ করলে ছাত্রলীগ নেতা-কর্মীরা গিয়ে আন্দোলনকারীদের পিটিয়ে উপাচার্যকে উদ্ধার করে।
সংবাদ সম্মেলনে ছাত্রলীগ সভাপতি সোহাগ শুরু থেকে ঘটনার বর্ণনা দিয়ে বলেন, আমরা দেখেছি ব্যানারে লেখা ছিল সাধারণ শিক্ষার্থী, কিন্তু পেছন ছিল অনেক ষড়যন্ত্র। সেই ব্যানারে আমরা দেখেছি ছাত্রশিবিরের নেতৃবৃন্দ ছিল এবং অনেক নিষিদ্ধ সংগঠনের নেতৃবৃন্দও ছিল সেখানে। ছাত্রদলের পদধারী নেতৃবৃন্দ সেখানে ছিল, আমরা দেখেছি; ছাত্র ইউনিয়নের সভাপতি, ছাত্র ফেডারেশনের নেতৃত্ব।
প্রথম আন্দোলনের দিন উপাচার্যের কাছে অনেক দাবি-দাওয়া নিয়ে তারা গিয়েছিল। পরবর্তীতে তারা প্রক্টর অফিস ভাংচুর করেছিল। আমরা আন্দোলন দেখেছি, কিন্তু এভাবে বিশ্ববিদ্যালয়ের সম্পদ ভাংচুর এবং শিক্ষক- কর্মচারীদের উপর হামলা দেখেনি।
প্রক্টর কার্যালয় ভাংচুরের ঘটনায় মামলার পর উপাচার্য কার্যালয় ঘেরাও কর্মসূচির দিকে ইঙ্গিত করে সোহাগ বলেন, আন্দোলনের নামে বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে ন্যক্কারজনক ঘটনা ঘটিয়েছে। তাদের দাবি ছিল মুখে, তাদের উদ্দেশ্য ছিল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়কে অস্থিতিশীল করা, বিশ্ববিদ্যালয়ের বন্ধ ঘোষণা করা।
সেদিন ছাত্রলীগ সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের নেতৃত্বে ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা যাওয়ার পর রড-লাঠি নিয়ে আন্দোলনকারীদের উপর চড়াও হয়েছিল। তাতে আহত অন্তত ২৪ জন আহত হয়ে ঢাকা মেডিকেলে চিকিৎসা নেন। আহতদের মধ্যে ছাত্র ইউনিয়ন, সমাজতান্ত্রিক ছাত্রফ্রন্ট ও ছাত্র ফেডারেশনের শীর্ষ পর্যায়ের নেতারা ছিলেন।
ছাত্রলীগ সভাপতি সেদিন বলেছিলেন, অছাত্রদের কবল থেকে উপাচার্যকে উদ্ধার করতে গিয়েছিলেন তিনি।
সংবাদ সম্মেলনে ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক এস এম জাকির হোসাইন বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের সচেতন শিক্ষার্থী হিসাবে আমরা সেখানে গিয়েছিলাম। সংগঠনের পরিচয়ের আগে আমরা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্র। এই হিসাবে আমাদের দায়িত্ববোধ থেকে বিবেকের তাড়নায় আমরা সেখানে গিয়েছিলাম।
জাকির বলেন, ভিসিকে রক্ষার জন্য সাধারণ শিক্ষার্থী যারা গিয়েছিল, তাদের উপর আন্দোলনের নামে যারা তাণ্ডব চালিয়েছিল, তারা হামলা করেছে।
ছাত্রলীগের বিরুদ্ধে অভিযোগের জবাবে তিনি বলেন, যারা ছাত্রলীগের জড়িত থাকার কথা বলেছেন; আমি বলব বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন তদন্ত করে চিহ্নিত করবে, কারা জড়িত। তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেবে।
বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ঘটনার পরপরই এক বিবৃতিতে আন্দোলনকারীদের বিরুদ্ধে উপাচার্যের উপর হামলার অভিযোগ তোলে। তবে আন্দোলনকারীরা সেই অভিযোগ প্রত্যাখ্যান করেছে।