বৃহস্পতিবার, ১০ অক্টোবর ২০২৪, ০৭:৩৫ পূর্বাহ্ন
মাতুয়াইল স্বাস্থ্য ও পরিবারকল্যাণ কেন্দ্র
স্বাস্থ্যকেন্দ্রের চারপাশে অস্বাস্থ্যকর পরিবেশ
স্থায়ী জলাবদ্ধতার কারণে কেন্দ্রটি ১০ মাসই থাকে পানিবন্দি * ৩ বছর পর চিকিৎসাসেবা
এম আই ফারুক আহমেদ, কালের খবর :
নগরীর ডেমরায় মাতুয়াইল ইউনিয়ন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণকেন্দ্রের মারাত্মক ঝুঁকিপূর্ণ ভবনে চলছে চিকিৎসাসেবা। এখানে নোংরা পরিবেশেই চিকিৎসা ও ওষুধ নিতে আসছেন ভুক্তভোগী বাসিন্দারা।
আর স্থায়ী জলাবদ্ধতার কারণে বছরের প্রায় ১০ মাসই পানিবন্দি থাকে কেন্দ্রটি। এতে ভবনের দেয়ালগুলোতেও জম্মেছে গুল্মলতা। তাই চিকিৎসার অনুপযোগী এ ভবনসহ চারদিকেই নোংরা পরিবেশ রয়েছে।
এতে এখানে পুরুষ ও নারীদের দীর্ঘমেয়াদি জন্মনিয়ন্ত্রণ পদ্ধতিসহ স্বাস্থ্য ও পরিবারকল্যাণ কেন্দ্রিক অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ অধিকাংশ চিকিৎসেবা বন্ধ রয়েছে। এদিকে দীর্ঘ ৩ বছর পর স্বাস্থ্যকেন্দ্রটিতে চিকিৎসাসেবা শুরু করেছেন সংশ্লিষ্টরা।
তারপরও স্বাস্থ্যকেন্দ্রটির বিষয়ে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের নেই কোনো নজরদারি। এছাড়া নতুন ভবন নির্মাণের ক্ষেত্রেও কোনো পদক্ষেপ নিচ্ছে না কর্তৃপক্ষ।
জানা যায়, সাবেক তেজগাঁও থানার অধীনে থাকাকালীন ডেমরার পূর্ব ডগাইর এলাকায় ১৯৭৭ সালের ১৪ অক্টোবর স্থাপিত হয় মাতুয়াইল ইউনিয়ন স্বাস্থ্য ও পরিবারকল্যাণ কেন্দ্র।
পর্যায়ক্রমে এখানে স্বাস্থ্য ও পরিবারকল্যাণ কেন্দ্রিক ওষুধসহ সব ধরনের চিকিৎসাসেবা কার্যক্রম শুরু হয়। এখানে বিনা মূল্যে গর্ভবতীসেবা, প্রসবসেবা, গর্ভোত্তরসেবা, এমআর সেবা, নবজাতকের সেবা, শূন্য থেকে ৫ বছর পর্যন্ত শিশুদের সেবা, প্রজননতন্ত্রের বা যৌনবাহিত রোগের সেবা, ইপিআই সেবা, ভিটামিন-এ ক্যাপসুল বিতরণসহ নানা সেবা দেয়া হতো।
যার অধিকাংশই এখন বন্ধ। কেন্দ্রটিতে পরিবার পরিকল্পনা সেবা বিশেষ করে পরিবার পরিকল্পনাবিষয়ক পরামর্শ প্রদান, খাবার বড়ি, জন্মনিরোধক ইনজেকশন, আইইউডি বা কপারটি, ইমপ্ল্যান্ট, ভ্যাসেকটমি এনএসবি (পুরুষদের স্থায়ী পদ্ধতি), লাইগেশন বা টিউবেকটমি (মহিলাদের স্থায়ী পদ্ধতি), পরিবার পরিকল্পনা পদ্ধতি গ্রহণ বা ব্যবহারজনিত পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া জটিলতার সেবা দেয়া হতো।
অথচ জলাবদ্ধতা, নজরদারি ও নতুন ভবনের কারণে স্বাস্থ্য কেন্দ্রটিতে এখন আর সব ধরনের সেবা দেয়া হচ্ছে না। এছাড়াও সাধারণ চিকিৎসাসেবাও ব্যাহত হচ্ছে।
প্রায় ৪২ বছর আগে গড়ে ওঠা স্বাস্থ্য কেন্দ্রটির সংলগ্ন রাস্তা ওই ভবনের তুলনায় প্রায় ৩ ফুট উঁচু। তাই কয়েক বছর ধরে ভবনটির সামনে স্থায়ী জলাবদ্ধতা হচ্ছে।
কেন্দ্রটি পর্যায়ক্রমে ৩ মাস থেকে বর্তমানে ১০ মাসই পানিবন্দি থাকে। কেন্দ্রটির অভ্যন্তরসহ যত্রতত্র ময়লা-আবর্জনায় অস্বাস্থ্যকর পরিবেশ। স্থায়ী জলাবদ্ধতা ও ঝুঁকিপূর্ণ ভবনের কারণে অন্তত ২ লাখ মানুষের স্বাস্থ্যসেবা কার্যক্রম বিপর্যয়ের মুখে পড়েছে।
ভবনটি দীর্ঘদিন ধরে সংস্কারও হয়নি। পুরনো আসবাবপত্রগুলো সবই প্রায় অকেজো। ফলে দীর্ঘদিন ধরে এখানে সব ধরনের অপারেশন বন্ধ রয়েছে।
আর টয়লেটের অবস্থা একেবারেই নাজুক। কেন্দ্রটিতে নেই পানি ও বিদ্যুতের ব্যবস্থা। এছাড়াও ভবনটির অভ্যন্তর ছাদ ও দেয়ালগুলোর পলেস্তারা খসে পড়ছে।
সংশ্লিষ্টরা জানান, ভারি বৃষ্টি হলেই কেন্দ্রটিতে সরাসরি পানি প্রবেশ করে। আর বর্ষা মৌসুমে স্বাস্থ্য কেন্দ্রের ভেতরে হাঁটুপানি উঠে যায়। আর ৩ বছর কেন্দ্রে প্রবেশ করতে না পারায় রাস্তার পাশে ফার্নিচারের দোকানগুলোতে সেবা কার্যক্রম চালাতে হয়েছে।
মাঠ পর্যায়ে ফ্যামিলি প্ল্যানিং ইন্সপেক্টরসহ ১৫ জন কাজ করছেন।এছাড়াও উপ-সহকারী কমিউনিটি মেডিকেল অফিসার শিল্পী রানীসহ ৫ জন স্টাফ রয়েছেন। স্বাস্থ্যকেন্দ্রের পাশেই তাদের থাকার ভবনটি পরিত্যক্ত অবস্থায় রয়েছে। বাইরের দেয়াল ও রুমের ভেতরে বটবৃক্ষ জন্মেছে।
মাতুয়াইল ইউনিয়ন স্বাস্থ্য ও পরিবারকল্যাণ কেন্দ্রে চিকিৎসা নিতে আসা ৫০ বছর বয়সী জ্বরের রোগী দোলোপা বেগম যুগান্তরকে বলেন, আমি ১৫ বছর ধরে এ স্বাস্থ্যকেন্দ্র থেকে চিকিৎসাসেবাসহ বিনা মূল্যে ওষুধ নিতে পারছি।
৩ বছর পর এ বছর প্রথম আসতে পারলাম স্বাস্থ্যকেন্দ্রে। এখানে আগে হাজার হাজার মানুষ চিকিৎসা নিতে পারত। বর্তমানে কেন্দ্রটিতে পুরুষ ও নারীদের জন্য দীর্ঘমেয়াদি পদ্ধতিও বন্ধ রয়েছে।
মাতুয়াইল ইউনিয়ন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কেন্দ্রের উপ-সহকারী কমিউনিটি মেডিকেল অফিসার শিল্পী রানী যুগান্তরকে বলেন, স্বাস্থ্যকেন্দ্রটি উপযোগী থাকলে বর্তমান ঊর্ধ্ব মূল্যের বাজারেও একটি বৃহৎ জনগোষ্ঠী বিনা মূল্যে গরুত্বপূর্ণ অনেক চিকিৎসাসেবা পেত।
দেড় মাস আগে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় থেকে পর্যবেক্ষণ দল এসে স্বাস্থ্যকেন্দ্রের খারাপ অবস্থা দেখে আফসোস করেছেন।
ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের (ডিএসসিসি) ৬৬ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর মো. নুরউদ্দিন মিয়া যুগান্তরকে বলেন, এ স্বাস্থ্য কেন্দ্রটিতে পূর্ণাঙ্গ চিকিৎসাসেবা চালু করতে পারলে দরিদ্র মানুষের অনেক সুবিধা হতো।
এ লক্ষ্য নিয়ে আমি ৬ মাস আগে স্বাস্থ্যকেন্দ্রটি নিয়ে একটি লিখিত আবেদন স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ে জমা দিয়েছি। ওই আবেদনে ঢাকা-৫ আসনের সংসদ সদস্য মো. হাবিবুর রহমান মোল্লা ও মেয়র সাঈদ খোকনের সুপারিশ রয়েছে।
স্বাস্থ্য ও পরিবারকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম সচিব (স্বাস্থ্যসেবা বিভাগ-ঢাকা) সাইফুল্লাহীল আযম যুগান্তরকে বলেন, আমাদের পর্যবেক্ষণের পর ওই স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সটির বিষয়ে একটি রিপোর্ট ইতিমধ্যে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ে জমা দেয়া হয়েছে।
এ স্বাস্থ্যকেন্দ্রের পুরাতন ভবনগুলোর পবিতর্তে নতুন পরিকল্পিত ভবন নির্মাণের বিষয়টি খুব গুরুত্বের সঙ্গে দেখছে কর্তৃপক্ষ। বাকি কাজগুলো প্রক্রিয়াধীন রয়েছে।