শনিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১২:৫৮ পূর্বাহ্ন

সংবাদ শিরোনাম :
সিরাজগঞ্জে খিরা চাষে লাভবান কৃষক, খিরা যাচ্ছে সারাদেশে। কালের খবর তীব্র গরমে পথচারীদের সুপেয় পানি সরবরাহ করছে ফায়ার সার্ভিস। কালের খবর সাতক্ষীরার কালিগঞ্জে এন্টিবায়োটিক ব্যবহার করে পশুদের স্বাস্থ্য ঝুঁকিতে ফেলছে। কালের খবর সমাজে “শান্তি স্থাপন ও সহিংসতা নিরসনে — সাতক্ষীরায় তাপদাহে রিকশাচালকদের মাঝে পানি ও স্যালাইন বিতারণ। কালের খবর প্রচণ্ড তাপদাহে পুড়ছে বাগান, ঝরছে আম, শঙ্কায় চাষীরা। কালের খবর ট্রাফিক-ওয়ারী বিভাগ যানচলাচল স্বাভাবিক রাখতে কাজ করছে। কালের খবর মারামারি দিয়ে শুরু হলো ‘খলনায়ক’দের কমিটির যাত্রা। কালের খবর কুতুবদিয়ার সাবেক ফ্রীডম পার্টির নেতা আওরঙ্গজেবকে আওয়ামী লীগ থেকে বহিষ্কারের দাবিতে মানববন্ধন। কালের খবর সাতক্ষীরায় লোনা পানিতে ‘সোনা’ নষ্ট হচ্ছে মাটির ভৌত গঠন। কালের খবর
রাজধানীর দক্ষিণ যাত্রাবাড়ীর ‘পঞ্চায়েত প্রথা’র গল্প। কালের খবর

রাজধানীর দক্ষিণ যাত্রাবাড়ীর ‘পঞ্চায়েত প্রথা’র গল্প। কালের খবর

এম আই ফারুক , কালের খবর :

পঞ্চায়েত’ শব্দটি বাংলাসহ উত্তর ভারতের সমগ্র অঞ্চলে এক সময় ব্যাপক প্রচলিত ছিল। প্রাচীন ভারতের গ্রামীণ শাসনব্যবস্থার মূল ভিত্তি ছিল পাঁচজন নির্বাচিত বা মনোনীত ব্যক্তিকে নিয়ে গঠিত গ্রামীণ স্বায়ত্তশাসন প্রতিষ্ঠান পঞ্চায়েত। এই প্রতিষ্ঠানের হাতে ন্যস্ত ছিল গ্রামগুলির প্রশাসন, আইন প্রণয়ন ক্ষমতা ও বিচারব্যবস্থা পরিচালনের দায়িত্ব।

মুঘল আমল পর্যন্ত ভারতের গ্রামগুলো এই পঞ্চায়েত ব্যবস্থা দ্বারাই নিয়ন্ত্রিত হত। কিন্তু মুঘল সাম্রাজ্যের পতনের পর পঞ্চায়েত প্রতিষ্ঠান ব্যবস্থাটি বিশেষভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। কালের পরিক্রমায় বাংলাদেশেও এই পঞ্চায়েত প্রথা অনেকটা নিষ্ক্রিয় হয়ে গেছে। এরপরেও কিছু পঞ্চায়েত বা সেই সব সামাজিক ব্যবস্থা বিদ্যমান। যদিও আগের মতো সেইসব কার্যক্রম এখন তার তাদের মাধ্যমে হয় না। গ্রাম্য পটভূমিতে এখনো পঞ্চায়েতের স্রোতধারা মোটামুটি বহমান।

রাজধানীর পুরান ঢাকা কয়েকটি পঞ্চায়েত ব্যবস্থা এখনো টিকে রয়েছে, যেগুলোর বয়স প্রায় ৪/৫ যুগের ওপর। বিশেষ করে রাজধানীর লালবাগ, বংশাল, গেণ্ডারিয়া এবং যাত্রাবাড়ীতে এখনো কয়েকটি পঞ্চায়েত সিস্টেম বা পদ্ধতি রয়েছে। এমনই একটি পঞ্চায়েত রাজধানীর দক্ষিণ যাত্রাবাড়ীর আদর্শ পঞ্চায়েত।

পঞ্চায়েতের সদস্য হতে হলে তিনটি পদ্ধতিতে তারা প্রাথমিক বাছাই সম্পন্ন করে। যিনি অত্র এলাকায় জন্মগ্রহণ করেছেন, বৈবাহিক সূত্রে অথবা যিনি এখানে জায়গা জমি কিনে বাড়িঘর করেছেন। প্রাথমিক যাচাই বাছাই শেষে তাদের পঞ্চায়েত সর্দাররা সিদ্ধান্ত নেন।

যাত্রাবাড়ীতে মোট ৫টি পঞ্চায়েত রয়েছে এর মধ্যে এই আদর্শ পঞ্চায়েত একটি। সম্প্রতি এ পঞ্চায়েতের কমিটি-২০১৯ গঠিত হয়েছে। হাজী নজরুল ইসলামকে প্রধান সরদার করে ২১ সদস্য বিশিষ্ট কমিটি হয়েছে।

অন্যান্য সরদার হলেন- মুজাফ্ফর হোসেন, মুসলেহউদ্দীন আহম্মেদ, ওয়াহিদুজ্জামান ওয়াহিদ, মো. আমির হোসেন, হাজী আনোয়ার হোসেন, আতাউর রহমান ভাসানী, সোহরাব হোসেন, হাজী নাজির উদ্দীন আহম্মেদ, হাফেজ মাও: মো. তাজউদ্দীন, হাজী মো. নুরুল হক, মনির হোসেন, মো. আব্বাছ আলী, আবদুল হক, আনোয়ার হোসেন স্বাধীন, হাজী মো. মাকসুদ, এডভোকেট আফানুর আল মামুন, হাজী আবদুল বাসেদ, হাজী আবদুল গণি, হাজী এজাজুর রহমান, হাজী সাইজুদ্দীন আহাম্মেদ।

সূচনালগ্ন থেকেই এ পঞ্চায়েত বিভিন্ন দাতব্য ও সেবামূলক কর্মকাণ্ড করে আসছে। সবচেয়ে আলোচিত যে উদ্যোগটি গত কয়েকযুগ ধরে তারা করে আসছে তা হল পঞ্চায়েতের মাধ্যমে কোরবানির মাংস বণ্টন। তাহলে একটু বিস্তারিত খুলেই বলা যাক।

এই পঞ্চায়েতের সদস্য বা ‘ঘর’ সংখ্যা হল প্রায় ২২০। প্রতি কোরবানির ঈদে এদের মধ্যে গড়ে ৭০/৮০টি পরিবার কোরবানি দিয়ে থাকে। আর বাকি দেড়শ পরিবার কোনো না কোনো কারণে কোরবানি দিতে পারে না। ঈদের আনন্দে যেন ভাটা না পড়ে তাই তাদেরকেও পঞ্চায়েতের মাধ্যমে সমবণ্টন করে কোরবানির মাংস দেয়া হয়ে থাকে।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, গত কোরবানি ঈদে এ পঞ্চায়েতে প্রায় ৬০টি পরিবার পশু কোরবানি দিয়েছে। তারা তাদের জবাইকৃত পশুর অর্ধেক পঞ্চায়েতের মাঠে দিয়ে যান। আর বাকি অর্ধেক তাদের নিজেদের। এছাড়া সে জবাইকৃত পশুর চামড়াও পঞ্চায়েতে জমা দেন।

এভাবে ৬০টি পরিবারের অর্ধাংশ করে মাংস জমা হওয়ার পর নিজস্ব স্বেচ্ছাসেবক দিয়ে তা কেটে ভাগ করা হয়। অর্থাৎ গোশত দেয় ৬০টি পরিবার। কিন্তু ভাগ হচ্ছে পঞ্চায়েতের ২২০টি পরিবারের মধ্যে। আরেকটি বড় ভাগ দেয়া হয় গরীব ও দুস্থদের মাঝে। অর্থাৎ যিনি কোরবানি দিয়েছেন তিনিও মাংস পান এবং যিনি কোরবানি দেননি তিনিও মাংস পান।

আর পঞ্চায়েতে জবাইকৃত পশুর চামড়াগুলো মাদ্রাসায় দিয়ে দেয়া হয়। আর চামড়া বিক্রি থেকে প্রাপ্ত অর্থের ৫০ ভাগ প্রত্যাবর্তন করে গরীবদের মাঝে বিলিয়ে দেয়া হয়। এছাড়া এলাকার কোনো অমীমাংসিত সিদ্ধান্ত নেয়ার ক্ষেত্রেও পঞ্চায়েত ভূমিকা পালন করে আসছে। এখনও পুরান ঢাকার অনেকের কাছে আস্থার জায়গা এই পঞ্চায়েত।

দৈনিক কালের খবর নিয়মিত পড়ুন এবং বিজ্ঞাপন দিন..

কালের খবর মিডিয়া গ্রুপ লিমিটেডের একটি প্রতিষ্ঠান
Desing & Developed BY ThemesBazar.Com