সোমবার, ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ০৬:১১ পূর্বাহ্ন
কালের খবর রিপোর্ট :
জটিল হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে জীবন মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে থাকা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের শারীরিক অবস্থা ক্রমাগত উন্নতির দিকে বলে জানিয়েছেন দলটির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব-উল আলম হানিফ।তিনি জানান, উপমহাদেশের প্রখ্যাত হৃদরোগ বিশেষজ্ঞ ডা, দেবী শেঠি আসার পর দুপুরে মেডিকেল বোর্ড বসে সিদ্ধান্ত নেবে তাকে বিদেশ নিয়ে চিকিৎসা দেয়া হবে কিনা। তার পরবর্তী চিকিৎসার বিষয়ে করণীয় নির্ধারণ হবে তখনই।
সোমবার বেলা ১১টার পর ওবায়দুল কাদেরের শারীরিক অবস্থার খোঁজ নিতে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে আসেন মাহবুব-উল আলম হানিফ। তিনি মেডিকেল বোর্ডের সদস্যদের সঙ্গে আলাপ করে এ ব্রিফিংয়ে এসব কথা জানান।
মাহবুব-উল আলম হানিফ বলেন, সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরের চিকিৎসায় গঠিত মেডিকেল বোর্ডের সঙ্গে আমি কথা বলেছি। চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, তাকে সুস্থ করতে সর্বোচ্চ চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে। তার চিকিৎসার দায়িত্বে থাকা মেডিকেল বোর্ড মিটিং করে দুপুর ১টার পর বিএসএমএমইউ ভিসি তার সর্বশেষ অবস্থা নিয়ে প্রেস বিফ্র করবেন।
হানিফ বলেন, উপমহাদেশের প্রখ্যাত হৃদরোগ বিশেষজ্ঞ দেবী শেঠি আসছেন দুপুরে। তিনিও এসে তাকে দেখে পরামর্শ দেবেন পরবর্তী করণীয় সম্পর্কে।
এর আগে সকালে আওয়ামী লীগের উপ দফতর সম্পাদক ব্যারিস্টার বিপ্লব বড়ুয়া বলেন, জীবন-মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে থাকা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের অবস্থার উন্নতি হয়েছে। তিনি পুরোপুরি চেতনা ফিরে পেয়েছেন। চিকিৎসকদের ডাকে সাড়া দিতে পারছেন।
চিকিৎসকদের বরাত দিয়ে তিনি জানান, সকালে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের দায়িত্বপ্রাপ্ত চিকিৎসক তাকে জানিয়েছেন- ওবায়দুল কাদেরের শারীরিক অবস্থার যথেষ্ট উন্নতি হয়েছে। তিনি সম্পূর্ণভাবে চেতনা ফিরে পেয়েছেন এবং তিনি চিকিৎসকদের প্রশ্নের জবাব দিতে পারছেন।
শারীরিক অবস্থার উন্নতি হওয়ায় ওবায়দুল কাদেরের লাইফসাপোর্টের যন্ত্রাদি খুলে ফেলা হবে বলে জানিয়েছেন বিপ্লব বড়ুয়া। তিনি চিকিৎসকদের বরাত দিয়ে বলেন, ‘চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, ক্রিটিক্যাল কেয়ার ইউনিটে লাইফসাপোর্টের জন্য যেসব চিকিৎসা সরঞ্জামাদি যুক্ত করা হয়েছিল, তা খুলে ফেলা হবে। সকাল ১০টায় কৃত্রিম শ্বাস-প্রশ্বাসের যন্ত্র খুলে ফেলা হতে পারে।’
ওবায়দুল কাদেরের শারীরিক অবস্থার বর্ণনা দিয়ে বিপ্লব বড়ুয়া জানান, রাতে ওবায়দুল কাদেরের অবস্থার বেশ উন্নতি হয়েছে। চিকিৎসকরা জানিয়েছেন- ওবায়দুল কাদেরের ব্লাড সার্কুলেশন, হার্টবিট এবং রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। তিনি এখনও নিবিড় পর্যবেক্ষণে রয়েছেন। অথচ গতকাল একপর্যায়ে ওবায়দুল কাদেরের রক্তচাপ ৩৫-এ নেমে আসে।
রোববার সকাল সাড়ে ৭টার দিকে হঠাৎ অসুস্থবোধ করলে ওবায়দুল কাদেরকে বিএসএমএমইউর ইনটেনসিভ কেয়ার ইউনিটে (আইসিইউ) নেয়া হয়। সেখান থেকে জরুরি ভিত্তিতে তাকে সিসিইউতে (করোনারি কেয়ার ইউনিট) নিয়ে ভর্তি করা হয়। পরে এনজিওগ্রাম শেষে ওবায়দুল কাদেরের হার্টে তিনটি ব্লক ধরা পড়ার কথা জানান চিকিৎসকরা।
সেতুমন্ত্রীর জনসংযোগ কর্মকর্তা আবু নাছের জানান, সকালে ফজরের নামাজ শেষে হঠাৎ করেই শ্বাস-প্রশ্বাসে সমস্যা অনুভব করেন মন্ত্রী মহোদয়। সঙ্গে সঙ্গে তাকে বঙ্গবন্ধু মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়।
হাসপাতালের আইসিইউতে চিকিৎসকরা তার মেডিকেল চেকআপ করেন। চেকআপ শেষে তাকে দ্রুত এনজিওগ্রাম করার পরামর্শ দেন। পরে এনজিওগ্রাম শেষে চিকিৎসকরা জানান তার হার্টে তিনটি ব্লক ধরা পড়েছে।
ওবায়দুল কাদেরের অবস্থা আশঙ্কাজনক জানিয়ে বিএসএমএমইউর উপ-উপাচার্য মো. শহীদুল্লাহ সিকদার রোববার দুপুরে বলেছিলেন, উনার অবস্থা ক্রিটিক্যাল। আমরা তাকে সর্বোচ্চ চিকিৎসা দেয়ার চেষ্টা করছি। তদুপরি তার পরিবার ও প্রধানমন্ত্রী চাইলে তাকে বিদেশে পাঠানো যেতে পারে।
ওবায়দুল কাদেরের চিকিৎসায় বিএসএমএমইউয়ের হৃদরোগ বিভাগের পক্ষ থেকে মেডিকেল বোর্ড গঠন করা হয়েছে। বিএসএমএমইউ কার্ডিওলজি বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ডা. সৈয়দ আলী আহসানের নেতৃত্বে মেডিকেল বোর্ডে রয়েছেন প্রিভেনটিভ অ্যান্ড রিহ্যাবিলিটেশন কার্ডিওলজি বিভাগের প্রধান অধ্যাপক ডা. হারিসুল হক, অধ্যাপক ডা. চৌধুরী মেশকাত আহমেদ চৌধুরী, অ্যানেস্থেশিয়া বিভাগের অধ্যাপক ডা. দেবব্রত ভৌমিক, অধ্যাপক ডা. একেএম আক্তারুজ্জামান, কার্ডিও সার্জারি বিভাগের অধ্যাপক ডা. মো. রেজওয়ানুল হক, অধ্যাপক অসিত বরণ অধিকারী, জাতীয় হৃদরোগ ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালের সার্জারি বিভাগের অধ্যাপক ডা. কামরুল হাসান, ডা. তানিয়া সাজ্জাদ প্রমুখ।
রোববার বিকাল সাড়ে ৩টার দিকে ওবায়দুল কাদেরকে দেখতে বিএসএমএমইউতে যান প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা।এ সময় তিনি ওবায়দুল কাদেরের শয্যার পাশে গিয়ে কাদের কাদের বলে ডাক দেন। এ সময় ওবায়দুল কাদের দুই-তিন সেকেন্ডের জন্য চোখের পাতা নাড়েন। ওবায়দুল কাদেরকে দেশের বাইরে নেয়া হবে কিনা— নেতারা জানতে চাইলে সেই সময় শেখ হাসিনা বলেন, ‘আপাতত দেশের বাইরে নেয়ার দরকার নেই। এখানেই চিকিৎসা চলবে।’ প্রায় আধা ঘণ্টা হাসপাতালে ছিলেন শেখ হাসিনা।
পরে বিকাল ৪টার দিকে রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদও তাকে দেখতে যান বিএসএমএমইউতে।