বৃহস্পতিবার, ২৬ ডিসেম্বর ২০২৪, ০৭:৩৪ পূর্বাহ্ন
কালের খবর প্রতিবেদক :
: দুর্নীতি মামলায় ৫ বছরের সাজা মাথায় নিয়ে কারাগারে যাওয়ার পর থেকে দীর্ঘ আইনী লড়াইয়ে বেশ কয়েকটি মামলায় একে একে জামিন হয়েছে বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার। এরইমধ্যে সাবেক এই প্রধানমন্ত্রীকে দুটি ঈদ পার করতে হয়েছে কারাগারে। আর কয়েকমাস পরই জাতীয় সংসদ নির্বাচন। বিএনপি নেতাদের অভিযোগ সরকার খালেদা জিয়াকে কারাগারে রেখে নির্বাচনী বৈতরনী পার হতে চাচ্ছে।
কারাগারে যাওয়ার পর পর জামিনে মুক্তির বিষয়ে আশা থাকলেও ক্রমেই তা ক্ষীণ হয়ে আসছে। তবে উচ্চ আদালতের নির্দেশের পর কারাগার থেকে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি করা হয়েছে খালেদা জিয়াকে। আপাতত চিকিৎসার জন্য সেখানেই থাকছেন তিনি। যদিও নির্বাচনের আগে তার মুক্তি নিয়ে নেতা-কর্মীদের মাঝে তৈরি হয়েছে হতাশা। তাই কোন রকম অস্বাভাবিক পরিস্থিতি তৈরি না হলে আগামী একাদশ নির্বাচনের আগে বিএনপির চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া মুক্তি পাচ্ছেন না বলেই জোর আলোচনা শুনা যাচ্ছে।
জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় খালেদা জিয়াকে গত ৮ ফেব্রুয়ারি ৫ বছরের সাজা দেন বিশেষ জজ আদালত। এরপর ১২ মার্চ হাইকোর্ট এ মামলায় তাকে ৪ মাসের জামিন দিয়েছিলেন। পরে সরকার ও দুর্নীতি দমন কমিশন আপিল বিভাগে গেলে দীর্ঘ শুনানি শেষে ১৬ মে জামিন বহাল রাখা হয়। পরবর্তীতে হাইকোর্ট তার জামিনের মেয়াদ আট দফা বৃদ্ধি করেন। সর্বশেষ ৮ অক্টোবর পর্যন্ত বৃদ্ধি করা হয়েছে তার জামিন। বর্তমানে এ মামলায় বিচারিক আদালতের সাজার বিরুদ্ধে খালেদা জিয়ার করা আপিলের শুনানি চলছে। এই মামলার আপিল আগামী ৩১ অক্টোবরের মধ্যে নিষ্পত্তি করতে সর্বোচ্চ আদালতের নির্দেশনা রয়েছে।
অন্যদিকে জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট মামলা পুরাতন কেন্দ্রী কারাগারের বিশেষ জজ আদালত-৫ এ যুক্তি-তর্ক উপস্থাপনের পর্যায়ে রয়েছে। মামলাটির কার্যক্রম বকশী বাজারের আলীয়া মাদ্রাসার মাঠ থেকে কারাগারে স্থানান্তর করার পর একদিন হাজির হয়েছিলেন খালেদা জিয়া। তবে তিনি অসুস্থতার কারনে হাজির হতে না চাইলে তাকে ছাড়াই মামলার কার্যক্রম পরিচালনার আদেশ দিয়েছেন আদালত।
যদিও এরইমধ্যে ওই আদেশের বিরুদ্ধে হাইকোর্টে আবেদন করেছেন তার আইনজীবীরা। সেইসঙ্গে এই মামলায় খালেদা জিয়ার জামিন থাকবে কি না এ বিষয়ে আদেশের জন্য আগামী ১৪ অক্টোবর দিন ধার্য করেছেন আদালত। এছাড়া খালেদা জিয়ার আইনজীবীরা সহযোগীতা না করার অভিযোগ তুলে মামলাটিতে রায়ের তারিখ নির্ধারণের জন্য আবেদন করেছেন দুদকের আইনজীবী মোশারফ হোসেন কাজল।
এদিকে কুমিল্লার চৌদ্দগ্রামের হত্যা মামলায় খালেদা জিয়ার জামিন আবেদন ৩ অক্টোব নামঞ্জুর করেছেন আদালত। এখন জেলা ও দায়রা জজ আদালতে জামিন চাইবেন তার আইনজীবীরা। সেখানে আবারও নামঞ্জুর হলে হাইকোর্টে আবেদন করা যাবে। এছাড়া কুমিল্লায় নাশকতার অভিযোগে বিশেষ ক্ষমতা আইনের মামলায় গত ১৩ সেপ্টেম্বর জামিন নামঞ্জুর হওয়ার পর হাইকোর্টে আবেদন করা হয়েছে। যা এখন শুনানি চলছে।
এদিকে খালেদা জিয়ার মুক্তি প্রসঙ্গে গত ৩ অক্টোবর আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব উল আলম হানিফ বলেছেন, বিএনপির দাবি অনুযায়ী জাতীয় নির্বাচনের তফসিলের আগে খালেদা জিয়ার মুক্তি সম্ভব নয়, তফসিলের পরেও না। মুক্তির দুটি পথ খোলা আছে। প্রথমত, আদালতের মাধ্যমে আইনি প্রক্রিয়ায় এবং দ্বিতীয়ত, নিজের অপরাধ স্বীকার করে রাষ্ট্রপতির কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করা। এর বাইরে কোনো পথ নেই বলে জানান তিনি।
এছাড়া খালেদা জিয়ার মুক্তির বিষয়ে জানতে চাইলে ব্যারিস্টার কায়সার কামাল এ প্রতিবেদককে বলেন, খালেদা জিয়াকে অন্যায় এবং অবৈধভাবে যে মামলায় সাজা দেওয়া হয়েছে সেটিতে গত ১২ মার্চ জামিন পেয়েছেন তিনি। আর সে জামিনের প্রেক্ষিতেই তার মুক্তি পাওয়ার কথা। কিন্তু সরকারের অন্যায় হস্তক্ষেপের মাধ্যমে জামিন প্রলম্বিত করা হচ্ছে। জামিনে মুক্ত হয়েই খালেদা জিয়া অন্যান্য মামলাগুলোতে হাজিরা দিতে পারতেন। সবগুলো মামলাই জামিন যোগ্য। এই পরিস্থিতিতে তাকে আটক রাখাটা সম্পূর্ণ অবৈধ।
কায়সার কামাল বলেন, উনি (খালেদা জিয়া) সাবেক প্রধানমন্ত্রী এবং একটি বড় দলের নেত্রী হিসেবে আটক রাখা উচৎ হচ্ছেনা। কারণ সেসব মামলার কোনটিতেই এফআইআরএ তার নাম ছিলনা। আর মামলাগুলোর আসামিরা সবাই জামিনে মুক্ত রয়েছে। আমরা মনে করে আগামী জাতীয় নির্বাচনকে সামনে রেখে সরকার আইনের কুট কৌশলের আশ্রয় নিয়ে তাকে আটকে রেখেছে। এটা রাজনৈতিক ষড়যন্ত্রের অংশ। আইনগতভাবেই মুক্ত হওয়ার উপাদান থাকা সত্ত্বেও কেবল সরকারের হস্তক্ষেপের কারনে তিনি মুক্তি পাচ্ছেননা বলে জানান এই আইনজীবী।