বৃহস্পতিবার, ২৬ ডিসেম্বর ২০২৪, ০৯:৩৩ অপরাহ্ন
এ কে এম রুহুল আমিন, কালের খবর :
সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির নির্বাচনে নিরঙ্কুশ বিজয় পেয়েছেন বিএনপি-জামায়াত সমর্থিত (নীল প্যানেল) প্রার্থীরা। নির্বাচনে সভাপতি, সম্পাদকসহ ১০টি পদে জয় পেয়েছে বিএনপি-জামায়াত সমর্থিত জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ঐক্যপ্যানেল প্রার্থীরা। অন্যদিকে আওয়ামী লীগ সমর্থিত আইনজীবীদের মোর্চা সম্মিলিত আইনজীবী সমন্বয় পরিষদ (সাদা প্যানেল) সমর্থিত প্রার্থীরা ৪টি পদে জয় পেয়েছেন। বুধ ও বৃহস্পতিবার দুই দিনব্যাপী ভোট গ্রহণ শেষে গতকাল সকাল সাড়ে আটটার দিকে ফলাফল ঘোষণা করা হয়।
এবারের নির্বাচনে সভাপতি পদে নীল প্যানেলের প্রার্থী জয়নুল আবেদীন পেয়েছেন ২ হাজার ৩৬৯ ভোট। তাঁর প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী ইউসুফ হোসেন হুমায়ুন পেয়েছেন ২ হাজার ৩১৫ ভোট। জয়নুল আবেদীন তার প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীর চেয়ে ৫৪ ভোট বেশি পেয়ে নির্বাচিত হয়েছেন। সম্পাদক পদে নীল প্যানেলের প্রার্থী এএম মাহবুব উদ্দিন খোকন পেয়েছেন ২ হাজার ৬১৬ ভোট। তাঁর প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী সাদা প্যানেলের শেখ মো. মোরশেদ পেয়েছেন ২ হাজার ১৭৫ ভোট। মাহবুব উদ্দিন খোকন ৪৪১ ভোট বেশি পেয়ে নির্বাচিত হয়েছেন। এ নিয়ে টানা দ্বিতীয় মেয়াদে সভাপতি হলেন জয়নুল আবেদীন। অন্যদিকে টানা ষষ্ঠবারের মতো সম্পাদক নির্বাচিত হলেন মাহবুব উদ্দিন খোকন। নির্বাচনে সহসভাপতির দুটি পদে জয় পেয়েছেন নীল প্যানেলের প্রার্থী মো. গোলাম মোস্তফা ও মো. গোলাম রহমান ভূঁইয়া। কোষাধ্যক্ষ পদে নির্বাচিত হয়েছেন নীল প্যানেলের প্রার্থী নাসরিন আক্তার। সহ-সম্পাদকের দুটি পদের মধ্যে একটিতে জয় পেয়েছেন নীল প্যানেলের প্রার্থী কাজী মোহাম্মদ জয়নাল আবেদীন। সহ-সম্পাদকের অন্য পদে জয় পেয়েছেন সাদা প্যানেলের প্রার্থী মো. আবদুর রাজ্জাক। সাতটি সদস্য পদের মধ্যে তিনটি সদস্য পদে বিজয়ী হয়েছেন সাদা প্যানেলের তিন প্রার্থী। তাঁরা হলেন- আশরাফুল হাদী, শাহানা পারভীন ও শেখ মো. মাজু মিয়া। অন্য চারটি সদস্য পদে বিজয়ী হয়েছেন নীল প্যানেলের চারজন প্রার্থী। তাঁরা হলেন- মাহফুজ বিন ইউসুফ, মো. আহসান উল্লাহ, মো. শফিউল আলম মাহমুদ ও মো. মেহেদি হাসান। নির্বাচিত এই কার্যনির্বাহী কমিটি আগামী এক বছর দেশের শীর্ষ আদালতের আইনজীবী সমিতির নেতৃত্ব দেবে।
সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতি নির্বাচনে (২০১৮-২০১৯ মেয়াদে) সভাপতি একটি, সহসভাপতি দুটি, সম্পাদক একটি, কোষাধ্যক্ষ একটি, সহ-সম্পাদক দুটি, সদস্য সাতটি পদসহ মোট ১৪টি পদে এক বছর মেয়াদের জন্য এই নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। এতে সাদা ও নীল প্যানেলের ২৮ জন ও স্বতন্ত্র হিসেবে ৫ জনসহ মোট ৩৩ জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন। স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে সভাপতি পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছিলেন আইনজীবী ইউনুছ আলী আকন্দ ও শাহ খসরুজ্জামান। সহসভাপতি পদে মো. আব্দুল জব্বার ভূঁইয়া, সম্পাদক পদে মোহাম্মদ আবুল বাসার ও সদস্য হিসেবে তাপস কুমার দাস প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন। তবে, স্বতন্ত্র ৫ জন প্রার্থীর কেউই জয়ের দেখা পাননি। গত বুধ ও বৃহস্পতিবার (২১ ও ২২শে মার্চ) দুই দিন ব্যাপী সুপ্রিম কোর্টে ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হয়। বৃহস্পতিবার বিকাল ৫টায় ভোট গ্রহণ শেষে রাতে ভোট গণনা শুরু হয়। গতকাল সকাল সাড়ে আটটার দিকে নির্বাচন উপকমিটির আহ্বায়ক এ ওয়াই মসিউজ্জামান সমিতির দক্ষিণ হলে এই প্রাথমিক ফলাফল ঘোষণা করেন। দুই দিনের নির্বাচনে প্রায় ৪ হাজার ৮৬৫ ভোট পড়ে। ভোটার সংখ্যা ছিল ৬ হাজার ১৫২।
এদিকে সুপ্রিম কোর্ট বার অ্যাসোসিয়েশন নির্বাচনের হাওয়া উল্টানোর জন্য সরকারের প্রভাবশালী নেতারা চেষ্টা করেছিল বলে অভিযোগ করেছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ও সুপ্রিম কোর্টের সিনিয়র আইনজীবী ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ। গতকাল জাতীয় প্রেস ক্লাবের ভিআইপি লাউঞ্জে ‘জিয়া নাগরিক ফোরাম’ আয়োজিত এক আলোচনা সভায় এ অভিযোগ করেন তিনি। মওদুদ আহমদ বলেন, সরকারের অনেক প্রভাবশালী নেতারা চেষ্টা করেছেন সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির নির্বাচনের হাওয়া উল্টাতে এবং জয়লাভ করতে। কিন্তু তারপরও তাঁরা পারেননি। সুপ্রিম কোর্ট বারের নির্বাচন বিএনপি ও আওয়ামী লীগের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ছিল উল্লেখ করে মওদুদ বলেন, সুপ্রিম কোর্ট বার নির্বাচনের মাধ্যমে দেশের জনমতের প্রতিফলন ঘটেছে। মানুষ কি ভাবছে তা পরিষ্কার হয়েছে। কারণ, এখানে অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন হয়েছে। উৎসবের মধ্য দিয়ে নির্বাচন হয়েছে। তিনি বলেন, আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন যদি এমন উৎসবপূর্ণ ও সুষ্ঠু হয় তাহলে বিএনপির সঙ্গে আওয়ামী লীগের ভোটের অনুপাত হবে ৭৫ ও ২৫ শতাংশ। এটাই বাস্তবতা। সরকার ২৫ শতাংশের বেশি ভোট পাবে না।
কালের খবর -/২৪/৩/১৮