মঙ্গলবার, ২৪ ডিসেম্বর ২০২৪, ০৬:০৬ পূর্বাহ্ন
নারায়ণগঞ্জের সিদ্ধিরগঞ্জে অবৈধ গ্যাস সংযোগ দিয়ে মাসে কোটি কোটি টাকা বিল আদায় করছে দালালরা। প্রতিটি বাড়ির অবৈধ চুলা হিসেব করে তারা আদায় করছে বিল। এককালীন মোটা অঙ্কের টাকা নিয়ে আবাসিক বহুতল ভবনসহ বিভিন্ন বাড়িতে অবৈধ গ্যাস সংযোগ ও বিল নিচ্ছে স্থানীয় ওয়ার্ড কাউন্সিলরের লোকজন বলে অভিযোগ উঠেছে।
বৃহস্পতিবার (৯ মে) কদমতলী পশ্চিমপাড়া এলাকায় দুপুর ১২টা থেকে বিকেল সাড়ে ৪টা পর্যন্ত নারায়ণগঞ্জ তিতাস গ্যাস কর্তৃপক্ষের অভিযানে বেরিয়ে এসেছে এমন চাঞ্চল্যকর তথ্য। অভিযানে ৪৮টি বাড়ির অবৈধ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করা হয়েছে।
অভিযানের নেতৃত্বে থাকা তিতাস গ্যাসের নারায়ণগঞ্জ সদর উপজেলা শাখার ম্যানেজার প্রকৌশলী মোস্তাক মাসুদ মোহাম্মদ ইমরান বলেন, অবৈধ গ্যাস সংযোগ বিচ্ছিন্নে অভিযান চালানোর সময় কদমতলী পশ্চিমপাড়া এলাকার বিভিন্ন বাড়ির মালিকদের মাধ্যমে বিস্ময়কর তথ্য জানতে পারি। প্রত্যেক বাড়ির মালিকের কাছ থেকে লক্ষাধিক করে টাকা নিয়ে অবৈধ গ্যাস লাইন সংযোগ দিয়েছে কিছু দালাল চক্র। শুধু তাই নয় তারা আমাদের নাম ভাঙিয়ে প্রত্যেক বাড়িতে কয়টি চুলা ব্যবহার করা হয়, সে হিসেব করে মাসে মাসে বিল নিচ্ছে। প্রাথমিকভাবে জানতে পেরেছি,তারা স্থানীয় ওয়ার্ড কাউন্সিলরের লোক।
অবৈধ গ্যাস সংযোগ দিয়ে কারা বিল আদায় করছে এমন প্রশ্নের জবাবে মোস্তাক মাসুদ মোহাম্মদ ইমরান বলেন, প্রাথমিকভাবে বাড়ির মালিকদের মাধ্যমে জানতে পেরেছি, কদমতলী এলাকার জহির, তুহিন, জীবন, আলমগীর, সাইদুর রহমান সাজু, খায়ের, সুমন, দুলাল ও বাবুল ওরফে গ্যাস বাবুল এসব সংযোগ দিয়ে বিল নিচ্ছেন। অভিযানে অবৈধ গ্যাস সংযোগ বিচ্ছিন্ন করা ৪৮টি বাড়ির মালিক স্বীকার করেছেন তারা প্রতিমাসে বিল নেয়। একই এলাকায় আরও বহু বাড়িতে অবৈধ সংযোগ রয়েছে যা পর্যায়ক্রমে অভিযান চালিয়ে বিচ্ছিন্ন করা হবে।
অবৈধ গ্যাস লাইন ও বিল আদায়কারীদের বিরুদ্ধে কোনো আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে কিনা জানতে চাইলে তিতাসের এ কর্মকর্তা বলেন, বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে অবগত করা হবে। অবৈধভাবে গ্যাস ব্যবহার থেকে সবাইকে বিরত থাকতে এলাকায় মাইকিং করা হবে। যদি বিরত না হয়, তাহলে সমস্ত এলাকার গ্যাস সরবরাহ বন্ধ করে দেওয়া হবে।
অবৈধদের কারণে বৈধ গ্রাহকরা কেন গ্যাস বঞ্চিত হবে এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, অভিযান চালাতে গিয়ে দেখা গেছে, কদমতলী পশ্চিমপাড়া এলাকায় শতকরা মাত্র ৫টি বাড়িতে বৈধ গ্যাস রয়েছে। তারাও অনুমোদনের চেয়ে বেশি চুলা ব্যবহার করছে এবং এক দুই বছর ধরে বিল দিচ্ছে না। তাই এমন বৈধ গ্রাহকের জন্য ৯৫ শতাংশ অবৈধদের সুবিধা দিতে পারি না। অবৈধ সংযোগ চক্রের সঙ্গে তিতাস অফিসের কোনো লোক জড়িত থাকার প্রমাণ পেলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করার কথাও বলেন এ কর্মকর্তা।
তিতাসের এ কর্মকর্তার দেওয়া তথ্য মতে এলাকায় হাজার হাজার অবৈধ চুলা ব্যবহার করা হচ্ছে। চুলা হিসেব করে তিতাস কর্তৃপক্ষের অজান্তে প্রতি বাড়ির মালিকের কাছ থেকে মাসে ১০ থেকে ৩০ হাজার টাকা করে অন্তত কোটি টাকা বিল নিচ্ছে চক্রটি।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক বাড়ির মালিক জানান, তিতাস কর্তৃপক্ষ অভিযান চালিয়ে অবৈধ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে চলে যাওয়ার পর দালালরা ২০-৩০ হাজার টাকা নিয়ে স্থানীয় মিস্ত্রি দিয়ে রাতের আঁধারে আবার সংযোগ দিয়ে দেয়।
এসব বিষয়ে জানতে অভিযুক্তদের সঙ্গে যোগাযোগ করার চেষ্টা করলেও তাদের পাওয়া যায়নি। তাদের এসব গোপন তথ্য ফাঁস হয়ে পড়ায় নিজেদের আড়াল করে রেখেছে তারা। কয়েকজনের বাড়িতে গিয়েও পাওয়া যায়নি। মোবাইলে একাধিকবার কল দিলেও রিসিভ হয়নি।
নারায়ণয়গঞ্জ সিটি করপোরেশনের ৭ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর মিজানুর রহমান খান রিপন বলেন, এ অপকর্মের সঙ্গে জড়িত যাদের নাম উঠে এসেছে তাদেরকে আমি চিনি না। আমার কোনো লোক এসব কাজে জড়িত নয়।