সোমবার, ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ০৫:২১ অপরাহ্ন
কালের খবর ডেস্ক : এত কম টাকা দিলা তাও আবার পুরনো-ছেঁড়া। ধুর মিয়া কী দেন না দেন বুঝি না। টেকা দিবেনই যেহেতু ভালো টেকা দেন।’ স্বভাবসুলভ ভঙ্গিতে এভাবেই কথাগুলো বললেন পুলিশের উপপরিদর্শক (এসআই) আবদুল হক। এক হাতে কয়েকটি কাগজ আরেক হাতে টাকা নিয়ে কথা বলছিলেন তিনি। থানার ভেতরে বসে ঘুষ গ্রহণের এমন চিত্র গোপনে ধারণ করা হয়। এক ব্যক্তির কাছ থেকে ঘুষ নিচ্ছিলেন। ঘুষ প্রদানকারী ওই ব্যক্তি এলাকায় মাদক ব্যবসাসহ নানা অপরাধে যুক্ত বলে জানিয়েছেন সাধারণ মানুষ।
অনুসন্ধানে জানা গেছে, সীমান্তবর্তী জেলা হওয়ায় কুমিল্লা মাদকের অন্যতম প্রবেশদ্বার। সীমান্ত এলাকাসহ মাদক ব্যবসায় জড়িয়ে পড়েছেন অনেকেই। পুলিশকে ‘ম্যানেজ’ করেই বেশিরভাগ মাদক পৌঁছে যাচ্ছে ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে। এলাকার অনেক সাধারণ মানুষকেই তুলে নিয়ে টাকা না দিলে নির্যাতন চালানোর অভিযোগ পাওয়া গেছে পুলিশের বিরুদ্ধে। কাক্সিক্ষত চাঁদা না পেলে ‘মাদক মামলায় ফাঁসানো’র ভয় দেখানো হয়। নিরীহ লোকজন ধরে এনে চাঁদাবাজি এবং মাদক ব্যবসায়ীদের সঙ্গে দেনদরবারের জন্য গড়ে তোলা হয়েছে একটি শক্তিশালী সিন্ডিকেট। এই সিন্ডিকেটের প্রায় সবাই স্থানীয়। পুলিশের সোর্স হিসেবেই তারা বেশি পরিচিত।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, দেলোয়ার হোসেন ওরফে দেলু নানা অপরাধমূলক কর্মকা-ে যুক্ত। তার নামে একাধিক মামলাও রয়েছে। অথচ পুলিশের সঙ্গেই ঘনিষ্ঠ যোগাযোগ তার। নিয়মিত যাতায়াত করেন কুমিল্লা কোতোয়ালি থানার আওতাধীন চকবাজার পুলিশ ফাঁড়িতে। ওই ফাঁড়ির দায়িত্বে ছিলেন এসআই আবদুল হক। যিনি সাম্প্রতিক সময়ে চট্টগ্রামে বদলি হয়েছেন। দেলোয়ার হোসেনের কাছ থেকেই ঘুষ গ্রহণ করেন এসআই আবদুল হক।
ওই ঘুষ গ্রহণের একটি ভিডিওচিত্র । সেখানে দেখা যায়, ফাঁড়িতে বসে অফিসের কাজ করছিলেন এসআই আবদুল হক। সেখানে ছিলেন দেলোয়ারসহ আরও কয়েকজন। কথা বলার এক পর্যায়ে কাগজপত্র হাতে উঠে দাঁড়ান আবদুল হক। এ সময় দেলোয়ার হোসেন তার হাতে ৫০০ টাকার বেশকিছু নোট গুঁজে দেন। টাকা গুনে দেখার সময় পুরনো ও ছেঁড়া টাকা পেয়ে ক্ষেপে যান। চরম বিরক্তি প্রকাশ করেন। চোখে চশমা, পরনে একটি চেক শার্টে ছিলেন পুলিশ কর্মকর্তা। অবস্থা দেখে দেলোয়ার হোসেন বলতে থাকেন, স্যার এইটা আপাতত রাখেন। পরে ভালো টাকাই দেব।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, এসআই আবদুল হক মাদক ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে টাকা চাঁদা তুলতেন সোর্সের মাধ্যমে। সেই টাকার ভাগ পুলিশের অসাধু শীর্ষ এক কর্মকর্তার পকেটে যেত। থানা পুলিশকেও কমিশন দিতে হতো।
ঘুষ গ্রহণের বিষয়ে জানতে চাইলে আবদুল হক দাবি করেন, তিনি ঘুষ খান না। ঘুষ গ্রহণের ভিডিওচিত্রে আপনাকে দেখা যাচ্ছে জানানো হলে তিনি বলেন, ‘ভাই আমি কারো কাছ থেকে ঘুষ খাই নাই। আপনি মনে হয় ভুল দেখেছেন।’
কোতোয়ালি থানার ওসি মোহাম্মদ আবু সালাম মিয়া এ ব্যাপারে কোনো মন্তব্য করতে চাননি। তবে ঘুষ গ্রহণের বিষয়ে জানতে চাইলে কুমিল্লা জেলার পুলিশ সুপার মো. শাহ আবিদ হোসেন বলেন, যে কোনো ধরনের দুর্নীতির বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স। এমন তথ্য প্রমাণ থাকলে আমাকে দিন, কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।