মঙ্গলবার, ২৪ ডিসেম্বর ২০২৪, ০৮:০৯ অপরাহ্ন
এম আই ফারুক আহমেদ, কালের খবর, ঢাকা :
রাজধানীর দক্ষিণ সিটির বৃহত্তর ডেমরাসহ আশপাশের এলাকায় গ্যাসের সংকট তীব্র আকার ধারণ করেছে। চাহিদার ন্যূনতম গ্যাস না পাওয়ায় নানাভাবে ব্যাহত হচ্ছে স্থানীয়দের জীবন-যাপন। নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে তাদের ব্যবসা-বাণিজ্যেও। সংযোগ থাকার পরেও গ্যাসের সরবরাহ না থাকায় আলাদা করে সিলিন্ডার কিনতে হচ্ছে অনেক গ্রাহককে। এভাবে ভুগতে থাকা গ্রাহকরা এ সংকটের স্থায়ী সমাধানের দাবি জানিয়েছে। এ দাবিতে মানববন্ধনও করেছেন তারা। তিতাস বলছে, চাহিদার পাশাপাশি অবৈধ গ্রাহকের সংখ্যা বেড়ে যাওয়ায় সংকট তীব্র হয়েছে।
ডেমরা ও আশপাশের এলাকার বাসিন্দাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) ৬২ থেকে ৭৫ নম্বর ওয়ার্ড এলাকায় গ্যাসের সংকট রয়েছে। ১ থেকে ৫ নম্বর ওয়ার্ডেও সমস্যা প্রকট। ৬২ নম্বর ওয়ার্ডের গোবিন্দপুর, যাত্রাবাড়ী, কাজলা, বাঁশেরপুল, মাতুয়াইলের মাদ্রাসা বাজার, মোমেনবাগ, মদিনাবাগ, শাহজালাল রোড, কোনাপাড়া, ডগাইর, বাঁশেরপুল, বড়ভাঙ্গা, কোদালদোয়া এলাকা, পূর্ব-পশ্চিম বক্সনগর, বামৈল, আমুলিয়া মেন্দিপুর, সালামবাগ, পূর্ব ডগাইর নয়াপাড়া, কোনাপাড়া সিরাজউদ্দীন রোড, খিলগাঁও ও রামপুরা এলাকায় গ্যাসের সংকট তীব্র হয়েছে। একই পরিস্থিতি সবুজবাগ থানাধীন নাসিরাবাদ, মান্ডা, দক্ষিণগাঁও, নন্দিপাড়া, মাদারটেক, বাসাবো, গোড়ান, বনশ্রী ও আফতাবনগরে।
ভুক্তভোগীরা জানান, অনেক এলাকায় এখন দিনে কিংবা রাতে- কখনোই গ্যাস থাকে না। কিছু এলাকায় ভোর ৪টায় গ্যাসের দেখা মিললেও ৬টা বাজতেই চলে যায়। আবার রাত ১০টার দিকে এসে ঘণ্টা দুয়েক থাকে।
আবাসিকে নিরবচ্ছিন্ন গ্যাসের দাবিতে গত ২ ডিসেম্বর পশ্চিম টেংরা এলাকার হাজীনগরে ডেমরা-যাত্রাবাড়ী সড়কে মানববন্ধন করেন স্থানীয়রা।
তিতাস গ্যাস আওতাভুক্ত এলাকায় প্রতিদিন গ্যাসের চাহিদা অন্তত ২২০০ মিলিয়ন ঘটনফুট। বর্তমানে সরবরাহ হয় ১৬০০ থেকে ১৯০০ মিলিয়ন ঘটনফুট। আবার ২৫ থেকে ৩০ বছর আগে স্থাপন করা ১ থেকে ২ ইঞ্চি গ্যাসের বিতরণ পাইপ এখন চাহিদার তুলনায় যথাযোগ্য নয়।
মান্ডা এলাকার বাসিন্দা বীর মুক্তিযোদ্ধা এসএম মাহাবুবুল আলম বলেন, ‘জীবনের কষ্টার্জিত সঞ্চয় ও আয় দিয়ে বহুতল ভবন করেছি। কিন্তু গ্যাস সংকটের কারণে ভাড়াটিয়ারা বাড়ি ছেড়ে চলে যাচ্ছেন।’
মাদারটেক এলাকার বাসিন্দা জয়নাল আবেদিন বলেন, ‘সকাল থেকে রাত পর্যন্ত এই শীতে গ্যাস থাকছে না। কয়েক বছর এসব নিয়ে কথা বলতে বলতে অতিষ্ঠ হয়ে একটা আলাদা চুলা ও সিলিন্ডার কিনেছি বাসায়। শীত এলে গরম পানি করে খাওয়ার গ্যাসও থাকে না। সকালে স্কুলে না খেয়ে যেতে হয় বাচ্চাদের। বাসায় এসেও খাবার খেতে পারি না, এভাবে আর কত দিন চলা যায়!’
৬৬ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর আব্দুল মতিন সাউদ ও ৬৮ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর মাহমুদুল হাসান বলেন, মাসে মাসে গ্যাস বিল দিয়েও এলাকার ভাড়াটিয়াদের কষ্ট দূর হচ্ছে না। তিতাসে বার বার অভিযোগ জানালেও সমাধান হচ্ছে না।
তিতাস গ্যাসের জনসংযোগ বিভাগের ব্যবস্থাপক মো. আল আমিন বলেন, ‘আগের তুলনায় চাহিদা বেশি। অবৈধ গ্রাহকও বেড়েছে। তবে সরকারিভাবে গ্যাসের নতুন নতুন উৎস খোঁজা হচ্ছে। নতুন উৎস পেলে সমস্যা অনেকটা কমে আসতে পারে। আর খোঁজখবর নিয়ে খুব শিগগির বাসাবাড়ির সমস্যা সমাধান করা হবে।’