মঙ্গলবার, ২৪ ডিসেম্বর ২০২৪, ১১:১১ অপরাহ্ন
এম আই ফারুক, ডেমরা, (ঢাকা ) :
রাজধানীর ডেমরায় ড্রেনেজ ব্যবস্থাসহ সড়ক উন্নয়নে ঢাকা সড়ক বিভাগের ধীরগতির কাজে মানুষের ভোগান্তি চরম আকার ধারণ করেছে বলে অভিযোগ উঠেছে। ডেমরার স্টাফ কোয়ার্টার এলাকার অবস্থা আরও গুরুতর।এখানকার মার্কেটগুলোর সামনে ড্রেনেজ ব্যবস্থার উন্নয়ন কাজ চলছে চরম ধীরগতিতে। এ কাজের জন্য গত সাত-আট মাস ধরে বহুতল মার্কেটগুলোর সামনে মাটি কেটে বড় বড় গর্ত করে রেখেছে ঢাকা সড়ক বিভাগ। এতে ক্রেতা-সাধারণ মার্কেটের দোকান-পাটে প্রবেশ করতে পারছে না। তাই ব্যবসায়ীরা ভারি লোকসান গুনছেন বলে জানিয়েছেন।
তা ছাড়া সড়ক বিভাগের চরম খাম-খেয়ালিপনায় এখানে গত এক বছর ধরেই মানুষের স্বাভাবিক চলাচল মারাত্মকভাবে ব্যাহত হচ্ছে বলেও অভিযোগ রয়েছে। এদিকে মার্কেট ও দোকান-পাটগুলোতে চলাচলের জন্য ঝুঁকি নিয়ে বাঁশের সাঁকোতে ভরসা করে চলাচল করছেন মানুষ। এ ছাড়া এখানে চলাচলকারী লাখো মানুষের ভোগান্তি বেড়েছে কয়েকগুণ।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, ডেমরা-যাত্রাবাড়ী সড়কের উন্নয়নকাজ ১৮ মাস মেয়াদে সম্পন্ন করার জন্য ৩৩২ কোটি টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। প্রায় ১৪ মাস আগে শুরু হয়েছে ৫.৫ কিলোমিটার ডেমরা-যাত্রাবাড়ী সড়কের প্রধান চার লেনসহ দুটি সার্ভিস লেন উন্নয়নকাজ। এর সঙ্গে যোগ হয়েছে স্টাফ কোয়ার্টার মোড় থেকে ডেমরা-রামপুরা সড়কের দুপাশে ড্রেনেজব্যবস্থা রেখে ২২৫ ফুট সড়ক উন্নয়নকাজ। ওই দুই সড়কের উন্নয়নকাজের ধীরগতিতে বর্তমানে সড়কটির কাজ শেষ হয়েছে মাত্র ৫০ শতাংশ।
সরেজমিন দেখা গেছে, ডেমরা-রামপুরা সড়কের পাশে রয়েছে চারটি বহুতল ভবন মার্কেট। আর গত এক বছর আগেই শুরু হয়েছে এ সড়কের উন্নয়ন কাজ। বর্তমানে সড়কের পূর্ব পাশে ড্রেনেজ ব্যবস্থার উন্নয়ন কাজ চলমান রয়েছে। নতুনভাবে এখানকার ৩টি মার্কেটের সামনে মাটি কেটে বড় বড় গর্ত করে উন্নয়ন করা হচ্ছে ড্রেনেজ ব্যবস্থার।
এ ক্ষেত্রে তারা গত ৫-৬ মাস আগে থেকেই মাটি খুঁড়ে বড় বড় গর্ত করে রেখেছে বলে মার্কেটে ক্রেতা-সাধারণ আসতে পারছেন না।
তা ছাড়া মার্কেটের ব্যবসায়ীরাও তাদের ব্যক্তিগত যানবাহন আন্ডারগ্রাউন্ড গ্যারেজসহ মার্কেটের সামনে রাখতে পারছেন না। মার্কেটের সামনে অবৈধ সিএনজি স্টেশন ও বড় বড় গর্ত থাকায় ব্যবসা প্রায় বন্ধ। এদিকে সড়কে বিশৃঙ্খলা থাকায় প্রতিনিয়ত যানজটসহ নানা প্রতিবন্ধকতার সৃষ্টি হচ্ছে।
আরও দেখা গেছে, মার্কেটে ডাক্তারের চেম্বারগুলোতে রোগীরাও আসতে পারছে না বলে সঠিক চিকিৎসা বঞ্চিত হচ্ছেন রোগীরা। আর সড়কে প্রচুর ধুলাবালুর কারণে এখানে দুই মিনিট দাঁড়িয়ে থাকার জোঁ নেই। সড়কের পূর্ব দিকের বহুতল শপিংমলের শত শত দোকানদারের কান্নার যেন শেষ নেই।
ওই মার্কেটের সামনে সড়ক কাটার কারণে তাদের পূর্বের ড্রেনেজ লাইন কাটা পড়েছে, এতে ওই ড্রেনের ময়লা সড়কে এসে পড়ে বলে পথচারীদের চলাচলে মারাত্মক সমস্যা হয়। এখানেই বাস স্টপেজ বলে যাত্রীদের বাসে ওঠানামা করতেও নানা সমস্যার সৃষ্টি হয়। এদিকে এখানকার হোটেল ও ছোট-বড় দোকানপাটের ব্যবসায়ীরাও চরম সংকটের মধ্যে রয়েছেন বলে অভিযোগ তাদের। এ ক্ষেত্রে ড্রেনের ওপর বাঁশের সাঁকো দিয়ে চলাচল করতে হচ্ছে সবার।
ভুক্তভোগীদের অভিযোগ, পৃথিবীর কোনো দেশে সড়ক উন্নয়ন কাজে এত সময় লাগে না। তা ছাড়া বাংলাদেশের কোথাও এত সময় লাগে না। শুধু ডেমরায় উন্নয়ন কাজেই সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের সময় লাগছে। গত এক বছর ধরে ডেমরা-রামপুরা সড়কের ২২৫ ফুট উন্নয়ন কাজে খোঁড়াখুঁড়ি শুরু হয়েছে, এখনও চলছেই। উন্নয়ন কাজে যত শ্রমিক প্রয়োজন, তারা সে অনুযায়ী শ্রমিক নিয়োগ করে না কখনই। যেখানে ১৫ শ্রমিক প্রয়োজন, সেখানে কাজ করে মাত্র ৫-৬ জন শ্রমিক। আর ডেমরা-যাত্রাবাড়ী সড়ক উন্নয়ন কাজের জন্য গত ১৪ মাসে আমরা অনেক লোকসান গুনেছি। পুঁজি ভেঙে ভেঙে এখনও চলছি। শুধু সড়ক বিভাগের গাফিলতির কারণে আমাদের যত লোকসান গুনতে হচ্ছে। গত ১৫ দিন আগেও একটি লোক তার বাচ্চাসহ ড্রেন ও মার্কেটের সিঁড়ির ফাঁকে পড়ে মারাত্মক আহত হয়েছেন। দ্রুত আমরা এ সমস্যার সমাধান চাই।
এ বিষয়ে এনামুল কবির লিটন নামে স্থানীয় বাসিন্দা জানান, সমতট টাওয়ারে আমাদের অফিস। গত ৫-৬ মাস ধরে অফিসে বসতে পারি না। মাঝে মধ্যে যাও আসি ব্যক্তিগত যানবাহন রাখতে পারি না মার্কেটের গ্যারেজে। এক বিশ্রি অবস্থার মধ্যে আমাদের কর্মকাণ্ড। এদিকে সড়ক উন্নয়নের নামে অপরিকল্পিতভাবে যত্রতত্র খোঁড়া-খুঁড়ির কারণে বড় বড় গর্ত ও খানা-খন্দ তৈরি হয়েছে।
এ বিষয়ে ঢাকা সড়ক ও জনপথ বিভাগের (সওজ) উপবিভাগীয় প্রকৌশলী এমদাদুল হক দিনকালকে বলেন, ডেমরা-যাত্রাবাড়ী সড়কের উন্নয়ন কাজ দ্রুত ও নিয়মানুযায়ী করা হচ্ছে। ডেমরা-রামপুরা সড়কে ড্রেনেজ ব্যবস্থা, বিদ্যুৎ ব্যবস্থা ঠিক রেখে পরিকল্পিতভাবে উন্নয়ন কাজ করতে হচ্ছে। সংশ্লিষ্ট সব বিষয়ের সঙ্গে সমন্বয় ভিত্তিক কাজ করা হচ্ছে বলে কিছুটা সময় লাগছে। তবে নির্দিষ্ট সময়েই সব কাজ শেষ হবে। আর মার্কেটগুলোর সামনে দু’একদিনের মধ্যে মাটি-বালু ভরাট করে দেওয়া হবে।