শুক্রবার, ২৭ ডিসেম্বর ২০২৪, ০২:৪৪ পূর্বাহ্ন
মোঃআশরাফ উদ্দীন,চট্রগ্রাম, সীতাকুন্ড প্রতিনিধি, কালের খবর :
কেউ টাকার জোরে রাজনীতি করে। কেউ ক্ষমতার জোরে। কেউ পরিচিত হওয়ার জন্য রাজনীতি করে। আবার কেউ করে দাপট দেখানোর জন্য।
কেউ রাজনীতি করে ভাগ্য পাল্টায়। কেউ রাজনীতি করে হয় ত্রাস। কেউ রাজনীতি করতে গিয়ে শুধু তাত্বিক কথা বলে সুবিধাবাদী অবস্থানে থাকে। আবার কেউ কেউ অগোছানো ভাবে, অন্ধের মত বেছে নেয় সন্ত্রাশের পথ।
কিন্তু তিনি এর কোনটাই করেন নি। রাজনীতি করতে করতে হয়ে উঠেছেন আপাদমস্তক রাজনীতিক। রাজনীতি করতে গিয়ে, রাজনীতির প্রয়োজনে যখন যা করতে হয়, তিনি তখন তাই করেছেন। হয়ে উঠেছেন, একটি অসাধারন ব্যাক্তিত্বের আধার।
হ্যাঁ, তিনি সৈয়দপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান
তাজুল ইসলাম নিজামী Tazul Islam Nizami.
কারো কাছে চেয়ারম্যান তাজু, কারো কাছে তাজু ভাই, অাবার অসংখ্য তরুনের কাছে/শিক্ষার্থীর কাছে তাজু স্যার। অন্য দশজন সাধারন মানুষের মত জন্ম নিয়েছিলেন গ্রামের মধ্যবিত্ত সাধারন পরিবারে। তুলনামূলক ভাবে পড়াশুনায় ভালো ছিলেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের সর্বোচ্চ ডিগ্রীটি অর্জন করতে গিয়ে তাঁকে মোটেই বেগ পেতে হয়নি। তবে হ্যাঁ, তিনি শুধু মাত্র বই মুখী শিক্ষার্থী কখনো ছিলেন না। স্কুল জীবনেই গায়ে দাগ লাগে ছাত্র রাজনীতির। তারপর শুরু। ৮০ দশকে ছাত্রলীগের রাজনীতিতে যে কয়েকটি রিক্রুট সেল সীতাকুণ্ডে সক্রিয় ও সোচ্চার ছিল, তার অন্যতমটি ছিল তাজুল ইসলাম নিজামী’কে কেন্দ্র করে। একজন সাধারন তরুণের মাথায় রাজনীতির বীজ বপন করে, স্বৈরাচার বিরোধী আন্দোলনে তথা এরশাদের বন্দুকের নলের সামনে দাঁড় করিয়ে দেওয়া কতটা কঠিন ছিল, তা যারা ঐ প্রেক্ষাপটে রাজনীতি করে এসেছেন, তারাই জানেন। এরশাদ বিরোধী আন্দোলনেই তিনি বারবার মৃত্যুর সাথে হাডুডু খেলেছেন। নিজের হাতে ককটেল বিস্ফোরণ হওয়ার মত ঘটনাও তার জীবনে ঘটে গেছে। ঢাকায় যেদিন নূর হোসেন শহীদ হন, সেদিন তাজুল ইসলাম নিজামী’র পায়েও বোমার আঘাত লেগেছিল।
খুব অল্প বয়সে সৈয়দপুর ইউনিয়ন আওয়ামীলীগের আহবায়ক হিসাবে দায়িত্ব গ্রহন করেন। ১৯৯৩ সাল থেকে ২০১২ সাল পর্যন্ত টানা ইউনিয়ন আওয়ামীলীগের সাধারন সম্পাদক হিসাবে দায়িত্ব পালন করেন। একই সময়ে তিনি উপজেলা আওয়ামীলীগের বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিষয়ক সম্পাদক, তথ্য ও গবেষণা সম্পাদক ও সাবেক যুগ্ম সাধারন সম্পাদক হিসাবে দায়িত্ব পালন করছেন। ২০০৩ সালে উপজেলা ছাত্রলীগের সম্মেলনে অন্য দুজন সমন্বয়ক (জেলা পরিষদের সদস্য আমম দিলশাদ Amm Dilshad ও উপজেলা আ.লীগের প্রচার সম্পাদক জাহাঙ্গীর ভুঁইয়া’র Jahangir Bhuiyan) এর সাথে তিনিও সফলতার পরিচয় দেন।
সৈয়দপুর ইউনিয়নের ৯টি ওয়ার্ডে/ প্রতিটি পাড়ায় ও বাড়ীতে আওয়ামী রাজনীতির সাংগঠনিক ভিত্তিকে শক্তিশালী করতে গিয়ে সাবেক ইউনিয়ন আ.লীগের সভ্পতি হাশেম ভুঁইয়া ও তৎকালীন সা. সম্পাদক তাজুল ইসলাম নিজামীকে কঠোর পরিশ্রম করতে হয়।
২০০১ সালের বিভীষীকাময় নির্বাচনের পর কম বেশী সব রাজনীতিক যখন নিজ এলাকা ছেড়ে গা ঢাকা দিচ্ছিল, তাজুল ইসলাম নিজামী তখন নিজ এলাকার যুবকদের সংগঠিত করতে ব্যাস্ত। প্রশাসন তাঁর এই সাহস দেখে ভীত হয়ে পড়ে। অনেকগুলো মিথ্যা মামলা দিয়ে তাঁকে কারাগারে পাঠানো হয়েছিল তখন। তাঁর অনুপুস্থিতিতে পুলিশ ও সন্ত্রাশীরা বারবার তাঁর বাড়ীতে হামলা চালায়। এলাকায় অগ্নিসংযোগ করে। তাজুল ইসলাম নিজামী চাইলে প্রতিপক্ষ ও প্রশাসনের সাথে সমঝোতায় আসতে পারতেন। কিন্তু অস্বীকার করার উপায় নাই, ঐ কঠিন সময়টি ছিল তাঁর পরবর্তী রাজনৈতিক জীবনের টার্নিং পয়েন্ট। সীতাকুণ্ডের আনাচে কানাচে, দলীয় কর্মীদের কাছে, সাধারন মানুষের কাছে তাজুল ইসলাম নিজামী তখন হয়ে উঠেন রাজনৈতিক হিরো।
রাজনীতিক রা রাজনীতিকে পুঁজি করে নানা ধরনের ব্যাবসা করে। ঠিকাদারী করে। কিন্তু তাজুল ইসলাম নিজামী একজন নির্মোহ শিক্ষক হিসাবে জীবনের বড় সময় পার করেছেন। চেয়ারম্যান হওয়ার আগ মুহুর্তেও তিনি জীবীকার তাগিদে টিউশানি করেছেন। যা আমাদের পরিচিত মহলে বিরল দৃষ্টান্ত। হয়তো টিউশানি এখনো করতেন, যদি হাতে পর্যাপ্ত সময় থাকত।
রাজনীতির মাঠে শত্রুকে রাজনীতি দিয়ে মোকাবেলা করার পক্ষপাতী তিনি। তিনি বিশ্বাস করেন মেধাকে মেধা দিয়ে, সন্ত্রাশ কে সন্ত্রাশ দিয়ে মোকাবেলা করতে হবে। যে যেমন, তার সাথে সেভাবেই খেলতে হবে। ভালর সাথে ভাল, বেজন্মার সাথে বেজন্মা গিরি। বঙ্গবন্ধু’র আদর্শ বাস্তবায়নে রক্ত দিতে এবং নিতে বদ্ধ পরিকর তিনি।
দ্বিতীয় মেয়াদে চেয়ারম্যান হিসাবে দায়িত্ব পালন করছেন। সকাল থেকে গভীর রাত পর্যন্ত মাঠ ঘাট চষে বেড়াচ্ছেন। ছাত্রলীগ/ যুবলীগের নেতাকর্মীদের আদর্শ তিনি। অনেকের কাছে পথ নির্দেশক, আবার অনেকের কাছে আশ্রয়।
অন্তর্কোন্দলের রাজনীতিতে কে কোন পক্ষে আছে বড় কথা নয়, অস্বীকার করার উপায় নাই, তাজু’ভাই অন্য অনেকের চেয়ে অনেক সেরা।