রবিবার, ২২ ডিসেম্বর ২০২৪, ০২:০২ অপরাহ্ন

সংবাদ শিরোনাম :
জুলাই-আগষ্টে শহীদদের ছাড়া আর কারো প্রতি দায়বদ্ধতা নেই। কালের খবর পার্বত্য চট্টগ্রামের সম্ভাবনাময় অর্থকরী ফসল কাসাভা। কালের খবর চবি এক্স স্টুডেন্টস ক্লাব ঢাকা এর সভাপতি ব্যারিস্টার ফারুকী এবং সাধারণ সম্পাদক জিএম ফারুক স্বপন নির্বাচিত। কালের খবর মাটিরাঙ্গায় প্রাথমিক বিদ্যালয় গোল্ডকাপ ফুটবল টুর্নামেন্টের ফাইনাল সম্পন্ন। কালের খবর সীতাকুণ্ড হবে বাংলাদেশের অন্যতম মডেল উপজেলা : আনোয়ার সিদ্দিক চৌধুরী। কালের খবর মাটিরাঙ্গার গুমতিতে মহান বিজয় দিবসে বিএনপির শোভাযাত্রা ও পুষ্পস্তবক অর্পণ। কালের খবর মাটিরাঙ্গায় মহান বিজয় দিবসে বিএনপির শোভাযাত্রা ও পুষ্পস্তবক অর্পণ। কালের খবর মুরাদনগরে সামাজিক সংগঠনের শীতের কম্বল বিতরণ। কালের খবর বিজয় দিবসের প্রথম প্রহরে ‘স্বাধীনতা সোপানে’ শ্রদ্ধা নিবেদন। কালের খবর জাতীয় সাংবাদিক সংস্থার প্রধান কার্যালয়ের শুভ উদ্বোধন। কালের খবর
খুলনার প্রচীন মসজিদের শহর বাগেরহাট

খুলনার প্রচীন মসজিদের শহর বাগেরহাট

শায়েখ আহম্মেদ : খুলনার প্রচীন মসজিদের শহর বাগেরহাটের নাম ছিল খলিফাতাবাদ৷ শহরটির প্রতিষ্ঠাতা খান-ই-জাহান ছিলেন এক সাধক পুরুষ৷ ষাট গম্বুজ মসজিদসহ এখানকার নানা প্রাচীন স্থাপনা ইউনেস্কোর বিশ্ব ঐতিহ্যের তালিকায় স্থান পায় ১৯৮৫ সালে৷

নির্মাণ কাল ১৪৫৯

খান জাহান আলীর সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য স্থাপত্য কীর্তি ষাট গম্বুজ মসজিদ৷ ঐতিহাসিকদের মতে, এই ষাট গম্বুজ মসজিদটি তিনি নির্মাণ করেছিলেন ১৪৫৯ খ্রিষ্টাব্দেরও কিছু আগে৷

একাশিটি গম্বুজ

নাম ষাট গম্বুজ হলেও মসজিদটিতে মূলত একাশিটি গম্বুজ আছে৷ মসজিদের ছাদে ৭৭টি এবং চারকোণার টাওয়ারে চারটি৷ তবে বিশেষজ্ঞদের মতে, মসজিদের অভ্যন্তরে ষাটটি স্তম্ভ থাকার কারণে এর নাম হয়ত ষাট গম্বুজ৷

অভ্যন্তর ভাগ

ষাট গম্বুজ মসজিদের ভেতরের অংশ৷ এই অংশ অতীতে চুন-শুরকির মিশ্রণে লাল রঙের হলেও, পরবর্তীতে তা পলেস্তরা আরা সাদা রঙের প্রলেপে ঢাকা হয়েছে৷

ঢেকে ফেলা হয়েছে কালো পাথর
ষাট গম্বুজ মসজিদের ভেতরের স্তম্ভগুলো ছিল মূলত কালো পাথরের তৈরি৷ উত্তর দিকের একটি স্তম্ভ খালি দর্শনার্থীদের দেখার জন্য রেখে বাকি স্তম্ভগুলোর মূল্যবান কালো পাথর ঢেকে ফেলা হয়েছে সিমেন্টের পলেস্তারার প্রলেপে৷ বাংলাদেশের অনেক প্রাচীন স্থাপনাই এরকম অদক্ষ সংস্কারের নামে ধ্বংস করেছে খোদ সরকারেরই প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তর!

সিংড়া মসজিদ

ষাট গম্বুজ মসজিদের দক্ষিণ পাশে সুন্দরঘোনা গ্রামে অবস্থিত প্রাচীন স্থাপনা সিংড়া মসজিদ৷ইট নির্মিত মসজিদের প্রাচীরগুলি প্রায় সাত ফুট প্রশ্বস্ত৷ মসজিদের পূর্ব দেয়ালে আছে তিনটি প্রবেশপথ৷ প্রবেশপথ বরাবর পশ্চিম দেয়ালে রয়েছে তিনটি অলংকৃত মিহরাব৷ তবে কেন্দ্রীয় মিহরাবটি অপেক্ষাকৃত বড় এবং সুসজ্জিত৷ এর নির্মাণ শৈলী বিবেচনা করে ঐতিহাসিকরা মনে করেন, সিংড়া মসজিদের নির্মাণকাল পঞ্চদশ শতাব্দীর মাঝামাঝি৷

হযরত খানজাহান আলীর সমাধিসৌধ

ষাট গম্বুজ মসজিদ থেকে প্রায় এক কিলোমিটার দূরে এক গম্বুজ বিশিষ্ট হযরত খানজাহান আলীর সমাধিসৌধ৷ কথিত আছে, হযরত খান জাহান আলী বাগেরহাটে এসেছিলেন ১৩৯৮ খ্রিষ্টাব্দের পরে৷ তিনি প্রথমে দিল্লির সুলতান এবং পরে বাংলার সুলতানের কাছ থেকে সুন্দরবন অঞ্চলের জায়গির লাভ করেন৷ এখানকার গভীর বন কেটে তিনি মুসলিম বসতি গড়ে তোলেন৷ ১৪৫৯ খ্রিষ্টাব্দের ২২ অক্টোবর খান জাহান আলীর মৃত্যু হলে, এখানেই তাঁকে সমাহিত করা হয়৷

জিন্দাপীর মসজিদ

হযরত খানজাহান আলীর সমাধির পশ্চিম দিকে ঠাকুর দিঘির পশ্চিম পাড়ে সুন্দরঘোনা গ্রামে ইট নির্মিত এক গম্বুজ বিশিষ্ট জিন্দাপীর মসজিদ৷ মসজিদের পাশেই হযরত খানজাহানের অনুসারী জিন্দাপীরের সমাধি৷ তাঁর নামেই এ মসজিদের নামকরণ৷

নয় গম্বুজ মসজিদ

খান জাহান আলীর সমাধির দক্ষিণ-পূর্ব দিকে, ঠাকুর দিঘীর পশ্চিম পাড়ে অবস্থিত নয় গম্বুজ মসজিদ৷ ইটের তৈরি এ মসজিদের উপরে নয়টি গম্বুজ রয়েছে৷ পুরো মসজিদের গায়ে পোড়ামাটির কারুকাজ খচিত৷ মসজিদের ছাদ নয়টি নীচু অর্ধ বৃত্তাকার গম্বুজ দিয়ে ঢাকা৷

নয় গম্বুজের মিহরাব

নয় গম্বুজ মসজিদের অভ্যন্তরভাগ৷ মসজিদের ভেতরের পশ্চিম দেয়ালে তিনটি মিহরাব আছে৷

রণবিজয়পুর মসজিদ

বাগেরহাট শহরের উপকণ্ঠে রণবিজয়পুর গ্রামের ষাটগম্বুজ সড়কে এ মসজিদটি অবস্থিত৷ ফকিরবাড়ি মসজিদ নামেও এর পরিচিতি আছে৷ স্থাপত্যশৈলির বিচারে এটিকে হযরত খান জাহান আলীর সময়কালে (১৪৫৯ সাল) নির্মিত বলে মনে করা হয়৷ ইটের তৈরি এ মসজিদটি বর্গকারে নির্মিত এবং এক কক্ষ বিশিষ্ট৷ রণবিজয়পুর গ্রামের নামেই এ মসজিদের নামকরণ হয়েছে৷ রণবিজয়পুর মসজিদ বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় এক গম্বুজ বিশিষ্ট মসজিদ৷

চুনাখোলা মসজিদ

ষাট গম্বুজ মসজিদ থেকে প্রায় এক কিলোমিটার উত্তর পশ্চিমে ধান খেতের মধ্যে অবস্থিত চুনাখোলা মসজিদ৷ বর্গাকৃতির এ মসজিদটি বাইরের দিকে লম্বায় প্রায় ৪০ ফুট এবং ভেতরের দিকে ২৫ ফুট৷ দেয়ালগুলি প্রায় আট ফুট চওড়া৷ কেন্দ্রস্থলের উপরের দিকে রয়েছে বড় একটি গম্বুজ৷

বিবি বেগনী মসজিদ

ষাট গম্বুজ মসজিদ থেকে প্রায় এক কিলোমিটার পশ্চিমে এক গম্বুজ বিশিষ্ট বিবি বেগনী মসজিদ৷ মসজিদটি সিংড়া মসজিদের অনুরূপ হলেও, এর পশ্চিম দেয়ালে মিহরাবের সংখ্যা তিনটি৷ মসজিদটির সঠিক নির্মাণকাল সম্পর্কে কোনো তথ্য নেই৷

সাবেকডাঙ্গা পুরাকীর্তি

খান জাহান আলীর স্থাপত্য শৈলীর সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ সাবেকডাঙ্গা পুরাকীর্তির অবস্থান বাগেরহাট শহরের উপকণ্ঠে সাবেকডাঙ্গা গ্রামে৷ লাল ইটের তৈরি আয়তকার এ ভবনটি একেক পাশে দৈর্ঘ্য ৭.৮৮ মিটার৷ ভবনটির দক্ষিণপাশে কেবল একটি প্রবেশপথ আছে৷ এর ভেতরে আর কোন দরজা, জানালা কিংবা মিহরাব নেই৷ তাই এটিকে মসজিদ হিসেবে বিবেচনা করা হয়নি৷ জনশ্রুতি আছে খান জাহান আলী তাঁর বিশেষ প্রার্থনার জন্য এটি নির্মাণ করেছিলেন৷

দৈনিক কালের খবর নিয়মিত পড়ুন এবং বিজ্ঞাপন দিন..

কালের খবর মিডিয়া গ্রুপ লিমিটেডের একটি প্রতিষ্ঠান
Desing & Developed BY ThemesBazar.Com