শনিবার, ২৮ ডিসেম্বর ২০২৪, ০১:৫৬ পূর্বাহ্ন
এম আই ফারুক আহমেদ : প্রাণ থাকলেই প্রাণী হওয়া যায়। কিন্তু মন না থাকলে মানুষ হওয়া যায় না। তাই সকল মানুষ প্রাণী হলেও সকল প্রাণী কিন্তু মানুষ না। এটা মাথায় রাখা জরুরি। বর্তমান সমগ্র বিশ্বে এক সংকটকাল চলছে। এর মধ্যেও কিছু অমানুষের কর্মকাণ্ডে কোনো পরিবর্তন আসেনি। বিশেস করে আমাদের দেশে অমানুষদের কীর্তি একটুও কমেনি।
বিশ্বের চলমান মহামারী করোনাভাইরাসে মৃত্যুর সংখ্যার দিকে তাকিয়েও সে অমানুষদের মনোভাবের পরিবর্তন হয়নি। মেতে উঠেছে বুনো উল্লাসে। হারিয়েছে নিজেদের মমত্ববোধ। আর দায়িত্ববোধ থেকে নিজেদের সরিয়ে নিয়েছে বহুদূরে। যেখানে আছে চুরি আর দুর্নীতিকে আশ্রয় করে নিজের সম্পত্তি বাড়ানোর অঢেল প্রতিযোগিতা।
ঘটনা ১ : ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নবী নগর উপজেলায় নিজেদের আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে দু’পক্ষের সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। ওই ঘটনায় মোবারক মিয়া নামের এক ব্যক্তির পা কেটে নেয় তার প্রতিপক্ষরা। পরে কাটা পা নিয়ে তারা মিছিলও করে! কথিত আছে সে মিছিলে একজন বলেছিলো, মাথা আনতে পারিসনি? কত মর্মান্তিক ঘটনা! পা হারানো সে ব্যক্তি ১৫ এপ্রিল মারা যান।
ঘটনা ২ : ১৩ এপ্রিল গোপালগঞ্জের মুকসুদপুরে নামাজ পড়া নিয়ে সংঘর্ষে একজন মারা গেছেন। করোনার সংক্রমণ এড়াতে মসজিদে ৫ জন মুসল্লী নিয়ে জামাত করার নির্দেশ দেয়া হয়েছিলো আগেই। ওই ইস্যুতে কোন ৫ জন নামাজ পড়বে এটা নিয়ে দুপক্ষের সংঘর্ষ হয়। একজনের মৃত্যু হওয়ার পর তাদের সংঘর্ষ থামে। কিন্তু ততক্ষণে মায়ের কোল খালি করে একজন পরপারে পাড়ি জমিয়েছেন। আহা! নামাজ! আহা নামাজি!
ঘটনা ৩ : ফেনী পৌরসভার বাহারীপুরের ভূঁইয়া বাড়িতে ঘটেছে এক মর্মান্তিক ঘটনা। ফেসবুক লাইভে এসে নিজের স্ত্রীকে দা দিয়ে কুপিয়ে খুন করেছে এ যুবক। পরে ৯৯৯ জরুরি নম্বরে ফোন করে নিজেই পুলিশ ডেকে আনে! এরপর পুলিশ তাকে গ্রেপ্তার করে। কী আজব দেশ! কী আজব আমরা!
যেখানে পুরো পৃথিবীতে মৃত্যুর মিছিল চলছে। স্বজনের বিদায়ে স্বজনরা কাঁদতেও পারছে না। সেখানে আমাদের সোনার বাংলায় একের পর এক মর্মান্তিক ঘটনা উপহার(!) দিচ্ছে। এখানেই শেষ নয়…..
সর্দি-কাশি থাকায় ৮৫ বছরের বৃদ্ধাকে রাতের আধারে বনে ফেলে গেছেন তার স্বামী ও সন্তানরা। তাদের মনে ভয় ছিলো মা বোধহয় করোনায় আক্রান্ত। মৃত্যুভয়ে নিজের মাকে দূরের জঙ্গলে ফেলে যেতে তাদের একটুও মন কাঁদেনি। কিন্তু এই মায়ের হাতে রান্না ভাত খেয়ে বেড়ে উঠেছে সে সন্তান। তার পেটে ধীরে ধীরে বড় হয়েছিলো। ওই মায়ের বুকের দুধ খেয়েই পৃথিবীর আলো-বাতাসের সাথে পরিচিত হয়েছে। আহা সন্তান! তোমার জন্য দুঃখ মা!
আর চোরের দেশ অ্যাখ্যা পাওয়া আমাদের দেশের চেয়ারম্যান-মেম্বাররা চাল বা গম চুরি করে এটা পুরোনা ঐতিহ্য। তবে আধুনিক সময়ে আমাদের প্রজন্ম এটা নাটক, সিনেমা কিংবা বইয়ের পাতায় এ দৃশ্য দেখে অভ্যস্ত। কিন্তু করোনার এ দুর্যোগে তারা আবারও চাল চুরির অনন্য দৃষ্টান্ত স্থাপন করে আমাদেরকে বাস্তবে চাল চোর দেখিয়ে দিলেন। ধন্যবাদ তাদের!
মৃত্যু শোক কিংবা মৃত্যু ভয় যাদের নেই। লাখো মরদেহের খবর পেয়েও যাদের মনে ভীতি তৈরি হয় না। সমাজের দূষিত কীট হিসেবেই বেঁচে থাকতে ইচ্ছে করে তাদের আর যায় হোক না কেন মানুষ বলা যাবে না। আর হ্যাঁ অন্য প্রাণীর সঙ্গে তো তুলনা চলেই না। অন্য প্রাণীরা অনেক সভ্য অনেক সামাজিক। তাই তাদেরকে অমানুষ নামেই পরিচিত করবো।
আর হ্যাঁ, এই করোনা এই সমাজের জন্যই। আমি চাইবো এই করোনা আরো অনেকদিন বেঁচে থাকুক। নিজের শক্তির পুরো রূপটা দেখিয়ে দিক। তবে মানুষগুলো না নিয়ে আল্লাহ যেন পৃথিবীর বিশেষ করে এই সোনার বাংলার অমানুষগুলোকে হেদায়েত করুক নতুবা মারুক। আর তাতেই সুন্দরভাবে বেঁচে থাকবে পৃথিবী। নিজের মতো সাজতে পারবে প্রকৃতি। স্বচ্ছন্দে গাইতে পারবে পাখি। স্বচ্ছ ধারায় বয়ে যাবে নদী-সাগর।