বৃহস্পতিবার, ২৬ ডিসেম্বর ২০২৪, ০৯:১৪ অপরাহ্ন
মহাদেবপুর (নওগাঁ) প্রতিনিধি, কালের খবর :
নওগাঁর মহাদেবপুর উপজেলার আত্রাই নদীর মহিশবাথান ঘাটে অবৈধভাবে খননযন্ত্র (ড্রেজার) দিয়ে তীর ঘেঁষে অবাধে বালু উত্তোলনে বাঁধের কংক্রিটের ব্লক (সিসি) ধসে পড়ে হুমকির মুখে পড়েছে বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ। এতে আসন্ন বর্ষা মৌসুমে বাঁধে ভাঙন দেখা দিতে পারে বলে আশঙ্কা করছেন তীরবর্তী বাসিন্দারা।
বাঁধটি ভেঙে পড়লে সরকারি খাদ্য গুদাম, সরকারি-বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও ১৪ থেকে ১৫টি বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থার (এনজিও) অফিসসহ অন্তত ছয়টি গ্রাম ক্ষতিগ্রস্ত হবে।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, মহিশবাথান ঘাটে একই স্থানে সারি বেঁধে ১০ থেকে ১২টি খননযন্ত্র বসিয়ে এক বছরের বেশি সময় ধরে ড্রেজিং করে বালু উত্তোলন করে আসছে একটি প্রভাবশালী মহল। নদীর তলদেশে গভীর গর্ত করে খননযন্ত্র দিয়ে বালু উত্তোলন করায় সিসি ব্লকের নিচ থেকে মাটি সরে গিয়ে সিসি ব্লক নদীতে ধসে পড়ছে। ফলে ফসলি জমিসহ বাঁধ হুমকির মুখে পড়েছে। বালু উত্তোলনে ওই এলাকার প্রায় আধা কিলোমিটার বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধের বিভিন্ন স্থান নদীতে ধসে পড়ায় গত ১৬ এপ্রিল মঙ্গলবার এলাকাবাসী বালু উত্তোলনে বাধা প্রদান করে।
গত বুধবার দুপুরে মহিষবাথান এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, ড্রামের সাহায্যে নদীতে ছয়টি খননযন্ত্র ভাসিয়ে রাখা হয়েছে। এসব যন্ত্রের সাহায্যে নদীর তলদেশে গর্ত করে বালু তোলা হচ্ছে।
সম্প্রতি কালের কন্ঠে (১লা এপ্রিল) ‘আত্রাই নদীর ঘাটে বালু লুটপাটের হিড়িক’ শিরনামে সংবাদ প্রকাশ হওয়ায় নড়ে বসে উপজেলা প্রশাসন। সে সময় উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. মোবারক হোসেন ও সহকারী কমিশনার (ভূমি) আসমা খাতুন ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করে অবৈধ বালু উত্তোলন বন্ধ করে দেয়।
প্রশাসনের বাধার মুখে বালু উত্তোলনকারীরা কয়েকটি ড্রেজার মেশিন (খননযন্ত্র) তুলে নেয়। ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করে চলে আসার পর তারা আবার ড্রেজিং করে বালু উত্তোলন করতে থাকে। প্রশাসনের বাধা উপেক্ষা করে বালু উত্তোলন করলে বুধবার সন্ধ্যায় ইউএনও আবারো ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করেন। এ সময় উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার আগমন বুঝতে পেরে বালু উত্তোলনকারী ও ট্রাক ড্রাইভাররা ট্রাক ফেলে পালিয়ে গেলে ট্রকের চাকার হাওয়া ছেড়ে দেয়া হয়।
এলাকাবাসী জানায়, নদীর পানি কমে যাওয়ায় ছয় থেকে সাত মাস ধরে খননযন্ত্র দিয়ে বালু উত্তোলন বেড়ে গেছে। দিন-রাত সমানতালে বালু উত্তোলন করা হয়। প্রশাসন এসব যন্ত্র বন্ধে মাঝেমধ্যে অভিযান চালায়। তখন দুই এক দিন বালু উত্তোলন বন্ধ থাকে। কিন্তু পরে আবার শুরু হয়। নীতিমালা উপেক্ষা করে সারি বেধে কয়েক হাত পর পর খননযন্ত্র বসিয়ে নদী গর্ত করে ওই এলাকায় চলে বালু উত্তোলনের মহোৎসব। প্রতিদিন শত শত ট্রাক বালু বিক্রি করে বিশেষ একটি মহল হাতিয়ে নিচ্ছে লাখ লাখ টাকা।
এলাকাবাসীর অভিযোগ, সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের সঠিক তদারকি না থাকায় একটি প্রভাবশালী মহল খননযন্ত্র দিয়ে অবৈধভাবে বালু উত্তোলন করে। যে কারণে ভয়ে কেউ কথা বলতে সাহস পায় না। ফলে বালু উত্তোলনকারীরা বেপরোয়া। করছে না কোনো নীতিমালার তোয়াক্কা।
নদী পারের এক গৃহবধু জানান, সারা বছর বালু উত্তোলন করার ফলে বর্ষা মৌসুমে নদী ভরে যাওয়ার পর যখন নদীর পানি কমে যায় তখন বাঁধের সিসি ব্লক ধসে পড়ে।
স্থানীয় ব্যবসায়ী সামসুল আলম প্রামানিক বলেন, বালু উত্তোলনের কারণে বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ হুমকির মুখে পড়েছে। এ জন্যই স্থানীয় লোকজন মহিশবাথান ঘাটে বালু উত্তোলনে বাধা দিয়েছে।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. মোবারক হোসেন জানান, ‘মহিশবাথান ঘাটে তিন দফায় ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করা হয়েছে। নীতিমালা লঙ্ঘন করে কেউ বালু উত্তোলন করলে অবশ্যই তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। ’
এ ব্যাপারে পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) নওগাঁর নির্বাহী প্রকৌশলী সুধাংশু কুমার সরকার জানান, ‘বাঁধ হুমকির মুখে তা আপনার কাছে প্রথম শুনলাম। দ্রুত ওই এলাকা পরিদর্শন করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। কোন ক্রমেই বাঁধের ক্ষতি করতে দেয়া যাবে না। ’